আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

এডিটার’স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

মুক্তচিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই উদ্বেগ বাড়ছে। কিন্তু এবার এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে পুলিশ।

সম্প্রতি পুলিশ একটি চলচ্চিত্রের পরিচালক এবং অভিনেতাকে গ্রেফতার করেছে। তাদের অপরাধ? একটি সিনেমায় তারা পুলিশকে নেতিবাচক ভাবে তুলে ধরেছেন।

সে বিষয়ে প্রথমে লিখেছেন ঢাকা থেকে তাঞ্জিলুর রহমান:  

”সম্প্রতি পুলিশের নেতিবাচক চরিত্র চিত্রায়িতের জন্য গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। অথচ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই, বিশেষ করে যেসব জায়গায় শিল্পের স্বাধীনতা আছে, সব জায়গাতেই সিনেমা, টিভি সিরিজ ইত্যাদি জায়গায় পুলিশের নেতিবাচক ভূমিকা প্রায়ই দেখা যায় এমনকি বাংলাদেশেও এরকম নজির বেশ আছে। আসলে আমাদের দেশে বিরোধী দলকে তো নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছেই, এখন যাও একটু আধটু মুক্তচিন্তা চর্চার সুযোগ আছে, তাও বর্তমান সরকার তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।”

আপনি ঠিকই বলেছেন মি. রহমান, পুলিশের ভেতরে যে অনৈতিক, বেআইনি এমনকি অমানবিক কাজ করার মত লোক আছে, তা অনেক দেশেই সংবাদ এবং শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তাতে রাষ্ট্র উপকৃত হয়, পুলিশ বাহিনী উপকৃত হয়। সমালোচনা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে, শুধু এই কথা না ভেবে, আত্ম-বিশ্লেষণ করে নিজেদের দুর্নীতি মুক্ত করা দীর্ঘ মেয়াদে পুলিশের জন্য – এবং সমাজের জন্য উপকার বয়ে আনবে। আমি বলব, সংবাদ এবং শিল্পের স্বাধীনতা যে কোন সমাজের জন্য আশীর্বাদ, অভিশাপ নয়।

তবে বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন সাভার সরকারি কলেজ থেকে মনিরুল হক রনি:

”সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া “নবাব এলএলবি” নামক সিনেমায় পুলিশের বলা একটি কুরুচিপূর্ণ সংলাপের সূত্র ধরে সিনেমাটির পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট অভিনেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে যেমন রুদ্ধ করেছে, তেমনি মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে এমন অশ্লীল, অশ্রাব্য ও অসামাজিক সংলাপ সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র শিল্পকেও কলঙ্কিত করেছে।

”প্রচলিত সকল সিনেমার ক্ষেত্রে সেন্সরবোর্ডের সনদপত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, “আই থিয়েটার” নামক একটি অ্যাপে মুক্তি দেওয়ার কারণে এ সিনেমার ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর হতে হবে। অন্যথায় সরকারকে চলচ্চিত্র শিল্পে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে টুটি চেপে ধরে রুদ্ধ করার দায়ে অভিযুক্ত হতে হবে। নতুবা নতুন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পের হারিয়ে যাওয়া অশ্লীলতার পুনরুজ্জীবন দেখতে হবে।”

এখানে সরকারকে কঠোর হওয়ার মানেটা কী, আমি ঠিক বুঝলাম না মি. হক। বাক স্বাধীনতার অর্থ হল, অন্যের কাছে অপ্রিয়, এমনকি অশ্রাব্য মনে হতে পারে, এমন কথা বলতে পারা এবং সেটা বলে কোন হুমকির মুখে না পড়া। আমি ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমাটি দেখিনি, কিন্তু যত টুক জেনেছি, ধর্ষণের শিকার একজন নারীর সাথে পুলিশের পাশবিক ব্যবহার তুলে ধরতে যে ধরনের সংলাপ দরকার, সে ধরণের সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে।

সেই সংলাপ আপনার কাছে অশ্রাব্য এবং অশ্লীল মনে হয়েছে, কিন্তু সেজন্য কী কারো বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত? তাহলে শিল্পের স্বাধীনতার কোন মূল্য থাকবে কি? আমার তো মনে হয়, আপনি যখনি সংবাদ মাধ্যম বা শিল্পে অশ্লীলতা নামক অজুহাতে সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করবেন, তখনি মুক্তচিন্তার পরিসর কমে আসবে।

হয়তো সময় এসেছে, বাংলাদেশে সিনেমার সেন্সরের পরিবর্তে বয়স-ভিত্তিক সার্টিফিকেট পদ্ধতি চালু করার, যাতে যেসব ফিল্মে কথিত অশ্লীল সংলাপ বা দৃশ্য আছে সেগুলো শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকরাই দেখতে পারবে। সার্টিফিকেট দেখে আপনিও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন সিনেমাটি আপনি দেখবেন কি দেখবেন না।

সিনেমায় কথিত অশ্লীলতার চেয়ে বহুগুণ ভয়াবহ বিষয়ে এবার যাই। করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ এখন বেশ জোরে-সোরে ইউরোপ এবং আমেরিকায় চলছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাস।

এ’বিষয়ে লিখেছেন ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শামীম উদ্দিন শ্যামল:

”করোনা ভাইরাস জীন সিকুয়েন্স বা মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় তার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করার ফলে নতুন ভাবে উদ্বেগ বেড়েছে। আমরা প্রথমে যুক্তরাজ্যে এই ভাইরাসের অস্তিত্বের খবর পাই, তারপর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে। কথা হচ্ছে এই ভাইরাসে যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের হার এবং হাসপাতালগুলোতে যেভাবে ভিড় বাড়ছে তাতে কি মহামারি আগের চাইতে ভয়ংকর হতে পারে? বাংলাদেশে এই ভাইরাস দেখা দিলেও মানুষের ভেতরে সচেতনতা তো বাড়েই নি, বরং কমেছে। তাই মানুষের এই উদাসীনতা নিয়ে বেশ শঙ্কায় আছি।”

আপনির ঠিকই বলেছেন মি. শামীম উদ্দিন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই দ্বিতীয় অধ্যায় আসলেই উদ্বেগজনক। ব্রিটেনে এখন রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, এবং বুধবারেই প্রায় পুরো দেশকে কার্যত লকডাউনে দেয়া হয়েছে। তবে চীন থেকে ব্রিটেন পর্যন্ত সব দেশেই আমরা যেটা দেখলাম, এই মহামারী মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকা ছিল সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বিষয়টি যত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে, যত গুরুত্বের সাথে জনগণকে তথ্য দিয়েছে এবং যত কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগ করেছে, ততই তারা মহামারী নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। মানুষ যখন দেখে সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে চলছে এবং সরকার তেমন উদ্বেগ প্রকাশ করছে না, তখন তারাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাকে প্রয়োজনীয় মনে করে না।

করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার যা ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে লিখেছেন রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে মুশফিকুর রহমান ওলিউল্লাহ:

”করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন স্কুল কলেজ বন্ধ। অনলাইনে ক্লাস চললেও, সেটি যে স্বাভাবিক শিক্ষা পদ্ধতির পুরোপুরি বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি ,সে কথা এখন মানতেই হবে। আমি ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। অনলাইন ক্লাসে আমি নিজেও অভ্যস্ত নই । শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে নূতন বছরের ছুটি আর বাড়ানো উচিত হবে না বলে আমি বা আমার মত হাজারো শিক্ষার্থী মনে করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে বিভিন্ন কল কারখানা,অফিস,আদালত সহ সব প্রতিষ্ঠানই যে যার মতো চলছে। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, “করোনা ভাইরাস কি শুধু স্কুল কলেজ গুলোতেই সংক্রমণ ঘটায়?”

বিষয়টি যে অত্যন্ত জটিল, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই মি. ওলিউল্লাহ। এত দীর্ঘ সময় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের যে ভয়ানক ক্ষতি হচ্ছে, তা সরকার কিভাবে পুষিয়ে নিতে পারবে? বলা মুশকিল। কিন্তু একই সাথে, সরকার হয়তো ভাবছে সব খুলে দিলে লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে এবং তাদের পরিবার নতুন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তবে বাংলাদেশে যেহেতু অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম সবাই গ্রহণ করতে পারে না, তাই যত শীঘ্র সম্ভব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ ক্রমশ বাড়বে বলে মনে হয়।

করোনাভাইরাস নিয়ে আরেকটি চিঠি, ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান লিখেছেন ইরান নিয়ে: 

”বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় ২৯শে ডিসেম্বর প্রকাশিত ” মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা ইরানে নিজস্ব টিকা দিয়ে মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই” শীর্ষক খবরটি মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি শুরু হওয়ার পর হতে ইরানে এ পর্যন্ত ৫৫ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে মারা গেছে এবং প্রায় ১২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, যা খুবই উদ্বেগজনক চিত্র।

আসলে মহামারী করোনা ভাইরাসের এ চরম ক্রান্তিকালে যেখানে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন, সেখানে যত বড় শত্রুই হোক, ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করে মার্কিন সরকার প্রমাণ করেছে তারা মুখে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বললেও, আসলে তারা খুবই নিচু প্রকৃতির মূল্যবোধ ধারণ করে।

আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক অতি জরুরী টিকা আমদানি করতে পারছে না, যা অত্যন্ত অমানবিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্বেষমূলক আচরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। আমেরিকার মিত্র দেশগুলোও এক্ষেত্রে নীরব। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারীর সময় এ ধরণের আচরণ কোন ক্রমেই কাম্য নয়।”

আমেরিকা যেহেতু বিশ্ব অর্থনীতির ওপর বিশাল প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম, তাই তারা যখন কোন দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সেটা সেই দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়। তবে অন্যের সমালোচনার কারণে আমেরিকা তার ইরান নীতি পরিবর্তন করবে বলে মনে হয় না। ইরানের সাথে আমেরিকার বিবাদ সেই ১৯৭৯ সাল থেকে, যখন ইসলামী বিপ্লবীরা তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখল করে তাদের কূটনীতিকদের প্রায় দু’বছর আটক করে রেখেছিল। আমেরিকা সেই অপমান ভুলতে পারে নি, এবং তেহরানের সাথে তাদের সম্পর্ক সব সময় সেই অভিজ্ঞতার আলোকে করা হয় বলে আমার মনে হয়।

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে করোনাভাইরাসের মত আরেকটি ব্যাধি মহামারী আকারে চলছে দীর্ঘ দিন ধরে, আর সেটা হল নারী বিদ্বেষ। সে বিষয়ে লিখেছেন রংপুরের কাউনিয়া থেকে বিলকিস আক্তার:

”ঘরে-বাইরে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে আজ নারীরা। শিক্ষায়-দীক্ষায় নারীদের এগিয়ে যাওয়া চোখে পড়ার মত। কিন্তু তারপরও ঘরের বাইরে নতুন নতুন হয়রানি, যৌন হয়রানি কিংবা শারীরিক-মানসিক হেনস্থার শিকার হতে হয় আমাদের। কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায় সর্বক্ষেত্রেই তির্যক চাহনি, বাঁকা হাসি, বিদ্রূপ যেন আমাদের পিছু ছাড়ছেই না। কিন্তু কেন?

আমার মনে হয়, নারীদের যে আচরণগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সেটা একটা সাবলীল আচরণ। কিন্তু পুরুষরা সেটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখতে চায় না। পুরুষরা মেয়েদেরকে একটা নির্দিষ্ট আচরণিক গণ্ডির মধ্যেই দেখতে পছন্দ করে। এর বাইরে যদি কোনো মেয়ে কোনো আচরণ করে তখন সেটা তারা মেনে নিতে পারেন না। এমনকি আমাদের দেশে যারা নাগরিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত তারাও এটা মেনে নিতে চান না। কিন্তু আমরা মেয়েরা কি সেই সনাতনী পুরনো ধাঁচেই চলতে থাকবে? সেটাতো হতে পারে না।”

অবশ্যই হতে পারে না মিস আক্তার। নারী-বিদ্বেষ অনেক পুরুষের মনে একটি জটিল রোগের মত বসে আছে। এক সময় পশ্চিমা বিশ্বেও এরকম অবস্থা ছিল। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে আইন করে নানা ধরনের নারী বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে সমান অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কাজ এখনো চলছে। স্কুলে বাচ্চাদের অল্প বয়স থেকে একে অপরকে সম্মান করতে শিক্ষা দেয়া হয়। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে নারী বিদ্বেষী বা হয়রানী মূলক আচরণ রোধে বিভিন্ন নিয়ম করেছে। বাংলাদেশেও এরকম বহুমুখী প্রচেষ্টা দরকার।

এবারে ভারতের একটি প্রসঙ্গে আসি, লিখেছেন ঝিনাইদহ থেকে কাজী সাঈদ: 

”বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় স্ত্রীকে ডিভোর্সের নোটিস পাঠিয়েছেন একজন ভারতীয় এমপি, যিনি বিজেপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে তার নির্বাচনে জেতার ক্ষেত্রে স্ত্রীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত বেশি। এহেন স্ত্রীকে যিনি ত্যাগ করতে পারেন শুধুমাত্র মতের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য, তিনি কি করে অন্য একজন সাধারণ মানুষের দ্বিমত সহ্য করবেন?”

ভাল প্রশ্ন করেছেন মি. সাঈদ। হয়তো ভিন্ন মত নিয়ে এই বিজেপি এমপির কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তিনি জমিদারী স্টাইলে পরিবারের ভেতরে সবাইকে, বিশেষ করে স্ত্রীকে, তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। তাই ঘরের বাইরে যে যা রাজনীতিই করুক না কেন, তিনি ঘরের ভেতরে দ্বিমত বা প্রতিপক্ষ দলের রাজনীতি বরদাস্ত করবেন না। তাকে কী বলে অভিহিত করা যায়, তা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।

যাই হোক, এবারে দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের দু’জন কিংবদন্তী নেতাকে নিয়ে দুটো চিঠি, প্রথমে লিখেছেন ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামাল হোসাইন:

”বর্তমানে চলছে মুজিব বর্ষ। এটি এখন বৃদ্ধি পেয়ে আগামী বছরের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। বিবিসি ২০০৪ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচনে শ্রোতাদের মাঝে জরিপ চালিয়ে ছিল। চলতি মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আমার অনুরোধ, যারা সেদিন বঙ্গবন্ধু কে ভোট দিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচন করেছিলেন, তাদের নাম, উপজেলা, জেলা সহ তালিকা প্রকাশ করার জন্য। যদিও সেসময় মেইল ছিল না, তাই তালিকা আছে কি না সেটাও জানি না। তবে যদি থাকে তাহলে আশাকরি প্রকাশ করবেন।”

সেরকম কোন তালিকা নেই মি. হোসাইন। আর থাকলেও আমরা সেটা প্রকাশ করতে পারতাম না, কারণ কারো কাছ থেকেই নাম ঠিকানা প্রকাশ করার অনুমতি নেয়া হয়নি। তাছাড়া, কারা ভোট দিয়েছিলেন, তাদের নাম দিয়ে কী হবে? আপনার মত তারা সবাই বিবিসি বাংলার শ্রোতা ছিলেন। তারা রেডিওতে জরিপের ঘোষণা শুনো স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের বাছাই করা পাঁচ জনের নাম ক্রমানুসারে লিখে চিঠি এবং পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে আমাদের পাঠিয়েছিলেন। আমরা তাদের ভোট অনুযায়ী কুড়ি জন শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকা তৈরি করি।

সেই শ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকার পাঁচ নাম্বার স্থানে ছিলেন ভারতীয় ব্রিটিশ-বিরোধী নেতা সুভাষ চন্দ্র বোস। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন খুলনার কপিলমুনি থেকে মোহাম্মদ শিমুল বিল্লাল বাপ্পি:

”নেতাজী সুভাস বোস সমগ্র জীবন জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের আগ মুহূর্তে নেতাজী হারিয়ে যান। এই বিষয়ে আমরা নানা রকম কথা শুনতে পাই। কোন কোন গবেষক দাবি করেন, নেতাজী বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আবার অন্যরা বলেন ভিন্ন কথা। আন্তর্জাতিক গণ মাধ্যম বিবিসি বাংলার আর্কাইভ অনেক সমৃদ্ধ। আমি আশা করি নেতাজী কিভাবে মারা যান, তার সঠিক তথ্য বিবিসি বাংলা প্রচার করবে।”

সুভাষ বোস নিয়ে অনেক প্রতিবেদনই অতীতে প্রচার করা হয়েছে মি. বিল্লাল, কিন্তু বিমান দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কোন ভাবে তার মৃত্যু সম্পর্কে কোন তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। ভারতে অনেক গবেষক আছেন যারা এখনো তাদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় ছিল, ভারতে অনেকে ভাবতেন বা আশা করতেন যে সুভাষ বোস বেঁচে আছেন। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শেষের ৭৫ বছর পর সেই আশা ধরে রাখা একেবারেই অবাস্তব।

এবারে আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে দু’একটি চিঠি। প্রথমে লিখেছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে শফিকুল ইসলাম:

”কিছু দিন ধরে বিবিসি বাংলার রাতের অধিবেশন পরিক্রমায় বিশ্ব সংবাদে মাসুদ হাসান খান,(বিশ্ব সংবাদ পড়ছি)কথাটি ধীরলয় ভাবে বা থেমে থেমে পড়ার মতো করে বলে। এটা কি বিবিসি বাংলার নতুনত্ব,না কি ভাষাতত্ত্বের উচ্চারণে নতুন মাত্রা?”

দুটোর কোনটাই না মি. ইসলাম। বিশ্ব সংবাদ বুলেটিন একটু ধীর লয়ে বলার স্টাইল বিবিসির অনেক দিনের প্রচলিত। মূল অনুষ্ঠান উপস্থাপনের সময় মাসুদ যে গতি এবং ভঙ্গিতে কথা বলেন, তা থেকে বিশ্ব সংবাদের পাঠ অবশ্যই ভিন্ন হতে হবে। সেজন্যই তিনি একটু ধীর লয়ে শুরু করেন।

পরের চিঠি লিখেছেন ঢাকার মানিকগঞ্জ থেকে অরবিন্দ রায়:

”বিবিসিতে ২৫ শে ডিসেম্বরের প্রবাহ, পরিক্রমা শুনে হতাশ হলাম। বিবিসি বাংলা ঈদ-উল ফিতর বা ঈদ-উল আযহার দিনে প্রচারিত প্রবাহ, পরিক্রমায় শুরুতেই সঞ্চালক শ্রোতাদের ঈদ মোবারক জানিয়ে থাকে। কিন্তু অন্য কোন ধর্মের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে প্রচারিত প্রবাহ, পরিক্রমায় কোন ধরনের শুভেচ্ছা জানানো হয় না। এক্ষেত্রে কি সঞ্চালকের ধর্মীয় পরিচয়/বিশ্বাস অনুযায়ী শুভেচ্ছা জানানো হয় নাকি সংখ্যা গরিষ্ঠের ধর্ম বিবেচনা করা হয়?”

আপনি কথাটা ঠিক বলেন নি, মি. বায়। বিবিসি বাংলায় আমরা সাধারণত ঈদ, দুর্গা পূজা, বড় দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকি। তবে এ’বছর ২৫শে ডিসেম্বর ভুলবশত: সেটা হয়নি।

সব শেষে নতুন একটি দিবস চালু করার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেনহাজুল ইসলাম তারেক:

”বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর এক যোগে সকল মানবজাতির পক্ষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দিবস’ পালন করার প্রস্তাব জানাচ্ছি আমি। মানুষের মাঝে বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করাই হবে এর মূল লক্ষ্য। এজন্য বিভিন্ন দিবসের ন্যায় হিংসামুক্ত বিশ্ব সম্প্রীতি দিবসও পালন করা যেতে পারে।”

আমি লক্ষ্য করছি, আপনি দিনটাকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণার দাবীও জানান নি মি. ইসলাম। সেটা জানালে হয়তো অনেক বেশি সমর্থন পেতেন। কিন্তু ছুটি ছাড়া আরো একটি দিবস পালনের জন্য কত আগ্রহ থাকবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। যাই হোক, নতুন দিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

এবারে কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক:

ফয়সাল আহমেদ সিপন, ঘোরাদাইর, গোপালগঞ্জ।

গোলাম মুকতাদির বাপ্পি, ঢাকা।

দীপক চক্রবর্তী, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়।

মুকুল সরদার, দাকোপ, খুলনা।

শাহীন তালুকদার, মৌকরন, পটুয়াখালী।

আরিফুল ইসলাম, পাইকগাছা, খুলনা।

শাহ আলম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

মোহাম্মদ রেজাউল রহিম, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

    এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন

  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
  • এডিটার'স মেইলবক্স: সিনেমায় পুলিশ নিয়ে বিতর্ক আর করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্ন
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com