আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

উন্নয়ন সাংবাদিকতা ও টেলিভিশন (শেষ পর্ব)

কৃষির বাজারজাতকরণ

এরপর চিন্তা করলাম কৃষকের পণ্যের বাজারজাতকরণ নিয়ে। শুরু করলাম পলিসি লেভেলের কাজ। উৎপাদন তো সে করলো। তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পেলো কি না, উৎপাদিত পণ্য নিয়ে সে মার্কেট প্লেস পেল কি না, এটা হলো মাটি ও মানুষের নেক্সট জেনারেশন।

দেখলাম কৃষক তার উৎপাদিত ফসল ধরা যাক বাঁধাকপি বিক্রি করছে ৩ টাকায়। আর সর্বশেষ ক্রেতার কাছে এসে তা দাঁড়ায় ৩২ টাকায়। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক ও সর্বশেষ ক্রেতা। আর মাঝখান দিয়ে বিশাল একটা অঙ্ক চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে। এটাই হচ্ছে ব্ল্যাকমানি। মধ্যস্বত্বভোগী একটা সিস্টেম। কৃষক নিজেও অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগী। এটাকে কমিয়ে আনা সম্ভব।

আমি খেয়াল করলাম নরসিংদীর একটি জমিতে কৃষক একটি বাঁধাকপি উৎপাদন করে পাইকারের কাছে বিক্রি করলো, বেলাবো বাজারে এসে তা হলো ১০ টাকা। এভাবে বিভিন্ন হাতবদল হতে হতে ঢাকার শান্তিনগরে এসে সেই বাঁধাকপির দাম হলো ৩২ টাকা। এই কথাগুলো শুরু করেছিলাম ২০০৪ সালে ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’-এর প্রথম অনুষ্ঠানে। বিষয় ছিল কৃষকের পণ্যের মূল্য। এর আগে কোনোদিন কৃষকের পণ্য নিয়ে কথা বলা শুরু হয়নি। ঐ থেকে মিডিয়া এ বিষয়ে কনসার্ন হলো। আর এগুলো প্রচার করা শুরু করলো।

বাংলাদেশ শুরুতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। সেখানে বাংলাদেশ এখন চাল রপ্তানি করছে। নগরায়ণ হলেও সব মানুষ এখনও নগরের বাসিন্দা হয়ে ওঠেনি। বেশিরভাগ মানুষ এখনও গ্রামে বাস করে। এমনকি পুরো পৃথিবীটা এখনও গ্রামপ্রধান। 

শহরে আমরা যারা আছি তারা আনন্দ করছি, ভালো খাচ্ছি কিংবা থাকছি। এটা আসলে উন্নয়নের আংশিক চিত্র বা ভঙ্গুর চিত্র। এটা কখনোই টেকসই উন্নয়ন নয়। কতদিন দাতাগোষ্ঠীর অর্থ দিয়ে চলবে। ওই কালো টাকা কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে থাকা টাকা চলে যাচ্ছে সমাজের এমন এক শ্রেণির কাছে যারা কখনোই সমাজের উন্নয়নে কোনো অবদান রাখে না। এই টাকাগুলো চলে যাচ্ছে বিদেশে। এই জায়গায় দরকার ডিস্ট্রিবিউশন অব ইকুয়ালিটি। এগুলোই হলো মিডিয়ার উন্নয়ন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র। 

এখনও বাংলাদেশের এগারো কোটি মানুষ গ্রামে বাস করে। কিন্তু যতটুকু তাদের ভালো থাকার কথা ততটুকু ভালো সে নাই। সে জানে না এত কষ্ট করে ফসল ফলানোর পরও ন্যায্যমূল্য তার ঘরে আসবে কি না। তার অনেক দ্রব্যেরই ক্রয়ক্ষমতা নেই অথচ সে উৎপাদক। আজকে যদি তার কেনার ক্ষমতা থাকতো তাহলে তার কথা চিন্তা করে বেশ কিছু শিল্প কারখানা তৈরি করা যেত। আমার তো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কথা চিন্তা করে সবকিছু বাইরে থেকে ইমপোর্ট করার দরকার নেই। আমাদের ডিস্ট্রিবিউশনে ইকুয়ালিটি নেই দেখেই এই অবস্থা। 

পাশাপাশি কৃষকের পণ্যে নেই কোনো ভ্যালু এডিশন। টমেটো বেশি উৎপাদন হয় কিংবা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ৩০ টাকা দামের এক কেজি টমেটোতে বড়জোড় সালাদ বা তরকারি হচ্ছে। কিন্তু টমেটো যখন ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং সেটা বোতল হয়ে বেরিয়ে আসছে তখন এর দাম হচ্ছে ২৩০ টাকা। এভাবে বেশিরভাগ পণ্যের ভ্যালু এডিশন হয় নাই। যদি তাই হতো, তবে কৃষক এ থেকে বেশ কিছু টাকা পয়সা পেতো। 

কৃষক একদিকে মূল্য পাচ্ছে না অন্যদিকে মুক্ত বাজার অর্থনীতির জন্য বাইরে থেকে অনেক কিছুই আমদানি করতে হচ্ছে। তাহলে সরকারের দায়িত্ব কী? আমদানি বন্ধ করতে না পারলেও নিরুৎসাহিত করতে পারে। যেসময় কৃষকের ফসল বাজারে উঠে ওইসময় উচ্চহারে কর আরোপ করে ইমপোর্টারকে নিরুৎসাহিত করতে পারে। এভাবে ১১ কোটি মানুষের কাছে যদি ন্যায্য পাওনা যেত তাহলে বাংলাদেশের চেহারা আজ কী হতো? ওটা হতো টেকসই অর্থনীতি।

উন্নয়ন সাংবাদিকতা অনেকটা ইন-ডেপথ বিষয়, এখানে কাজ করার অনেক জায়গা রয়েছে! বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে তিনটি অর্থনৈতিক স্তম্ভের উপর- গার্মেন্টস, রেমিটেন্স ও কৃষি। এর মধ্যে সবচেয়ে টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব কৃষিতে। কিন্তু এই কৃষি বা কৃষককে আমরা কতটুকু মূল্যায়ন করছি? গার্মেন্টস যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে, কিছু রেমিটেন্স দেয়া ছাড়া বেশিরভাগ অর্থই যাচ্ছে এর মালিকের কাছে। এই গার্মেন্টসের বেশিরভাগ শ্রমিকরাই হলো দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। বিদেশ থেকে যারা রেমিটেন্স পাঠায় তাদেরও মোটামুটি ৯০ ভাগই হলো গ্রামের সন্তান। তাদের টাকাটাই কৃষির সাথে সম্পর্কিত। ৫০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকের টাকাও এসে জুড়ে যাচ্ছে এই কৃষিতে। রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে ব্যবসায়ীদের কৃষিতে বিনিয়োগ করানোর জন্য। বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশের চেহারাটা কেমন হতো তা বোঝা যায় নাটোরে প্রাণের বিনিয়োগের কথা চিন্তা করলে। ডাল আর মটর দানার চাষ করার মাধ্যমে তারা তাদের ভাগ্যের উন্নতি করেছে। আমের ক্ষেত্রেও তাই। গাছ থেকে পড়ে যে আম নষ্ট হচ্ছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছে বিশাল জুসের ফ্যাক্টরি। এরকম কত ধরনের ফসল হচ্ছে, যেগুলোতে ভ্যালু এডিশন করলে অনেক বেশি লাভ হতো কৃষকদের। 

জলবায়ু পরিবর্তন এর সাথে আগামীর স্বাস্থ্য, কৃষি কিভাবে পরিবর্তন হবে এটাও দেখা উচিত আগামী দিনের উন্নয়ন সাংবাদিকদের। শুধুমাত্র ক্রাইম বিট বা পলিটিক্যাল বিট করাই সাংবাদিকতা নয়। 

বৈশ্বিক গণমাধ্যমের কথা চিন্তা করলে দেখা যায় গণমাধ্যম যদি একটু একটু করে সমাজে অবদান রাখতো তাহলে এই পৃথিবীর মানুষ আরো উন্নত হতো। আর গণমাধ্যম সবচেয়ে বড় অন্যায় করছে কৃষিকে অবহেলা করে। দুর্যোগের আগে কৃষি সম্পর্কে গণমাধ্যম সচেতন হয় না। এ কারণে গণমাধ্যমকে অনেক চিন্তাশীল জায়গা থেকে কাজ করা দরকার। বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে। জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, প্রকৃতি এগুলোর দিকে চোখ রাখা উচিত। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের তরুণ সাংবাদিকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। 

কৃষক শুধুমাত্র খাদ্য উৎপাদনের যন্ত্র নয়, তারাও রক্তমাংসের মানুষ। তাদেরও আনন্দ বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণে ধাপে ধাপে তৈরি করেছি কৃষকের ঈদ আনন্দ। ২৫-২৬ টি টেলিভিশন জুড়ে ঈদের সময় যতগুলো অনুষ্ঠান হয় সবগুলোই নগরপ্রধান। গ্রামপ্রধান বাংলাদেশে কোনো অনুষ্ঠানই কৃষকদের নিয়ে হয় না। আমরা এই ধরনের প্রোগ্রামগুলো করি কৃষকের ক্ষমতায়নের জন্য। তারা নিজেদের যেন ছোট না ভাবে। এমনকি আয়োজন করি কৃষকের ফুটবল কিংবা ক্রিকেট বিশ্বকাপ। 

বেশি ফসল ফলাতে ফলাতে মাটি যেমন জরাজীর্ণ হয়ে যায়, তেমনি কৃষকও অনেক কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। কৃষক এরকম নানা ধরনের অকুপেশনাল হ্যাজার্ডসের মধ্যে পড়ছে। বাংলাদেশের কৃষকরা গামবুট, গ্লাভস কিংবা মাস্ক ব্যবহার করে না। অন্যান্য উপকরণের মতো এই তিনটি জিনিস প্রতিটি কৃষকের ঘরে অবশ্যই রাখা উচিত। কারণ সে যে মাটিতে খালি পায়ে হাঁটছে সেখানে হয়তো একটু আগে সার বা কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। হয়তো আগের দিনই তার পা কাটা গেছে কোনো কাজ করতে গিয়ে। এখন সার মেশানো পানি তার শরীরে ঢুকে পরে তার গ্যাংগ্রিন হতে পারে। সার কোম্পানিগুলোও পারতো কৃষকদের একটা করে মাস্ক দিতে। এগুলো করতে পারতো যদি মিডিয়াগুলো সচেতন হতো। বার বার হাত দিয়ে চারা বুনতে বুনতে কৃষকের হাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কৃষকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও আমি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। 

আমাদের ডাক্তারদের গ্রামে পাঠাতে হবে। তারা কৃষকদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে পারবেন। কী কী অকুপেশনাল ও সিজনাল হ্যাজার্ড সম্পর্কে সচেতন করতে পারি, সেটা ভাবা দরকার। তথ্য দিয়ে তাদের সচেতন করতে হবে। পড়াশোনা করে গ্রামে ফিরে গেলে গ্রামের মানুষের সাথে বন্ধন তৈরি হবে। এই বন্ধন এমন অটুট হয়, যে দুই বছর পর যখন গ্রাম থেকে সে ফিরে আসে, তখন সারা গ্রামের মানুষ ডাক্তারের জন্য কাঁদবে। এগুলো নিয়ে আমাদের উন্নয়ন সাংবাদিকদের কাজ করতে হবে।

দেশের অর্থনীতিতে বাজেট খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু দেশের ১১ কোটি মানুষের মতামত না নিয়ে নীতি নির্ধারকরা বাজেট তৈরি করে। কৃষকদের কী দরকার এসম্পর্কে তারা জানেই না। তাদের কি প্রয়োজন না জেনেই একটা বাজেট দিয়ে দিলে তো সেটা ফলপ্রসূ হবে না। আগে তার কী দরকার, এটা জানার জন্য শুরু করলাম ‘কৃষি বাজেট, কৃষকের বাজেট’। এগুলো হলো পুরো একটা প্রসেস।

নগর আর গ্রামের মানুষের বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। উৎপাদক উৎপাদন করেও দুবেলা খাবার পায় না, নগরের মানুষ কোনো অবদান না রেখেই খাবার খাচ্ছে। আজকের এই কর্পোরেট প্রজন্ম, যারা জানে না গ্রাম কী, কীভাবে খাবার আসে- তাদের অংশগ্রহণে শিকড়ের কাছে দিতে চেষ্টা করলাম ‘ফিরে চল মাটির টানে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে ‘ফিরে চল মাটির টানে, জুনিয়র’। সেখানে কৃষকরা কিভাবে টাকা আয় করে, সেই জীবনধারাকে শহরের সাথে রিলেট করতে এই আয়োজন। এভাবে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানে হয়তো যাচ্ছে তিন-চার জন ছেলে-মেয়ে, কিন্তু দেখছে হাজার হাজার মানুষ। মনের দিক থেকে সেখানে রয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এগুলোই হলো উন্নয়ন সাংবাদিকতার বিভিন্ন ক্ষেত্র।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com