আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

উন্নয়ন সাংবাদিকতা: কী, কেন, কোন পথে?

তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশে বা বিশ্বের দরিদ্রতম, অনুন্নত দেশে যখন ‘উন্নয়ন’ শব্দটি উচ্চারিত হয় তখন প্রথমেই যা ধারণায় আসে তা হলো খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা আর কৃষি উন্নয়নে এই দেশগুলো কতটুকু এগিয়েছে। হয়তো আরও কিছু সূচকের কথাও উঠে আসবে। উল্টোদিকে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকালে হয়তো প্রযুক্তি, আধুনিকতা, কর্মসংস্থান, ভালো বেতন- এসব উন্নয়নের কথাই উঠে আসবে। পশ্চিমা দুনিয়াতে এমন ধারণাটি অস্বাভাবিক নয়।

যদি বাংলাদেশের উদাহরণটি টানি, তাহলে সত্যিকারের উন্নয়ন বলতে বোঝাবে মানুষের উন্নয়ন, তাদের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনের বিষয়টি। আর এ কাজটি ত্বরান্বিত করতে সমাজের দর্পন, গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। গণমাধ্যম নামক এই স্তম্ভটির কাজের ব্যাপ্তি অনেক। এরই সুত্র ধরে বলতে হয় মানবকল্যাণের পেছনে সাংবাদিকতার গুরুত্ব’ও তেমনি কম নয়। তাই উন্নয়ন সাংবাদিকতার ধরণ-ধারণ, পটপরিবর্তন উন্নত দেশগুলোতে যেমন একদিকে ঝুঁকেছে, ঠিক তার উল্টোদিকের ভিন্ন একটি সড়কে উন্নয়নশীল, অনুন্নত আর দরিদ্রতম দেশগুলোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পথ রচনায় এগিয়ে এসেছে এক ভিন্ন চরিত্রের উন্নয়ন সাংবাদিকতা।

এশিয়া মহাদেশে ষাটের দশকের শেষ দিকে উন্নয়ন সাংবাদিকতার শুরু। তখনকার নব্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোতে উন্নয়নের লক্ষ্যে যোগাযোগের ধারণাটি যখন রাজনৈতিক এবং বিদ্যাজাগতিক সমর্থন পেয়েছিলো, ঠিক তখন থেকেই। সে সময় উন্নয়ন সাংবাদিকতাকে মূল্যায়ন করা হয় জাতীয় উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে। বোঝাই যাচ্ছে এই সাংবাদিকতার গুরুত্ব কতখানি।

ধীরে ধীরে, অন্যান্য মহাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে এই ‘নতুন’ সাংবাদিকতার ধারণা, বিশেষ করে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায়। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে চলার পথে আবিষ্কৃত হয়েছে নতুন নতুন নিয়ম, ধারণা, এবং অনালোকিত অনেক কিছুই হয়েছে আলোকিত। তবে, বলতেই হচ্ছে উন্নয়ন সাংবাদিকতার নতুন নতুন ধারণাগুলো এখনো সন্নিবেশিত হয়নি বিদ্যাজাগতিক পরিমন্ডলে, সাংবাদিকতার অধ্যয়নে।

অন্য যে বিষয়টিতে আমি আলোকপাত করতে চাই তা হলো তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর সঠিক বিশ্লেষণের কাজ এখনো অনেক বাকি আর এই কাজ শেষে মাঠে প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন আরও অনেক বেশি পেশাদারিত্বের। আমি দীর্ঘদিন যাবত উন্নয়ন সাংবাদিকতার পথে হাঁটছি।কাজ করছি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন সাংবাদিকতা বলতে একটু বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র কৃষি সাংবাদিকতা’র ইস্যুটিকে। এখানে আমার দ্বিমত রয়েছে। যদিও এই ধারা বা ধারণার পরিবর্তন ঘটে আশির দশকের শুরুতে।

২০১১ সালে আমার জন্মদিন উপলক্ষে জন্মদিনের আগের দিন একটি লেখার মাধ্যমে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন সাংবাদিকতার দিকপাল প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসা। ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তারিখে প্রথম আলো-তে প্রকাশিত সেই লেখায় তাঁর দেওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরছি এখানে।

“ইউনেস্কো তথা জাতিসংঘ শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্থার প্রধান হয়েছিলেন একজন আফ্রিকানবাসী এখ’বোবো। তিনি জিকির তোলেন পশ্চিমা সংবাদপত্রে অনুন্নত দেশগুলোর শুধু ‘ডেথ অ্যান্ড ডিজাস্টার’- মৃত্যু আর দুর্যোগের খবর পরিবেশন করে। একটি বিপরীত ধারার সাংবাদিকতার প্রচলন করতে হবে। নাম দিলেন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম। উন্নয়নমুখী করতে বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে উৎসাহ দান করতে দরিদ্র দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাঁরা চাইতেন, এশিয়া-আফ্রিকার দেশের দরিদ্র জনগণ আমেরিকার গম সাহায্য পি-এল-৪৮০, বিশ্বব্যাংকের ভিক্ষার ওপর চিরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাবে। তাঁর প্রেরণায় আজকের ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম, উন্নয়নকামী সাংবাদিকতার সূচনা হলো। কালক্রমে তাঁর প্রেরণাদায়ী উন্নয়ন সাংবাদিকতার বিস্তারের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সর্বক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করেছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, অধিক ফলনের জন্য সার প্রয়োগ আর উন্নত জাতের বীজ উৎপাদনের ধারণা উন্নয়নশীল দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কিছু দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলো। পশ্চিমা দেশের গম-চাল-অর্থের ওপর নির্ভরতার অবসান হলো। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্র সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের জনগণ, সরকার ও গণমাধ্যমের ধারণার পরিবর্তন হলো। যেসব দেশ শিল্প বিস্তার অথবা ছোটখাটো শিল্প-বিপ্লবের সম্ভাবনার কথা ভাবছিল, তারা ‘কৃষি-বিপ্লবের’ বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিল। উন্নয়নকামী উল্লিখিত দেশসমূহে কৃষি-বিপ্লব শুরু হয়ে গেল ‘নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের, স্টেপল ফুডের তথা মূল খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে। ফিলিপাইনে স্থাপিত ইন্টারন্যাশনাল রাইস ইনস্টিটিউট (ইরি) বহু ফলনশীল সব মৌসুমে চাষোপযোগী ধান আবিষ্কার করল। এ পদ্ধতি বিস্তার লাভ করল কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে। গম উৎপাদনকারী ভারত, পাকিস্তানে এল মেক্সিকো হুইট, নতুন প্রজন্মের গম।”

মনে পড়ছে আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, অধিক ফলনের জন্য সার আর উন্নত বীজ উৎপাদনের ধারণা, সেচ পদ্ধতির নানা বিষয় নিয়ে তখন অবিরাম প্রচারণা করেছি। এবিএম মূসা’র এই উদ্ধৃতির মাধ্যমে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় আবারও স্মরণ করছি।

উন্নয়ন বলতে তো শুধুমাত্র কৃষি বোঝায় না। বোঝায় সমাজ বা রাষ্ট্র উন্নয়নের অন্য সূচকগুলোকেও। যেখানে চলে আসে সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, ভূগোল আরও কত না বিষয়-আশয়। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষের সময়। ভাবতে হবে একটু অগ্রগামী হয়েই।

আমাদের দেশের তরুণ সাংবাদিকরা যারা উন্নয়ন সাংবাদিকতায় আসছেন বা আগ্রহী, তাদের উচিত হবে আরও সামগ্রিকভাবে ‘উন্নয়ন’ শব্দটির এবং এর বলয়ের বিচার-বিশ্লেষণ করা। বর্তমানের ‘উন্নয়ন সাংবাদিক’-কে হতে হবে একজন সচেতন সমাজ-উদ্যেক্তা যার চোখে ধরা পড়তে হবে সমাজের প্রতিটি স্তরের ফাঁকগুলো। অনুসন্ধানী চোখে সে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করবে যাতে নীতিনির্ধারণী মহলে প্রভাব পড়ে এবং সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যাগুলোর দ্রুত নিরসন করে। আর সেভাবেই তো সূচিত হয় মানব উন্নয়ন। উন্নয়ন সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমষ্টির কল্যাণ নিশ্চিত হতে হবে। সমাজের অগ্রগতি সাধিত হতে হবে। আর এ অবদানগুলোর ফলেই মানব সমাজ সামনে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশে যার অনেকটাই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি।

যদি কৃষি উন্নয়নের কথাই বলি, তাহলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। সনাতন পদ্ধতির কর্মসংস্থানের বিপরীতে তুলে আনতে হবে আত্মকর্মসংস্থান, আত্মোন্নয়নের গল্পগুলো যাতে অন্য আরেকজন অনুপ্রাণিত হয়, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের সুস্পষ্টভাবে বোঝাতে হবে উন্নয়নের আওতায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ও রয়েছে। নইলে ফসল উৎপাদন করে একটি ব্রিজ বা ভালো রাস্তার অভাবে মার খেতে পারে কৃষকের কষ্টার্জিত উৎপাদন। কৃষি বীমার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে বারবার কারণ জলবায়ুগত পরিবর্তন এখন একটি বৈশ্বিক ইস্যু। বলতে হবে ভালো একটি সড়ক থাকলে একজন মুমুর্ষূ রোগীকে যেমন দ্রুত চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে তেমনি নিশ্চিত করা যাবে কৃষকের বাজার। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থায় পাল্টে যাবে অনেক কিছু- এ বিষয়টি তুলে ধরাও উন্নয়ন সাংবাদিকতার বিরাট অংশ। এটাই আমার কাছে উন্নয়ন সাংবাদিকতার নতুন সংজ্ঞায়ন। আর, তা হাতে-কলমে প্রয়োগ করাই হবে উন্নয়ন সাংবাদিকতার অর্জন। গণমাধ্যম এখানে হবে ‘সহায়ক’ শক্তি আর নিশ্চিতভাবেই তা হবে ফলপ্রসূ।

পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে উন্নয়নের গল্প। জনগণের বড় অংশটি হলো স্বল্পশিক্ষিত বা নিরক্ষর বা বহুলাংশে নিজেদের ন্যায্য প্রাপ্য, সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত। এদের ভেতর অবহেলিত নারী, শিশুরা আছে। পুরুষ আছে, আছে নবীন-প্রবীণ। বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক মেরুদন্ডের কারিগর তো এরাই। সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে এদের অবদানেই তো আজ বাংলাদেশ বর্তমান অবস্থানে।

এই জনগোষ্ঠীকে উজ্জীবিত করার মানেই হলো গোটা জাতিকে উজ্জীবিত করা এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। উন্নয়ন সাংবাদিককে সেক্ষেত্রে একজন কার্যকর ‘উজ্জীবক’ হিসেবেও কাজ করে যেতে হবে। সমাজ পরিবর্তনের একজন গুরুত্বপূর্ণ রুপকার হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে নিজ দায়িত্বে। রাষ্ট্রের মূল রস যেখানে, সেই মাটির কাছেই ফিরে যেতে হবে। সেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথাই ভাবতে হবে; সেখানেই তো সকল অনুপ্রেরণা আর সাফল্য লুকিয়ে আছে।

অনেকাংশেই উন্নয়ন সাংবাদিকতাকে ‘নিরস’ একটি বিষয় বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই বিষয়টির সাথেও আমি ভিন্নমত পোষণ করি। আশির দশকে যখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান শুরু করি, তখন বন্ধু-বান্ধব প্রায়ই বলতো এ কেমন সাংবাদিকতা, কী হবে, ভবিষ্যত কী?

এমন অনেকগুলো ‘প্রশ্নবোধক’ চিহ্ন নিয়ে উন্নয়ন সাংবাদিকতায় আমার কাজ শুরু। এমন প্রশ্ন সে সময় পরিবার থেকেও কম ওঠেনি। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর সময়ে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করেছি নিবিড়ভাবে, প্রথমে শিল্পোন্নয়ন নিয়ে পরে কৃষি ও সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে। এবং আজকের দিনটি পর্যন্ত কাজ করে চলেছি। কারণ আমি জানতাম এ মাটিতে সোনা আছে। শুধু মাটি ও মানুষের শক্তিকে এক করাই ছিলো আমার কাজ। অমিত সম্ভাবনার এই বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে, যেনো দেশটির প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হতে পারে, তাই ছিলো আমার কাজের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, নিজের কাজের ওপর আস্থা রাখা এবং সততা’ও কিন্তু একজন সাংবাদিকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

আমি দেখেছি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ বিভাগ জানে না উন্নয়ন সাংবাদিকতা কী জিনিস? তাই লেখার শুরুতে পশ্চিমা বিশ্বে ‘উন্নয়ন’ শব্দটির ভিন্ন ব্যাখ্যা করেছি। পরে ওদের বুঝিয়েছি অপুষ্টি দুর করতে কী কী প্রয়োজন এবং তা সাজিয়ে তথ্যের মাধ্যমে উপস্থাপনের মানেও কিন্তু উন্নয়ন সাংবাদিকতা। এভাবে তাদের ভুরি ভুরি উদাহরণ দিয়েছি। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস্ এরকম সব উন্নত দেশগুলোতে কাজ করতে গিয়ে। তারা উন্নয়ন বলতেই বিদ্যুত, টেকনোলজি আর বড় বড় দালানকোঠা বোঝে, বোঝে গেমিং। বোঝে উইন্ড টারবাইন, আইসিটি, সার্ভার ম্যানেজমেন্ট, মোবাইল ডিভাইস, ট্যাবলেট আর অত্যাধুনিক গ্রিন হাউজ। বুঝতে চায় না এসব শক্তির মূল উৎস্যটি কী, কোথায় বা এই শক্তির কারিগর কারা?

ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লব ও এর আগে শিল্প বিপ্লব এর নতুন ধারণা, জ্ঞান, উৎকর্ষ সবই গণমাধ্যমের কল্যাণে মানুষের কাছে পৌঁছেছে। প্রায় ষাট বছর পর এখন পুরো বিশ্ব বৈরি প্রকৃতির মুখোমুখি। বৈশ্বিক উষ্ণতা আমদের চেপে ধরেছে। প্রকৃতির রুদ্রমূর্তি আমাদের সামনে। প্রায় সব ধরণের কৃষি উৎপাদন এখন ঝুঁকির মুখোমুখি। মানুষ এখন জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে। এমন একটা সময়ে এসে, এমনই চ্যালেঞ্জ-এর সামনে দাঁড়িয়ে আগামীর উন্নয়ন সাংবাদিক। নতুন নতুন তথ্য, জলবায়ু অভিযোজনশীল প্রযুক্তির কথা ছড়িয়ে দিতে হবে মানুষের কাছে। যাতে যেকোন বিপদ মোকাবিলা করা যায়। তাই এখনকার উন্নয়ন সাংবাদিক মানে ক্ষুরধার এবং তাকে অবশ্যই হতে হবে সুদূরপ্রসারী চিন্তার অধিকারী।

সবার শেষে বলতে হয়, এই অর্থবহ এবং ইতিবাচক সাংবাদিকতার ফলে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির অভাব যেমন অনেকটাই পূরণ হয়েছে তেমনি নিশ্চিত হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। এতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কারের অবদান কম নয়। আর কৃষি উন্নয়নের বাইরে গিয়ে উন্নয়ন সাংবাদিকতার প্রভাবে অন্যদিকে নিশ্চিত হচ্ছে জনগণের অন্যান্য মৌলিক অধিকারের ইস্যুগুলো, যেমন শিক্ষা, খাদ্য, স্বাস্থ্য ইত্যাদি।

এই অর্জন একটি প্রজন্মের। তবে নতুন প্রজন্মকে ভাবতে হবে আগামীর কথা। ভাবতে হবে একধাপ এগিয়ে। ভাবতে হবে ‘গৎবাঁধা’ নিয়মের উর্ধ্বে উঠে। উন্নয়ন সাংবাদিক হিসেবে হতে হবে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। হতে হবে নিজের কাজের প্রতি অপরিসীম আত্মবিশ্বাসী, সৎ, আত্মপ্রত্যয়ী ও সাহসী। মানুষের কল্যাণে, দেশের স্বার্থে সাংবাদিকতায় হতে হবে আরো মনোযোগী।

তবেই না অতি নিকটেই আমরা অর্জন করবো একটি উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com