আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

আম্পানে ম্যানগ্রোভের ৮৩ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত

গত বছরের ২১ মে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়ে সুপার সাইক্লোন আম্পান। ওই সময় দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল। যদিও বরাবরের মতো সেবারও সুন্দরবনের কারণে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটিতে এসে গতি হারায় সাইক্লোনের মূল আঘাত। বনের বাস্তুসংস্থানে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বন অধিদপ্তর থেকে এখনো সুস্পষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল স্যাটেলাইট ডাটা অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (এনইএসডিআইএস) স্যাটেলাইটে সংগৃহীত তথ্য বলছে, আম্পানে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ এলাকার ৮৩ শতাংশই নানা মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এনইএসডিআইএসের তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি ভারত, ব্রাজিল ও মালয়েশিয়ার কয়েকজন গবেষক সুন্দরবনের ওপর আম্পানের প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালান। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এলসেভিয়ারের এস্টুয়ারিন, কোস্টাল অ্যান্ড সেলফ সায়েন্স জার্নালে তাদের এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘জিও-ইকোলজিক্যাল ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট অব সিভিয়ার সাইক্লোন স্টর্ম আম্পান অন সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ইউজিং জিওস্পেশাল টেকনোলজি’। এতে আম্পানের ফলে কোন কোন অঞ্চলে কী মাত্রায় এবং কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, সে সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবনের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল (ভারতের কাকদ্বীপ ও পাথরপ্রতিমা অঞ্চল) কেন্দ্রীয় অঞ্চল (বাংলাদেশের শরণখোলা রেঞ্জ) এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (বাংলাদেশের বরিশাল রেঞ্জ) ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরাজি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে প্রায় ৮৭ শতাংশ ও বাংলাদেশ অংশে প্রায় ৮৩ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নানা মাত্রায় ক্ষতির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে জলোচ্ছ্বাসজনিত ভূমিক্ষয়ের শিকার হয়েছে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, খুলনা রেঞ্জে ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, শরণখোলা রেঞ্জে ৫২ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও বরিশালের ৫৬ দশমিক ১৯ শতাংশ এলাকা।

গবেষকরা ভারত ও বাংলাদেশের উপকূল রেখায় আম্পানের আঘাতে ৬ হাজার ৭৫৪টি স্থানে ভাঙনের চিহ্ন পেয়েছেন। এছাড়া ঘন ও মাঝারি ঘন ম্যানগ্রোভ গাছের আচ্ছাদন এলাকা ৭৭ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হয়েছে। ফলে কৃষিজমি এবং মাছ চাষের পুকুর ও ঘেরগুলো প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ম্যানগ্রোভের লবণ সংবেদনশীল প্রজাতিগুলো বিশেষ করে সুন্দরী গাছ মারাত্মক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরের ক্ষতি নিরূপণের জন্য গবেষণায় দুটি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো হলো নরমালাইজড ডিফারেন্স ভেজিটেশন ইনডেক্স (এনডিভিআই) এবং এনহ্যান্সড ভেজিটেশন ইনডেক্স (ইভিআই)। এ দুই সূচক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আম্পানের কারণে ম্যানগ্রোভ বনের প্রায় সব অংশেই অবনতি ও ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সাম্প্রতিক এমন আরো তিনটি গবেষণায় প্রায় একই তথ্য উঠে এসেছে। এগুলোর প্রতিটির মূল ভাষ্য হলো সিডরের পর সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে আম্পান। যদিও এবারের ক্ষয়ক্ষতি সিডরের মতো ব্যাপক মাত্রায় দৃশ্যমান হয়নি। আম্পানে মূলত সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরাজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরী গাছ। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের পরেও বনের প্রচুর সুন্দরী গাছ রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরার পশ্চিম সুন্দরবন তথা বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জে এখন গাছটিকে দেখা যাচ্ছে খুবই কম। যতটুকু দেখা মিলছে তাও শুধু গভীর অরণ্যে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বনের এ অংশ সুন্দরী গাছশূন্য হয়ে পড়তে পারে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সুন্দরবন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও মত্স্যজীবী সমিতির সভাপতি আইয়ুব হোসেন বলেন, আম্পানের কারণে সুন্দরবনে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমাদের উপকূলীয় এলাকায় আগের তুলনায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। সুুন্দরবন বেষ্টনী নদীগুলোর পানিতে অস্বাভাবিক লবণ থাকায় সুুন্দরী গাছগুলো আগা মরা রোগ হয়ে মারা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ কোনোভাবে বেঁচে থাকলেও শ্বাসমূলীয় বন বাঁচানো কঠিন হবে।

একই কথা বলছেন সাতক্ষীরার বুুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. আবুু হাসানও। তিনি বলেন, এ রেঞ্জের অধীন এলাকায় সুন্দরী গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গভীর অরণ্যে যৎসামান্য কিছু থাকলেও থাকতে পারে। তবে সেটির দাপ্তরিক কোনো পরিসংখ্যান বা তথ্য নেই। গত কয়েক দশকে যে হারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে তাতে অতিমাত্রায় লবণ পানি প্রবেশ করেছে। সিডর আইলার পর ফণী ও আম্পানের কারণে অতিমাত্রায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সুন্দরবনের স্বাদুু পানির গাছ সুুুন্দরী টিকে থাকতে পারছে না। ক্রমান্বয়ে বুুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জ থেকে সুুুন্দরী গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় সুন্দরবনের রায়মঙ্গল ও কালিঞ্চি নদী দিয়ে মিঠা পানি প্রবেশ করত। কিন্তু গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে মিঠা পানি আসছে না। ফলে এ অঞ্চলে আর সুন্দরী গাছ জন্মাতে পারছে না।

সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের বৃদ্ধি বা সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার প্রাকৃতিক নিয়মটিকে বলা হয় সাক্সেশন। এক্ষেত্রে নতুন চর বা জমিতে শুরুতেই জন্ম নেয় কেওড়া জাতীয় বৃক্ষ। এরপর সেখানে জন্মায় গেওয়া, বাইন। প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপে জন্ম নেয় সুন্দরী। কিন্তু বনের অনেক স্থানেই সে চক্র ভেঙে গিয়েছে। যেসব অঞ্চলে জোয়ারের পানি উঠছে না, সেখানে এখন কড়ই ও মেহগনি গাছ লাগানো হচ্ছে। জন্মাচ্ছে না সুন্দরী। অন্যদিকে লবণাক্ততার কারণে টিকতে পারছে না সুন্দরী গাছ।

বন বিভাগের তথ্য বলছে, বন বিভাগের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ছয়টি অঞ্চলে বিশেষ করে কাটাখালী, ধানসাগর, গুলিশাখালী, নাঙলী, আমুরবুনিয়া ও দাসের ভারানী স্টেশন এলাকার ফরেস্ট ফ্লোর উঁচু হয়ে গেছে। এখানে জোয়ারের পানি উঠতে পারছে না। পলি জমে ভরাট হচ্ছে খাল ও নদী। ফলে ভরা অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভেসে গেলেও এসব অঞ্চলে সেটি হচ্ছে না। এতে স্বভাব অনুযায়ী ম্যানগ্রোভ গাছ শ্বাস ছাড়তে পারছে না। আবার বংশ বিস্তার করতে না পারার মাধ্যমে বিলীন হচ্ছে সুন্দরী গাছ। সেসব স্থানে পাতা, লতাগুল্ম জন্মাচ্ছে। সুন্দরবনের প্রথাগত গাছের পরিবর্তে এখন কড়ই ও মেহগনি গাছ লাগানো হচ্ছে। এতে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে বনের বাস্তুসংস্থান।

এ বিষয়ে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাত্ক্ষণিক দৃশ্যমান ক্ষতি অনেক কম মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি তার চেয়ে অনেক বেশি। সেটির প্রতিফলন নানান গবেষণায় উঠে এসেছে। লবণাক্ততার ওপর ভিত্তি করেই প্রকৃতি তার স্বভাব পরিবর্তন করছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সাতক্ষীরা জোন সুন্দরীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে খুলনা রেঞ্জ মাঝারি (মডারেট) লবণাক্ততার কারণে মোট বনায়নে সুন্দরী গাছ অর্ধেকের কম। তবে বাগেরহাট জোন কম লবণাক্ততার কারণে সুন্দরীর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। কেননা এখানে স্বাদু পানির প্রবাহ রয়েছে। কিন্তু সাতক্ষীরায় সেটি একেবারেই কমে গেছে। সুন্দরবনের বেশকিছু অঞ্চলে জোয়ারের পানি প্রবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আমরা লক্ষ করেছি। ফরেস্ট ফ্লোর বেশ উঁচু হয়ে যাওয়ার কারণেই জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারছে না। শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবেশ করতে পারছে না বিধায় এ অঞ্চলে সুন্দরবন-বহির্ভূত গাছপালাও স্বাভাবিকভাবে জন্মাচ্ছে। সুন্দরবনের প্রকৃতিগত এ পরিবর্তন বনের পাশাপাশি বাস্তুসংস্থানে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। এজন্য আমরা বন ব্যবস্থাপনায় অ্যাডাপটিভ ম্যানেজমেন্টে গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে বন্যপ্রাণী টিকিয়ে রাখা ও মানব ব্যবস্থাপনার জন্য সহব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিচ্ছি।

এর আগে ২০০৭ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিডরে সুন্দরবনের বহুমাত্রিক ক্ষতি হয়। ওই সময় তাত্ক্ষণিকভাবে বেশকিছু ক্ষতি দৃশ্যমান হয়। সেসব ক্ষতির প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। সুন্দরবনের দক্ষিণে কটকা এলাকায় বনের মধ্যে বালির আস্তরণ পড়ে যায়। তীরবর্তী অনেক জায়গায় বালির আস্তরণ পড়লেও কটকায় তা কয়েক ফুট ছাড়ায়। শ্বাসমূল আচ্ছাদিত হয়ে মারা যায় এখানকার প্রচুর গাছ।

দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম ও তার পরিবর্তন এবং আর্থসামাজিক নানান প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী। তিনি বলেন, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সুন্দরী কমে যাওয়া ও নদীভাঙন একটি চক্রের মধ্যে রয়েছে। সুন্দরবনের পশ্চিমে অর্থাৎ নলিয়ান, খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে সুন্দরবনের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। লবণাক্ততা বাড়লে মাটির বন্ডিং কমে যায়। তখন জোয়ারের সময় সহজেই ভাঙন ধরে। আবার উপকূলে বাঁধ দেয়ায় নদীভাঙনের মাটি অন্য কোথাও যেতে পারছে না। মাটি বা পলি নদীর ভেতরেই থাকছে। এতে নদীর তলদেশ উঁচু হচ্ছে এবং পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে জোয়ারের সময় পানি সুন্দরবনের আরো বেশি ভেতরে প্রবেশ করছে। দীর্ঘ সময় সুন্দরবনের ভেতরে পানি থাকায় ভাঙন আরো বাড়ছে।

সুন্দরী গাছ হারিয়ে গেলে সুন্দরবনের গোটা বাস্তুসংস্থানই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে দেশের দুর্যোগপ্রবণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিপদ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এ বিষয়ে তাদের ভাষ্য হলো উপকূলীয় জনপদকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে সুন্দরবন। এখানকার বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়বে। ১৮৭৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে ৪৮টি তীব্র ঘূর্ণিঝড়, ৪৯টি ঘূর্ণিঝড় ও ২০টি হ্যারিকেন আঘাত হেনেছে। এছাড়া ছোট-বড় নানা ধরনের জলোচ্ছ্বাসও ঘটছে। সব মিলিয়ে তিন বছর পর পরই দেশে এ ধরনের জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। সুন্দরবনের কারণে ৪ থেকে ১৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উচ্চতা হারাচ্ছে এসব জলোচ্ছ্বাস। আবার জলোচ্ছ্বাসের পানিপ্রবাহ গতি হারাচ্ছে ২৯ থেকে ৯২ শতাংশ পর্যন্ত। এভাবে ঢেউয়ের গতিবেগকে কমিয়ে দিয়ে জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতা থেকে মানুষ ও পরিবেশকে রক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনছে সুন্দরবন।

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com