গরমে গলা ভেজানোর জন্য ঠান্ডা পানির খোঁজ করাই স্বাভাবিক, অথচ আপনাকে বলা হচ্ছে হালকা গরম পানি পান করতে! এটি ভাবতে যেমনই লাগুক, সত্যিটা হলো এই হালকা গরম পানি আপনার শরীরের পক্ষে ভীষণ উপকারী। সারা বছর ধরে গরম পানি পান করলে তা আপনার শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। নিজেকে ফিট রাখার জন্য হালকা গরম পানি আপনার স্বাস্থ্যের সেরা ডোজ হতে পারে।
আমাদের দেহের ৭৫ শতাংশ তরল দিয়ে গঠিত এবং আরও ভালো কার্যকারিতার জন্য শরীরের প্রয়োজন ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সুতরাং, জেনে নিন কেন নিয়মিত গরম পানি পান করবেন, এটি শরীরে কীভাবে কাজ করে এবং পানি আরও পুষ্টিকর কর তুলতে করণীয়-
করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে কেন এটি অপরিহার্য: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস মহামারীজনিত ভীতি। এটি দিনদিন বেড়েই চলেছে এবং এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি কোনো প্রতিষেধক। তবে দীর্ঘ লকডাউনের পরে পুরো বিশ্ব যখন পদক্ষেপ নিচ্ছে পূর্বের কর্মব্যস্ততায় ফিরে যাওয়ার তখন শক্তিশালী বিপাক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা জরুরি।
খুব সকালে গরম পানি পান করলে তা শরীরের সঠিক ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং দেহে উপস্থিত টক্সিনকে ডিটক্সাইফাই করতে সহায়তা করে। এছাড়াও যদি আপনি মৌসুমী ফ্লু, সর্দি এবং কাশির ঝুঁকিতে থাকেন তবে সারাদিন অল্প অল্প করে গরম পানি পান করুন। এতে কফ-সর্দি জমে থাকলে তা দূর হবে।
দুর্দান্ত প্রতিকার: বুকে দীর্ঘ সময় কফ জমে থাকলে তা শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে। শ্লেষ্মা জমার কারণে তা ফুসফুসের বায়ু উত্তরণকে প্রদাহ দেয়। তাই প্রাকৃতিকভাবে শ্লেষ্মা গলিয়ে শরীর থেকে বের করে দেয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সারাদিন হালকা গরম পানি পান করা। তা ছাড়া হালকা গরম পানি গলা ও সাইনাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও সহায়তা করে। বুকে কফ জমাট বাঁধলে হালকা গরম পানি এভাবে খেতে পারেন-
১ লিটার হালকা গরম পানি নিন। তার সঙ্গে একটি লেবু যোগ করুন। এবার ২ চা চামচ মধু নিন। সবকিছু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর সারাদিন ধরে অল্প অল্প পান করুন।
মধু এবং লেবু উভয়ই ভিটামিন সি, ডি, ই, কে এবং বি কমপ্লেক্স এবং বিটা ক্যারোটিন জাতীয় পুষ্টিতে ভরপুর, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ঠান্ডা, কাশি এবং ফ্লুতে চিকিত্সা করতে সহায়তা করে।
পানীয়কে আরও শক্তিশালী করুন: প্রতিদিন সকালে গরম পানি পান করলে তা হজম ব্যবস্থা থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করে দিতে সাহায্য করে। হালকা গরম পানি এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের সঠিক ক্রিয়ায় সহায়তা করে। এর কারণ হলো হালকা গরম পানি শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। ফলস্বরূপ বিপাকের হার বাড়ে, যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে।
১ লিটার হালকা গরম পানি নিন। এর সঙ্গে আধা এক চা চামচ চুনের রস, ২-৩টি তুলসি পাতা ও ২-৩ আদা টুকরো আদা নিন।
এই মিশ্রণটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করে আনে এবং হজমশক্তি উন্নত করে। পাশাপাশি বিপাকের হার উন্নত করতেও সহায়তা করবে। তবে আদা খুব বেশি খাবেন না। পানির সঙ্গে সামান্যই যুক্ত করুন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: আপনি যদি ফিটনেসের ক্ষেত্রে সচেতন থাকেন তবে পানিই হতে পারে আপনার সেরা সঙ্গী। সকালে হালকা গরম পানি পান করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের হয়ে যায়। এটি শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায় যা বিপাকের হারকে উন্নত করে। হালকা গরম পানি অন্ত্রের খাদ্য অণুগুলো ভাঙতে সাহায্য করে। খাবার থেকে ভালোভাবে পুষ্টির শোষণের পাশাপাশি হজমে উন্নতি করতে সহায়তা করে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণেও কার্যকরী। হালকা গরম পানির সঙ্গে এই ভেষজ মিশ্রণটি আপনার বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করবে-
১ লিটার হালকা পানি নিন। এবার তার সঙ্গে ১ চা চামচ জিরা, ১ চা চামচ ধনিয়া ও ১ চা চামচ মেথি মেশান।
এই মিশ্রণটি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। পানীয়টি সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে খান। এই পানীয়টি কেবল ওজনই কমায় না, সেইসাথে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলোও বের করে দেয়।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন