আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

ইতিহাসের সাক্ষী: দক্ষিণ এশিয়ার বিপন্ন শকুন যেভাবে বাঁচানো হয়েছিল

ইতিহাসের সাক্ষী : দক্ষিণ এশিয়ার বিপন্ন শকুন যেভাবে বাঁচানো হয়েছিল
শকুন

শকুন মানুষের কাছে মোটেই পছন্দের কোন পাখি নয়। কিন্তু ভীষণ উপকারী। মৃত পশুর দেহ হচ্ছে শকুনের প্রধান খাদ্য। পাখি হিসেবে শকুন মোটেই আদৃত না হলেও শবদেহ খেয়ে যেভাবে তারা পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে, সেজন্যে তাদের উপযোগিতা ভালোভাবেই স্বীকৃত।

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া থেকে শকুন প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছিল ১৯৯০ এর দশকে। হঠাৎ করে কেন এই শকুনের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাচ্ছিল, সেটা কেউ বুঝতে পারছিল না।

মুনির ভিরানি তখন এক তরুণ রিসার্চ বায়োলজিস্ট, শকুন নিয়ে তার বিশেষ আগ্রহ। কাজ পেয়েছেন পেরিগ্রিন ফান্ড বলে একটি প্রতিষ্ঠানে, এখন তিনি যে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট। । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিকারি পাখি সংরক্ষণ প্রকল্প চালায় এই প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলছিলেন, “তখন এই শকুনের সংখ্যা যে হারে কমছিল, তা আসলেই ভয়াবহ। পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে গেল যে, লোকজন যেন হঠাৎ চারিদিকে তাকিয়ে টের পেল, আকাশ একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে, কোথাও আর শকুন নেই।”

ইতিহাসের সাক্ষী : দক্ষিণ এশিয়ার বিপন্ন শকুন যেভাবে বাঁচানো হয়েছিল
হাজারে হাজারে শকুন মারা যাচ্ছিল মৃত গরুর মাংস খেয়ে

উপদ্রব না উপকারী?

শকুন এই পৃথিবীতে আছে অনেক আগে থেকে, প্রায় ২৬ লক্ষ বছর ধরে। শকুনের সাধারণ একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এদের মাথায় পালক নেই, তাদের চঞ্চু খুব ধারালো, এরা ময়লার ভাগাড় থেকে খাবার খুঁজে খায়। অনেক উপর থেকে এরা মৃত পশুর দেহ দেখতে পায়, তারপর সেখানে নেমে আসে, তারপর সেই মৃত পশুর দেহ দ্রুত সাবাড় করে। তাদের পাকস্থলীর জারণ ক্ষমতা অসাধারণ। মৃত পশুর দেহ তো বটেই, তাদের হাড় পর্যন্ত হজম করে ফেলতে পারে শকুন।

১৯৭০ এবং ১৯৮০র দশকে শকুনের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, ভারত বা পাকিস্তানের মতো দেশে শকুনকে একটা উপদ্রব বলে গণ্য করা হতো, এগুলোকে যে সংরক্ষণ করা দরকার, সেটার কথা কারও মাথাতেই ছিল না।

সেই সময়ে এরা বড় ধরণের উপদ্রব হয়ে দেখা দিয়েছিল। সেসময় সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দেখা যেত ওরিয়েন্টাল হোয়াইট রাম্পড ভালচার বা প্রাচ্যদেশীয় সাদা পাকা শকুন। ধারণা করা হয়, ৭০ এর দশকের শুরুর দিকে ভারতের জয়পুর-আগ্রা এবং দিল্লির মধ্যবর্তী অঞ্চলেই কেবল ৪ কোটি এরকম শকুন ছিল।

ভারতের হিন্দুরা গরুকে পবিত্র বলে মনে করে এবং এর মাংস খায় না। কাজেই যখন গরু মারা যায়, তখন সেই মৃত গরুর একটা ব্যবস্থা করতে হয়। এই সমস্যার সমাধানে শকুন একটি খুবই প্রাকৃতিক এবং দক্ষ ভূমিকা পালন করতো।

মুনির ভিরানি বলেন, “যখন গরু মারা যায়, তখন এগুলোর মৃতদেহ কোথাও ফেলে আসতে হয়। কাজেই গরু মারা যাওয়ার পর একটি ভাগাড়ে তার দেহ ফেলে দেয়া হয়। সেই ভাগাড়ে থাকে শত শত শকুন। এটি খুবই পরিবেশ সম্মত এক সমাধান। কারণ এখানে আপনাকে কাঠ জ্বালিয়ে গরুর দেহ পোড়াতে হচ্ছে না, আপনি কোন কার্বন দূষণ ঘটাচ্ছেন না। আপনি একটি প্রাণীর দেহ দান করছেন আরেকটি প্রাণীকে। সেই প্রাণী আপনার সব কাজ করে দিচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই সেবা আপনি পাচ্ছেন একেবারে বিনামূল্যে।”

আকাশে কবর

আর শুধু পশুর মৃতদেহ নয়, বৌদ্ধ এবং জরোয়াসথ্রিয়ান ধর্মের অনুসারীরা তাদের কেউ মারা গেলে সেই দেহও ফেলে দেয় শকুনের জন্য। শকুন এসে এই দেহ খেয়ে ফেলে।

মুনির ভিরানি জানান, এই রীতিকে সেখানে আকাশে কবর দেয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়।

“উঁচু পার্বত্য এলাকা, যেমন ধরুন হিমালয় অঞ্চলে মৃতদেহ কবর দেয়া কিংবা দাহ করার মতো জ্বালানি কাঠ পাওয়া বেশ কঠিন। কাজেই সেখানে সহজ কাজ হচ্ছে মৃতদেহ এভাবে শকুনের জন্য ফেলে দেয়া। এসব ধর্মীয় রীতিতে প্রিয়জনের মরদেহ শকুনের খাদ্য হিসেব দান করার কাজটিকে বেশ পবিত্র বলেও গণ্য করা হয়। তাদের ধর্ম অনুযায়ী, শকুন যখন দেহটি খেয়ে ফেলবে, তখন আত্মা দেহ থেকে মুক্তি পাবে।”

ইতিহাসের সাক্ষী : দক্ষিণ এশিয়ার বিপন্ন শকুন যেভাবে বাঁচানো হয়েছিল
আসামে একটি মৃত মহিষের মাংস খাচ্ছে শকুন

শকুন উধাও

কাজেই সবকিছু বেশ নিয়মমতোই চলছিল। কিন্তু একজন ভারতীয় শকুন বিশেষজ্ঞ ডঃ ভিবু প্রকাশ একদিন খেয়াল করলেন, শকুনের সংখ্যা যেন আগের মতো নেই।

১৯৯৬ সালে তিনি ভারতের একটি ন্যাশনাল পার্কে গিয়ে খুব কম শকুনই সেখানে দেখতে পেলেন। অনেক শকুন মরে পড়ে ছিল। তারপর তিনি আশে-পাশের গ্রামে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরা তাকে জানালেন, পুরো অঞ্চল থেকে শকুন উধাও হয়ে যাচ্ছে।

মুনির ভিরানি যখন ২০০০ সালে ভারত সফরে গেলেন, তখন পরিস্থিতি আরও গুরুতর।

“ততদিনে শকুন প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং আমার মনে আছে, আমি দেখেছিলাম গাছে গাছে মরা শকুন ঝুলছে। খুবই বিচলিত হওয়ার মতো এক দৃশ্য। এটা বলা যেতে পারে তাদের সংখ্যা ৯৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল।”

দক্ষিণ এশিয়ায় শকুন বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বলে একটা আশংকা তৈরি হলো। মুনির ভিরানি এবং পেরেগ্রিন ফান্ডে তার অন্য সহকর্মীরা তখন এর কারণ খোঁজার চেষ্টা শুরু করলেন। তখন শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য অদ্ভুত সব কারণের কথা বলা হচ্ছিল।

“এমন কথা বলা হচ্ছিল যে বিমানবন্দরগুলোর কর্তৃপক্ষ গুলি করে শকুন মারছে, অথবা এর কারণ পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা। কেউ বলছিল জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে শকুনের মস্তিষ্কের একটা এনজাইম পরিবর্তিত হচ্ছিল, সে কারণেই তারা মারা যাচ্ছিল।”

এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য তদন্তকারীরা ভারতে তাদের কাজ শুরু করলেন। কিন্তু তখন ভারতে শকুনের সংখ্যা এত কমে গেছে যে তাদের এই অনুসন্ধান কাজের জন্য প্রতিবেশী পাকিস্তানে যেতে হলো। কিন্তু সেখানেও গবেষণার জন্য শকুন খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছিল।

মুনির ভিরানি বলেন, “আমরা হয় মরা শকুন পাচ্ছিলাম, নয়তো একেবারে সুস্থ শকুন পাচ্ছিলাম। কোন অসুস্থ শকুন খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছিল।”

শকুন মরার রহস্যভেদ

এরপর এই গবেষক দল শকুন মারা যাওয়ার একটা অভিন্ন সূত্র খুঁজে পেলেন।

মুনির ভিরানি বলেন, “এসব পাখি আসলে মারা যাচ্ছিল কিডনি বিকল হয়ে। আমরা যখন এই শকুনের দেহ ব্যবচ্ছেদ করলাম, তখন দেখলাম, তাদের পাকস্থলী, ফুসফুস, কিডনি, লিভার- এগুলো চকের মতো সাদা আঠালো পিণ্ডে আবৃত। এটি আসলে ইউরিক এসিড। কিডনি থেকে তা বেরিয়ে এসেছিল। কাজেই আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এই শকুন আসলে কি খাচ্ছে, সেটা আমাদের দেখতে হবে। আমরা এমন কিছুর সন্ধান করছিলাম, যেটা সহজলভ্য, সস্তা, যেটা হয়তো দোকানে গিয়েই কেনা যায়, যেটা সর্বত্র আছে, এবং যার কারণে পাখির কিডনি বিকল হতে পারে। আমরা দেখলাম, এটা আসলে ডাইক্লোফেনাক।”

ডাইক্লোফেনাকের নাম হয়তো অনেকে শোনেনিই নি, কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় যারা গবাদিপশু পালে, তাদের কাছে এটা খুব পরিচিত নাম।

ডাইক্লোফেনাক খুব কার্যকর একটি ব্যথানাশক। ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে এটি পেটেন্ট করা হয় । এটি ছিল খুবই সস্তা। দোকানে গিয়েই কেনা যেত। এক বোতল ঔষধ মাত্র দশ সেন্টে পাওয়া যেত। এটা গবাদিপশুর ওপর নির্বিচারে ব্যবহার করা হতো।

মুনির ভিরানি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় গবাদিপশু দিয়ে লাঙ্গল টানা হয়, ক্ষেতের ফসল বাজারে নেয়া হয়। কোন গবাদিপশু যখন একটু খোঁড়াতে থাকে, তখন তার শরীরে এই ডাইক্লোফেনাক ইনজেকশন দেয়া হয়।

ইতিহাসের সাক্ষী : দক্ষিণ এশিয়ার বিপন্ন শকুন যেভাবে বাঁচানো হয়েছিল
মৃত গরুর মাংস খেয়ে মারা গেছে অনেক শকুন

“কৃষকরা দেখছিল, এতে তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যায়। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে, এটি দিয়ে রোগ নিরাময় করা যায় না, এটা কেবল ব্যথা কমায়। কাজেই যখন পশুটা মরে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, তখন তার সমস্ত শরীরে কিন্তু ডাইক্লোফেনাকের অবশেষ থেকে যাচ্ছে। যখন শকুন এই পশুর মৃতদেহ খেতে আসছে, তখন সেটি যেন একটা আত্মহত্যার ভোজ উৎসব হয়ে উঠছে। এটি ছিল খুবই সস্তা।”

তাদের অনুমান যে আসলে সঠিক, সেটি যাচাই করার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি মহিষের শরীরে ডাইক্লোফেনাক ইনজেকশন দিলেন। তারপর এটির লিভার তারা বদ্ধ জায়গায় কিছু শকুনকে খেতে দিলেন।

“আমরা শকুনের মৃত্যুর সঙ্গে ডাইক্লোফেনাকের একটা সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পেলাম। এটা ছিল আমাদের জন্য একটি ইউরেকা মুহূর্ত। আমরা বুঝতে পারলাম, এটাই কারণ। আমরা ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের ডেকে আনলাম। আমরা তাদেরকে আমাদের ফল দেখালাম। এবং আমরা তাদেরকে স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিলাম, তারা যদি কিছু না করে, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে সব শকুন অদৃশ্য হয়ে যাবে।”

শকুন রক্ষার আন্দোলন

কাজেই মুনির এবং তার গবেষক দল অন্যান্য সংরক্ষণবাদীদের সঙ্গে মিলে শকুন রক্ষার আন্দোলন শুরু করলেন।

ইতিহাসের সাক্ষী : দক্ষিণ এশিয়ার বিপন্ন শকুন যেভাবে বাঁচানো হয়েছিল
ভারতের বিলুপ্তপ্রায় একটি প্রজাতির শকুন

“এর কৃতিত্ব আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে এমন সব সংগঠনের। বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি, আরএসপিবি এবং নেপাল ও পাকিস্তানের অন্যান্য সংগঠন। এরা সবাই যার যার দেশে গবাদিপশুর জন্য এই ঔষধের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে সরকারগুলোকে রাজি করালো।”

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ডাইক্লোফানাকের বিরাট মজুত ছিল। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এটার ব্যবহার এরপরও তাই অব্যাহত ছিল। তবে তারপরও অবস্থার উন্নতি হলো।

“সেসময় থেকে আমরা ভারত , নেপাল এবং পাকিস্তানে শকুনের সংখ্যার ওপর নজর রাখছিলাম। আমাদের জরিপে দেখা যায়, এরপর শকুনের সংখ্যা স্থিতিশীল হতে শুরু করে, এবং কিছু কিছু জায়গায় তাদের সংখ্যা বাড়তেও শুরু করে।”

তবে এরকম একটা আশংকা আছে যে নতুন কোন ঔষধ হয়তো আবার শকুনের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মুনির ভিরানি বলছেন, শকুন এখনো বিপদমুক্ত নয়। কারণ বাজারে নতুন নতুন ঔষধ আসছে, যেগুলো পরীক্ষা করে দেখা দরকার, এগুলো শকুনের কোন ক্ষতি করে কিনা। তিনি বলছেন, এই লড়াইটা অনেক দীর্ঘ, শকুন রক্ষার এই প্রচেষ্টা অনেক দীর্ঘ সময় ধরে চালাতে হবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় শকুনের সংখ্যা যেভাবে কমে গিয়েছিল, কোন প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা এত দ্রুত কমে যাওয়ার নজির আর নেই। তবে শকুন যে কত উপকারী এক প্রাণী, এই সংকট তা মানুষকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।

“আমার মনে হয় এশিয়ায় শকুনকে ঘিরে এই সংকটের সবচেয়ে ইতিবাচক একটা দিক হচ্ছে, এই বিরাট সচেতনতা, শকুন যে আমাদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। কোন সন্দেহ নেই যে, আমাদের গ্রহে শকুন হচ্ছে সবচেয়ে বিপন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণী। আমাদের সহানুভূতি, আমাদের ভালোবাসা তাদের দরকার। যাতে তারা আকাশে উড়ে বেড়াতে পারে।”

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com