আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

উজানের দেড় শ কিমিজুড়ে ছড়িয়েছে লবণাক্ততা

বরিশাল আঞ্চলিক মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপাত্ত ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেল। এই সংস্থাগুলো এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানির মান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে।

মৃত্তিকা ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তড়িৎ পরিবাহিতা বা ইসি পানির লবণাক্ততা পরিমাপের একটা মাপকাঠি। পানিতে লবণাক্ততা সহনীয় মাত্রা হচ্ছে প্রতি সেন্টিমিটারে ৭৫০ মাইক্রো সিমেন্স। বরিশালের নদীগুলোর পানি সহনীয় মাত্রার অনেক বেশি পরিমাণে লবণাক্ত। বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের নদীগুলোতে উজানের প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের বেশি জুড়ে এই লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কৃষি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে। সম্প্রতি বরিশাল অঞ্চলে যে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছে, এর পেছনে পানির লবণাক্ততাকেও দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য গবেষকেরা।

লবণাক্ততার মাত্রা এতটা উজানে চলে আসার বিষয়টি আমাদের জন্য অশনিসংকেত। এখনই তা অনুসন্ধান করা উচিত। খরা, তাপমাত্রার পাশাপাশি উজানে পানি প্রবাহ হ্রাস হওয়ার পেছনে এর ভূমিকা আছে।

সাব্বির হোসেন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়, মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট

অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপপ্রবাহ ও নদ-নদীতে অস্বাভাবিক লবণাক্ততার প্রভাবে পাল্টে যাচ্ছে পুরো দক্ষিণ উপকূলের পানি, মাটি ও পরিবেশের গুণগত চরিত্র।বিজ্ঞাপন

কীর্তনখোলার মতো বরগুনার বিষখালী অংশে এপ্রিলে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল প্রতি সেন্টিমিটারে ২ হাজার ৮৪ মাইক্রোসিমেন্স। একই সময়ে পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীতে লবণাক্ততা ছিল প্রতি সেন্টিমিটারে ৩ হাজার ৭১ মাইক্রো সিমেন্স। পায়রা নদীর আমতলী অংশে লবণাক্ততা ১২ হাজার ৮০ সিমেন্স, বলেশ্বর নদের পাথরঘাটার চরদুয়ানি অংশে পাওয়া যায় ১৪ হাজার ৪০ সিমেন্স।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসংখ্য নদী-খালবেষ্টিত হওয়ায় অন্যান্য উপকূলীয় এলাকা থেকে বরিশালের মাটি, পানি ও আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য আলাদা। শুষ্ক মৌসুমেও উজান থেকে মিষ্টি পানির যথেষ্ট প্রবাহ থাকায় সাগরের লবণ পানি এসব নদীর অভ্যন্তরে ঢুকতে পারত না। তবে গত কয়েক বছর লবণাক্ততা, অনাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই এই পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হয়। সুরক্ষিত এলাকায় অস্বাভাবিক লবণাক্ততা ছড়িয়ে তা উজানের দিকে ধেয়ে এসেছে। এর মধ্যেই দেড় শ কিলোমিটারের বেশি এলাকায় লবণাক্ততা ছড়িয়েছে। এ নিয়ে নিবিড় অনুসন্ধান প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

তীব্র খরতাপে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। নদ-নদীর পানিও লবণাক্ত। তাই দূরের গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ করেন নারীরা। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার রূহিতা গ্রাম থেকে  সম্প্রতি তোলা
তীব্র খরতাপে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। নদ-নদীর পানিও লবণাক্ত। তাই দূরের গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ করেন নারীরা। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার রূহিতা গ্রাম থেকে সম্প্রতি তোলা

কীর্তনখোলায় ২০১৮ সালের মার্চে লবণাক্ততার মান ছিল ৪৪০ মাইক্রোসিমেন্স। ২০১৯ সালে তা ছিল ৪০৪ মাইক্রোসিমেন্স। ২০২০ সালেও একই মান বজায় ছিল। ভোলার তজুমদ্দিন এলাকার মেঘনা-সুরমা পয়েন্টে ২০১৮ সালের মার্চে এই মান ছিল ১ হাজার ২৯৮ মাইক্রোসিমেন্স, ২০১৯ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৯৫ মাইক্রোসিমেন্স। ২০২০ একই সময়ে তা আরও বেড়ে হয় ২ হাজার ২২১ মাইক্রো সিমেন্স। বিষখালী নদীর বরগুনার বেতাগী পয়েন্টে ২০১৮ সালের মার্চে লবণের মান ছিল ১ হাজার ৭২৫ মাইক্রোসিমেন্স। ২০১৯ সালের ওই সময় তা আরও বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৩৯। ২০২০ সালের ওই সময়ে ছিল ১ হাজার ৫৮৭ মাইক্রোসিমেন্স।

মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সাব্বির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, লবণাক্ততার মাত্রা এতটা উজানে চলে আসার বিষয়টি আমাদের জন্য অশনিসংকেত। এখনই তা অনুসন্ধান করা উচিত। তিনি মনে করেন, খরা, তাপমাত্রার পাশাপাশি উজানে পানিপ্রবাহ হ্রাস এর পেছনে আসল ভূমিকা রাখছে।

বাড়ছে তাপমাত্রা

আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুয়ায়ী, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বরিশাল অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি, কিন্তু ছিল ৩৪ ডিগ্রি, মার্চে থাকার কথা ৩২ দশমিক ২, ছিল ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি, এপ্রিলে থাকার কথা ৩৩ দশমিক ৪, ছিল ৩৫ দশমিক দশমিক ৭ ডিগ্রি। তবে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল ৪০-এর ওপরে।

একইভাবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বরিশালে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ছিল ২৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ১৫ জানুয়ারি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৬ জানুয়ারি তা ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে পৌঁছায়। আর ১৭ জানুয়ারি তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে, যা স্বাভাবিকের ৫ ডিগ্রি বেশি।


তাপমাত্রার এই অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে ২০১৯ সালের শীত মৌসুমেও। ওই বছর ২৮ জানুয়ারি বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি, যা শীত ঋতুতে গড় তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রি বেশি। ওই বছরের ২৭ জানুয়ারি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূল শিক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে আমাদের গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। ফলে শীত ও গ্রীষ্ম অত্যধিক চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে।

বৃষ্টিপাতের হেরফের

তাপমাত্রার এমন অস্বাভাবিকতার ফলে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকায় ছয় ঋতুর চরিত্র ক্রমে ম্লান হচ্ছে। উষ্ণায়নের ফলে বেশি প্রভাব পড়েছে বৃষ্টিপাতে। কয়েক বছর ধরে মৌসুমে কম বৃষ্টি আবার কখনো অধিক বৃষ্টি এ অঞ্চলে নতুন দুর্যোগের সৃষ্টি করছে।

আবহাওয়া বিভাগের তথ্য বলছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল চার মাসে ২৩০ দশমিক ১৭ মিলি বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৩ মিলি, যা স্বাভাবিকের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
২০১৯ সালেও এ অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়নি। জুন-জুলাইয়ে গড় বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ৮১৫ দশমিক ৭ মিলিমিটার। হয়েছিল ৫৯২ দশমিক ১০ মিলি। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ৫৩০ দশমিক ৪ মিলি। হয়েছিল ৪৩৬ মিলি।বিজ্ঞাপন

২০১৭ সালের বর্ষা মৌসুমের চার মাসে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। অথচ ২০১৬ সালে দেশে বৃষ্টি হয়েছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কম। আবার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন) মাসে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক হারের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব

নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বরিশাল বিভাগে কয়েক বছর ধরে চালের উৎপাদন বাড়ছে। গত বছর তিন ফসল মিলিয়ে এই বিভাগে প্রায় ৩১ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। একইভাবে দেশের ৮০ ভাগ মুগ ডাল, ৬৫ ভাগ তরমুজ উৎপাদন হয় এই বিভাগে। চলতি বছর বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ মেট্রিক টন চাল। মুগ আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া ৫০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে রবি আবাদ হয়েছে। কিন্তু টানা তাপপ্রবাহ, খরা আর লবণাক্ততার কবলে পড়েছে এই ফসল। ধারাবাহিক উচ্চ তাপপ্রবাহে এরই মধ্যে কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো এবং মুগ ডাল ও রবি ফসলের খেত পুড়ে গেছে। কৃষি বিভাগ এর হিসাব কষছে।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিমুর রহমান বলেন, ‘জমি একবার লবণাক্ত হয়ে গেলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো (রি ক্লানেশন) সহজ নয়। আমরা যত সহিষ্ণু ভ্যারাইটি করি না কেন তাতে কোনো কাজে আসবে না। উৎপাদন হ্রাস পাবে। তাই এটা রোধে দ্রুত সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কীভাবে লবণাক্ততা আগ্রাসন ঠেকাতে পারি।’

শুধু কৃষি নয়, বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের মোট ইলিশের ৬৬ ভাগের জোগান দেয় বরিশাল অঞ্চল। একইভাবে মিঠাপানির মাছ উৎপাদনেও এই বিভাগের অবদান অনেক। নদ-নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ইলিশসহ মিঠাপানির মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

ডায়রিয়াসহ রোগবালাই বাড়ছে

উচ্চ মাত্রার লবণাক্ততার প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলের জনস্বাস্থ্যে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি হেলথ অ্যান্ড হাইজিন বিভাগ ২০১৮ সালের জুনে এ নিয়ে একটি গবেষণা চালায়। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ওই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

পটুয়াখালীর বলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ও বালিয়াতালী দুটি ইউনিয়ন থেকে মোট ১০০ জন নারীকে (যাঁদের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে) নিয়ে প্রথমে সমীক্ষা হয়। ওই এলাকার গভীর নলকূপ, পুকুর-খালের পানি এবং সমীক্ষায় অংশ নেওয়া নারীদের প্রস্রাবের (ইউরিন) নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।

নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, ৫৮ ভাগ নারী প্রতিদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ২ গ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এখানে নলকূপের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ পুকুরের পানির তুলনায় বেশি। গভীর নলকূপের পানির লবণাক্ততার পরিমাণ প্রতি সেন্টিমিটারে ২২২০ মাইক্রো সিমেন্স। পুকুরের পানিতে তার পরিমাণ পাওয়া যায় ৪১০ মাইক্রো সিমেন্স।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী ওই এলাকার গভীর নলকূপে সহনীয় সোডিয়ামের মাত্রা হচ্ছে ৬৯৭ মাইক্রোসিমেন্স। আর পুকুরে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা ১৩৪ মাইক্রো সিমেন্স। পানির এই উচ্চমাত্রার লবণাক্ততা এ নারীদের প্রস্রাব ও রক্তচাপে দৃশ্যমান প্রভাব ফেলেছে।

উচ্চ মাত্রার লবণাক্ততার প্রভাবে স্বাস্থ্যগত সমস্যা সম্পর্কে গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। কেবল গ্যাস্ট্রিক, চর্মরোগ, বাতব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ এসব স্বাস্থ্য সমস্যার কথার কথা জানেন তাঁরা। তবে কিছু উত্তরদাতা প্রশ্নোত্তরে মূত্রথলির জ্বালা, বেদনাদায়ক প্রস্রাব, স্ত্রীরোগজনিত সমস্যা, রক্তপাত এবং অকাল গর্ভপাত, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (হৃদরোগ ও রক্তনালির রোগ), হাঁপানি, অ্যালার্জিসহ বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে টাইফয়েড, পাইলস, অবসাদ, থাইরয়েড, স্ট্রোক, সর্দি, দন্তরোগ, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যা, রক্ত স্বল্পতার কথাও বলেছেন।

তীব্র খরতাপে পুড়ে চিটা হয়ে গেছে বোরো ধান। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি
তীব্র খরতাপে পুড়ে চিটা হয়ে গেছে বোরো ধান। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি

২০১৩ সালে বিশ্ব ব্যাংক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, পানির বর্ধিত লবণাক্ততা ডায়রিয়ার ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে। প্রতিবেদনে এ–ও বলা হয়, লবণাক্ত জলে কলেরার জীবাণু ভিব্রিও কলেরি (ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ক্ষুদ্রান্ত্রের একটি সংক্রামক রোগ) দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার কারণে ঘন ঘন কলেরার প্রাদুর্ভাব হতে পারে।

পানির বর্ধিত লবণাক্ততার প্রভাব দেখা যায় এবার এই অঞ্চলের ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের মধ্য দিয়ে। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে, গত ১ জানুয়ারি থেকে এই বিভাগে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেই থেকে ২৬ এপ্রিল অবধি বিভাগে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ৭ জন। আর গত এক মাসে এই বিভাগে আক্রান্ত হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি। এপ্রিল মাসে সরকারি হিসাবে মারা গেছে ১১ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩০ জনের বেশি।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি হেলথ অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লিটন চন্দ্র সেন প্রথম আলোকে বলেন, লবণাক্ততার প্রভাবে উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-অ্যাকলামসিয়ার মতো আরও অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যা উপকূলে প্রকট হচ্ছে—সেটা গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। ডায়রিয়ায় এর প্রভাব নিয়ে এখনো গবেষণা হয়নি। তবে এটা ঠিক খরা এবং তাপপ্রবাহের কারণে নদ-নদী, পুকুর শুকিয়ে যায়। এতে লবণের ঘনত্ব বাড়ে। অতিরিক্ত গরমে মানুষের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ায় সোডিয়াম পটাশিয়াম ইমলান্স হয়। এতে শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া মারা গিয়ে হজম শক্তি হ্রাস পায় এবং প্রবল তৃষ্ণা থাকায় মানুষ হাতের কাছে যেকোনো আঁধারের পানি পেলেই তা পান করার প্রবণতা আছে। ফলে পরোক্ষভাবে ডায়রিয়ায় লবণাক্ততার প্রভাব থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com