অন্যান্য
আল্লাহর ঘরের পবিত্রতা
লেখক
শাইখ সিরাজমুসলিম রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান হিসেবে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা নিয়েই বড় হয়েছি। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। আমার বয়স সতের কি আঠারো, তখন বাবা হজে গেলেন। একজন মুসলমান শেষ বয়সে গিয়ে তার সামর্থ্য থাকলে হজব্রত পালন করবেন, এটিই ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের রীতি। গ্রামের কৃষক হোক, শহরের ব্যবসায়ী হোক, সামর্থ্য থাকলে তিনি হজব্রত পালন করতে যেতেন পরিণত বয়সে। তখন এদেশ থেকে অধিকাংশ মানুষ হজে যেতেন সমুদ্রপথে, জাহাজে।
জাহাজ ছাড়ত চট্টগ্রাম থেকে। বাবার সঙ্গে সঙ্গে আমি চট্টগ্রাম পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তিনি হজব্রত পালন করতে যাচ্ছেন, আমি না গিয়েও এর পবিত্রতা উপলব্ধি করেছিলাম বাবার প্রস্তুতি দেখে। তখনই আত্মস্থ করেছিলাম ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হজের গুরুত্ব কতখানি। তখনকার দিনে কেউ হজে গেলে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। সবাই দোয়া চাইতেন। হজে যিনি যাচ্ছেন, তিনিও সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে জাগতিক সব লেনদেন চুকিয়ে হজে যেতেন।
হজে যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল একেবারে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতির মতো। সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় পরে ‘লাব্বায়েক আল্লাহুমা লাব্বায়েক…’ ধ্বনিতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সমবেত হন আল্লাহর ঘরে।
আজকাল স্যাটেলাইট আর তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের যুগে ঘরে বসেই মানুষ হজব্রত পালনের সরাসরি চিত্র দেখতে পায়। পবিত্র ভূমি মক্কা থেকে সৌদি টেলিভিশন বছরব্যাপী হজ ও ওমরাহ পালনের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে। দিনের প্রতিটি সময়েই মক্কার চেহারা মানুষ দেখার সুযোগ পায়। প্রতি ওয়াক্তের আজান ও নামাজ আদায়ের দৃশ্যও দেখা যায়। আমার জীবনে প্রথম ওমরাহ হজে যাওয়ার সুযোগ হলো ২০০৪ সালে। আমি, আমার স্ত্রী ও আমার দুই সন্তান অয়ন, বিজয়। ওরা তখন একেবারে শিশু।
চ্যানেল আইয়ে কাফেলা অনুষ্ঠান সে বছরই শুরু হলো। সেবার ওমরাহ হজ পালনের পাশাপাশি পবিত্র মক্কা তথা সৌদি আরবের অনেক প্রসিদ্ধ স্থান দেখারও সুযোগ হলো। পরের বছর সপরিবারেই গেলাম পূর্ণ হজব্রত পালনে। তারপর থেকে দুয়েক বছর পর পরই হজ ও ওমরাহ পালনের সুযোগ হয়েছে। চলতি বছর আবার যাওয়ার সুযোগ হলো। পবিত্র হারাম শরিফ, বায়তুল্লাহ শরিফ, কাবা শরিফ এবং মদিনা মনোয়ারা বা মসজিদে নববীর পরিবেশগত অনেক পরিবর্তনই আমি এই কয়েক বছরের মধ্যে লক্ষ্য করেছি। পরিবর্তন যেমন এসেছে অবকাঠামোগত, স্থান সংকুলানের জন্য বাড়ানো হয়েছে আয়তনও। পৃথিবীর মানুষ যেমন বাড়ছে, বাড়ছে হাজীও।
শুরুতে গিয়ে দেখেছি কাবা শরিফ তাওয়াফ করার সময় বিভিন্ন দেশের, বর্ণের মানুষ সর্বোচ্চ ভক্তি আর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন। পরিবেশই মানুষকে গভীর মনোযোগী করে দিত। সত্যিই সবাই আল্লাহর ওয়াস্তে নিজেকে পুরোপুরি নিবেদন করতেন। ধনী, গরিব, উপরে, নিচের সব ভেদাভেদ ভুলে একজন আরেকজনের প্রতি সর্বোচ্চ সৌহার্দ্য ও সম্মান যেমন প্রদর্শন করতেন একইভাবে সর্বোচ্চ মনোযোগে দোয়া করতেন। তখন দুনিয়ার কোনোদিকেই মানুষের খেয়াল থাকত না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের এই ভক্তি-শ্রদ্ধা ও আত্মনিবেদন দেখে অন্যরা শিখতেন ধর্মের পথে কীভাবে মশগুল ও মগ্ন হতে হয়।
পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তি মানুষকে অনেকদূর নিয়ে গেছে সন্দেহ নেই। এই প্রযুক্তি মানুষ কল্যাণে যেমন ব্যবহার করছে, একইভাবে ব্যবহার করছে অকল্যাণেও। তখন থেকেই কাবা শরিফে অপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিস ও ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এখনো এসব নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু পরিবেশটি আর তেমন নেই। মানুষের সহনশীলতা কমেছে। ইবাদতের প্রতি মগ্নতাও কমেছে। এখন কাবা শরিফেও বহু মুসল্লির ইবাদতের মগ্নতা সবসময়ই ভেঙে যাচ্ছে কারও না কারোর বেসামাল আচরণে। এবার আমি যারপরনাই আহত হয়েছি। তাই এই লেখার অবতারণা।
মুসলমান মাত্রেই জানেন পবিত্র হজব্রত পালনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করা। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে হাজির হওয়ার বার্তা ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ নিজ মুখে ঘোষণা করে হজরে আসওয়াতে চুমু খেয়ে শুরু হয় তাওয়াফ। তাওয়াফের সাতটি চক্করে ভিন্ন ভিন্ন দোয়া। এই দোয়া পর্যায়ক্রমে গভীর থেকে গভীর হতে থাকে।
প্রতিটি দোয়ার মধ্যেই রয়েছে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার বিষয়। বারবার আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা। এখানে কোনোভাবেই মনোযোগের বিচ্যুতি ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই। এমনকি কল্পনাতেও কোনো কিছু যাতে স্থান না পায় মনকে সেভাবে স্থির করতে হয়। মনকে বিশ্বাসের গভীরে নেওয়ার অবিরাম চেষ্টার মধ্য দিয়েই ইবাদতে সার্থকতা পান একজন হাজী। কিন্তু সেই পরিবেশ এবার আর দেখিনি। হজব্রত পালন করতে এসেও মানুষ জাগতিক কিছুকে তো পরিত্যাগ করেইনি বরং পবিত্র কাবা শরিফে নিয়ে এসেছে বাইরের জঞ্জাল।
আজকের যুগের ‘স্মার্ট ফোন’ সবার হাতে হাতে। তার সঙ্গে ‘সেলফি স্টিক’। পবিত্র বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করার সময়ও এই সেলফি স্টিক ধরে ভিডিও ফেসবুক লাইভে ব্যস্ত অনেকেই। পবিত্র আল্লাহর ঘরের চারদিকে এক-দেড় ফুটের মধ্যেই মানুষ একেবারে বেসামাল। এক প্রায় বৃদ্ধা মা হজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়ার পোজ দিচ্ছেন, আর তার ছেলে ছবি তুলছেন। এই একই প্রবণতা সব দেশের, সব বর্ণের মানুষের মধ্যেই। আল্লাহর ঘরের পবিত্রতা ভুলে দীর্ঘদিন পর পরিচিত কোনো মানুষকে দেখে হুড়মুড় করে জড়িয়ে ধরে মোবাইলে ছবি তোলার প্রবণতাও লক্ষ্য করলাম।
যতদূর জানি, সৌদি আরবে ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটস অ্যাপের মতো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের যথেচ্ছ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু মানুষ সৌদি আরব পৌঁছেই এগুলো ব্যবহারের বিকল্প পথের সন্ধান পেয়ে যায়। তারা মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগে কাবা শরিফের সঙ্গে নিজের বাড়ি, আড্ডা কিংবা অন্য যে কোনো স্থানের ভিডিও সংযোগ স্থাপন করেন।
মানুষের ইবাদতের মগ্নতা নষ্ট করার এই প্রবণতাকে ইসলাম কখনই স্বীকার যেমন করে না, প্রশ্রয়ও দেয় না। আবার দেখেছি অনেক হাজী নামাজ আদায় করছেন তার পাশেই শোরচিৎকার করে হামেশাই ফোনে কথাবার্তা চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অপ্রয়োজনীয় পারিবারিক আলাপ চলছে। আগে কাবা শরিফের প্রতিটি স্থানে অত্যন্ত নীরব ও পবিত্র পরিবেশে নামাজ আদায় ও ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ ছিল। এখন সেই সুযোগ ক্রমেই কমে আসছে। এখন মোবাইল প্রযুক্তিই মানুষের সব ধ্যান ভাঙানোর জন্য সবচেয়ে আগে ভূমিকা রাখছে। পুণ্যস্থানের পবিত্রতা পর্যন্ত মোবাইলের দ্বারা নষ্ট হচ্ছে প্রতি পদে পদে।
পাঁচ দিন মক্কায় থেকে মদিনায় গেলাম। মক্কার চেয়ে অপেক্ষাকৃত সুশীতল মদিনা মনোয়ারা। রসুল (সা.) রওজা মোবারক ও মসজিদ মসজিদে নববী। আগে সেখানে দেখেছি মানুষের গভীর ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নজির, এবার দেখলাম সেখানেও একই চিত্র। নবীজী (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের সময়ও বেসামাল মানুষ মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। ফোনে অবলীলায় কথা বলছেন। আরেকজনের নামাজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন দূরের কথা, তার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের এর চেয়ে বড় নজির আর কী হতে পারে? জান্নাতুল বাকী, রসুল (সা.)-এর বিবি, কন্যাসহ অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের কবরস্থান যেখানে গিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মনটা সর্বোচ্চ নরম হয়ে যায়, সেখানেও দেখলাম একই তত্পরতা।
মোবাইল আজ আর শুধু কথা বলার যন্ত্র নয়। মোবাইল রীতিমতো এক সম্প্রচার মাধ্যম। একই সঙ্গে বহু বিনোদনের এক মাধ্যম। আজকের অনলাইন দুনিয়ায় দরকারি জিনিসের যেমন ভাণ্ডার রয়েছে, রয়েছে বহু অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর বিনোদনের ব্যবস্থাও। এই মোবাইলই মানুষের ধ্যান-জ্ঞান ও মগ্নতাকে পদে পদে নষ্ট করছে। একজন আরেকজনের ইবাদত নষ্টের জন্য নিজের অজ্ঞাতেই দায়ী হয়ে যাচ্ছেন। আমার খুব ইচ্ছা, এই লেখাটি সৌদি আরবের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছনোর। সৌদি সরকারের উদ্দেশ্যে তথা পবিত্র মক্কা ও মদিনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আমার বিনীত অনুরোধ আল্লাহ ও রসুলের পবিত্র ঘরে মোবাইল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হোক।
এটি শুধু আমার ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে তাই-ই নয়, আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও বিঘ্নিত করছে। আমরা সাধারণত কোনো সভায় বসার সময়ও উপস্থিতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ও মনোযোগ অখণ্ড রাখার সুবিধার কথা চিন্তা করে মোবাইল বন্ধ করে রাখি। এটিই এখনকার ভদ্রতা। অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থানটিতেই এই ভদ্রতা প্রদর্শনের পরিবর্তে বিকৃত রুচি ও চিন্তা প্রদর্শন করছি আমরা। ধর্মপ্রাণ মানুষের ইবাদতের প্রতি সম্মান জানিয়েই পবিত্র মক্কা ও মদিনায় মোবাইল বন্ধ করা উচিত।
উপরন্তু বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর পবিত্র পুণ্যস্থান মক্কা ও মদিনার সর্বোচ্চ পবিত্রতা রক্ষার বিষয়টিও গভীরভাবে আমলে আনা উচিত। হজব্রত পালন করতে যাওয়া মানুষের এত বেসামাল হয়ে ওঠার সুযোগ চালু থাকলে দিনে দিনে পরিবেশ আরও খারাপ হতে পারে। আল্লাহ তাঁর পবিত্র ঘর অবশ্যই পূর্ণ পবিত্রতায় হেফাজত করবেন। এক্ষেত্রে কোনো মুসলমানও পারে না তার দায় থেকে সরে যেতে।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
পঞ্চাশে বাংলাদেশ: এক টেলিভিশন তারকা আর দরিদ্র কৃষকের সন্তান এক বিজ্ঞানী যেভাবে পাল্টে দিয়েছেন বাংলাদেশের কৃষি
-
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের
-
স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব
-
চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার
-
পৌণে আট’শ বিঘা জমিতে তরুন উদ্যোক্তার কৃষি খামার
-
নতুন স্বপ্ন জাগাচ্ছে গোলাপী রঙের মহিষ
-
মাংস রান্নার স্বাস্থ্যকর উপায়
-
তামাক চাষীদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হোক
-
টাঙ্গাইলে কলার আবাদ বাড়লেও সুবিধা নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় এ বছর রোপা আমন ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। এবার আবহাওয়া ধান চাষে অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার চতুল ইউনিয়নের বিল দাদুরিয়া ও ধুলপুখুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠে আমন ধানের ক্ষেত চোখে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। এবছর রোপা আমন ধানের উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে একর প্রতি প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ মণ। একর প্রতি খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। উপজেলার ধুলপুকুরিয়া গ্রামের ধান চাষি মো. শামীম মোল্লা বলেন, এক একর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ করেছি। একর প্রতি ৮০ মণ ফলন আশা করছি, খরচের চেয়ে দুই ভাগ বেশি লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রীতম হোড় বলেন, এ বছর উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার চারশ’ ৪২ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ করা হয়েছে। পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটটিউিট (বিনা) র্কতৃক উদ্ভাবিত স্বল্পজীবনকাল বিশিষ্ট বিনা ধান-১৬, বিনা ধান-১৭ জাতগুলো আগাম পাকতে শুরু করছে। হাইব্রিড ধান ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল ব্রিধান-৭৫, ব্রিধান-৮৭ জাতের বেশিরভাগ ধান কাটা-মাড়াই আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে। ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে এবং মাঠ র্পযায়ে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে নিয়মিত আলোক ফাঁদ স্থাপন করাসহ কৃষিবিভাগ কৃষকদের পরার্মশ দিয়ে যাচ্ছে।
জোয়ার-ভাটা, স্বাদু-নোনাপানির সঙ্গে সমুদ্রসংলগ্ন নদী হওয়ায় দেশের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ মাছ পাওয়া যায় সাতক্ষীরা এবং এর আশপাশের এলাকায়। এসব মাছের অধিকাংশ রাজধানীর বাজার পর্যন্ত আসে না। সেখানকার স্থানীয় ও আশপাশের জেলা-উপজেলার হাটবাজারে বিক্রি হয় এই মাছ।
হাটবাজার মানেই হুলুস্থুল ব্যাপার। হাটসংশ্লিষ্ট খেয়াঘাটের চরিত্রটা আবার একটু আপন আপন। তাড়া থাকলেও মানুষ দুদণ্ড দাঁড়িয়ে কথা বলে। চা-পান খায়। শ্যামনগরের প্রণব মণ্ডল ওই করতে গিয়ে ধরাটা খেলেন। ভালোই যাচ্ছিলেন লম্বা-চওড়া হাসিমুখে। নীলডুমুরের নওয়াবেঁকী ঘাটে উঠতেই কয়েকজন মাছের দাম জানতে চাইল। ভীষণ খুশি মানুষটা একটু থেমে গর্বের সঙ্গে জানালেন, হাজার টাকায় নিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির জন্য। প্রাগৈতিহাসিক কালের পাথুরে রঙের শরীর আর পৃথক অঙ্গের মতো বসিয়ে রাখা কুদেমার্কা চোখের খুদে তিমির এমন সংস্করণ আগে দেখিনি। সরল মনে মাছের নাম জানতে চাইলাম। ওটা ‘চরখাদা’ শুনেই নদীর খাদ থেকে লাফিয়ে উঠলেন একজন। বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে বললেন, ‘এহ্, নাম জানে না, দ্বিগুণ দামে মাছ কিনে কত খুশি। এর নাম “মোচড়”।’ প্রণব মণ্ডলের হাসিটাই দুমড়েমুচড়ে গেল এবার।বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপন
ছোট জালে নদীর কুলীন মীন
সুন্দরবনের উপকূলঘেঁষা জনপদের মাছেরা স্বভাবে ও বিচরণে দেশের অন্য সব এলাকার মাছেদের সঙ্গে কৌলীন্য প্রথা বজায় রেখে চলেছে সব সময়ই। তবে স্থানীয় মানুষের মাছের নাম না জানা হলো মাঝির সেই সাঁতার না জানা গল্পের মতো। প্রণব মণ্ডল তাঁর শোক কবে ভুলবেন জানি না, আমি উৎসুক হলাম এমন আরও কিছু মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে। বৃক্ষের পরিচয় ফলে হলে নদীর পরিচয় মাছে হওয়া উচিত। সুন্দরবন মানেই আঠারো ভাটির বারো রকম। বাদাবনের মাছ দেখতে হলে যাওয়া উচিত ছোট জাল দিয়ে শুধু পরিবারের জন্য মাছ ধরা মানুষদের কাছে। নদীর কিনারে ফেলা তাদের ছোটখাটো ঝাঁকি বা ঠেলাজালে বড় মাছের কমতি হলেও বৈচিত্র্যে ভরন্ত। শ্যামনগরের নীলডুমুর হয়ে গাবুরার শেষ মাথায় চাঁদনীমুখা একেবারে বাদাবনের প্রতিবেশী গ্রাম। গনগনে দুপুরে উপস্থিত হলেই এ অঞ্চলের ‘গনগনে’ মাছের সঙ্গে দেখা হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না, তবে যাদের দেখা পাবেন, তাদের ঠিকুজি মুখস্থ কঠিন। এখানে খোলপেটুয়া পেটমোটা। মাঝেমধ্যেই সে তেড়ে আসে লোকালয়ে। দক্ষিণে সামান্য আগালেই রেসের গতিতে বঙ্গোপসাগরের দিকে দৌড়াচ্ছে আড়পাঙাশিয়া। পাঙাশের কদর একটু কম হলেও সমগোত্রীয় মাসতুতো-পিসতুতো মীন ভাইবোন ভাঙান, কাইন, পারশের আদর আছে। যদিও ভাঙান মাছের সঙ্গে রুইয়ের স্বাদের ব্যবধান পাওয়া কঠিন। কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, আড়পাঙাশিয়ার মতো দাপুটে নদ-নদীর পানি সময়ভেদে নোনা-স্বাদু—দুই স্বাদ হওয়ায় বাস্তুতন্ত্রের প্রভাবে বৈচিত্র্য পেয়েছে কুলীন মাছেরা।বিজ্ঞাপন
সুন্দরবনের জাভা আর সুন্দরী পায়রা
চন্দ্রমুখার কাছে তখন সদ্যই জাল টেনে উঠেছেন কয়েকজন। একই জালে নানা রকম মীনশাবক আসায় জড়ো হলো একদঙ্গল ছেলেমেয়ে। রুপচাঁদার ধরন কিন্তু গায়ের রংটা শ্যামলা মেয়ের মতো একটা চ্যাপ্টা মাছের। চাপা রং বলেই কি না নিজেকে সুন্দর করার প্রচেষ্টায় শরীরে নানা বর্ণের নকশা তৈরি করেছে ‘পায়রা’। তার নামে পাখি আর বন্দর দুই-ই আছে। পাওয়াও যায় দুরকম চাঁদা আর অলি পায়রা। এর পাশেই রাখা রঙিন তেলাপিয়া, কথ্য সম্বোধনে ফাইশ্যা হচ্ছে ফেসা, আছে খয়রা, পারশে। ধবধবে একটা মাছ কাদায় গড়াগড়ি দিয়েছে ধরে আনার শেষ সময়। শৈশবকালে মাছ ও মানুষ দুটোরই কাদা মাখার অবাধ স্বাধীনতা থাকে। এ মাছের নাম শুনে আমার চোখও জ্বলজ্বল করে উঠল। সুন্দরবনের সবচেয়ে দামি মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘জাভা’। বড় হলে এর কেজি ১০ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। তবে জাভার রূপ-গুণের গোপন রহস্য থাকে গোপনে। পেটের মধ্যে মূল্যবান ফুসফুস, যেটা থেকে তৈরি হয় আরও মূল্যবান ওষুধ। বাতাসযন্ত্রটা বের করে নিলে এর সঙ্গে নছি মাছের বিশেষ পার্থক্য নেই দামে। আফসোস যে জাভার পরিণত খোলতাই চেহারাটা দেখা হলো না। কী আর করা যাবে, এখন তো আর হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সেই হাজার বছর আগেকার রুপা রাজার নির্দেশ মেনে একমণি কম ওজনের মাছ ধরা হয় না (বেণে মেয়ে উপন্যাস)।
সাতক্ষীরার বিনেরপোতায় গামবুট আর চিংড়ির মাথা
ভাগ্য ভালো, এই শিশু মাছদের সঙ্গে দেখা হলো। স্থানীয় মানুষ ধরে না আনলে বাজারে এ বয়সের মৎস্যপুত্র-কন্যাদের দেখা মেলে না। বাজার বলতেই বিপণনটা দেখতে ইচ্ছা হলো।
সাতক্ষীরার বিনেরপোতা মাছের আড়তটা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। সেখানে দেখবেন, আড়তের নোনাপানি থেকে পা বাঁচাতে গামবুট পায়ে হাঁটাহাঁটি করছে। সকাল আটটার দিক থেকে ট্রাক আসা শুরু হলে রীতিমতো মচ্ছব। এ বাজারে ঘোরাফেরা করলে সমুদ্র থেকে ঘের, নদী থেকে পুকুরে চাষ করা সব মাছের সঙ্গে দেখা হবে। বড় সমস্যা হচ্ছে, মাছের নাম জানা। এক দোকানে শুনলেন ‘ভাঙান’ তো পাশের দোকানে বলবে ‘সেলুর ভাঙন’। ভোলা মাছের নাম শুনে খুশি হয়ে আগাতে আগাতেই দেখি আরেক দোকানে ডাকছে ‘পোয়া’ নামে। এখানে মুফতে পাওয়া যাবে বড় চিংড়ির বিচ্ছিন্ন মাথাও। এসব বিক্রি হবে আলাদাভাবে। কেজিপ্রতি মাত্র ৭০ টাকা। অথচ মাথার আকার দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আসল মাছ কেজিপ্রতি কমসে কম হাজার টাকার কমে বললে বিক্রেতা রাগ হতে পারেন। এ বাজার বিচিত্র। এখানে মাছ পাল্লা হিসেবে নিলামে তোলা হয়। আধা কেজি, এক কেজির সুযোগ নেই। অধিকাংশ ক্রেতা আসেন নিজের দোকানের জন্য মাছ নিতে। তবে এর মধ্যেই গোপনে একজন নিয়ে বসেছেন কিছু খুদে কাঁকড়া।
কালো সোনার কাঁকড়া
কাঁকড়ার প্রসঙ্গ আসায় দুটো কথা না বললেই নয়। পানির ভারসাম্য রক্ষায় খুবই দায়িত্বশীল সে। ঝরে যাওয়া পাতা নিজ দায়িত্বে কুচি কুচি করে কেটে মাছেদের খাবার তৈরি করে প্রাকৃতিক রন্ধনশিল্পীর খেতাব পেয়েছে কাঁকড়া। অবশ্য সন্ন্যাসী কাঁকড়া আবার ভয় পেলেই শামুকখোলে আশ্রয় নেয়। রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়ার পুলসিরাত অতিক্রম কায়ক্লেশের। নারী কাঁকড়া ১০০ গ্রাম আর পুরুষ কাঁকড়া ১৫০ গ্রামের কম ধরা নিষেধ। রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়ার মূল্য নির্ধারণ হয় ওজনে। যদিও কাঁকড়াদের অঙ্ক করার অদূর ভবিষ্যতেও সম্ভাবনা নেই, তবে তাদের মগজের পরিমাণ পরীক্ষা হয় রীতিমতো টর্চ জ্বালিয়ে। কাঁকড়া যে চিংড়িকে এক দৌড়ে পেছনে ফেলে দিয়ে সামনে এগিয়েছে, তা নিয়ে আর নতুন কিছু বলার নেই। তবে খামারে ওদের বড় হওয়ার ধরনটা একটু সঙিন। তাদের নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত খেলার সঙ্গী ছাড়া একা একাই বড় হতে হয়। এ অঞ্চলের নদী আর বননির্ভর মানুষের হিসাবটা ভিন্ন। তাঁরা ভাটিগা আর গোণের কালের হিসাব করে। সে হিসেবে গোণের কাল এলে কাঁকড়ারা ডাঙার দিকে উঠে আসতে চায়।বিজ্ঞাপন
খুলনার বাজারে কলাপাতার ডালি
পরিণত জাভা না দেখে এ অঞ্চল থেকে ফিরে যাওয়া অনুচিত। তাকে খুঁজতে রওনা হলাম খুলনায়। সকাল সকাল গেলে নিউমার্কেটের বাজারে পাবেন মাছ বরণের আয়োজন। ককশিটের বাক্সে বরফ রেখে ডালায় কলাপাতা বিছিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। কলাপাতায় কাঁচা মাছ ঠান্ডা থাকে। কিছুক্ষণ পরই এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাছ আসবে ঘাট হয়ে বাজারে। সে অপেক্ষা করতে করতে দেখা হলো সেই কুলীন জাভার সঙ্গে। বিক্রেতা মাছের পেট থেকে বাতাসযন্ত্র বের করে দেখালেন। এই সেই মহার্ঘ, যার জন্য দামের ও রকম তফাত। পরিণত জাভা খুলনার বাজারে শুয়ে আছে মৎস্যকন্যার মতো আয়েশে। পাশেই পাওয়া গেল হলুদ কেশরের ভোলা মাছকে। দেখতে ছোটখাটো হলেও ভোলা নামে জেলা, এ নামে নদী থাকায় তারও দেমাক কম নয়। মুখ ঘুরিয়েই রইল সে।
মাছ খুঁজতে হলে বাজার একটা বড় ব্যাপার। কোন দোকানের চাল খাচ্ছেনের মতো অবস্থা। এখানকার সন্ধ্যা বাজার অসূর্যম্পশ্যা। পথের পাশ দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে ডালা নিয়ে যেন লাইন টেনে বসেছেন বিক্রেতারা। একগাল হেসে পরিচয় করিয়ে দিলেন একজন ‘তাইড়্যাল’ শুদ্ধ ভাষায় তাড়িয়ালের সঙ্গে। প্রায় ‘ভোলা’ মাছের কাছাকাছি রূপ। গুণ কেমন জানি না, তবে একে বেশি ঝাঁজে রাঁধতে নেই। মাছবাজারে ঘুরলে আপনার দশাও সাতক্ষীরার প্রণব মণ্ডলের মতো হতে পারে। এ বলল পারশে তো কিছু দূর গিয়েই শুনবেন সেটার আরেক নাম। এখানে বলল ভাঙন তো ওখানে বলবে এটা ‘আধা ভাঙন’।
তাড়িয়াল দেখে তাড়া নিয়ে ফেরার পথে সেই কুলীন হয়েও সর্বজনে মিশে যাওয়া ‘সাদা সোনা’র থালা চোখের সামনে। বাগদা, গলদা, চাকা আর হরিণা চিংড়ি। এমনি তো আর অস্থির মানুষকে চিংড়ির মতো ছটফট করছে বলা হয় না। না হলে বোকার মতো নোনাপানি সয়ে নিয়ে কৃষকের ক্ষতি হতে দেয়? এখন নিজের দৌড়েই কাঁকড়ার কাছে রানার্সআপ। এখান থেকে বের হয়ে এলাম দ্রুত। সাতসকালে দাকোপে অভিযান আছে। এ অঞ্চলে একটু দূরেই যাওয়া মানে খেয়াঘাটের সঙ্গে দেখা। আর ঘাট মানেই নতুন নতুন মাছ আর ভিন্ন মুখে এক মাছের অনেক রকম নাম।
ভদ্রা নদীর রঙিন মেনি
কে জানত দাকোপের কালাবগি যাওয়ার পথে তারই সঙ্গে দেখা হবে, যে আছে অপেক্ষা করে গায়ে রং নিয়ে। তাঁর সমস্ত শরীরে আলোর দ্যুতি। সে এ অঞ্চলের খুদে ক্ষেত্রাধিপতি। ভদ্রা নদীর খেয়াঘাটে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রায় পায়ের কাছ দিয়ে লাফিয়ে গেল নীল আলোর ছটা। সে কাদা ও পানি উভয়েই সমান চটপটে। ক্যামেরা তাক করার আগেই এক ফুটের লাফ। গাল ফোলানো সে ‘মেনি’। ওকেই আবার কেউ কেউ ডাকে মেনু বা মিনু নামে। অনেকেই চেনে ইংরেজি ‘মাডস্কিপার’ হিসেবে। মেঘলা দিন না হলে আরও বেশি জেল্লাই দেখাত রঙের। তাঁর এই বিচিত্র রং সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময় বাস্তুসংস্থানের প্রতীক। স্কুলের ব্যাক বেঞ্চের শিশুর মতোই বুদ্ধিতেও সেরা। ফোলা মুখে পানি ছিটিয়ে ঝুঁকে থাকা পাতায় বসা পোকাকে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ঘায়েল করে মেনি।
বাদাবনে নদীর খাঁড়ি থেকে সরু গোপন নালা, শ্বাসমূলের ফাঁকে ফাঁকে লুকোনোর আস্তানা, জোয়ারে উঠে ভাটায় নেমে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সেই সঙ্গে স্বাদু-নোনাপানির সঙ্গে সহাবস্থানে সুন্দরবনের মিনেরা বাংলাদেশের উচ্চবংশীয়। রহস্যময় সুন্দরবনের অলিগলির সন্ধান জানে ওরা। চোখেমুখে সে গর্ব স্পষ্ট এই লোকালয়ের মাছেদের। বিশ্বাস না হলে নিজেই একবার ঘুরে দেখতে পারেন। সুন্দরবন ভালোবাসা মানুষ যদি বাদাবনের নদী, মাছ না চেনে, তাহলে আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরানির কোনো ভেদ থাকে না। ভালো কথা, আকবর বাদশা কিন্তু সত্যি সত্যি মাছ খেতে ভালোবাসতেন। আইন-ই-আকবরি আর ইম্পিরিয়াল গেজেটে উল্লেখ আছে, প্রাচীন ভারতবর্ষের ১৩টি মহাবন ছিল। এরই একটি আঙ্গেরীয়। মতান্তরে সে আঙ্গেরীয়রই অংশ আজকের সুন্দরবনের অরণ্য। মাছে-ভাতে বাঙালির পাতে নাম না জানা মাছের টুকরো উঠে এলে নিজের সম্মান থাকে?
মুরগির খামারে বাচ্চার মৃত্যু ঝুঁকি কমানোর কৌশলঃ
কিছু কৌশল অবলম্বন করলে খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যু অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। নিচে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
১। খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর জন্য থাকার স্থান যাতে বেশ বড় হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। মুরগির বাচ্চার থাকার জায়গা কম হলে বাচ্চাগুলো গাদাগাদি হয়ে মারা যেতে পারে। গাদাগাদি হওয়া থেকে বাচ্চাগুলোকে রক্ষা করতে বেশি পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ রাখতে হবে।
২। বাচ্চার থাকার স্থানের তাপমাত্রা যেন খুব বেশি কিংবা খুব কম না হয় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার শরীরের সাথে বাইরের তাপমাত্রার বড় কোন পরিবর্তন হলে অনেক সময় বাচ্চা মারা যেতে পারে। এজন্য মুরগির বাচ্চা সহনীয় তাপমাত্রায় মধ্যে রাখতে হবে।
৩। খামারে বাচ্চার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য বাচ্চা পরিবহণ করার সময় এমনভাবে পরিবহণ করতে হবে যাতে কোনভাবেই মুরগির বাচ্চাগুলো আঘাত না পায়। পরিবহণের সময় বাচ্চা আঘাত পেলে পরে বাচ্চা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৪। খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য খামারে প্রয়োজনীয় আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। খামারে বাচ্চার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য জটিল রোগ থেকে বাচ্চাগুলোকে রক্ষা করতে হবে। কোন কারণে বাচ্চাগুলো রোগে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তুলসী গাছ ভেষজ চিকিৎসায় একটি অনন্য উপাদান। এই তুলসীর যে কত গুণ আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। প্রায় সব জায়গাতেই এটা কম বেশী পাওয়া যায়।
তুলসীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে,যা ক্যান্সার প্রতিরোধে পর্যন্ত কাজ করে। শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও দারুন ভূমিকা তুলসীর।ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণুনাশকের কাজ করে তুলসী পাতা।
১। আপনি হঠাৎ দেখলেন আপনার গোয়ালের গরু বা বাছুর পেটের ব্যাথায় কাৎরাচ্ছে। একবার উঠছে,একবার বসছে।
অর্থাৎ ব্যাথায় সে অস্থির। ঠিক সেই মুহুর্তে আপনি কি করবেন? চিন্তার কিছু নেই, আপনি বড় বা মাঝারী আকারের গরুকে ৩০ মি:লি: এবং বাছুর বা ছোট গরুকে ২০ মি:লি: তুলসী পাতার রস খাইয়ে দিন, ইনশাআল্লাহ ব্যাথা চলে যাবে। এটা ৬ ঘন্টা পর পর তিন বার দিবেন।
২। আপনি দেখলেন যে,আপনার গাভী বা বাছুরের গায়ে জ্বর বা সামান্য কাশি হয়েছে। হাতের কাছে ডাক্তার বা ওষুধপাতি নেই।
কোন দুশ্চিন্তা করবেন না, গাভীকে ৩০ মি:লি: তুলসী পাতার রসের সাথে চার চা চামচ মধু মিশিয়ে ৩/৪ বেলা খাইয়ে দিন,ইনশাআল্লাহ সেরে যাবে। বাছুরের ক্ষেত্রে পথ্যের পরিমাণ টা অর্ধেক হবে।
৩। হঠাৎ দেখলেন আপনার গরু বা বাছুরটি কোন কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শরীরের উপরিভাগে হাল্কা ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
দুশ্চিন্তার কিছুই নেই,কিছু তুলসী পাতা বেঁটে একটা পেস্টের মত তৈরী করে ক্ষততে লাগিয়ে দিন,২/৩ দিন লাগালেই ক্ষত সেরে যাবে।
তুলসী পাতার পেস্ট কিন্তু ইনফেকশন রোধেও কাজ করে।
৪। আপনি দেখলেন যে, আপনার খামারের বাছুরটি কৃমিতে আক্রান্ত, কৃমিনাশক ওষুধপাতি নেই হাতের কাছে অথবা আপনি এলোপ্যাথিক ওষুধ দিতে চাচ্ছেন না।
কোন সমস্যা নেই তাতে,তুলসী পাতা ও মুলের রস বের করে ১৫ মি:লি: আন্দাজ নিয়ে খাইয়ে দিন খালি পেটে বাছুরকে, কৃমিনাশক ওষুধের কাজ করবে।
প্রথম বার খাওয়ানোর ৭ দিন পর আবার খাওয়াবেন। ভালো কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।এভাবে তুলসী গরু বাছুরের অনেক রোগের ওষুধ হিসাবে কাজ করে,যার জুড়ি নেই বললেই চলে। তাই যারা গরু পালনের সাথে যুক্ত তারা অবশ্যই বাড়ির আশে পাশে কিছু তুলসী গাছ লাগাবেন।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে সবজির। অপরদিকে কমেছে মুরগি, পেয়াঁজের দাম।এছাড়াও অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য পণ্যের দামও।
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মিরপুরের ১১ নম্বর বাজার, মিরপুর কালশী বাজার ও পল্লবী এলাকা ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি সিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, , ফুলকপি প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা। গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, চাল কুমড়া পিস ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, কাকরোলা ৬০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা ও পেঁপের কেজি ২৫ টাকা।
মিরপুর ১১ নম্বর বাজারের সবজি বিক্রেতা আলআমিন বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সবজির আমদানি কম থাকায় দাম বেড়েছে। সবজি বাজারের কোন নিশ্চয়তা নেই, আগামীকাল আবার দাম কমে যেতে পারে তরকারির।
এ সব বাজারে আলুর দাম বিক্রি হচ্ছে ২০থেকে ২৫ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজ কেজি ৬০ টাকা। যা গতসপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল।
ইন্ডিয়ান ও মায়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
এইসব বাজারে গতসপ্তাহের দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়।
এছাড়া শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। চায়না আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। হলুদের কেজি ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইন্ডিয়ান ডালে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। দেশি ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
এসব বাজারে ভোজ্যতেলের প্রতি লিটার খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়।
বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। এছাড়া প্যাকেট চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়।
বাজারে অপরিবর্তিত আছে ডিমের দাম। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা। সোনালী (কক) মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
বাজারে কমেছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ৩০ কমে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৯০ টাকা। গত সপ্তাহের থেকে ২০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। কেজি ৩০০ থেকে ৩১৯ টাকা। লেয়ার মুরগি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। কেজি ২৩০ টাকা।
১১ নম্বর বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, শীত কাল আসছে বলে কমেছে মুরগির দাম। সামনে আরও দাম কমতে পারে মুরগির।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন