আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

অদ্ভুত গোলাপ বাগান

ফ্রান্সের মেন্টন শহরের উপকণ্ঠে আছে সুন্দর ছোট্ট ছিমছাম একটা পাহাড়ি গ্রাম, নাম গোর্বিও। এই গ্রামের একদম শেষ প্রান্তে থাকে ম্যারি আর তার দাদু ডিউক।
পরিত্যক্ত বাড়িটি ফাঁকাই পড়েছিল। গ্রামের সবাই জানতো, গত বিশ বছর ধরে কেউ থাকে না বাড়িটিতে।
বাড়ির মালিক মারা গেছেন প্রায় ২২ বছর। তারপর তার ছেলে দুই বছর একজন পাহারাদার রেখেছিল।
পাহারাদার একবার জ্বরে ভুগেছিলেন প্রায় দুই সপ্তাহ।
এরপর বাড়ি চলে যায়। আর এর মধ্যে বাড়ির মালিকের ছেলেকেও কেউ আসতে দেখেনি।
তারপর থেকে পরিত্যক্তই ছিল বাড়িটি।

এক সকালে ম্যারি আর তার দাদু ডিউক এসে ওঠে বাড়িতে। তারা সুন্দর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গোছাতে শুরু করে বাড়িটি। দেওয়ালে সুন্দর সুন্দর দৃশ্য এঁটে দিয়েছে। আছে অনেকেগুলো বড় বড় ফুলদানি আর মনোরোম সব বাহারি রঙের পর্দা। কিন্তু আলো একেবারেই অপ্রতুল। ম্যারি আর ডিউক কেউই আলো তেমন পছন্দ করে না। গ্রামের অতি উৎসাহী যে দুয়েকজন ম্যারি আর ডিউকের সাথে দেখা করতে গেছে, তাদের ডিউক জানিয়ে দিয়েছে তারা বাড়ির মালিকের যে ছেলে আমেরিকায় থাকে তার অনুমতি নিয়েই থাকতে এসেছে। এরপর আর গ্রামবাসী তেমন আগ্রহ দেখায়নি।

ম্যারি একজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে। বয়স ষোলো-সতেরো বছরের মতো হবে। কৃষ্ণাঙ্গ হলেও ম্যারির গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। তার চুলগুলো ঘন কালো আর কোঁকড়া, নাক তেমন মোটা না। বড় কালো চোখ খুব সহজেই আকর্ষণ করে। ম্যারি গোর্বিও গ্রামে আসার দুইদিন পর থেকেই মেন্টন শহরে একটা বারে কাজ নিয়েছে। সুন্দরভাবে সেজেগুজে, সুন্দর পরিপাটি পোশাক পরেই ম্যারি কাজে যায়। সবার সাথেই ম্যারি হেসে হেসে কথা বলে, কিন্তু ২২-২৫ বছরের যেসব শেতাঙ্গ যুবক তার সাথে বা কোনো কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ের সাথে ইভটিজিং করে, তাদের সাথেই ম্যারির আরও সখ্য তৈরি হয়। ম্যারি তার বাড়িতে তাদের কফি খাওয়ার দাওয়াত দেয়।

ইদানীং ম্যারি বাড়ির পেছনে তৈরি করছে একটা গোলাপ বাগান। মাত্র তিনটি গাছ লাগিয়েছে এ যাবৎ। একটি গাছে একটাই বড় গোলাপ, আর কোনো শাখা নেই। আর গাছে কোনো কাঁটাও নেই।

গোর্বিও গ্রামে ঘটে গেছে একটা অদ্ভুত দুর্ঘটনা। একটা পরিবারে বেড়াতে এসেছিল ২৩ বছরের যুবক হ্যারিস। ম্যারি একদিন বেশ আকর্ষণীয় শর্ট স্কার্ট আর স্লিভলেস পরে কাজে যাওয়ার সময় হ্যারিস ম্যারিকে টিজ করছিল। গ্রামের দুয়েকজন যুবক সেটা দেখেছে। উত্তরে ম্যারি চটে না গিয়ে হ্যারিসকে তারপর দিন তাদের বাড়িতে কফির দাওয়াত দিয়েছে। এরপর দিন সন্ধ্যা থেকে হ্যারিসকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ম্যারির দাদু ডিউক আর ম্যারি দুজনই ফিশ ফ্রাই, জুস আর বিয়ার খেতে পছন্দ করে। রান্না করা খাবার তারা কখনোই খায় না। কিন্তু অতিথিদের জন্য কেক, কফি, চকলেট সবই প্রস্তুত থাকে। সপ্তাহান্তে কেউ না কেউ আসেই ম্যারির বন্ধুরা। ম্যারি সাধারণত একজন অতিথি আসা পছন্দ করে। কিন্তু একই সাথে একদিন আসে ফ্লয়েড আর ফ্রাংক। ম্যারি ডিউককে বলেছে, দাদু দুজনই আমার খুব স্পেশাল অতিথি। ভালো করে কেক, ফল, বিয়ার এসব দাও। ডিউক ম্যারিকে সহাস্যে শুধায়, দুজনই সমান বিশেষ দাদু? ম্যারি বলেছে, হ্যাঁ দাদু। ফ্লয়েডকে দাদুর সাথে গল্পে বসিয়ে রেখে ফ্রাংককে নিয়ে যায় বাগান দেখাতে।
তার দেড় ঘণ্টা পর ফ্রাংককে নিয়ে যায় বাগান দেখাতে। খুব মুগ্ধ হয় ফ্রাংক। বাগানে এখন ২৫টি গাছ আছে, তার ভেতর একটি গাছ কালো। সেদিন রাতে ডিউক ম্যারিকে জিজ্ঞেস করেছে, দাদু ভাই কতদিন কাজে যাবে না। একজন অতিথি আসলেই তিনদিন কাজে যাও না। আজ তো দুজন এসেছে। আজ খুব ধকল গেছে। ম্যারি জানিয়েছে, পাঁচদিন যাবে না।

এভাবেই কাজ, বন্ধুত্ব আর বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে অতিথি আপ্যায়নে চলে যাচ্ছে সময়। একদিন ডিউক বলে, তুমি কি আগের বারেই আছ দাদু ভাই? ম্যারি জানায়, না দাদু আমি আরেকটা বারে কাজ নিয়েছি এখন। ডিউক বলে, তোমার বাগানে দেখলাম ষাটটি গাছ লাগানো হয়েছে এখন। আর কতটা গাছ লাগাবে? ম্যারি হেসে জানায়, কেন তুমি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে গেছ? ডিউক হেসে বলে, আরে না সেরকম কিছু না। ম্যারি যেতে তো হবে আমাকেও তাই না? একশ গাছ হয়ে গেলেই এই গ্রামের সবাইকে ডেকে বাগান উন্মুক্ত করে দিয়ে তুমি আর আমি একরাতে চলে যাব। ডিউক জিজ্ঞেস করে, মাকে আর ছোট ভাইকে দেখতে গিয়েছিলে? ছলছল চোখে ম্যারি জানায়, মা আরও অসুস্থ হয়ে গেছে। আর মরিসকে (ম্যারির ছোট ভাই) হয়তো কোনো মিশনারিজ বা অর্ফান সেন্টারে দিয়ে দিতে হবে। ডিউক বলে, ঠিকানা দিও। আমি একদিন পথচারী হয়ে অনেক কিছু কিনে দিয়ে আসব। ম্যারির চোখেমুখে আনন্দ খেলে যায়।

একদিন কাজ করে ফিরছিল ম্যারি। এরই মধ্যে দুজন শেতাঙ্গ যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে এসে ম্যারির ওপর চড়াও হয়। এগিয়ে আসে শেরন নামের এক যুবক। শেরন তাদের কাছ থেকে ম্যারিকে নিরাপত্তা দিয়ে বাস পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। যেতে যেতে শেরন শুধু জানতে চেয়েছে, তুমি একা যেতে পারবে তো? ম্যারি মিষ্টি হেসে জবাব দিয়েছে, নিশ্চয়ই। এরপর ম্যারি আর শেরন পরস্পরের ভিজিটিং কার্ড বিনিময় করে।

ম্যারি যে বারে কাজ করে তার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ব্লু অ্যাঞ্জেল নামের একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ম্যানেজার হিসেবে শেরন কর্মরত। একদিন শেরন আসে ম্যারির সাথে দেখা করতে। ম্যারি খুব খুশি হয়। ম্যারি শেরনকে ভদকা অফার করে কিন্তু শেরন মৃদু হেসে জানিয়েছে অনলি বিয়ার। শেরন ম্যারিকে একদিন কফির দাওয়াত দেয়। এভাবেই কয়েকবার দেখা হয়ে যায় ম্যারি আর শেরনের। শেরনের অমায়িক ব্যবহার, বিনয়, ম্যারির খোঁজ-খবর নেওয়া সবই ম্যারির ভালো লাগে।

আগের মতো মদ্যপ, ইভটিজিং করা শেতাঙ্গ যুবকদের সাথে বন্ধুত্ব করা, বাসায় তাদের কফির নিমন্ত্রণ দেওয়া এসবে ম্যারির আগ্রহ কেমন মিইয়ে গেছে। বরং আরও কমনীয় সাজগোজ, শালীন পোশাক পরা, সুন্দর করে চোখে কাজল পরা এসবে কেমন যেন ম্যারি মনযোগী হয়ে উঠেছে। একদিন ডিউক টিপ্পনী কাটে, কি দাদুভাই? ফিরে যাবে নাকি! ম্যারি খুব রেগে যায়; বলে, শুধু ফিরে যাবার কথা বল না তো দাদু। আমি এখন এসব কিছুই ভাবছি না।

হাসপাতাল থেকে ফিরে লুসি শেরনের সব পছন্দের রান্না করতে লেগে যায়। রিটেলস, গৌগেরেস, এসকার্গটস, রাতাতোলে রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে লুসি। ছেলের জন্য এনে রেখেছে পোলো শার্ট, ওয়ালেট, ঘড়ি। আজ শেরনের চব্বিশ বছর পূর্ণ হলো।

চাকরি থেকে ফিরেই শেরন মাকে কোলে তুলে ফেলে।
লুসি আনন্দে কপট রাগ করে বলে, এই তুমি বড় হয়েছ না? লুসি শেরনকে বলে, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও; খাবে চল। খেতে খেতে মা-ছেলে সারা সপ্তাহের গল্প বলে। লুসির হসপিটালে কোন পেশেন্টের কী অবস্থা? তারপর লুসির কলিগ ব্রাউনিয়া সিস্টারের অসুস্থ ছেলেটা এখন কেমন আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম গল্প বলতে বলতেই শেরন ম্যারির কথা মা লুসিকে বলে। লুসি ম্যারির ছবি দেখতে চায়। কিন্তু শেরন কোনো ছবি দেখাতে পারে না।

এরপরও দুজন অতিথিকে নিয়ে আসে এবং গোলাপ বাগানও দেখিয়েছে। তারপর থেকে দশদিন যাবৎ বসে আছে ঘরে। কোথাও যেতে ইচ্ছা হয় না ম্যারির। কী যেন এক অসহায়ত্ব পেয়ে বসেছে তাকে। দুদিন শেরন গিয়ে খোঁজ নিয়ে এসেছে ম্যারির বারে। বার থেকে জানিয়েছে, ম্যারি দশদিন আসে না।

ম্যারির অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে এক সন্ধ্যায় শেরন আসে ম্যারির বাসায়। শেরনকে দেখে ম্যারি খুব খুশি হয়ে যায়। ম্যারি দৌড়ে গিয়ে শেরনকে জড়িয়ে ধরে। ডিউক ম্যারির কাণ্ডকীর্তি দেখে মুখ বন্ধ করে মিটিমিটি হাসে। ম্যারি শেরনের হাত ধরে ডিউকের কাছে নিয়ে যায়। বলে দাদু ওর নাম শেরন, ও আমার খুব ভালো বন্ধু, খুব ভালো ছেলে শেরন। ডিউক জিজ্ঞেস করে, ভালো বন্ধু নাকি স্পেশাল বন্ধু? ম্যারি জানায়, ভালো এবং অন্তরঙ্গ বন্ধু। ওর জন্য কেক, ফল, চকলেট, ফিশ ফ্রাই, ভালো বিয়ার সব দাও। ডিউক বলে, নিশ্চয়ই দেব। তোমার বন্ধুকে তোমার গোলাপ বাগান দেখাবে না? ম্যারি বলে, আমি না। তুমি দেখিয়ে নিয়ে আসবে।

এরপর শেরনের আর ম্যারির দেখা হয় বারবার কারণে-অকারণে। শেরন প্রায়ই ম্যারিকে নিয়ে কফিশপে যায়, ছোট ছোট উপহার দেয়। ম্যারিও শেরনকে উপহার দেয় মাঝে মাঝেই ওয়ালেট, পারফিউম, সুন্দর সুন্দর কলম। প্রায়ই শেরন আর ম্যারি ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন পার্ক, নদীর পাড়। শেরন একদিন বলে, চল, মায়ের হাসপাতালে গিয়ে মাকে চমকে দেই। ম্যারি বলে, আমি আজকে ভালো কাপড় পরে আসিনি। অন্যদিন লং স্কার্ট আর ফুল স্লিভ টপস পরে আসব, সেদিন যাব।

ডিউক ম্যারিকে জিজ্ঞেস করে, দাদুভাই তুমি এসব কী করছ? এরপর যদি শেরন তোমাকে বিয়ে করতে চায়? তখন কী করবে! ম্যারি বলে, আগে সেরকম কিছু ঘটুক তারপর চিন্তা করব। এখন শেরন আমার খুব ভালো বন্ধু।

ম্যারির সাথে প্রতিদিন দেখা করাটা শেরনের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। বিভিন্ন লেক, পার্ক, নদীর পাড় সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায় দুজন। শেরন ম্যারিকে জিজ্ঞেস করে, ম্যারি আমাকে তোমার কেমন লাগে? ম্যারি দুষ্টুমি করে; কী হিসেবে? ছোট বোনের বর হিসেবে? শেরন ফের বলে, ছোট বোন শব্দটা কেটে দিয়ে উত্তর দাও। ম্যারি বলে, তুমি নিঃসন্দেহে খুব ভালো ছেলে। কিন্তু বলে ম্যারির চোখ ছলছল করে জলে। শেরন বলে, কী হলো ম্যারি? আমি কি তোমাকে আঘাত দিলাম? ম্যারি বলে, হ্যাঁ ভালোবাসার আঘাত দিয়েছ। শেরন ম্যারির হাত ধরে বলে, আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দেব না কথা দিচ্ছি। ম্যারি শেরনের কাঁধে মাথা রাখে।

এরপর দুদিন ম্যারি তার কার্যালয়ে যায় না। শেরন খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। কী হলো? আমি ম্যারিকে বুঝতে পারছি না। তৃতীয় দিন ম্যারি যায় শেরনের সাথে দেখা করতে। শেরন জিজ্ঞেস করে, তাকে এত টেনশনে রাখার কারণ কী? ম্যারি বলে, আমি একটু অসুস্থ ছিলাম। শেরন তাকে বলে, ফোনে তো জানাতে পারতে! শেরন ম্যারিকে বলে, আজ ডিনার করে আমি তোমাকে গোর্বিও পৌঁছে দিয়ে আসব।

দুজন মিলে একটা ছোট রেস্তোরাঁর একপাশে বসে। শেরন ম্যারিকে খাবার অর্ডার করতে বলে। আজ তারা গাজরের স্যুপ, ফিশ ফ্রাই, বিয়ার, আর পটেটো ফ্রাই অর্ডার করেছে। খাবার এলে শেরন ম্যারিকে বলে, আজ আমি তোমার সাথে আমার জীবনের কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। আমি আমার মায়ের একমাত্র ছেলে। আমার বাবা ছিলেন মদ্যপ এবং জুয়াড়ি। মা বাবাকে অনেক পছন্দ করতেন। তাই বাবার সবকিছু মেনে নিয়েও মা চেয়েছিলেন বাবার সাথে থাকতে। কিন্তু আমার যখন দশ বছর বয়স; তখন বাবা অন্য একজন নারীকে বিয়ে করে চলে যান। বাবা খুব সুদর্শন পুরুষ আর কথাও বলতেন অনেক সুন্দরভাবে। তাই নারীরা তাকে খুব পছন্দ করত। কিন্তু মায়ের সাথে বাবা চরম দুর্ব্যবহার করতেন। সবকিছুর পরেও মা মনে করতেন, আমি বড় হলে হয়তো বা বাবা পরিবর্তন হবেন আর সেদিনের জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন। কিন্তু বাবা যখন মাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন; তখন মা খুব ভেঙে পড়েন। তখন মায়ের এক বন্ধু জিম কাকা মাকে খুব সাহায্য করেন এবং মনোবল জুগিয়ে যান। একসময় জিম কাকা মায়ের প্রতি খুব দুর্বল হয়ে পড়েন। কিন্তু জিম কাকার ছিল দুই বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে।

মা নিজের জীবনের কষ্ট অন্য একজনের জীবনে আসতে দিতে চাননি। তাই জিম কাকাকে বিয়ে করতে রিফিউজ করেন। জিম কাকা তখন মায়ের সাথে লিভিং করতে চাইতেন। কিন্তু মা ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বিয়ে না করে অন্য নারীর স্বামীর সাথে যৌন সম্পর্কে একদমই বিশ্বাসী না। সেই থেকে মা আমাকে নিয়েই বেঁচে আছেন। আর আমার যখন আঠারো বছর বয়স হয়ে যায়, তখন মা আমাকে প্রতিজ্ঞা করান; আমি কোন মেয়ের সাথে যেন বিয়ে বন্ধন বা ফাদারের সামনে গিয়ে সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপন না করি। তাই আজ অব্দি তোমার ঠোঁটে চুমু খাওয়া ছাড়া তোমার বুকেও হাত দেইনি। আমি মায়ের মৃত্যু অব্দি তোমাকে নিয়ে মায়ের সাথে থাকতে চাই। আর মা যেমন সুন্দর; তেমনই অমায়িক তার ব্যবহার। আমার মা বলে বলছি না, তুমি গেলেও দেখতে পাবে। আর হ্যাঁ, আগামী পরশু মা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। ম্যারি এতক্ষণ নিবিষ্ট মনে শুনে উত্তর দেয়, কিন্তু আমি তো কালো (কৃষ্ণাঙ্গ), তোমার মা আমাকে ছেলের বউ করে নেবেন কেন? শেরন উত্তর দেয়, আমি তো তোমার কথা মাকে বলেছি। আর তুমি যে কৃষ্ণাঙ্গ সেটাও বলেছি। মা বলেছেন, বর্ণবাদের কালো শাপ তোমাকে যেন ছোবল না দেয়। ম্যারি ছলছলে চোখ নিয়ে বলে, পৃথিবীটা তোমাদের মতো কেন না!

সেদিন বাসায় ফিরে ম্যারি ডিউকের সাথে একটা কথাও বলেনি। ম্যারি অনেকক্ষণ ভেবে ভেবে পরে সিদ্ধান্ত নেয়; যা হওয়ার হবে আমি শেরনের মায়ের সাথে দেখা করব। উনাকে আমার ভীষণ দেখতে ইচ্ছা করছে।

নির্দিষ্ট দিনে ম্যারি লং স্কার্ট, ফুল স্লিভ টপস, কানে টপ, চোখে কাজল পরে যায় শেরনের মা লুসির সাথে দেখা করতে। ডাইনিং টেবিলে এসে ম্যারির চোখ কপালে। অন্তত পঁচিশ রকম খাবার প্রস্তুত করেছেন লুসি। ম্যারি শুধু জুস আর ফিশ ফ্রাই খায়। খাওয়া শেষ করে লুসি বলে, তোমার বাসায় আর কে কে আছেন মা? ম্যারি উত্তর দেয়, আমি আর দাদু। লুসি জিজ্ঞেস করে, আমার ছেলে তার জীবনের বিস্তীর্ণ পথে তোমাকে পাশে নিয়ে হাঁটতে চায় তুমি কি রাজি? ম্যারি বলে, শেরনের এই চাওয়া আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের। শেরন একজন আলোকিত মানুষ এবং যোগ্য পুরুষ। লুসি হেসে বলে, তুমিও খুব মিষ্টি মেয়ে। তারপর লুসি ম্যারির আঙুলে পরিয়ে দেয় একটা পার্পল রঙের হীরার আংটি। লুসি বলে, এতদিনে আমি ভারমুক্ত হলাম। আমার মাদার ইন ল আমাকে দিয়েছিলেন। আর আজ আমি তোমাকে দিলাম। তুমি দেবে তোমার ছেলের বউকে।

এবার ম্যারি আরও চিন্তায় নিমগ্ন হয়। কী করবে সে? সে কি ফিরে যাবে শেরনকে কিচ্ছু না জানিয়ে? তাহলে তো শেরন আমৃত্যু হয়তো বা কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের প্রতারক ভেবে ঘৃণা করতে থাকবে। নাকি সে শেরনের মনে নিজের জন্য ঘৃণার উদ্রেক করবে? আবার ভাবে, নাহ তা হয় না। এবার সে ডিউকের শরণাপন্ন হয়; বলে, দাদু আমাকে বলে দাও আমি কী করব? ডিউক বলে, তুমি সত্যের মুখোমুখি হবে। সত্যেই মুক্তি।

শেরন খুবই উল্লসিত। প্রতিদিনই কিছু না শপিং করছে ম্যারির জন্য। ম্যারির সাথে দেখা করে বলে, আগামীকাল তোমার জন্য গাউন অর্ডার করতে যাব। তুমি আমার সাথে যাবে। ম্যারি চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে বলে, আচ্ছা যাব। গাউন বানাতে দিয়ে আসে শেরন আর ম্যারি। সাথে পার্লের মালা আর গোল্ড ব্রেসলেট।

‘নাহ আমি আর পারছি না! এভাবে হয় না। আমি বরং আমার মিশন শেষ করব। আজ যে কোনো একটা বারে গিয়ে বিকিনি আর শর্ট প্যান্ট পরে নাচানাচি করব। যদি শেরন এসে এ অবস্থায় আমাকে দেখে ফেলে আরও ভালো।’ এভাবেই নিজের সাথে কথপোকথন করছিল ম্যারি। আজ মেন্টনের সবচেয়ে ব্যস্ত ক্যাসিনো, যেখানে জুয়াড়িরা মেতে ওঠে ভয়ানক জুয়া খেলায়; সেখানে নাচতে চলে যায়। লাল বিকিনি, লাল লিপস্টিক, কালো শর্ট প্যান্ট পরে নেচে যাচ্ছে ম্যারি। ইতোমধ্যে জুটেছে কয়েকজন জুয়াড়ি। এরই মধ্যে মরিস রবার্ট এসে দিয়েছে খোঁচা; কিরে কালা বিল্লি এক রাত কত? ম্যারি ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিয়ে বলে, ফ্রি সাথে কফি, বিয়ার, কেক যা খেতে চাও। আমার সাদা পুরুষের সাথে শুতে খুব লোভ হয়। একদিন আসো আমার আমার বাড়ি। রবার্ট এসে ম্যারির স্তনে হাত দিতে নেয়।
এই, এখানে না ডিয়ার। বলে ম্যারি পিছিয়ে যায়।

শেরন হন্যে হয়ে খুঁজছে ম্যারিকে। খুঁজতে খুঁজতে শেরন আসে ম্যারির অফিসে। ম্যারি রবার্টকে সাথে নিয়ে আসে নিজের বারে। শেরন ফিরে যাচ্ছিল নিজের কর্মক্ষেত্রে। এমন সময় রবার্টকে সাথে নিয়ে প্রবেশ করতে দেখে ম্যারির অফিসে। ম্যারির সাজ-পোশাক শেরনকে ধাঁধায় ফেলে দেয়। শেরন এসে ম্যারির সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ম্যারি আমি তোমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছি।
আর তোমার এই অবস্থা কেন? তেড়ে আসে রবার্ট; বলে, আমার গার্লফ্রেন্ড যা ইচ্ছে পরবে। তাতে তোমার কী? নিজের রাস্তা মাপো। শেরন বলে, তাই, তোমার গার্লফ্রেন্ড? তাহলে ওর হাতের পার্পল কালারের আংটিটাকে আমার পরিচয় জিজ্ঞেস কর। রবার্ট এবার ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। শেরনের শার্টের কলার ধরে বলে, আংটির কিছু বলা লাগবে না। তুমি বল চান্দু। ম্যারি রবার্টের হাত সরিয়ে দিয়ে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, শেরনের মা আমাকে এ আংটি দিয়েছেন। তুমি যাও রবার্ট। তোমার সাথে পরে কথা হবে। রবার্ট বলে, আমি তোমাকে দেখে নেব কালা বিল্লি। ম্যারি চোখে হিংস্র চাহনিতে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

রবার্ট চলে যাওয়ার পর শেরন ম্যারিকে জিজ্ঞেস করে, ম্যারি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কি কোথাও ভুল হচ্ছে? ম্যারি বলে, আগামীকাল বিকেলে পার্কে আমি তোমাকে সব বলব। এখন চল কোথাও গিয়ে ফিশ ফ্রাই আর জুস খাব।

সারারাত শেরন ছটফট করতে থাকে। ম্যারি কি তবে অন্য কাউকে ভালোবাসে? এমন প্রতারণা আমার সাথে কেন করল? এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে শেরন অল্পকিছু সময়ের জন্য শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে ম্যারির কোলে ফুটফুটে একটা মেয়ে। লুসি তার পাশে হাসিমুখে বসে আছে। হঠাৎ কপালে কারো স্পর্শ। ঘুম ভেঙে দেখে লুসি। মা বলে শেরন লুসির হাত জড়িয়ে ধরে। লুসি বলে, কিরে পাগলা কাজে যাবি না? শেরন বলে, যাব মা। খাবার দাও। লুসি খাবার টেবিলে দিয়ে হাসপাতালে বেরিয়ে যায়।

শেরন বিকেলে পার্কে এসে অপেক্ষা করে ম্যারির জন্য। ম্যারি আসে খুব স্নিগ্ধ সুন্দর সাজে। এসে দেখে শেরনের চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। ম্যারি বেশ বুঝতে পারছে কী ঝড় বইছে শেরনের ভেতরে। ম্যারি পাশে এসে বসে শেরনের হাত মুঠোয় পুরে নিয়ে বলে, শেরন আমি এখন যা বলব তার সবটুকু সত্য।

সেদিন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল বাসায় ফিরতে। রাত এগারোটায় একা সাইকেল চালিয়ে ফিরছিলাম। চার্চের কিছু দূরে যেতেই ছয়জন শেতাঙ্গ যুবক আমার পথ আটকায় আর আমার চারপাশে শিষ বাজাতে থাকে। আর আজেবাজে কথা বলতে থাকে। বলে, বুক দেখ একেবারে কচি, কামড়ে কামড়ে খেতে বেশ মজা হবে। কালা মাগীর ঠোঁটগুলোও বেশ মাংসল। হিপটা দেখ, ডগি স্টাইলে দারুণ মজা হবে! এরপর শুরু করে ওরা টানা-হেঁচড়া। আমার কাপড় ছিঁড়তে থাকে ওরা। আমি প্রথমে ওদের খুব অনুরোধ করি, দয়াকরে আমাকে বাড়ি যেতে দাও। আমার মায়ের ব্রেস্ট ক্যানসার। আমার ভাইটার বয়স কেবল সাত বছর। ওরা আমাকে মারতে মারতে বলে, চুপ কর কালি মাগী! ছয় ছয় জন সাদা পুরুষ তোকে ভোগ করবে, এতেই তো তোর আনন্দ হওয়া উচিত। তোরা কালোরা এই সুন্দর পৃথিবীটাকে নোংরা করেছিস। এরপর ওরা ছয়জন আমাকে ধর্ষণ করে। আর এতে ওদের সাধ মেটেনি, ওরা আমাকে কণ্ঠরোধ করে হত্যা করে রেখে যায়।

পরদিন খুব সকালে চার্চের এক সিস্টার ওইদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই ফুজি সিস্টার, আমার অফিসের আইডি কার্ডের মাধ্যমে আমার অফিসে যোগাযোগ করেন। এরপর আমি যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাজ করতাম; তারা মাকে আর ভাইকে খবর দেয়। চার্চের ফাদারের সহযোগিতায় আমাকে সমাহিত করা হয়। আমার অফিস থেকে মাকে বলা হয়, আপনি কোনো কেস করবেন কিনা? আমার মা বলেন, আমি কাকে সন্দেহ করব? আর এসব করে কি আমি আমার মেয়েকে ফিরে পাব? সেদিন আমার ভাইটি সারারাত চিৎকার করতে থাকে; বলে, আমাকে কে চকলেট কিনে দেবে? ও ম্যারি দি ফিরে আস। বাবাও চলে গেলেন, তুমিও চলে গেলে আমার কী হবে! মা চিৎকার করেও কাঁদতে পারেনি। ভাইকে বুকে নিয়ে নীরবে শুধু চোখের জল ফেলেছে আর বলেছে, ঈশ্বর আছেন। তিনি আমাদের দেখবেন।

ওই কান্না আমি সহ্য করতে পারিনি। আমি ঈশ্বরকে বললাম, আমাকে কিছুদিনের জন্য পৃথিবীতে যাওয়ার অনুমতি দাও আর বিশেষ ক্ষমতা দাও। ঈশ্বর জানতে চাইলেন, বেশ! কী ক্ষমতা চাও বলো। আমি বললাম, আমি বর্ণবাদী শেতাঙ্গ যুবকদের ওপর প্রতিশোধ নেব।

ওরা যেই আমাকে ধর্ষণ করতে আসবে, আমি সাপ হয়ে পেচিয়ে ধরে ওদের গোলাপ গাছ করে দেব। আমাকে সেই ক্ষমতা দাও। ঈশ্বর একজন দেবদূতকে বলেন, ম্যারির যোনিতে ঢুকে লক্ষ-কোটি সাপের ভ্রুণ পুতে দিয়ে আসো। দেবদূত এক প্রকাণ্ড সাপ হয়ে আমার যোনিতে ঢুকে যায় আর কোটি কোটি সাপের ভ্রুণ রেখে আসে আমার জরায়ুতে। আমি বারে কাজ নেই এ কারণেই। যখনই কোনো বর্ণবাদী শেতাঙ্গ যুবক পেয়েছি নিয়ে গেছি বাড়ি অব্দি। আর বাড়ির পেছনে গিয়ে আমিই প্রলুব্ধ করেছি। যখনই আমার সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছে; তখনই ছোট ছোট অসংখ্য সাপ বের হয়েছে। তারপর ভয় পেয়ে যেই পালাতে চেয়েছে, আমিই মস্ত সাপ হয়ে সমস্ত শরীর জড়িয়ে ধরে কানে যেই কামড়ে দিয়েছি; অমনই গোলাপ গাছ হয়ে গেছে।

শেরন চোখভরা জল নিয়ে জিজ্ঞেস করছে, যারা তোমাকে রেপ করেছিল; তাদের কাউকে পেয়েছিলে? ম্যারি বলে, তুমি তো দাদুর সাথে গোলাপ বাগানে গিয়েছো। দুটো কালো গোলাপ দেখেছো না? শেরন বলে, হ্যাঁ। ম্যারি জানায়, ওই দুজন আমাকে রেপ করেছিল।

তারপর ম্যারি এবং শেরন কিছুক্ষণ চুপ থাকে। ম্যারি শেরনের কাছে ঘেঁষে বসে জিজ্ঞেস করে, তোমার কি আমাকে ভয় বা ঘৃণা হচ্ছে? শেরন বলে, এসব কিছু হচ্ছে না। তবে একটি বিষয় খুব জানতে ইচ্ছে করছে। ম্যারি বলে, জানি; বলছি।

তারপর ম্যারি শেরনকে বলে যায় চোখের জল ফেলতে ফেলতে, শেরন তোমার সাথে পরিচয়ের আগ অব্দি আমার বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, অধিকাংশ শেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গদের ঘৃণা করে। তারপর তোমার বিনয়, আমার প্রতি সম্মান এবং সর্বোপরি কৃষ্ণাঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও আমাকে বিয়ে করতে চাওয়া এসব কিছুই তোমাকে ভালোবাসতে আমাকে বাধ্য করেছে। আর আমি কেবল আত্মা হলেও আমার বয়স সতেরো। প্রেম, ঘর-সংসার এসবের কিছুর সাথেই জীবদ্দশায় আমার পরিচিতি ঘটেনি। তাই এসব পেতে আমার ভীষণ লোভ হচ্ছিল। দু-একবার ভেবেছি, তোমাকে না বলেই স্বর্গে ফিরে যাব। কিন্তু তাতে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি তোমার ঘৃণা জন্মাতো আর তোমার সাথে প্রতারণাও করা হতো। আমি তোমার ক্ষতি চাই না কখনো। তুমি অনেক কষ্ট পাবে। তাই সেটা করতে পারিনি। আবার এও ভেবেছি যে, আমি উধাও হয়ে যাব আর তুমি যাকে বিয়ে করবে তার ভেতরে আমি প্রবেশ করে তোমার কাছে থেকে যাব। কিন্তু আবার ভেবেছি, তোমার সন্তানের মা তো হতে পারব না। আর তাছাড়া আমি তো ঈশ্বরকে কথা দিয়েছি যে, আমি ফিরে যাব। শেরন বলে, তোমার ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব আমার আর যতদিন বেঁচে আছেন, তোমার মাকেও আমি দেখব। তুমি কী করতে চাও? ম্যারি শেরনের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে, আমি স্বর্গে ফিরতে চাই না। এই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও থেকে যেতে চাই; গাছ, ফুল, নদী, পাহাড় যে কোনো কিছু হয়ে। তুমি তোমার বাচ্চা এবং স্ত্রী নিয়ে সেখানে যাবে, আমি তোমাদের দেখব দুচোখ ভরে।

শেরন তারপর যায় চার্চে ফাদারের সাথে কথা বলতে। সাথে করে নিয়ে যায় ম্যারিকেও। ফাদার সবকিছু শুনে ডাকেন ম্যারিকে চার্চের ভেতরে। ফাদার বলে, কাম অন মাই চাইল্ড। অনেক কষ্ট পাচ্ছ তুমি! বল, আমি তোমার জন্য কী করতে পারি? শেরন বলে, ফাদার আপনি ঈশ্বরকে বলুন আমি স্বর্গে ফিরতে চাই না। আমাকে বরং রোজমেরি পার্কের সাথে একটা সুপেয় পানির হ্রদ করে দিন। যে পানি পান করলে যুগলদের ভেতর সৃষ্টি হবে প্রেম এবং সঙ্গম তৃষ্ণা। তারপর পৃথিবীতে জন্ম নেবে বিশুদ্ধ মানব প্রাণ; যাদের ভেতর থাকবে না কোনো বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা। তারা নিঃশঙ্ক চিত্তে ভালোবাসবে সব মানুষকে, সব শিশু, বৃদ্ধ, ফুল, পাখি সবাইকে। সব শুনে ফাদার বলেন, তোমরা দুজন আগামীকাল আসো। আজ গভীর রাত অব্দি আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব।

পরদিন শেরন আর ম্যারি আসে চার্চে। ফাদার দুজনকে দেখেই বুকের দুপাশে চেপে ধরে দুজনের কপালে চুমু দেন আর বলেন, মাই সুইট চিলড্রেন! ম্যারি কাঁদতে কাঁদতে বলে, ফাদার বলুন ঈশ্বরের ইচ্ছা। ফাদার জানান, আমি স্বপ্নে দেখেছি; ঈশ্বর তোমার ইচ্ছায় সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু নির্দোষ ব্যক্তিদের তোমার গোলাপ বাগান থেকে অবমুক্ত করতে হবে। ম্যারি জিজ্ঞেস করে, নির্দোষ বুঝব কীভাবে? ফাদার বলেন, আমি বুঝতে পারব গোলাপের গন্ধ শুকে। আমাকে তোমার গোলাপ বাগানে নিয়ে চলো।

ফাদার, ম্যারি এবং শেরন আসে গোলাপ বাগানে। ফাদার গন্ধ শুকে দেখেন কালো গোলাপ দুটিতে অদ্ভুত দুর্গন্ধ। আর একটা আছে কমলা রঙের গোলাপ, সেটা থেকেও গন্ধ আসছে। কিন্তু বাকিগুলো থেকে গন্ধ আসছে না। ফাদার ম্যারিকে আর শেরনকে বলেন, শেরন তুমি ম্যারিকে বুকে জড়িয়ে ধরবে। তখন ম্যারির চোখে যে জল আসবে, সেটা ছুঁয়ে দিলেই ওরা আবার মানুষ হয়ে যাবে। দুটি দুর্গন্ধযুক্ত কালো গোলাপ রয়ে যায়; পৃথিবীতে বর্ণবাদে খুনের চিহ্ন হিসেবে আর একটা কমলা গোলাপ থেকে যায় বর্ণবিদ্বেষের চিহ্ন হিসেবে।

এরপর ম্যারি আর শেরনকে নিয়ে ফাদার যান রোজমেরি পার্কের ভেতর। এক কোণে গিয়ে ফাদার শেরনকে বলেন, তুমি ম্যারিকে জড়িয়ে ধরে প্রগাঢ় আলিঙ্গন করে ওর ঠোঁটে গভীর চুমু দেবে আর আমি ম্যারির হাত দিয়ে আশীর্বাদ করব। অত্যন্ত আনন্দের সাথে ম্যারির প্রস্থান হবে আর গজিয়ে উঠবে সুপেয় পানির হ্রদ। আলিঙ্গনের আগে ম্যারি পার্পল কালার আংটি খুলে শেরনের হাতে দেয় আর বলে, আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে কৃতজ্ঞ চিত্তে চলে যাচ্ছি কিংবা জন্ম নিচ্ছি ঝরনা হিসেবে। তুমি একটুও কষ্ট পেয়ো না শেরন। শেরন ফাদারের দিকে তাকায়। ফাদার হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেন আংটি নেওয়ার জন্য।

পরের রোববার শহরের সব মানুষ উপচে পড়ে নতুন সৃষ্টি হওয়া ঝরনা দেখার জন্য। মেন্টনের মেয়র ফাদারকে নিমন্ত্রণ জানান ঝরনাটি সবার জন্য অবমুক্ত করার জন্য। ফাদার বলেন, এই ঝরনা ঈশ্বরের বিশেষ কৃপা। এই কিছুদিন আগেই আমরা ম্যারি নামের একটা প্রাণবন্ত কিশোরীকে হারিয়েছি। তার নামে ঝরনাটির নাম হোক ম্যারি। আর ঝরনার পাশে বানানো হবে ম্যারির একটা মূর্তি। কিছুদিন পর দেখা যায়, ম্যারির হাস্যোজ্জ্বল মূর্তি। ডানহাতের অনামিকায় শোভা পায় একটা পার্পল রঙের আংটি।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com