শাকসবজি
“ক্ষতির মুখে আগাম সবজি”
লেখক
প্রথম আলো
বগুড়ার শেরপুরে ছোটফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম। এ বছর আগাম সবজি চাষে নেমেছেন তিনি। প্রায় দুই মাস আগে এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন ফুলকপির। জমিতে চারা রোপণের পর বেশ সতেজ হয়ে বেড়ে উঠেছিল। এখন গাছ থেকে তাঁর ভালো ফলন পাওয়ার কথা। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টি ও রোদের তাপে এই গাছগুলো নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।
শহিদুল ইসলাম প্রথম আলম কে বলেন, এই এক বিঘা জমিতে আগাম সবজি চাষে তাঁর ব্যয় হয়েছে অন্তত ২৭ হাজার টাকা। আশা করেছিলেন, তাঁর আয় হবে অন্তত ৮০ হাজার টাকা। এখন তাঁর চাষের ব্যয়ের টাকাও উঠবে না।
স্থানীয় পাঁচজন সবজিচাষি বলেন, অসময়ে বৃষ্টির কারণে তাঁরা আগাম সবজি চাষে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এসব চাষের মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ টমেটো ও মরিচের গাছও রয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়েছেন তাঁরা। জমিতে ছিটানো হয়েছে কীটনাশক। কিন্তু তা তেমন কোনো কাজে আসেনি।
উপজেলার ছোটফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক নওশের আলী বলেন, খেতে যখন ফলন আসবে তখন শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টিতে খেতের মধ্যে কিছু পানিও জমে। তবে পানি দীর্ঘ সময় থাকেনি। রোদের প্রচণ্ড তাপে দুই-তিন দিনের পর গাছগুলোর পাতা নিস্তেজহয়ে হেলে ও মুড়িয়ে যেতে থাকে। এসব গাছে তেমন ফলনও নেই। খেতেই পচে যাচ্ছে অনেক গাছ।
উপজেলার গাড়িদহ ও খামারকান্দি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আগাম চাষের বেশির ভাগ ফুলকপি ও বাঁধাকপিগাছ সতেজতা হারিয়েছে।
ছোটফুলবাড়ি গ্রামের মো. আল আমিন, বুলবুল ইসলামসহ ১০ জন কৃষক বলেন, গত বছর এই সময়ে আগাম চাষের ফুলকপি ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ও বাঁধাকপিও একই ওজনের হয়েছে। এ বছর এসব জমিতে ফলন নাই। যে কয়টা গাছে হয়েছে, তা–ও ৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের।
গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর শীতকালীন সবজি চাষ হবে ৪ হাজার ২৫০ একর জমিতে। ইতিমধ্যে কৃষক ৩ হাজার ৫৫০ একরে চাষে নেমেছেন। এ বছর কৃষক আগাম সবজি চাষ করেছেন ৮৫৪ একরে। এর মধ্যে বৃষ্টির পানিতে প্রায় ৮০ একর জমির সবজিখেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, উপজেলার গাড়িদহ, খামারকান্দি ইউনিয়নে সারা বছর সবজি চাষ করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া উপজেলার খানপুর, মির্জাপুর, সুঘাট ও সীমাবাড়ি ইউনিয়নের কিছু এলাকায় সবজি চাষ হচ্ছে। এ বছর শীতকালীন সবজি চাষে রয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ পরিবার।
উপজেলা কৃষি দপ্তরের গাড়িদহ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমের গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন বৃষ্টি গত বছরে কম ছিল। বৃষ্টির পর রোদের তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ওই সব খেতের গাছগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।
উপজেলার কৃষি দপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মাসুদ আলম বলেন, যাঁরা আগাম সবজি চাষে নেমেছিলেন শুধু তাঁরাই অসময়ে বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। এতে অনেক কৃষক এই খেতগুলো ভেঙে নতুন করে একই রকমের চাষে নামছেন। এ কারণে উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্য অর্জন খুব বেশি ব্যাহত হবে না। তবে বৃষ্টিতে আগাম সবজিচাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন।
শেরপুর পৌর শহরের বৈকাল বাজারের সবজি বিক্রেতা দুলাল সরকার বলেন, গত বছর এই সময়ে আগাম সবজিচাষিরা তাঁদের খেতে উৎপাদিত ফলন বাজারে তুলেছিলেন। এ বছর বৃষ্টিতে কৃষকের খেত নষ্ট হওয়ায় উৎপাদনও কমে গেছে। এ কারণে এ বছর স্থানীয় বাজারে আগাম শীতের সবজি অনেক কম।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সারমিন আক্তার বলেন, যেসব আগাম চাষের খেতের সবজিগাছ নষ্ট হয়েছে, তা ভেঙে নতুন করে চাষে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি খেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি দ্রুত সরিয়ে দিতে ও গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে তাঁরা গ্রামে গ্রামে কৃষককে পরামর্শ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

পুঁইশাক চাষে কিভাবে চারা তৈরি করবেনঃ
সারিতে বুনলে
প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম বীজ লাগবে।
আর ছিটিয়ে বুনলে বীজের পরিমাণ বেশী লাগবে। পুঁইশাকের বীজ বপনের জন্য ১৮ থেকে ২০ সেন্টিগ্রেড তামপাত্রা প্রয়োজন। তাই শীতে সময় যখন তাপমাত্রা কম থাকে সেই সময় বীজ বপনকরা ভাল। সাধারণতঃ গ্রীষ্মকালে বর্ষায় এর চাষ ভাল হয়। বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে জমিতে বুনতে হয়। কখনও কখনও বেডে চারা তৈরি করা হয়। ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা তৈরির জন্য বেডে বা পলিব্যাগে বীজ বোনা হয়। চারা দু সপ্তাহের হলে সেগুলো তুলে মূল জমিতে লাগানো যায় বা ফাঁকা জায়গা পূরণ করা যায়। সারিতে বুনলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম ও হেক্টর প্রতি ১.৫-২.৫ কেজি বীজ লাগবে।

উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ
জমির আগাছা পরিস্কারের পর ৫ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটির উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। চারা উৎপাদন করে ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো যায়। পুঁই শাকের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার এবং প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টি মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়।
পুঁইশাক চাষে সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনাঃ
ইউরিয়া ছাড়া সব সারই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারার বয়স ১০-১২ দিন হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি এই মোট তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ও টিএসপির অর্ধেক জমি তৈরীর সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা রোপণের সময় গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। পুঁইশাক চাষে শতক প্রতি সারের মাত্রা হল গোবর ৬০ কেজি, সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম টিএসপি ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি ৪০০ গ্রাম।

পুঁইশাক চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশনঃ
বর্ষায় সাধারনত সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মাটিতে রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। প্রায়ই মাটি আলগা করে দিতে হবে।
পুঁইশাক চাষে আগাছা ও নিড়ানিঃ
আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ফলন বেশি পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। পুঁইশাক গাছের গোড়ায় কখনই পানি জমতে দেয়া যাবে না। তাহলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। আবার অনেক বৃষ্টিপাত হলে দেখা যায় যে গোড়ার মাটি ধুয়ে যায়। তাই বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে। চারা ২৫-৩০ সেন্টিমিটার উঁচু হলে আগা কেটে দিতে হবে, এতে গাছ ঝোপালো হয়।
পোকামাকড় ও রোগদমনঃ
পুঁইশাকে পাতার বিটল বা ফ্লি বিটল ছাড়া আর কোনো পোকা তেমন ক্ষতি করে না। এই পোকা পুঁইশাকের পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে। সারকোস্পোরা পাতার দাগ পুঁইশাকের একটি মারাত্মক রোগ। এছাড়াও আরও কয়েকধরনের রোগ পুঁইশাক গাছে দেখা দিতে পারে। ছত্রাকনাশক স্প্রে করে এসব রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়।
পুঁইশাক গাছের ডগা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হবে। এতে শাক খাওয়াও হয় আবার গাছে নতুন ডগাও বের হয়।
পুঁইশাকের ফলন প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৮০ কেজি এবং হেক্টোর প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টন ।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলো
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

রামের বাজারে প্লাস্টিকের টুলে বসে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবু বকর সিদ্দিক (প্রিন্স)। তাঁর এই ছবি একজন ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়েছিল। তাঁকে নিয়ে আলোচনা–সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন বহু মানুষ। তবে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয় বলে জানালেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালনা পর্ষদের এই সদস্য।
নিজের বৌভাতের জন্য জমানো এক লাখ টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে শ্বশুরবাড়ির এলাকা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে খামারের জন্য জমি কিনেছিলেন। পরে ধারদেনাসহ নানাভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ২০১৪ সালে সেখানে ‘কৃষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নামে খামার চালু করেন তিনি। এই কাজ করতে গিয়ে বর্তমানে ব্যাংক এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া তাঁর ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার মতো।
আবু বকরের কৃষিকাজের জন্য মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৮ একর। এর মধ্যে ৩ একর দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা নেওয়া। বিভিন্ন জাতের ছয় হাজার ড্রাগনগাছ রয়েছে তাঁর খামারে। নয়জন স্থায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি সেখানে কাজ করছেন অনেক অস্থায়ী শ্রমিক। আবু বকর সিদ্দিক তাঁর নামের আগে ডক্টরেট বা শিক্ষক এসবের চেয়ে ‘শিক্ষিত কৃষক’ বলতেই বেশি পছন্দ করেন। ড্রাগন চাষের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেই পেয়েছেন ‘ড্রাগন প্রিন্স’ উপাধি।
কৃষি–অন্তঃপ্রাণ আবু বকর সিদ্দিকের ফেসবুকের বেশির ভাগ পোস্টই কৃষিসংক্রান্ত। কালবৈশাখীর তাণ্ডবের পর গত শনিবার ভোরে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কেমনে সম্ভব এইভাবে কৃষিকাজ করা?’

ওই ঝড়ের আগের দিন শুক্রবার মুঠোফোনে কথা হয় আবু বকরের সঙ্গে। ছবি ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে হাসতে হাসতেই বলেন, ‘আমি তো আর আজ নতুন করে কাজ করছি না। এর আগেও বিভিন্ন সময় আমার কাজ ও ছবি নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা হয়েছে। ২০১৬ সালেও একবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ড্রাগন ফল বিক্রি করার সময় এমন আলোচনা হয়েছে।’
১৪ মে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে বাবুলের বাজারে প্লাস্টিকের একটি টুলে বসে নিজের খামারে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। সেই ছবি তুলেছিলেন বেশ কয়েকজন। তাঁদেরই একজন ছবিটি ফেসবুকে দেন। এর দুই ঘণ্টা পর আবু বকর যখন ফেসবুকে ঢুকলেন, তখন দেখেন, তাঁকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

আবু বকর জানান, কচুর লতি বিক্রির ঘটনার দিন খামারের শ্রমিকদের খাবারের জন্য বাজার করার কথা ছিল। সেই সময় হাতে বাজার করার মতো টাকা ছিল না। যে লোকের কচুর লতি বিক্রি করতে যাওয়ার কথা ছিল, তখন তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তাই আবু বকর নিজেই স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি করার জন্য যান।
তিনি বলেন, ‘আমি বসে থাকলে তো আর কেউ লতি বিক্রি করে দিত না। আমার প্রয়োজনেই আমাকে আমার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হয়েছে। ৫০ টাকা কেজি দরে ১৬ কেজি লতি বিক্রি করে বাজার করে ফিরেছি। কৃষকের জন্য যা স্বাভাবিক কাজ, শিক্ষিত বা নামের আগে ডক্টরেট থাকায় তা যখন আমি করতে গিয়েছি, তখন মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।’
আবু বকরের পৈতৃক বাড়ি ঝালকাঠি। বাবার চাকরি সূত্রে থেকেছেন ঢাকায়। বাবা মারা যাওয়ার আগে গাজীপুরে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতিলেইট গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির এলাকাতেই খামার গড়েছেন। আবু বকর ফুলবাড়িয়া ও ঢাকা—দুই জায়গায় যাতায়াতের মধ্যে থাকেন।
আবু বকরের বাবা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। তিনি বললেন, ‘চাচা–মামারাও কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, তাঁরা চাকরি, না হয় ব্যবসা করছেন। বলতে গেলে আমিই প্রথম কৃষিকাজ বেছে নিয়েছি। এ নিয়ে শুরুতে ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে। তবে এখন পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে ঢাকার উত্তরায় থাকা স্ত্রী মাকসুদা রুমি ও তিন ছেলেমেয়ে এখন আর কোনো আপত্তি করে না।’
এখন খামারের আয় থেকেই ঋণের কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি ঢাকায় ভালো স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ানোসহ সংসারের অন্যান্য খরচ বেশ ভালোভাবেই মেটাতে পারছেন বলে জানান আবু বকর। গত বছর বরিশালের ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে এখানেও তাঁর কৃষি ও খামার প্রাধান্য পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার সুবাদে শুরুতেই বলে নিয়েছেন খামারে যে ছয় মাস কাজ বেশি থাকবে, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে (দুই সেমিস্টার) তিনি ক্লাস নেবেন না। আবু বকর জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্মানী ভাতা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ তহবিলে জমা দিয়ে দেন।

আবু বকর বললেন, কৃষিকাজ পুরোপুরি বিজ্ঞাননির্ভর। কৃষিতে সফল হতে হলে বুদ্ধি ও পরিশ্রম—এ দুটোকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যবস্থাপনায় এমএ করেছেন আবু বকর। ২০০৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ করেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল, ২০১৮ সালে কৃষি সাপ্লাই চেইন এবং বাজারজাতকরণ বিষয়ে পিএইচডি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে। তাঁর মতে, কৃষক শিক্ষিত হলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি।
তবে ওই শিক্ষিত কৃষককে লজ্জাটা ঝেড়ে ফেলতে হবে। কৃষিতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগোতে হয়। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনাই হলো আধুনিক টেকসই কৃষির মূলমন্ত্র।
আবু বকর জানালেন, গত বছর বিভিন্ন জাতের ধান, মাছ, গরুর মাংস, আম, ড্রাগন, মাল্টা, লটকন, লেবু, আনারসসহ প্রায় ২০০ টন কৃষিপণ্য বিক্রি করেছেন। আয় হয়েছিল ৫২ লাখ টাকা। এর বাইরে জৈব সার বিক্রি এবং খামারের মধ্যে ১২ শতাংশ জমিতে নিজস্ব নার্সারি থেকে ফলের গাছ বিক্রি হয়েছিল পাঁচ লাখ টাকার মতো। তবে আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন জটিলতায় আগের তুলনায় কৃষির উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বছরটিতে খামারের মোট খরচ ছিল ৪৭ লাখ টাকা। আস্তে আস্তে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা গেলে লাভের পরিমাণ বাড়বে বলেই আশাবাদী এ কৃষক।
পুরো খামারের কৃষি উৎপাদনে ৮০ শতাংশই জৈব সার ব্যবহার করছেন, আর এ সার নিজেই তৈরি করছেন। তাঁর সহজ স্বীকারোক্তি, ‘প্রথমে শতভাগ জৈব সার দিয়েই উৎপাদন শুরু করেছিলাম। কিন্তু এতে করে গাছগুলো ঠিকভাবে পুষ্টি পাচ্ছিল না। তাই সহনীয় মাত্রায় রাসায়নিক ও জৈব সারের সমন্বয়ে সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে সব পুষ্টিমান ঠিক রেখে কীভাবে শুধু জৈব সার দিয়ে উৎপাদন করা যায়, তার গবেষণা নিজেই করছি।’ তিনি জানালেন, তাঁর ছোট একটা গবেষণাগারে চারটি জৈব জীবাণু কালচার করছেন। ২০টির বেশি উপাদান দিয়ে উন্নত জৈব সার বানানোর নানা পরীক্ষা চালাচ্ছেন।
আবু বকরের আফসোস, কৃষিকাজে আগে থেকেই অভিজ্ঞতা থাকলে তাঁর সময় কম নষ্ট হতো। এখন তাঁকে ঠেকে ঠেকে শিখতে হচ্ছে। আর এই শিখতে আর বুঝতে গিয়েই তাঁর অতিরিক্ত সময় নষ্ট হচ্ছে, টাকা খরচ হচ্ছে। এমবিএ করার পর ভারতের পাঞ্জাবে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম করার সুযোগ পেয়েছিলেন আবু বকর। তখন সেখানকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশেষজ্ঞ-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপের সূত্রে কৃষির প্রতি আগ্রহটা বাড়ে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ২০০টি বাণিজ্যিক বাগানের ২০০ জন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করেছেন আবু বকর। এই উদ্যোক্তারা আবু বকরের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন, তাঁর কাছ থেকে চারা নিচ্ছেন। আবু বকরের ভাষায়, এই বাগানমালিকদের অনেকেই তাঁর চেয়ে ভালো অবস্থানে পৌঁছে গেছেন। এই নতুন উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়টিতেই তিনি বেশি তৃপ্তি পান।

নতুন কৃষি উদ্যোক্তার জন্য স্বল্প পুঁজির বিষয়টি অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করলেন আবু বকর।
তিনি জানান, শুরুতে কারও কাছে ২০০ টাকা চাইলেও পাওয়া যেত না। আর এখন ওই ব্যক্তিদের কাছে ১০ হাজার টাকা চাইলেও মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে দিচ্ছেন। এ পর্যায়ে আসতে তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। নিজের আরাম–আয়েশ বাদ দিতে হয়েছে। পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা সময়টুকু খামারের পেছনে দিতে হয়েছে।
উত্তরার বাসার বাজারের চেয়ে খামারের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে। ১৫ বছর বয়সী মেয়ে মুনিবা সিদ্দিক, ১১ বছর বয়সী ছেলে ইয়াফি আবদুল্লাহ সিদ্দিক আর ৫ বছরের ছেলে আদিব আবদুল্লাহকে সামলাচ্ছেন স্ত্রী মাকসুদা।

আবু বকর বললেন, তাঁর ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে উৎপাদিত পণ্যের লাভের অংশ থেকে একটি তহবিল গঠন করবেন, যা থেকে নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে।
তিনি বলেন, কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পান না বলেই অনিশ্চিত কাজে নিজের সন্তানদের তাঁরা কৃষি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান।
আবু বকর জানালেন, গ্রাম্য রাজনীতি মোকাবিলা করেই তাঁকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হচ্ছে। গ্রামের অনেকেই চাননি বা চান না তিনি সেখানে খামার করেন। তবে অনেক নতুন কৃষক তাঁকে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন।
আবু বকর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে গাছ দেন। নিজের ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা বা যে পরিবারের প্রয়োজন, তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ভবিষ্যৎ খামারে মা ও শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করতে চান। আবু বকরের মতে, এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যাবে, এ ভয় কম থাকে।
জীবনের এই পর্যন্ত আসার পেছনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম চিকিৎসক কবির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা কবিরের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন। এই পরিবার তাঁকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মানসিকভাবে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সব সময় পাশে থেকেছে। এই দম্পতির ছেলের বিজ্ঞাপনী ফার্মে আবু বকর কাজ করেছেন। এই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া এক লাখ টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন বিয়ের পর বউভাতের খরচের জন্য। তবে বউভাতের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে তখন ওই এক লাখ টাকা এবং শ্বশুরের সহায়তায় জমি কিনে কৃষি নিয়ে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছিলেন। এক বছর পর স্বল্প পরিসরে বউভাতের আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছিলেন। তখন স্ত্রী ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

ফুলকপি শীতের এক প্রধান জনপ্রিয় সবজি। তরকারি বা কারি ও স্যুপ তৈরি করে, বড়া ভেজে ফুলকপি খাওয়া হয়। তবে শীতের সবজি হলেও ফুলকপি এখন গ্রীষ্মকালেও উৎপাদিত হচ্ছে।
পুষ্টি মূল্য ও ব্যবহার
ফুলকপিতে যথেষ্ট পরিমাণে সালফার, পটাশিয়াম ও ফসফরাস খনিজ উপাদান আছে। এ ছাড়াএর প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে আছে পানি ৯০.৮ গ্রাম, আমিষ ২.৬ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, শ্বেতসার ৪.০ গ্রাম, খনিজ লবণ ১.৯ গ্রাম ইত্যাদি।
উপযুক্ত জমি ও মাটি
ফুলকপি চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উর্বর দোয়াশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে ভাল।
জাত পরিচিতি
এ দেশে এখন ফুলকপির পঞ্চাশটিরও বেশি জাত পাওয়া যাচ্ছে। শীতকালেই আগাম, মধ্যম ও নাবী মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি আবাদ করা যায়। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে চাষের উপযোগী জাতও আছে।

চারা তৈরি
ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত। সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল।
চারা রোপণ
বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। চারায় ৫-৬টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোণ করা হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব দেয়া লাগে ৬০ সেন্টিমিটার বা ২ ফুট এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব দিতে হবে ৪৫ সেন্টিমিটার বা দেড় ফুট। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরী হয় ও বৃদ্ধি কমে যায়।

সারের মাত্রা
সারের নাম | সারের পরিমাণ/প্রতি শতকে | প্রতি হেক্টরে |
ইউরিয়া | ১.০-১.২ কেজি | ২৫০-৩০০ কেজি |
টি এস পি | ০.৬-০.৮ কেজি | ১৫০-২০০ কেজি |
এমওপি | ০.৮-১.০ কেজি | ২০০-২৫০ কেজি |
বোরাক্স | ২৮-৪০ গ্রাম | ৭.০-১০.০ কেজি |
গোবর | ৬০-৮০ কেজি | ১৫-২০ টন |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার, পুরো টিএসপি, অর্ধেক এমওপি এবং বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর সার চারা রোপণের ১ সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হবে। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমওপি ও বোরন সার ৩ কিসি-তে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিসি-র সার দিতে হবে চারা রোপণের ৮-১০ দিন পর, দ্বিতীয় কিসি-র সার দিতে হবে চারা রোপণের ৩০ দিন পর এবং শেষ কিসি-র সার দিতে হবে ৫০ দিন পর। তবে পুরো বোরাক্স বা বোরন সার জমি তৈরির সময় দিয়ে দিলেও অসুবিধে নেই। আর সে সময় দিতে না পারলে পরবর্তীতে ১ম ও ২য় কিস-ও সার দেয়ার সময় প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০-১৫ গ্রাম বোরিক পাউডার গুলে পাতায় স্পে করে দেয়া যায়। তবে সকালে শিশির ভেজা পাতায় যেন দানা সার না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
সার দেয়ার পরপরই সেচ দিতে হবে। এছাড়া জমি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। জমিতে পানি বেশি সময় ধরে যেন জমে না থাকে সেটাও খেয়াল করতে হবে। সার দেয়ার আগে মাটির আস্তর ভেঙ্গে দিয়ে নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
বিশেষ পরিচর্যা
ফুলকপি গাছের সারি মাঝে সার দেয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দুপাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দেয়া যায়। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। তবে ফুলকপির ফুল সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থায় চারদিক থেকে পাতা টেনে বেঁধে ফুল ঢেকে দিতে হবে। সূর্যের আলো সরাসরি ফুলে পড়লে ফুলের রঙ তথা ফুলকপির রঙ হলুদাভ হয়ে যাবে।
পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা
এদেশে ফুলকপির সবচে ক্ষতিকর পোকা হল মাথা খেকো লেদা পোকা। নাবী করে লাগালে সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করলে পুষ্পমঞ্জরীকে জাব পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যান্য পোকার মধ্যে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, কালো ও হলুদ বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি মাঝে মাঝে ক্ষতি করে থাকে।

রোগ ব্যবস্থাপনা
ফুলকপির পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধ্বসা বা ড্যাম্পিং অফ, ক্লাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে। বোরন সারের অভাবে ফুলে বাদামী দাগ পড়ে ও কান্ড ফাঁপা হয়ে যায়।
ফসল তোলা ও ফলন
সাদা রঙ ও আঁটো সাঁটো থাকতে থাকতেই ফুলকপি তুলে ফেলা উচিত। মাথা ঢিলা ও রঙ হলদে ভাব ধরলে দাম কমে যায়। একর প্রতি ফলন ১৫-২৫ টন, হেক্টরে ৩৫-৬০ টন।

যুগ যুগ ধরে সনাতন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষে কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারেননি। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত বীজ ও নতুন চাষ পদ্ধতি কৃষি কাজের সবকিছু বদলে দিয়েছে। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার পরামর্শ, এনজিও কর্মীদের সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় জৈব সার ব্যবহারে কৃষকরা সুফল পাচ্ছেন।
চলতি গ্রীষ্মকালীন ও রবি মৌসুমে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় তিস্তা নদীর বালুচরে জেগে ওঠা বালু চরে পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।
জানা গেছে, কয়েক বছর পেঁয়াজের সংকট এবং দাম বেশি হওয়ায় এসব চরাঞ্চলের কৃষক অন্যান্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী। এবছর পেঁয়াজ চাষ ও বাম্পার ফলনে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

অন্যান্য বছরের তুলনায় গম ও তামাক চাষ না করে এবার চরাঞ্চলে শুধু পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা। তাই সর্বগ্রাসী তিস্তা নদীর দুই কূলে জেগে উঠা চর সমূহে পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
উপজেলার ছাতনাই কলোনি, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানীর তিস্তা নদীর চর ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন। এসব চর এলাকার কৃষক বন্যায় রোপা আমন চাষে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও পেঁয়াজ চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন।

এসময় পেঁয়াজ চাষি আনারুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ ক্ষেতে কোনো আপদ দেখা যায়নি। পেঁয়াজ ঘরে তোলার সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রোপা আমনের ক্ষতি পেঁয়াজ দিয়ে পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
অপর চাষি আকবর আলী বলেন, বর্তমান বাজার মূল্য স্থিতিশীল থাকলে পেঁয়াজ চাষিরা লাভবান হবেন। এছাড়াও চাষিরা আগামীতেও পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হবেন।

ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার আলী জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে এ উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৫০ হেক্টর জমিতে।
গত কয়েক বছর বাজারে পেঁয়াজের তীব্র সংকট এবং মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় সরকার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১৭৫ জন কৃষককে বিনা মূল্যে পেঁয়াজের বীজ ও সার সহায়তা করেছে। আশা করি দেশে মসলা জাতীয় ফসলের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখাবে।

পুইশাক চাষ পদ্ধতি

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত

বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে

স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব

চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার

কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ

ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’

মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু

হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়

অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন