আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ইসলাম

কন্যাশিশুকে যে ৬ গুণে গড়ে তোলা জরুরি

নারীর জন্য ৬টি গুণ খুবই জরুরি। শিশু বয়স থেকে ধীরে ধীরে এ গুণগুলোর প্রতি আকৃষ্ট করানো বা সুশিক্ষা দেওয়া পরিবারের সদস্যদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ কন্যাশিশুকে ছোট বয়স থেকে বিশ্বনবির উপদেশ মোতাবেক ৬ গুণে গড়ে তুলতে পারলেই তারা আদর্শ নারীতে পরিণত হবে।

নারীর আত্ম-মর্যাদাবোধ ও শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুন্ন রাখতে ৬টি গুণের ভূমিকা খুব বেশি। যে গুণগুলো অর্জনে উপকৃত হবে পুরো পরিবার। পরিবার থেকে সমাজ। সমাজ থেকে পুরো দেশ ও বিশ্ব। কন্যাশিশু ও নারীদের জন্য অবস্থানগত কারণের এ উপদেশগুলো অর্জন করাও খুব সহজ। সেই গুণগুলো কী?

কন্যাশিশুর জন্ম অপমানের নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার। তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মানের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি। তাদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে নারীর প্রতি সুবিচার করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের কল্যাণের ব্যাপারে অসিয়ত (নির্দেশ) গ্রহণ করো।’ নারী জাতির জন্য প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে বিশেষ নসিহত হলো-

১. তাকওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা

তাকওয়া মানে আল্লাহর ভয়। কন্যাশিশু বুঝার বয়সে উপনীত হলে তাকে তাকওয়া বা আল্লাহকে ভয় করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কন্যাশিশুর অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহর গুণ অর্জিত হলে উপকৃত হবে পুরো পরিবার। তাকওয়ার গুণে কন্যাশিশু থাকবে নিরাপদ।

আল্লাহকে ভয় করলেই নারীরা জীবনের যাবতীয় স্খলন ও প্ররোচনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। তাকওয়ার গুণই নারীরা শৃঙ্খলাপূর্ণ আদর্শ জীবনে অনুপ্রাণিত হয়। আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপ-অনাচার, অন্যায়-অবিচার ও মন্দ-নিন্দনীয় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ‘হে আয়েশা! তোমার জন্য আবশ্যক হলো- আল্লাহর ভয় অর্জন করা।’ (তিরমিজি)

তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ের ভিত্তিতেই ইসলামে মানুষের গুণ ও মর্যাদা নির্ধারিত হয়। এ সম্পর্কে একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ

 ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি । পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে; যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্নযে আল্লাহকে বেশি ভয় করে।  আল্লাহ সবকিছু জানেনসব কিছুর খবর রাখেন। ‘ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)

وَ مَا تَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ یَّعۡلَمۡهُ اللّٰهُ ؕؔ وَ تَزَوَّدُوۡا فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی ۫ وَ اتَّقُوۡنِ یٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ

‘তোমরা যে সৎকাজ কর, আল্লাহ তা জানেন। তোমরা পাথেয় অর্জন করো। নিশ্চয়ই সর্বোত্তম পাথেয় তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। তোমরা আমাকে ভয় করো হে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ!’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত : ১৯৭)

গুনাহ থেকে বিরত রাখা

জন্মের পর থকে সব শিশুর পরিচর্যাই করে পরিবার। সময়ের পরিক্রমায় বাবা, ভাই, স্বামী ও পুত্রই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। সব নারীর জন্যই তাদের বাবা, ভাই, স্বামী ও পুত্রের কাছ জিম্মায় থাকা বৈধ। যদি না কোনো কারণে তা নিজ থেকে হারাম করে না নেয়।

নারীরা শিশু বয়স থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত সময়ের পরিক্রমায় সব সময় হালাল রিজিক খায়। আর তাতে নারীরা নিজে যেমন গুনাহমুক্ত থাকে তেমনি নারীদের মাধ্যমে যারা লালিত-পালিত হয় তারাও গুনাহমুক্ত জীবন পায়। এ কারণেই পুরুষের তুলনায় নারীদের মুক্তি ও সফলতা সহজ। তাই কন্যাশিশুকে ছোট বয়স থেকেই ছোট ছোট মন্দ স্বভাব ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি গুনাহের কাজের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা জরুরি।

নারীদের পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা ও হিংসার প্রবণতা, সময় ও অর্থ অপচয়, টিভি ও সিরিয়ালের মতো অর্থহীন কাজে নারীরা সবচেয়ে বেশি আসক্ত। ছোট বয়স থেকে এই বদগুণ থেকে বিরত রাখতে পারলে পরিণত বয়সে নারীর জন্য গুনাহমুক্ত জীবন কাটানো সহজ।

এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা ও উপদেশ হলো- যেসব ছোট ছোট মন্দ অভ্যাস ও পাপকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যেগুলোর পরিণতি খুবই ভয়াবহ। কন্যাশিশুকে ওই বয়স থেকে ছোট ছোট গোনাহগুলো পরিহার অভ্যস্ত করানো জরুরি।’ এসেছে-

> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আয়েশা, আমল বিনষ্টকারী বিষয় (ছোট গুনাহ) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা আল্লাহ তাআলা তা প্রত্যাশা করেন।’ (ইবনে মাজাহ)

> হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আজ তোমরা কোনো কোনো কাজকে চুলের চেয়ে ছোট (তুচ্ছ অর্থে) মনে করো, অথচ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে তাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করতাম।’ (বুখারি)

৩. নামাজে অভ্যস্ত করা

ঘরকে মসজিদে রূপান্তর করার অন্যতম হাতিয়ার নারী। কন্যাশিশুকে তার মা নামাজে অভ্যস্ত করালে বড় হয়ে সে নিজ ঘরকে নামাজের পরিবেশে পরিণত করতে সক্ষম হবে। ঘরকে মসজিদে রূপান্তর করতে পারবে। শুধু প্রয়োজন নারীর ইচ্ছা শক্তি। এ কারণেই ইসলাম নারীকে ঘরে যথা সময়ে নামাজ আদায়ে উৎসাহিত করেছে। হাদিসে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেরমজানের রোজা রাখেইজ্জত-আব্রু রক্ষা করেস্বামীর নির্দেশ মান্য করেতবে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (ইবনে হিব্বান)

৪. সংযত চলাফেরায় অভ্যাস করানো

কন্যাশিশুকে ছোটবেলা থেকেই শালীন ও মার্জিত চলাফেরায় অভ্যস্ত করানো খুবই জরুরি। তবেই বড় হলে সে শালিন ও মার্জিতভাবে জীবন পরিচালনা করবে। চলাফেরায় সংযত হবে। এ কারণেই নারীর নিজস্ব ভূবন ছাড়া ঘরের বাইরে নারীসুলভ সৌন্দর্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। ইসলামের নির্দেশনাও এমন।

তাই শিশু বয়স থেকে অশ্লীল পোশাক ও চাল-চলন পরিহার করা নারীর জন্য আবশ্যক। শুধু ইসলাম নয়, পৃথিবীর সব ধর্মই নারীকে শালীন ও সংযত পোশাক পরার নির্দেশ দেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এ মর্মে আয়াত নাজিল হয়েছে-

وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاهِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی وَ اَقِمۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتِیۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ اَطِعۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیُذۡهِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَهۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَهِّرَکُمۡ تَطۡهِیۡرًا

আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্ৰদান কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুগত থাক। হে নবি-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৩)

وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِهِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَهُنَّ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِهِنَّ ۪ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اٰبَآئِهِنَّ اَوۡ اٰبَآءِ بُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اَبۡنَآئِهِنَّ اَوۡ اَبۡنَآءِ بُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اِخۡوَانِهِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اِخۡوَانِهِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اَخَوٰتِهِنَّ اَوۡ نِسَآئِهِنَّ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُهُنَّ اَوِ التّٰبِعِیۡنَ غَیۡرِ اُولِی الۡاِرۡبَۃِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفۡلِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَظۡهَرُوۡا عَلٰی عَوۡرٰتِ النِّسَآءِ ۪ وَ لَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِهِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِهِنَّ ؕ وَ تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ جَمِیۡعًا اَیُّهَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

‘বিশ্বাসী নারীদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থান রক্ষা করে। তারা যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতিত তাদের সৌন্দর্য যেন প্রদর্শন না করে; তারা তাদের বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী পিতা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে,বোনের ছেলে ও তাদের নারীগণ, নিজ অধিকারভুক্ত দাস, যৌনকামনা রহিত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতিত কারও কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন এমন জোরে চলাফেরা না করে, যাতে তাদের গোপন আভরণ প্রকাশ পেয়ে যায়। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার ‘ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)

৫. অল্পে সন্তুষ্টি

ছোটবেলা থেকে অল্পে সন্তুষ্টির গুণ অর্জন করা সবার জন্য জরুরি। আর নারীর অল্পে সন্তুষ্টির অন্যতম একটি দিক হলো, সামর্থ্য ও চেষ্টার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা। কোনো কন্যাশিশুর ছোটবেলায় এ গুণ অর্জিত হলে বড় হয়ে মুমিন নারী স্বামীর আন্তরিকতা ও চেষ্টাকে সম্মান করবে। তার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করবে। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমতের দৃষ্টিতে তাকান নাযে নারী স্বামীর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না। অথচ সে তার প্রতি মুখাপেক্ষী।’ (নাসাঈ)

বর্তমান সময়ে এমন অনেক ঘটনাও সংঘটিত হয়ে যে, কোনো কোনো নারী সমাজের অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে স্বামীর ব্যাপারে দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করে। অনেক সময় তাদের অন্যায় চাহিদা পূরণের জন্য স্বামীকে সুদ-ঘুষসহ অন্যায় পথে, পাপ কাজে জড়াতে বাধ্য করা হয়।

মনে রাখা জরুরি

সুখী জীবনের মূলমন্ত্র অল্পে সন্তুষ্ট থাকা। ইসলাম প্রত্যেককেই অল্পে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষাও এমনই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাগতিক বিষয়ে নিম্নস্তরের দিকে, পরকালীন বিষয়ে উচ্চস্তরের দিকে তাকিয়ে অনুপ্রাণিত হতে বলেছেন। তাই এসব ক্ষেত্রে নারীকে সহনশীল, অল্পে সন্তুষ্টি ও ধৈর্যশীল হওয়ার পরামর্শ দেয় ইসলাম। এ কারণে ইসলামের সোনালী যুগের নারীরা তাদের স্বামীদের বলতেন-

তোমরা হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকো। কেননা আমরা ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবকিন্তু জাহান্নামের আগুন সহ্য করতে পারব না।’ (ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকিন)

৬. সুখ-দুঃখের অংশীদারের শিক্ষা

সুখ যেমন নারীর জন্য খুব জরুরি তেমনি দুঃখ ছাড়া সুখ প্রকাশ পায় না। ছোটবেলা থেকেই সব শিশুকেই সুখ ও দুঃখের বাস্তবতার শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক। তবেই পরিণত বয়সে নিজের কিংবা অন্যের সুখ-দুঃখের মূল্যয়ন করতে পারবে। তবে নারীদের জন্য সুখ-দুঃখের শিক্ষা গ্রহণ সবচেয়ে বেশি জরুরি। যেন তারা পুরো পরিবারের পরস্পরের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়। স্বামীর সংকটে স্ত্রী, স্ত্রীর সংকটে স্বামী পাশে থাকবে, এটাই ইসলামের নির্দেশনা। এর অনন্য দৃষ্টান্ত প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা।

আম্মাজান হজরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা স্বামীর সুখে-দুঃখে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণেই তাঁর মৃত্যুর পরও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কৃতজ্ঞতাচিত্তে তাঁর কথা বেশি বেশি স্মরণ করতেন। এমনকি তাঁর জীবদ্দশায় কাউকে বিয়েও করেননি। তাঁর মৃত্যুর পরও তিনি তাঁর সন্তানদের প্রতি পরিপূর্ণ মমতা ও ভালোবাসা বজায় রেখেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আম্মাজন খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আহা মৃত্যুর পর তাঁর কথা এত বেশি স্মরণ করতেন যে, অন্য স্ত্রীরা ঈর্ষাকাতর হয়ে যেতেন।

একবার হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ঈর্ষা প্রকাশ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, ‘মানুষ যখন আমাকে অস্বীকার করেছিল তখন সে আমার প্রতি ঈমান এনেছেমানুষ যখন আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে তখন সে আমাকে সত্যাবাদী বলেছেমানুষ যখন আমাকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছে তখন সে আমাকে তার সম্পদ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আল্লাহ তার মাধ্যমে আমাকে সন্তান দান করেছেন।’ (ফাতহুল বারি)

সুতরাং প্রতিটি পরিবারের দায়িত্বশীলদের উচিত, নিজেদের পরিবারের সব শিশুকেই উল্লেখিত ৬টি গুণে অভ্যস্ত করানো। বিশেষ করে এ ৬ গুণ অর্জনে কন্যাশিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। কারণ নারীরাই একটি আদর্শ জাতি গড়ার কারিগর।

আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সব বয়সের নারী-পুরুষকে কোরআন-সুন্নাহর উপদেশ ও গুণগুলো নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ইসলাম

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ১৭ নভেম্ব

দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।

সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।

শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। 

সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন?

নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:

নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)

যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)

তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

আজান শোনার পর প্রিয় নবি (সা.)-এর সুন্নাত কী?

প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।

স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-

كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه

‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।

প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত

কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-

كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج

‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেনতবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-

لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم

‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!

মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-

من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض

‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো নাতার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।

প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।

মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি

মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-

رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)

উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।

কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।

আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।

ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

কেয়ামতের দিনের মুক্তিতে মুমিনের করণীয় কী?

শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।

হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।

সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)

আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!

কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com