পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের চাষি শাহজাহান আলী বাদশা বাণিজ্যিকভিত্তিতে আতা ফল চাষ করে বাজিমাত করেছেন। আতা ফলকে দেশের বিভিন্ন জেলায় শরিফা ফল বা মেওয়া ফল বলা হয়।
আজ থেকে ১৫ বছর আগে বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ বাগানটি শুরু করেন বাদশা মিয়া। এখন এ বাগানের আয়তন ৪০ বিঘা। ২০১২ সাল হতে তিনি এ বাগান থেকে ফল পাওয়া শুরু করেন। এখন তার বাগান থেকে পরিপূর্ণ ফলন যাচ্ছে। বাজারে ফল বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন।
আতা ফল চাষে বাদশা মিয়া উদ্ব্দ্ধু হলেন কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বিলুপ্তপ্রায় দেশি ফলকে বাঁচিয়ে রাখার ইচ্ছা থেকেই বাণিজ্যিকভিত্তিতে শুরুতে এক একরের বাগান গড়ে তুলেছিলেন। তার বাগানই দেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে গড়ে তোলা প্রথম আতা ফল বাগান বলে দাবি করেন তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছরে তা ৪০ বিঘার বাগানে রূপ নিয়েছে। শ্রমে-ঘামে তিনি আতা ফলিয়েছেন।
আতা ফল বাগান নিয়ে বাদশা মিয়া জানান, ১৫ বছর আগে ২০০৬ সালে ঢাকার বায়তুল মোকারম এলাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে তিন কেজি আতা ফল কিনেছিলেন। প্রায় হাজার টাকার ঐ ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে চারা করেন।
সেই চারা দিয়েই তার বাগান শুরু। তিন মাস বয়সী চারা ক্ষেতে লাগানোর পাঁচ বছর পর থেকে তিনি ফল পাওয়া শুরু করেছেন। শুরুর দুই বছর সীমিত আকারে ফল পেয়েছিলেন। এখন সব গাছ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। সব গাছ থেকে পূর্ণ ফলন পাচ্ছেন।
বাদশা মিয়া জানান, বৈশাখ মাসে ফুল আসে আর ভাদ্র মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। আতা ফল চাষের উৎপাদন খরচ ও লাভ সম্বন্ধে জানতে চাই বাদশা মিয়ার কাছে। তিনি জানান, উৎপাদন খরচ বলতে চারা লাগানো, যত্ন-পরিচর্যা সব কিছু মিলিয়ে বিঘা প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়।
ফলন পাওয়ার আগে অর্থাৎ ৫-৬ বছর পর্যন্ত সাথী ফসল হিসেবে ওল কচু ও অন্যান্য শাক-সবজি আবাদ করা যায়। এ দিকে বিঘা প্রতি ২০০ গাছে গড়ে একশ-দেড়শ ফল ধরে। গাছ প্রতি গড়ে একশ, ফল হিসেব করে বিঘা প্রতি অন্তত দুই লাখ টাকা লাভ থাকে বলে তিনি জানান।
বাদশা মিয়া জানালেন, বাগানের গাছের উচ্চতা ৭ থেকে ৮ ফুট থাকলে ভালো হয়। উচ্চতা এর চেয়ে বাড়ানো যায়। তবে উচ্চতা একটু কম থাকলে ঝড়ে ডালপালা ভেঙে যাওয়া আশঙ্কা কম থাকে। যত্ন-পরিচর্যা সম্বন্ধে তিনি জানান, আগাছা দূর করা ও সার দেয়া ছাড়া তেমন যত্ন-পরিচর্যা করতে হয় না। কাটিং করে গাছের আকৃতি ছোট রাখা যায়।
রোগ-বালাইয়ের মধ্যে মিলিব্যাগ নামক ছোট ছোট পোকার আক্রমণ দেখা যায়। তবে প্রতিষেধক দ্বারা সহজেই তা দমন করা যায়। পাকা আতা ফল পাখি খেতে আসে। এ জন্য পাকা ফল দ্রুত তোলাই ভালো। ফল পাকলে এটি সাদা হয়।
আতা ফল চাষকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও সময়োপযোগী হিসাবে বর্ণনা করলেন এই চাষি। একদিকে অল্প জমিতে যে কেউ বাণিজ্যিকভিত্তিতে এর চাষ করে লাভবান হতে পারে। বাদশা মিয়া আরও জানান, তিনি ঢাকাতে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। খুচরা দাম আরো বেশি। আর্থিক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় এই ফলটি টিকে থাকলে জনসাধারণের পুষ্টির চাহিদা বহুলাংশে মিটবে।
আতা ফল বাগানকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। এখানে কর্মরত শ্রমিক মান্নান সর্দার জানান, তিনি বাদশা মিয়ার খামারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। আতা ফল বাগানের শুরুতেই তিনিসহ কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানান।
গাছে সেচ সার দেয়া থেকে শুরু করে গাছের ডালপালা ছাঁটাই এবং ফল পাহারা দেয়ার কাজও তারা করেন। মৌসুমজুড়ে ফল পরিবহন করার জন্য কাজ করেন ভ্যানচালক মো. সুজন অফালী। সুজান জানান, তিনি প্রতি ট্রিপ হিসেবে টাকা পান।
বাগানের কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করে তরুণ শাকিল হোসেন। তিনি বাগানের গাছের দেখাশোনা, শ্রমিক ব্যবস্থাপনা, সেচ ও সারের জন্য ব্যবস্থা করা বা ঢাকায় মাল পরিবহনের কাজটি দেখভাল করেন।
আতা ফল বাগান দেখতে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ আসেন। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জিন্নাহ আল মামুন জানান, পুলিশে চাকরি হওয়ার পর প্রশিক্ষণের সময় ট্যুরের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকবছর আগে এ খামারে এসেছিলেন।
এবার পাবনায় বদলি হওয়ায় তিনি ছুটির বিকেলে আসেন খামারটি দেখতে। তিনি জানান, কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, উন্নয়ন হয়েছে। খামারে অন্যান্য ফল বাগানসহ আতা বাগানটির পরিধি বেড়েছে। তিনি আরও জানান, বাগানটি ঘুরে দেখাও বেশ আনন্দের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক আবদুল কাদের জানান, বাদশা মিয়া আতা বাগানটি যখন শুরু করেন তিনি তখন ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ছিলেন। তাই তিনি বাগানটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অবগত।
তিনি জানান, দেশীয় প্রজাতির এ ফলটি যেমন শরীরের জন্য খুবই উপকারী তেমনি এর চাষ করাও লাভজনক। পাবনা জেলা শহরের ফলের দোকানেই প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় এর দাম আরো বেশি। তিনি জানান, পাবনা অঞ্চলের মাটি এ ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’
সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।
কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।
সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।
কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন