আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ফল

আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা

ফলের রাজা আম

‘আম’কে ফলের রাজা বলা হয়, আর এই ফলটিকে সবাই কমবেশি পছন্দ করেন। এটা মনে করা হয় যে, এই ফলটির উৎস আমাদের দেশেই। সারা পৃথিবীর মধ্যে ট্রপিক্যাল দেশগুলিতেই আমের ফলন হয়। বাংলাদেশে আনুমানিক ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়, যা উৎপাদনের নিরিখে সারা পৃথিবীর ১০%। যদিও রফতানির ক্ষেত্রে এই ফলটির অবদান খুবই কম।প্রচলিত আমের জাতের নামকরণের মধ্যেই রয়েছে – কিসেনভোগ, লক্ষ্মণভোগ। এ ছাড়াও,গোপালভোগ,আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, চৌসা ইত্যাদি।সাধারণত এক বছর অন্তর ফলন হয়। সে কারণে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি-গবেষকদের নিরলস প্রচেষ্টা ও প্রয়াসে আমের কয়েকটি সংকর জাতের উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আম্রপালি, মল্লিকা, রত্না ইত্যাদি।

আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা
আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা

এই সংকর জাতগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল আয়তনে ও উচ্চতায় প্রচলিত জাতগুলি থেকে ছোট হওয়ার ফলে অল্প জায়গায় লাগানো যায়। যে কারণে প্রচলিত জাতের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় যতগুলো গাছ লাগানো যায়, ওই সম-আয়তনের জায়গায় সংকর জাতের গাছ দ্বিগুণ সংখ্যায় লাগানো যায়। অন্য দিকে সংকর জাতের গাছ নিয়মিত ফলন দেয় এবং এই ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। এর ফলন প্রচলিত জাতের থেকে অনেক বেশি এবং স্বাদেও বেশি মধুর হয়। উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা যদি আমের চাষ, সংরক্ষণ ও গুদামজাত করার উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে পারি তা হলে এই ফল রফতানি করে আমরা প্রচুর বিদেশি মুদ্রা অর্জন করতে পারি। কারণ এই ফলটির কদর সারা পৃথিবী জুড়ে এবং আমরাই সারা পৃথিবীর সিংহভাগ এলাকায় আমের চাষ করি।

জাত-জমি

জাত জলদি

গোলাপখাস, সরিখাস, পেয়ারাফুলি, সফদারপসন্দ, বোম্বাই ইত্যাদি। মাঝারি – হিমসাগর, রানিপসন্দ, কিশেনভোগ, অনুপম ইত্যাদি। নাবি – ল্যাংড়া, ফজলি, লক্ষণভোগ, চৌসা, আশ্বিনা, আম্রপালি, মল্লিকা ইত্যাদি

জমি নির্বাচন

ফলের বাগান করার জন্য অতিরিক্ত জল বের হওয়ার উপযুক্ত নিকাশিব্যবস্থার সুবিধাযুক্ত উঁচু পর্যাপ্ত রোদ পায় এই ধরনের জমি নির্বাচন করতে হবে। জমির মাটি উপযুক্ত করার জন্য চারা লাগানোর আগে ওই জমিতে সবুজ সার হিসাবে ধনে, কলাই ইত্যাদি চাষ করে মাটিতে মেশাতে হবে। বাগানের ভিতর জলের উত্স থাকার প্রয়োজন আছে সেচের সুবিধার জন্য। বাগানের চার দিকে ঘন পাতাবিশিষ্ট গাছ যেমন সোনাঝুরি ইত্যাদি জাতীয় গাছ লাগাতে হবে, যাতে ফলের গাছ ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে পারে। বাগানের মধ্য যাতায়াতের জন্য রাস্তা এবং সেচ ও নিকাশি নালা করার জন্য ফাঁকা জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বর্ষার শুরুতে চারা লাগানোর এক মাস আগে সঠিক মাপের গর্ত খুঁড়ে তাতে পর্যাপ্ত জৈবসার দিয়ে রাখতে হবে। চারা লাগানোর আগে নিমখোল বা উইপোকা নিয়ন্ত্রণকারী কীটনাশক দিতে হবে। পিট বা গর্তের মাপ ১ মি x ১ মি x ১ মি সাইজের পিট বা গর্ত করতে হবে। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব আম্রপালি ও মল্লিকার ক্ষেত্রে – ৬ মি x ৬ মি অন্যান্য জাতের ক্ষেত্রে – ১১ মি x ১১ মি

আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা
আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা

আমবাগান

বাড়ছে আমের চাষ। মানসম্পন্ন আম ফলাতে তাই দরকার আধুনিক উত্পাদন কৌশল। আম চাষিদের জানা দরকার কীভাবে জমি নির্বাচন, রোপণ দূরত্ব, গর্ত তৈরি ও সার প্রয়োগ, রোপণ প্রণালী, রোপণের সময়, জাত নির্বাচন, চারা নির্বাচন, চারা রোপণ ও চারার পরিচর্যা করতে হয়। মাটি ও আবহাওয়ার কারণে দেশের সব জেলাতে সব জাতের আম হয় না। আমের জন্য মাটির অম্লতা দরকার ৫.৫-৭.০। অনেক সময় দেখা যায় পাহাড়ি ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জেলাতে ফজলী, ল্যাংড়া, খিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতগুলো ভাল হয়। সুতরাং কাঙ্ক্ষিত জাতটি নির্বাচিত জায়গায় হবে কিনা তা বিবেচনায় রাখতে হবে।

গভীর, সুনিষ্কাশিত, উর্বর দো-আঁশ মাটি আম চাষের জন্য ভাল। বর্ষায় জল দাঁড়ায় না এমন উঁচু বা মাঝারী উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। কয়েকবার চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল এবং আগাছামুক্ত করতে হবে। রোপণ দূরত্ব নির্ভর করে আমের জাতের উপর। দ্রুত বর্ধনশীল আমের জাত বা বড় আকৃতির গাছ হলে সাধারণত ১২ মিটার বা প্রায় ৪০ ফুট দূরত্বে লাগাতে হবে। এই দূরত্বে গাছ লাগালে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৯টি গাছ লাগানো যাবে। মধ্যম আকৃতির গাছ হলে ১০ মিটার বা ৩৫ ফুট দূরত্বে লাগানো যাবে এবং দূরত্ব অনুসরণ করলে এক বিঘা জমিতে ১৩টি গাছ লাগানো যাবে। খাটো আকৃতির জাত যেমন- বারি আম-৩ (আম্রপলি) হলে ৬-৮ মিটার দূরত্বে লাগানো যাবে এবং এ দূরত্ব অনুসরণ করলে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২০-২৭টি গাছ লাগানো যাবে। জাতভেদে আম গাছের রোপণ দূরত্ব ৬×৬ মিটার; ১০×১০ মিটার এবং ১২×১২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্গাকার, আয়তাকার, ত্রিভুজাকার বা ষড়ভুজাকার যে প্রণালীতে চারা রোপণ করা হোক না কেন, গাছ লাগানোর স্থানটি চিহ্নিত করে বর্ষা শুরুর আগেই সেখানে গর্ত করতে হবে। সাধারণত মে-জুন মাসে ৭৫-১০০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতায় গর্ত করতে হবে। গর্ত করার সময় গর্তের উপরের অর্ধেক অংশের মাটি একপাশে এবং নিচের অংশের মাটি অন্যপাশে রাখতে হবে। গর্ত থেকে মাটি উঠানোর পর ১০ দিন পর্যন্ত গর্তটিকে রোদে শুকাতে হবে। এরপর প্রতি গর্তে ১০ কেজি গোবর সার, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ৫০ গাম জিংক সালফেট এবং ১০ গ্রাম বোরিক এসিড উপরের অংশের মাটির সাথে মিশিয়ে মাটি ওলোট-পালোট করে গর্ত ভরাট করতে হবে। গর্ত ভরাটের সময় উপরের অর্ধেক অংশের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট না হলে প্রয়োজনে পাশ থেকে উপরের মাটি গর্তে দিতে হবে। তবে গর্তের নিচের অংশের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করা যাবে না।

আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা
আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা

সুস্থ-সবল ও রোগমুক্ত চারা রোপণ করলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়। রোপণের জন্য ৪-৫ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন ২-৩টি ডাল বিশিষ্ট চারা নির্বাচন করতে হবে। ২-৩ বছর বয়সী ফাটল/ভিনিয়ার কলমের চারা বাগানে লাগানোর জন্য ভাল। গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর পুনরায় গর্তের মাটি ভালভাবে উলোট-পালোট করে গর্তের মাঝখানে চারাটি সোজাভাবে লাগিয়ে তারপর চারদিকে মাটি দিয়ে গাছের গোড়া সমান্য চেপে দিতে হবে। চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার বলটি যেন ভেঙে না যায় এবং চারা গোড়াটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাটির নিচে ঢুকে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রোপণের পর চারাটি খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। বিকেল বেলায় চারা/কলম রোপণ করা ভাল। রোপণের পর বৃষ্টি না থাকলে কয়েকদিন সেচ দিতে হবে। গাছে নতুন পাতা বের হলে পাতাকাটা উইভিল পোকা আক্রমণ করতে পারে। কচি পাতার নিচের পিঠে মধ্যশিরার উভয়পাশে স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ে। পরে স্ত্রী পোকা ডিমপাড়া পাতাটির বোঁটার কাছাকাছি কেঁটে দেয়। শেষে গাছটি পাতাশূন্য হয়ে যায়। কর্তিত কচি পাতা মাটি থেকে সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছে কচি পাতা বের হওয়ার ৬ দিন এবং ১২ দিন পর প্রতি লিটার জলতে ২ গ্রাম সেভিন অথবা যেকোনো কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় সেপ্র করলে পোকার আক্রমণ হয় না।

বাজারজাত করার জন্য কোন জাতের আমের চাহিদা বেশি, গুণগতমান ভাল এবং বাজারমূল্য বেশি তা জানা দরকার। আমাদের দেশে বেশ কিছু উত্কৃষ্ট মানের আমের জাত (ল্যাংড়া, খিরসাপাত, হিমসাগর, ফজলী, গোপাল ভোগ ও বোম্বাই) রয়েছে। যেগুলো রঙিন না হলেও স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বেশি। কিন্তু এ জাতগুলো বিদেশে রফতানি করে তেমন মুনাফা পাওয়া যাবে না। কারণ বিদেশের বাজারে রঙিন ও হালকা মিষ্টি আমের চাহিদা বেশি। এর জন্য বারি আম-২ এবং বারি আম-৭ জাত দু’টি উপযুক্ত। জাতগুলো হলো বারি আম-১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮। এ জাতের চারা দিয়ে বাগান করলে ভাল ফলনের পাশাপাশি লাভবান হওয়া যায়।

আম বাগানের আগাম পরিচর্যা

মোট ফল চাষের ৪০ ভাগ জমিতে আম চাষ হলেও দিনদিন এর পরিধি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে ফলনের তারতম্য দেখা যায়। যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীতে আমের ফলন অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। উত্পাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে একটু যত্নবান হলে ফলন কয়েকগুণ বাড়ানো যায়। আর তাই যত্ন নিতে হবে আম সংগ্রহের পর থেকেই। রোগাক্রান্ত ও মরা ডালপালা একটু ভাল অংশসহ কেটে ফেলতে হবে মৌসুমের পর। ডালপালা এমনভাবে ছাটাই করতে হবে যেন গাছের ভেতর পর্যন্ত সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে। গাছের ভেতরমুখি ডালে সাধারণত ফুলফল হয় না, তাই এ ধরনের ডাল কেটে ফেলতে হবে। বর্ষাকালে কাটা অংশগুলো থেকে নতুন কুশি গজাবে এবং পরের বছরে ওই নতুন কুশিগুলোতে ফুল আসবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে- ডগার বয়স ৫ থেকে ৬ মাস না হলে ওই ডগায় সাধারণত ফুল আসে না। আগামী বছরে একটি গাছে কী পরিমাণ ফলন আসতে পারে তা আগস্ট মাসেই ধারনা পাওয়া যায়। এ সময়ের মধ্যে গাছে যত বেশি নতুন ডগা গজাবে ততই ভাল।

আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা
আম চাষ ও বাগানের পরিচর্যা

আমবাগানে সার প্রয়োগের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি গাছে বছরে কি পরিমাণ সার দিতে হবে তা নির্ভর করে মাটির গুণাগুণের উপর। গাছ বাড়ার সাথে সাথে সারের চাহিদাও বাড়তে থাকে। বছর অনুযায়ী সারের পরিমাণ দেয়া হল- গোবর সার দিতে হবে রোপণের ১ বছর পর ২০, রোপণের ২ বছর পর ২৫, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ১২৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে ইউরিয়া রোপণের ১ বছর পর ২৫০, রোপণের ২ বছর পর ৩৭৫, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ১২৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ২৭৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। টিএসপি রোপণের ১ বছর পর ১০০, রোপণের ২ বছর পর ২০০, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ১০০ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ২১৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। এমপি রোপণের ১ বছর পর ১০০, রোপণের ২ বছর পর ২০০, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ১০০ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ২১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জিপসাম রোপণের ১ বছর পর ১০০, রোপণের ২ বছর পর ১৭৫, প্রতিবছর বাড়াতে হবে ৭৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ১৬০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জিংক সালফেট রোপণের ১ বছর পর ১০, রোপণের ২ বছর পর ১৫, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ১১০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। বোরিক এসিড রোপণের ১ বছর পর ৫, রোপণের ২ বছর পর ৭, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ২ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

সব সার দু’কিস্তিতে প্রয়োগ করা ভাল। প্রথম অর্ধেক বর্ষার আগে এবং বাকিটা আশ্বিন মাসে অর্থাত্ বর্ষার পরে। যদি কোনো আমচাষি প্রথম কিস্তির সার প্রয়োগ না করেন তবে দ্বিতীয় কিস্তির সময় চাহিদার পুরো সারটাই প্রয়োগ করতে হবে। অনেক আমচাষি বাগানের ফজলি ও আশ্বিনা আম সংগ্রহ করার পর সার প্রয়োগ করেন যা মোটেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। ফলন্ত গাছে গুঁড়ি থেকে ২-৩ মিটার দূরত্বে ৩০ সে.মি. প্রশস্ত ও ১৫-২০ সে.মি. গভীর করে চক্রাকার নালা কেটে তার ভেতর রাসায়নিক ও জৈব সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। অথবা দুপুরবেলা যতটুকু জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে ততটুকু জায়গায় সার ছিটিয়ে কোঁদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সাধারণত আমগাছে ফল আসার পর গাছগুলো দুর্বল হয়ে যায়। ফলে গাছের প্রয়োজন হয় খাদ্যের। সার দেয়ার পর বর্ষা শুরু হলে গাছ তার প্রয়োজনীয় খাদ্য মাটি থেকে নিতে পারে।

আমবাগানে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তবে মাটিতে রস থাকলে সেচের দরকার হবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, আমগাছে পরিবর্তিত বেসিন পদ্ধতিতে অর্থাত্ গাছের গোড়ার চারদিকে এক মিটার জায়গা সামান্য উঁচু রেখে দুপুরবেলা যতটুকু জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে ততটুকু জায়গায় একটি থালার মত করে বেসিন তৈরি করে সেচ দিলে জলর পরিমাণ কম লাগে এবং বেশির ভাগ জল গাছ গ্রহণ করতে পারে। বেসিন পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হল গাছের গোড়া পরিষ্কার থাকে ফলে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেচ দেয়ার পর জায়গাটি কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দিলে মাটিতে একমাস পর্যন্ত রস থাকবে। তবে আমগাছে ফুল আসার একমাস আগে সেচ না দেয়াই ভাল। এ সময় সেচ দিলে গাছে নতুন পাতা বের হবে এতে মুকুলের সংখ্যা কমে গিয়ে ফলন কমে আসবে।

আমবাগানে জৈব পদার্থের ঘাটতি থাকলে ধৈঞ্চার চাষ করতে হবে। এতে বাগানে জৈব পদার্থসহ অন্যান্য সার যোগ হলে মাটির উত্পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আমগাছে ২/৩ ধরনের পরগাছা দেখা যায়। ছোট গাছের চেয়ে বড় গাছে পরগাছার আক্রমণ বেশি হয়। পরগাছার বীজ আমগাছের ডালে অঙ্কুরিত হয়ে বাড়তে থাকে এবং ডাল থেকে প্রয়োজনীয় জল, খাদ্যরস, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি শোষণ করে বেঁচে থাকে। পরগাছার কোনো শেকড় থাকে না। শেকড়ের মত এক ধরনের হস্টোরিয়া তৈরি করে। ডাল থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। বর্ষাকালে পরগাছার বীজ বেশি বিস্তার লাভ করে।

আক্রান্ত ডাল পরগাছার গোড়াসহ কেটে ফেলতে হবে। কাটা স্থানে রোগের আক্রমণ যাতে না হয় তার জন্য বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। পরগাছায় ফুল ফল আসার আগেই এ কাজটি করতে হবে।

আমগাছে শতভাগ মুকুল আসা ভাল না। এতে ফলন ব্যাহত হয়। তাই শতভাগ মুকুলায়িত আমগাছের চারদিক থেকে ৫০% মুকুল ফোটার আগেই ভেঙে দিতে হবে। এতে ভাঙা অংশে নতুন কুশি গজাবে এবং পরবর্তী বছরে ওই সব ডগায় ফুল আসবে, আম আসবে।

উপরোক্ত বিষয়সমূহে নজর দিলে অবশ্যই প্রতিবছর আমের ভাল ফলন পাওয়া যাবে। আম চাষি লাভবান হবেন।

বাড়ির আঙিনায়ও আমের চাষ করা যায়

জ্যৈষ্ঠ মাস হচ্ছে বাংলাদেশে মধুমাস। আর এই মধুমাসের মধুফল হল আম। এই আমকে ঘিরে হয়েছে বাঙালির অনেক ঐতিহ্য এবং নানা ধরনের খাবার। তারই অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ফলগাছ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ও বাণিজ্যিকভাবে চাষোপযোগী বিভিন্ন উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রকৃতির আমের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়াও বছরে দুই থেকে তিনবার ফলনশীল, পলিঅ্যামব্রায়োনিক, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিক আমসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আমের জাত উদ্ভাবন করেছেন।

সার ও পরিচর্যা

পিট বা গর্তে সারের পরিমাণ

চারা লাগানোর এক মাস আগে প্রতিটি গর্তে জৈবসার ২০ কেজি, নিমখোল ১.৫–২ কেজি এবং ফলিডল ডাস্ট ২৫ গ্রাম, আর ৫০০ গ্রাম সি. সুপার ফসফেট দিতে হবে।

সারের পরিমাণ

বর্ষার আগে প্রতি গাছ লাগানোর আগে জৈবসার ২০ কেজি ও না : ফ : প – ৫০ গ্রাম : ২৫ গ্রাম : ২৫ করে দিতে হবে। এর পর বর্ষার পরে একই হিসাবে সার দিতে হবে। এর পর গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সারের পরিমাণ নির্দিষ্ট হারে বাড়াতে হবে এবং প্রতিটি ফলন্ত গাছে সর্বোচ্চ বর্ষার আগে জৈবসার ৫০ কেজি ও নাইট্রোজেন ১ কেজি আর বর্ষার পরে জৈবসার ৫০ কেজি ফ ও প, ৭৫০ গ্রাম করে দিতে হবে।

পরিচর্যা

গ্রীষ্ম ও শীতে প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হবে, প্রয়োজনে ৩–৪ সপ্তাহ অন্তর সেচ দিতে হবে। গ্রীষ্মকালীন সয়মে ২–৩ বার লাঙল দিয়ে চাষ দিলে আগাছা-সহ রোগ ও পোকার উপদ্রব কম হবে। যে হেতু ফলের বাগানে ৩–৪ বছরের আগে ফল পাওয়া যায় না, এ জন্য ফাঁকা জমিতে সাথী ফসলের চাষ করা যেতে পারে। প্রয়োজনমাফিক ডালপালা ছাঁটতে হবে এবং রোগ পোকা আক্রান্ত ডালপালা কেটে পুড়িয়ে দিতে হবে। সঠিক ও সুষম সার প্রতি গাছে দু’বার অর্থাৎ বর্ষার আগে ও পরে কাণ্ডের গোড়া থেকে কিছু দূরে গোলাকার গর্ত করে দিয়ে ভালো করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে, যাতে শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অতিরিক্ত শীত ও গ্রীষ্মের সময়ে সার প্রয়োগ করা যাবে না। আমের গুটি ধরার ঠিক পরেই এক বার ও ১৫ দিন পর আর এক বার আলফা ন্যাপথেলিন অ্যাসেটিক অ্যাসিড জাতীয় ওষুধ ২০ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে অসমসয়ে গুটি ঝরা কমানো যায়। গুটি ধরার পর বৃষ্টি না হলে শুধু মাত্র স্প্রে করেও ফলের বোঁটা শক্ত হয়।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর পুরো জমি ভরে গেছে বাঙ্গিগাছে। ফলন হয়েছে ভালো। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামে গত শুক্রবার
পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর পুরো জমি ভরে গেছে বাঙ্গিগাছে। ফলন হয়েছে ভালো। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামে গত শুক্রবার

পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।

সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর‌্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’

সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।

কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।

কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।

সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

কাঁঠালের আইসক্রিম জ্যাম ও চিপস

জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।

কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’

কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।

কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফল

কমলা চাষে সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা ব্যবস্থাপনা ও ফসল তোলা- দা এগ্রো নিউজ

কমলা

সার ব্যবস্থাপনা:  প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:  চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।

ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com