আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ইসলাম

নারী নির্যাতন রোধে ইসলাম কী বলে?

বিশ্বমানবতার কল্যাণে ইসলামের আবির্ভাব। নারী ও পুরুষ অধিকার নিশ্চিত করতে ইসলামের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয় নারী নির্যাতন। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অহরহ ঘটে চলেছে নারীর প্রতি অমানুষিক নির্যাতন। অথচ ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান। ইসলাম নারীকে মা, স্ত্রী, বোন ও কন্যার পরিচয়ে সংরক্ষণ করে দিয়েছে মর্যাদা সব অধিকার।

নারীর মর্যাদা

নারীরা একে অপরের সাহায্যকারী বন্ধু হওয়া, সৎকর্মশীল হওয়া, অসৎকাজ থেকে বিরত থাকা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করা, বার্ষিক হজ পালন, জাকাত দেওয়াসহ ইবাদত-বন্দেগি পালন ও সামাজিক প্রায় সব কাজেই পুরুষের মতো নারীদের অংশগ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা বাধ্যতামূলক। এসব কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীরা তাদের নৈতিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করতে পারে এবং আল্লাহমুখী আধ্যাত্মিক চেতনা গড়ে তুলতে পারে। পবিত্র কুরআনের বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা বরেন-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

হে নবি! ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২)

কুরআন-সুন্নায় নারীর প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

সমাজে যখন নারীর অবস্থান ছিল অমানবিক; তখন থেকেই ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা উন্নয়নের জন্য নজীরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে নারী নির্যাতনের কিছু দিক তুলে ধরে তা প্রতিরোধে ইসলামের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো-

১. নারী সৃষ্টিতে সেরা

মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা দিয়েছৈ ইসলাম। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ অতীব সম্মানিত ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। ইসলাম জন্মগতভাবে মানুষকে এ মর্যাদা দিয়েছে। কেননা ইসলামের বিধিবিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য সমানভাবে শাশ্বত ও চিরন্তন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ

আর নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মানিত করেছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৭০)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত মানবিক সম্মান ও মর্যাদার বিচারে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো নারীকে শুধু নারী হয়ে জন্মানোর কারণে পুরুষের তুলনায় হীন ও নীচ মনে করা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীরাও মহান আল্লাহর সম্মানিত সৃষ্টি।

২. ঈমান-আমলে নারীর মর্যাদা

ইসলামের দৃষ্টিতে ঈমান-আমলে নারী-পুরুষের মর্যাদাগত কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য আছে বলে মনে করাও অজ্ঞতা। ইসলাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, মর্যাদা-লাঞ্ছনা এবং মহত্ত্ব-নীচতার মাপকাঠি হচ্ছে- তাকওয়া তথা পরহেজগারী এবং চরিত্র ও নৈতিকতা। তাকওয়া ও চরিত্রের মাপকাঠীতে যে যতটা খাঁটি প্রমাণিত হবে আল্লাহর কাছে সে ততটাই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِن فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَة وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ

‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক; আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব; যা তারা করত।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৯৭)

> فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّي لاَ أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنكُم مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ

‘অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৫)

৩. সমাজ বিনির্মাণে নারী

জীবনের সবরকম কর্ম তৎপরতা ও উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সব সময় একে অপরকে সহযোগিতা করে থাকে। আল্লাহ তাআলা এক্ষেত্রেও উভয়কে সম মর্যাদা দান করেছেন। তাদের পারস্পরিক মিলে জীবনের কঠিন কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। উভয়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সভ্যতা ও তামাদ্দুনের ক্রমবিকাশ ঘটেছে। আল্লাহ বলেন-

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তাআলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৭১)

৪. নারীকে দোষারোপ থেকে মুক্তি

গোটা দুনিয়া যখন নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো তখন ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاء يَهَبُ لِمَنْ يَشَاء إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاء الذُّكُورَ – أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَن يَشَاء عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ

‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’আলারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তা ন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।’ (সুরা শুরা : আয়াত ৪৯-৫০)

এ কারণে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আমরা আমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে এবং প্রাণ খুলে মেলামেশা করতেও ভয় পেতাম; এ ভেবে যে, আমাদের সম্পর্কে কোনো আয়াত যেন  নাজিল না হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর আমরা প্রাণ খুলে তাদের সঙ্গে মিশতে শুরু করলাম।’ (বুখারি)

৫. কন্যা সন্তান হত্যা রোধে পুরস্কারের ঘোষণা

জাহেলিয়াতের যুগে নারীর বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত ছিল না। ইসলামের ঘোষণা এলো এভাবে যে, না, তারাও জীবিত থাকবে এবং যে ব্যক্তিই তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে; মহান আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَإِذَا الْمَوْؤُودَةُ سُئِلَتْ – بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ

‘যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে- কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল?’ (সুরা তাকভির : আয়াত ৮-৯)

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানদের হত্যা প্রতিরোধে বিশেষ ঘোষণা দেন।  হাদিসে পাকে এসেছে-

> হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তির কন্যা সন্তান আছেআর যে তাকে জীবন্ত কবর দেয়নি কিংবা তার সঙ্গে লাঞ্ছনাকর আচরণ করেনি এবং পুত্র সন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার দেয়নি; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (আবু দাউদ)

> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তান লালন পালন করেছে, তাদেরকে উত্তম আচরণ শিখিয়েছে, বিয়ে দিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করেছে; সে জান্নাত লাভ করবে।’ (আবু দাউদ)

৫. নারীর প্রতি সদয় আচরণের নির্দেশ

আল্লাহ তাআলা নারীর প্রতি কোমল ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ

‘নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৯)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের কাঁচের সঙ্গে তুলনা করতেন। তাদের প্রতি সদয় হওয়ার তাগিদ দিতেন। তিনি বলেন-

‘কাঁচগুলোকে (স্ত্রীদেরকে) একটু দেখে শুনে যত্নের সঙ্গে নিয়ে যাও।’ (মুসলিম)

আধুনিক সমাজেও নারীর প্রতিবন্ধকতা

আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার নামে নারীকে অগ্রসর ভাবা হলেও নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছে; আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং বহু ক্ষেত্রে তারা নির্যাতিত। যেসব ক্ষেত্রে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা নারীর পাশে দাঁড়াতে পারেনি; যে কারণে নারীরা-

১. নিরাপদে ঘরতে বের হতে পারে না।

২. পাচারের শিকার হয়।

৩. জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।

৪. অহরহ যৌন হয়রানির শিকার হয়।

৫. গর্ভবতী নারীও স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর ও ননদদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পায় না।

৬. যৌতুকের বলি হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

৭. স্বামী ও পিতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

৮. অধিকাংশ নারীই পায় না মোহরানার অধিকার।

৯. শিশুকন্যাদের ঝুঁকিপূর্ণ গৃহপরিচারিকার কাজে বাধ্য করা হয়।

১০. নারীদের শ্রমের সঠিক মূল্যয়ন করা হয় না।

১১. আধুনিক সভ্যতায় উচ্চ মর্যাদার নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১২. এমনকি ধর্মীয় অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয় নারীকে।

১৩. তালাকের অপব্যবহার হয় অহরহ।

নারীর অধিকার আদায় ও নির্যাতন রোধে করণীয়

নারী এসব নির্যাতন রোধে ইসলামে কী বলে? ইসলাম নারীর শিক্ষা অর্জনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করেছে। এমনকি ইসলামি শরিয়াতের সীমার মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে পুরুষের মতো শ্রম-সাধনা করায় নারীর সমান অংশগ্রহণের অনুমতিও রয়েছে।

ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। যেখানে নারীরা তাদের মান মর্যাদা ও ইজ্জত-আব্রু হেফাজরে নিশ্চয়তাই পায় না বরং নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পায় সঠিক দিকনির্দেশনা। কুরআনুল কারিমের নির্দেশনাগুলো তুলে ধরা হলো-

১. নারীর নিরাপত্তায় উপদেশ

ইসলাম নারীর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করেছে। রাস্তায়, কর্মস্থলে ও যত্রতত্র নারীদের হয়রানি করা তো দূরের কথা বরং ইসলাম নারীদের সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি দিতেও কঠোর নির্দেশ দেয়। আল্লাহ বলেন-

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

‘হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।‘ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)

আর কেউ যেন নারীকে হয়রানি না করে সে জন্য নারীকে বোনের দৃষ্টিতে দেখার ঘোষণা দেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন-

إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَال

‘নারীরা পুরুষদের সহোদরা (বোন)।’ (আবু দাউদ)

২. ব্যভিচার-ধর্ষণ-অপবাদ রোধের ঘোষণা

ইসলাম ব্যভিচার, দেহব্যবসা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও দেহপ্রদর্শনীকে নিষিদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, ইসলামে নারীকে ধর্ষণ করা কিংবা ধর্ষণের চেষ্টা করা এবং নারীকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার অত্যন্ত ভয়াবহ শাস্তি ঘোষণা করেছে। যাতে খারাপ চিত্তের পুরুষগণ এসব অবাঞ্ছিত কাজ থেকে বিরত থাকে। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

> وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً

আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩২)

وَلاَ تَقْرَبُواْ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ

‘আর তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার কাছাকাছি যেও না।।’ (সুরা আল-আনআম : আয়াত ১৫১)

> إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’ (সুরা নুর : আয়াত ১৯)

> إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

‘যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে গুরুতর শাস্তি।’ (সুরা নুর : আয়াত ২৩)

৩. নারীর অধিকার বাস্তবায়নের নির্দেশ

ইসলাম নারী দিয়েছে সম্পদের অধিকার। এ অধিকার আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। চাইলে যে কেউ নারীকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার করবে এমন অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন কোরআনুল কারিমের এ আয়াতে-

يُوصِيكُمُ اللّهُ فِي أَوْلاَدِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الأُنثَيَيْنِ فَإِن كُنَّ نِسَاء فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلأُمِّهِ السُّدُسُ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آبَآؤُكُمْ وَأَبناؤُكُمْ لاَ تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعاً فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيما حَكِيمًا

‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন, একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দুই-এর অধিক, তবে তাদের জন্য ওই মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের বাবা-মার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে রেখে যাওয়া সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের ছেলে থাকে। যদি ছেলে না থাকে এবং বাবা-মা ওয়ারিস হয়, তবে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। ওসিয়ত পূরণ করার পর; যা (ওসিয়ত) করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের বাবা ও ছেলের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১)

এ আয়াতে নারী ক্ষেত্র বিশেষ যেমন পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে; আবার ক্ষেত্র বিশেষ নারীর সমান অর্ধেক সম্পত্তিও পাবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর নারীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার ঘোষণা করেছে ইসলাম।

৪. মোহর দেওয়ার নির্দেশ

 নারীর মোহরানার অধিকার সম্পর্কেও ইসলাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

> يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ

হে নবি! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদের আপনি মোহরানা প্রদান করেন।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫০)

وَآتُواْ النَّسَاء صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا

‘আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪)

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاء اللَّهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِي هَاجَرْنَ مَعَكَ وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِن وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَن يَسْتَنكِحَهَا خَالِصَةً لَّكَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ قَدْ عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَيْهِمْ فِي أَزْوَاجِهِمْ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ لِكَيْلَا يَكُونَ عَلَيْكَ حَرَجٌ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

‘হে নবি! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা (মোহর) ফরজ করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : ৫০)

৫. নারীর প্রতি নির্যাতন নয়

নারীকে যে কোন ছুঁতোয় দৈহিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে নির্যাতন করা ইসলামি শরীয়তে বৈধ নয়। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের জীবনে তার কোনো স্ত্রী  কিংবা কন্যার গায়ে হাত তোলেননি।

বাসা-বাড়ীতে কর্মরত কাজের মেয়ে কিবং বুয়ারাও ক্রীতদাসী নয়। ইসলামে ক্রীতদাস প্রথাবিলোপ করা হয়েছে। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাস-দাসীদের ব্যাপারে বিশেষ নসিহত পেশ করেছেন-

‘তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমাদের দাসদাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খেতে দেবে এবং তোমরা যা পরবে তাদেরকে তা পরতে দেবে।’ (মুসনাদ আহমাদ, আত-তাবাকাত আল-কুবরা)

৬. নারীকে অপবাদ দেওয়ার শাস্তি

ইসলামে নারীকে অপবাদ দেওয়া নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে-

>  وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

‘যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই নাফারমান।’ (সুরা নুর : আয়াত ৪)

৭. তালাকের অপব্যবহার রোধ

স্বামী-স্ত্রীর অস্বস্তিকর জীবনের সুন্দর সমাধানের জন্য ইসলাম তালাকের বিধান রেখেছে। স্বামীর হাতে যদিও তালাকে প্রাথমিক অধিকার ন্যস্ত হয়েছে, কিন্তু সে অধিকার অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করাও ইসলামি শরিয়তে আরেকটি অন্যায় ও গোনাহের কাজ হিসেবে বিবেচিত।

মনে রাখা জরুরি

বিয়ে যেভাবে সামাজিক সমঝোতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে ঠিক তেমনি তালাকও উভয়ের বোঝাপড়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। এ ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো এমন-

وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُواْ حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلاَحًا يُوَفِّقِ اللّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا

‘যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৫)

অতঃপর করণীয় কী হবে? এ সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলা বলেন-

الطَّلاَقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُواْ مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلاَّ أَن يَخَافَا أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَعْتَدُوهَا وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللّهِ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

‘তালাকে-‘রাজঈ’ হলো- দুবার পর্যন্ত। তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর তাদের কাছ থেকে নিজের দেওয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেওয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয়। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না; অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোনো পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২৯)

৮. পরকালের জবাবদিহিতা

প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর প্রত্যেককেই তার কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সুতরাং যে বা যারা নারী নির্যাতন করে থাকে; তাদের এ কথা স্মরণ রাখা জরুরি যে, এ নির্যাতনের জন্য অবশ্যই তাকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করতে হবে। আর এ জবাবদিহিতাই মানুষকে নারী নির্যাতনসহ যে কোনো অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। জবাবদিহিতা থাকলে নারী-পুরুষ সবাই উত্তম চরিত্রের মুসলিমে পরিণত হবে ইন শা আল্লাহ।

মুসলিম উম্মাহর উচিত, নারী প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সব হক যথাযথভাবে আদায় করা। নারীকে মর্যাদা দেওয়া। নারীর মর্যাদা রক্ষায় কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ সবাইকে নারীর প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদায় ইসলামের বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। বিশ্বজুড়ে সবাইকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকগুলো বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমিন

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ইসলাম

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ১৭ নভেম্ব

দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।

সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।

শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। 

সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন?

নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:

নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)

যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)

তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

আজান শোনার পর প্রিয় নবি (সা.)-এর সুন্নাত কী?

প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।

স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-

كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه

‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।

প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত

কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-

كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج

‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেনতবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-

لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم

‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!

মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-

من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض

‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো নাতার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।

প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।

মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি

মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-

رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)

উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।

কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।

আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।

ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

কেয়ামতের দিনের মুক্তিতে মুমিনের করণীয় কী?

শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।

হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।

সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)

আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!

কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com