লাইভস্টক
ব্রয়লার মুরগি দ্রুত বেড়ে ওঠার ঝুঁকি নিয়ে মন্ত্রী এবং খামারিদের ভিন্ন মত
লেখক
বিবিসি বাংলাসাত বছর বয়সী সন্তানের মা ঢাকার নিশিতা ইসলাম। তার সন্তানের প্রিয় খাবারের একটি মুরগীর মাংস। এজন্য নিয়মিতই ব্রয়লার মুরগী রান্না বা মুরগী ফ্রাই করে সন্তানকে খেতে দেন তিনি।
এখন ব্রয়লার মুরগীকে দ্রুত বর্ধনশীল খাবার দেয়ার খবরে উদ্বিগ্ন তিনি।
“বাচ্চার পুষ্টির জন্য মুরগি অপরিহার্য্য। কিন্তু এতেও যদি ক্ষতিকর কিছু থাকে তাহলে যাবো কোথায়?”
বাংলাদেশে এ মূহুর্তে ফার্মের মুরগী হিসেবে পরিচিত ব্রয়লার মুরগিই পুষ্টি চাহিদা পূরণে বেশি ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির হিসেবে প্রায় ৭০ হাজারের মতো পোলট্রি ফার্ম রয়েছে সারাদেশে।
দেশজুড়ে ছোট বড় হ্যাচারিতে গড়ে প্রতি সপ্তাহে প্রায় দেড় কোটি ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে।
সরকারের প্রত্যাশা ২০২১ সাল নাগাদ সপ্তাহে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের পরিমাণ হবে প্রায় আড়াই কোটি।
তবে বাংলাদেশের মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু অভিযোগ করেছেন যে, বাড়তি মুনাফার আশায় খামারিরা ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা বড় করতে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধির খাবার দিচ্ছেন।
এটি না করে ভারসাম্যপূর্ণ খাবার দিয়ে মুরগি বড় করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “কিছু অসাধু ব্যক্তি ইউরোপ থেকে মুরগীর খাবার কিনে মধ্যপ্রাচ্যে রি-প্যাকেট করতো। সেখানে এমন কিছু মেশাতো যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর”।
তিনি বলেন, “এনবিএম নামক একটি উপাদান আমরা রাজস্ব বোর্ডের সাথে আলাপ করে বাংলাদেশে আনা বন্ধ করেছি। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারিতে পরীক্ষা হচ্ছে। এটা ক্ষতিকর উপাদান যা ব্রয়লারের ওজন দ্রুত বাড়াতে পোলট্রি ফিডে অসাধু ব্যক্তিরা ব্যবহার করতো। আমরা এগুলো বন্ধ করতে পেরেছি। তবে একই সাথে পুষ্টির জন্য বিকল্প স্বাস্থ্যকর উপাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে”।
খামারিরা কী বলছেন
তবে প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগ মানতে রাজী নন খামার মালিক ও পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসিন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন খাবারে অতিরিক্ত কিছু খামার পর্যায়ে মেশানো হয় না।
“পোলট্রি ফিড আমরা তৈরি করিনা। আমরা কিনে এনে শুধু কোনটা কতটুকু দিবো সে অনুযায়ী দিয়ে খাবার তৈরি করি। এখানে আর কিছু মেশানোর বা দেয়ার সুযোগ নেই। খাবার ও মুরগির বাচ্চা দুটিই কিনে এনে আমরা শুধু লালন পালন করি,” বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন বিশ্বের কোথাও ব্রয়লার মুরগি ১০৫ দিন ধরে বড় করেনা।
“সর্বোচ্চ ৪২ দিন সময় দেয়া হয়। কিন্তু ওতো দিন রাখলে মুরগীর ওজন ৩/৪ কেজি হয়। তবে এতো ওজনের মুরগীর ক্রেতা বাংলাদেশে কম। সে কারণেই আমরা ৩০/৩২ দিন লালন পালন করে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এক বা দেড় কেজি ওজন হলে বিক্রি করে দেই”।
তিনি বলেন গ্রিলের জন্য ছোটো ব্রয়লারের চাহিদা বেশি থাকে সেজন্য উৎপাদকরা ২৮/৩০ দিনে বিক্রি করে দেন।
একই ধরণের কথা বলছেন পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. এম এম খান।
তিনি বলছেন বলছেন দেশী মুরগিকে যত খাবারই দেয়া হোক না কেনো একটা পর্যায়ের পর তার আর ওজন বাড়বেনা।
“কিন্তু ব্রয়লার জেনেটিক পটেনশিয়াল। তাকে সঠিক পুষ্টি দিতে হয়। তার খাবারে সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে হয়। আর এখন প্রতিযোগিতামূলক মার্কেট। অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কিছু মিশিয়ে কেউ খামার বা পোলটি ফিড ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেনা। প্রতিনিয়ত ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে। তাই এ সুযোগই নেই যে গণহারে সবাই মুরগির ওজন বাড়িয়ে ফেলবে”।
পোলট্রি ফিড আমদানিকারকের বক্তব্য
তবে মূল অভিযোগ উঠছে পোলট্রি ফিড আমদানীকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে। যদিও তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে পোলট্রি ফিড আনা হয়না।
পোলট্রি খাবার আমদানীকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ডক্টরস ফিড লি:-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: এস এম বায়েজিদ হোসেন বলছেন তারা পোলটি ফিড আমদানি করে অবিকৃত অবস্থায় ডিলারের মাধ্যমে বাজার জাত করেন।
“ফিড আমদানীকারকরা বড় ভলিউমে আমদানি করেন এবং মেশিনের মাধ্যমে প্যাকেটজাত করে ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করেন। তাই এসব পর্যায়ে অতিরিক্ত কিছু খাবারে মেশানো অসম্ভব। তবে একেবারে খুচরো পর্যায়ে কেউ অসাধুতা করলে সেটি হতে পারে”।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, মিয়ানমারে কেন কমছে – দা এগ্রো নিউজ
-
নিপাহ্ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
-
ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে? – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ইলিশের ‘জীবন রহস্য’ কীভাবে এর উৎপাদন বাড়াবে
-
বাংলাদেশে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে – দা এগ্রো নিউজ
-
আপেল-স্ট্রবেরির দরকার নেই, বাঙালিরা পেয়ারা বা বরই খেলেও একই উপকার পাবেন
-
যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি আপেলের চাষ শুরু হয়েছে যা ‘এক বছর সতেজ থাকবে’
-
পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতেই ছাদে বা বারান্দায় ফল,সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ
সেই দিন কি তাহলে প্রায় এসে গেল, যখন এমন খাবার বিক্রি হবে দোকানে – যা তৈরি কৃত্রিম মাংস দিয়ে, কিন্তু তা থেকে আসল মাংসের মতোই ‘রক্ত’ বেরোয়?
সম্প্রতি কিছু কিছু দেশে ‘মিট-ফ্রি’ খাবার সহজলভ্য হয়ে ওঠায় বিশেষজ্ঞরা এমন কথাই বলছেন।
মানুষের খাদ্য কিভাবে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে – তা নিয়ে একদিকে যেমন উদ্বেগ বাড়ছে, অন্যদিকে নিরামিষভোজী হবার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
এই ভেজিটেরিয়ানরা যে খাবার খান তাকে বলে ভেগান ফুড। বিভিন্ন মাংস-জাত খাবারের ভেগান সংস্করণ বের হতে যাচ্ছে এখন। যেমন: ভেগান সসেজ-রোল বা ভেগান বার্গার।
এতে যে মাংস ব্যবহৃত হবে – তা দেখতে চিরাচরিত মাংসের মতোই। এই ‘নিরামিষ মাংসের’ গন্ধ ও স্বাদও আসল মাংসের মতো। এ থেকে আসল মাংসের মতো ‘রক্ত’ও বেরোয়।
এগুলো তৈরি হচ্ছে উদ্ভিদজাত প্রোটিন থেকে। সাধারণত এ কাজে ব্যবহার হচ্ছে গম, মটরশুঁটি বা আলু থেকে। আর এই মাংসের ‘রক্ত’ তৈরি হচ্ছে বীটের রস দিয়ে।
গরুর মাংসের রঙ এবং স্বাদ তৈরি হয় যে প্রাণীজ উপাদানটি থেকে তার নাম হচ্ছে ‘হেম’। ইম্পসিবল ফুডস নামে একটি আমেরিকান ফার্ম সম্প্রতি উদ্ভিজ্জ ‘হেম’ তৈরি করেছে – যা কৃত্রিম মাংসকে আসলের চেহারা এনে দেবে বলেই তারা মনে করছেন।
বিজ্ঞানীরা এখন ল্যাবরেটরিতেও কৃত্রিম মাংস তৈরি করছেন। এটা তৈরি হচ্ছে প্রাণীর স্টেম সেল দিয়ে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন স্তরের কৃত্রিম মাংস তৈরি করা যা রান্না করা বা খাওয়ার অভিজ্ঞতা হবে একেবারেই আসল মাংসের মতো – এর পার্থক্য ধরাই প্রায় অসম্ভব হবে।
এখন পাশ্চাত্যের কিছু সুপারস্টোরে একটা মাংস-মুক্ত শাখাও দেখা যাচ্ছে।
তবে কৃত্রিম মাংস দিয়ে তৈরি খাদ্য পণ্য এখনো বাজারে বা রেস্তোরাঁয় না এলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তা পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘জাস্ট’ নামে একটি ফার্ম বলছে, ২০১৯ সাল শেষ হবার আগেই তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপার স্টোরগুলোতে ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা চিকেন বা ‘মুরগির মাংস’ আনতে পারবে বলে তারা আশা করছে।
অবশ্য এ জন্য আমেরিকার ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমতি লাগবে।
তা ছাড়া সে অনুমতি পাওয়া গেলেও ল্যাবরেটরিতে তৈরি মাংস সম্পর্কে মানুষের যে বিরূপ ধারণা বা ‘ছি ছি’ করে ওঠার প্রবণতা – তা একটি বড় বাধা হবে, এমনটাই অনেকের ধারণা।
করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাসায় অলস সময় পার করছেন। দীর্ঘ ছুটির এ সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজ জেলা নরসিংদীর শিবপুরে কোয়েল পালন করে সফল হয়েছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ছাত্র মো. সাকিকুল ইসলাম নাদিম। বর্তমানে কোয়েল খামার থেকে প্রতিমাসে তার আয় প্রায় ২০ হাজার টাকা।
উদ্যোক্তা নাদিম জাগো নিউজকে এ সফলতার গল্প শোনান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
নাদিমের কোয়েল খামারের যাত্রা শুরু গত বছরের ৩ আগস্ট। স্কুলে পড়াকালীন সিলেটে আত্মীয়ের বাড়িতে কোয়েল পালন দেখে আগ্রহ জন্মে। এরপর খোঁজখবর নিতে থাকেন। কিন্তু পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সময়ের অভাবে এতদিন শুরু করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের মার্চে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর সুযোগটা হাতে চলে আসে। তবে করোনায় ডিমের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তখন শুরু করতে পারেননি।
করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলে নিজের বাড়িতেই শেড নির্মাণ করে সাত হাজারের বেশি একদিনের বাচ্চা তোলেন। এতে তার খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। শেড নির্মাণ ও কোয়েল পালনের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যয় হয় আরও ৭০ হাজার টাকা। কোয়েলের বয়স এক মাস পার হওয়ার পর ডিম দেয়া শুরু করে। এর মাঝে ৩০ দিন বয়সী প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুরুষ কোয়েল বিক্রি করে নাদিমের উপার্জন প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
কোয়েল পালনে মূলত ডিম থেকেই লাভ আসে। নাদিমের খামারে বর্তমানে তিন হাজারের বেশি ফিমেল (নারী) কোয়েল পাখি আছে। প্রতিদিন এখান থেকে গড়ে প্রায় ২২৫০টি ডিম পাচ্ছেন। প্রতি ১০০ ডিম গড়ে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। অনলাইন ক্লাস চলমান থাকায় কাজের সুবিধার্থে খামারে একজন লোক নিয়োগ করেছেন নাদিম। সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে বলে জানান গণবিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র।
নিজে ভেটেরিনারি শিক্ষার্থী হওয়ায় এবং শিক্ষকদের পরামর্শে নাদিমের খামারের ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো। অন্যান্য খামারগুলোর তুলনায় তার খামারে বাচ্চা মৃত্যুহার অত্যন্ত নগণ্য। তবে করোনার কারণে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
নাদিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশানুরুপ ডিম উৎপাদন হলেও দাম বেশ কম। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ডিমের চাহিদা কমেছে। যে কারণে অন্যান্য সময়ে ১০০ ডিম ১৭০-১৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও এখন সেটা গড়ে মাত্র দেড়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার ভালো হলে মাসে আরও ১০ হাজার টাকা বেশি ইনকাম হতো।’
কুমিল্লায় কোয়েল পাখি পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তরুণরা। দিন দিন এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতে, কোয়েল পাখি পালনে মনোযোগী হলে তরুণরা বেকারত্ব ঘোচাতে পারে। এখানকার অনেকে নিজেদের পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাতে ক্ষুদ্র আকারে কোয়েল পাখি পালন করছেন। বড় খামারি রয়েছেন কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই, বরুড়া, বুড়িচং ও চান্দিনাসহ বিভিন্ন উপজেলায়। জেলায় খামারির সংখ্যা ৫০-এর বেশি হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কুন্দারঘোড়া গ্রাম। এ গ্রামে তরুণ আনোয়ার উল্লাহ কোয়েল পাখি পালন করছেন। তিন বছর ধরে তিনি পালন করছেন। ঘরসহ পুঁজি লেগেছে আড়াই লাখ টাকা। প্রথম বছরে তার পুঁজি উঠে গেছে। তার বর্তমানে ২০০০ কোয়েল পাখি রয়েছে। তিনি তা থেকে প্রতিদিন ১৫০০ ডিম সংগ্রহ করেন। স্থানীয় তরুণরা পরামর্শ চাইলেও তিনি সহযোগিতা করেন। কোয়েল পালনে তার পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। মনোযোগী হলে কোয়েল পালনে যে কেউ সফলতা পেতে পারে বলে তার দাবি। জেলার বড় খামারি চান্দিনার রূপসী বাংলা এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে বাজার তৈরির কাজও করতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম পুষ্টিকর খাবার। জেলায় কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের চাহিদা বাড়ছে। কোয়েল পাখি পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছে তরুণরা। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে। কোয়েল পাখি চাষে তরুণরা বেকারত্ব ঘোচাতে পারে।
কোয়েল পালন খুবই লাভজনক। প্রায় সব ধরণের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের উপযুক্ত | পোল্ট্রির প্রায় ১১ রকম প্রজাতির মধ্যে কোয়েল এক ছোট গৃহপালিত পাখি, যা খুব সহজেই পালন (Quail rearing) করে যায় | স্বল্প মূল্যে, অল্প জায়গায়, অল্প খাদ্যে কোয়েল পালন কৃষকবন্ধুদের জন্য বেশ লাভজনক ব্যবসা | কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং আমিষ বেশি | সর্বোপরি, কোয়েলের মাংস বেশ সুস্বাদু, তাই বাজারে এর চাহিদা সারাবছর বেশ থাকে |
কোয়েল পালনের সুবিধা(Benefits of bater farming):
১) কোয়েল দ্রুত বাড়ে, ৬-৭ সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে এবং বছরে ২৫০-২৬০ টি ডিম পাড়ে |
২) ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং প্রোটিনের ভাগ বেশি |
৩) কোয়েলের দৈহিক ওজনের তুলনায় ডিমের শতকরা ওজন বেশি |
৪) ৮-১০টা কোয়েল একটি মুরগির জায়গায় পালন করা যায় এবং ১৭-১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় |
৫) কোয়েলের রোগবালাই খুব কম এবং খাবার খুবই কম লাগে |
৬) অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অল্প দিনে বেশি লাভ করা যায়।
জাত:
পৃথিবীতে বর্তমানে ১৭-১৮ জাতের কোয়েল আছে। অন্যান্য পোলট্রির মতো কোয়েলের মাংস এবং ডিম উৎপাদনের জন্য পৃথক পৃথক জাত আছে। কোয়েলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ‘জাপানিজ কোয়েল’ অন্যতম।
প্রজনন(Breeding):
শুধুমাত্র ডিম ফুটাতে চাইলে স্ত্রী এবং পুরুষ কোয়েল একত্রে রাখার প্রয়োজন। স্ত্রী কোয়েল প্রতিপালন অধিক লাভজনক। আশানুরূপ ডিমের উর্বরতা পেতে হলে ৩টি স্ত্রী কোয়েলের সাথে ১টি পুরুষ কোয়েল রাখার ৪ দিন পর থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করা উচিৎ। স্ত্রী কোয়েল থেকে পুরুষ কোয়েল আলাদা করার পর ৩ দিন পর্যন্ত ফুটানোর ডিম সংগ্রহ করা যায়। উপযুক্ত পরিবেশে প্রথম বছর গড়ে ২৫০-৩০০টি ডিম পাড়ে। কোয়েলের ডিমের গড় ওজন ১০-১২ গ্রাম।
বাচ্চার যত্ন:
সদ্য জন্মানো কোয়েলের বাচ্চা খুবই ছোট থাকে, ওজন মাত্র ৫-৭ গ্রাম। এ সময় যে কোনো রকম ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার প্রভাব স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম উৎপাদন এবং বেঁচে থাকার ওপর পড়ে। এঅবস্থায় খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান এবং কাম্য তাপমাত্রা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বজায় রাখতে হবে। বাচ্চা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রুডিং ঘরে এনে প্রথমে গ্লুকোজ এবং এমবাভিট ডলিউ এস জলের সাথে মিশিয়ে পরপর ৩ দিন খেতে দিতে হবে এবং পরে খাদ্য দিতে হবে। প্রথম সপ্তাহ খবরের কাগজ বিছিয়ে তার ওপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং প্রতিদিন খবরের কাগজ পরিবর্তন করতে হবে। এক সপ্তাহ পর ছোট খাবার পাত্র বা ফ্লাট ট্রে ব্যবহার করতে হবে।
খাঁচায় কোয়েল পালন:
খাঁচায় ৬০টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১২০ সেমি. দৈর্ঘ্য, ৬০ সেমি. প্রস্থ এবং ৩০ সেমি. উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাঁচার প্রয়োজন। খাঁচার মেঝের জালিটি হবে ১৬-১৮ গেজি | ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চার খাচার মেঝের জালের ফাঁক হবে ৩ মিলিমিটার এবং বয়স্ক কোয়েলের খাঁচায় মেঝের জালের ফাঁক হবে ৫ মিলিমিটার। খাঁচার দুই পার্শ্বে একদিকে খাবার পাত্র অন্যদিকে জলের পাত্র সংযুক্ত করে দিতে হবে। খাঁচায় ৬০টি কোয়েলের জন্য ৩ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ২৮ বর্গ সেন্টিমিটার বা ৩ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন।
খাদ্য(Food):
ডিম পাড়া কোয়েলের প্রতি কেজি খাবারে ২.৫-৩.০% ক্যালসিয়াম থাকতে হবে। ডিমের উৎপাদন ধরে রাখার জন্য গরমের সময় ৩.৫% ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। সকালে এবং বিকালে খাবার পাত্র ভালো করে পরিষ্কার সাপেক্ষে মাথাপিছু দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, প্রথম সপ্তাহ থেকে ৫ গ্রাম দিয়ে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৫ গ্রাম করে বাড়িয়ে ২০-২৫ গ্রাম পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১.২৫-২.৫ সেন্টিমিটার (১/২ থেকে ১ ইঞ্চি) খাবার পাত্রের জায়গা দিতে হবে। খাবার জল সবসময় পরিষ্কার দিতে হবে এবং যে পাত্রে দেওয়া হবে সেটিকে প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে |
লিটার ব্যবস্থাপনা:
তুষ, বালি, ছাই, কাঠের গুড়া প্রভৃতি দ্রব্যাদি কোয়েলের লিটার হিসাবে মেঝেতে ব্যবহার করা যায়। অবস্থাভেদে লিটার পরিবর্তন আবশ্যক যেন কোনো রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি না হয়। মেঝেতে ডিপ লিটার পদ্ধতি অবলম্বন করা ভালো। প্রথমেই ৫-৬ ইঞ্চি পুরু তুষ বিছিয়ে দিতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন লিটার ভিজে না যায়। স্বাভাবিকভাবে শীতকালে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করতে হবে, অন্য ঋতুতে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করলে লিটারের শতকরা ১-২ ভাগ কলি চুন মিশিয়ে দিতে হবে যেন লিটার শুষ্ক এবং জীবাণুমুক্ত হয়।
কোয়েল পাখি পালনের গুরুত্ব
কোয়েল পাখি পালন বাংলাদেশের পশুপালন খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এটি স্বল্প জায়গা, কম খরচ এবং দ্রুত উৎপাদনের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
কোয়েল পাখি পালনের গুরুত্ব
স্বল্প জায়গায় পালন: কোয়েল পাখি পালনে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। ছোট খামার বা বাড়ির আঙিনায়ও সহজে পালন করা যায়।
খরচ কম: অন্যান্য পোলট্রির তুলনায় কোয়েল পাখি পালনের খরচ অনেক কম। খাদ্য এবং ব্যবস্থাপনা সহজ ও সাশ্রয়ী।
দ্রুত উৎপাদন: কোয়েল পাখি মাত্র ৬-৭ সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে। এর বাচ্চাগুলোও দ্রুত বেড়ে ওঠে।
উচ্চ উৎপাদন হার: একটি কোয়েল পাখি বছরে প্রায় ২৫০-৩০০ টি ডিম পাড়ে।
আয়ের সুযোগ: কোয়েলের মাংস এবং ডিমের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, যা কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকে থাকার ক্ষমতা: কোয়েল পাখি বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় সহজেই মানিয়ে নিতে পারে।
কোয়েল পাখি পালন শুধু একটি লাভজনক উদ্যোগ নয়, বরং এর ডিম এবং মাংস মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
মাংসের পুষ্টিগুণ
প্রোটিনে সমৃদ্ধ: কোয়েল পাখির মাংস উচ্চমানের প্রোটিনের একটি উৎস, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে।
লো ফ্যাট ও ক্যালরি: এর মাংসে ফ্যাট এবং ক্যালরির পরিমাণ কম, যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য নিরাপদ।
ভিটামিন ও মিনারেল: কোয়েল পাখির মাংসে ভিটামিন বি৬, বি১২, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে: এর মাংসে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হাড় মজবুত করে: ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতি হাড় শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক: ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
শক্তি বৃদ্ধি: প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরে শক্তি জোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
ত্বকের জন্য ভালো: কোয়েলের মাংসের পুষ্টি উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
কোয়েল পাখি পালন শুধু একটি লাভজনক উদ্যোগ নয়, বরং এর ডিম এবং মাংস মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
কোয়েলের মাংস। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধী গুণ থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে এর জনপ্রিয়তা। গবেষণা বলছে, বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ছাড়াও এতে আছে আয়রন ও ক্যালসিয়াম।
কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা
কোয়েল পাখির মাংস স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন এবং অনেক উপকারী। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর, সহজপাচ্য এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
মাংসের পুষ্টিগুণ
প্রোটিনে সমৃদ্ধ: কোয়েল পাখির মাংস উচ্চমানের প্রোটিনের একটি উৎস, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে।
লো ফ্যাট ও ক্যালরি: এর মাংসে ফ্যাট এবং ক্যালরির পরিমাণ কম, যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য নিরাপদ।
ভিটামিন ও মিনারেল: কোয়েল পাখির মাংসে ভিটামিন বি৬, বি১২, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে: এর মাংসে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হাড় মজবুত করে: ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতি হাড় শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক: ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
শক্তি বৃদ্ধি: প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরে শক্তি জোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
ত্বকের জন্য ভালো: কোয়েলের মাংসের পুষ্টি উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
কোয়েল পাখি পালন শুধু একটি লাভজনক উদ্যোগ নয়, বরং এর ডিম এবং মাংস মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন