সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ
খুলনা বিভাগের ছয় জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৬ হাজার ৪২০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। দুর্যোগ ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ না হলে এবার রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের আশা করছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন জেলার অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বোরো ধানের চারা রোপণ শুরু হয়। চলতি মাসের মধ্যেই রোপণ শেষ হতে পারে। এ ছয় জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে ৩ লাখ ৬০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার ৬ হাজার ৪২০ হেক্টর বেশি জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই আরো প্রায় এক হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে। জেলাগুলোয় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮৩ টন। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের। যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ১ লাখ ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে, ঝিনাইদহে ৭৭ হাজার ৪৪০, মাগুরায় ৩৭ হাজার ৩৮৫, কুষ্টিয়ায় ৩৩ হাজার ২৮০, চুয়াডাঙ্গায় ৩১ হাজার ৭২৫ ও মেহেরপুর ১৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, চলতি মৌসুমে ধানের চারা রোপণে বেশির ভাগ এলাকায় কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা সনাতনী পদ্ধতি ছেড়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করতে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ১০টি উপজেলায় সরকারের একটি পাইলট প্রজেক্ট চলছে। অনেক এলাকায় কৃষকদের রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধানের চারা রোপণ করতে দেখা গেছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে কমপক্ষে চারজন শ্রমিককে কাজ করতে হয়। এতে কৃষকদের ব্যয় বেড়ে যায়। এ যন্ত্র দিয়ে এক ঘণ্টায় শূন্য দশমিক ৩৫ হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায়। প্রতি হেক্টর জমিতে ২০ জন শ্রমিকের মজুরি সাশ্রয় হয়। এছাড়া রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে জ্বালানি খরচও অনেক কম। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মহদীপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, একটি জমিতে শ্রমিক দিয়ে ধানের চারা রোপণ করতে যেখানে ৬০০ টাকা ব্যয় হয়, সেখানে এ মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করলে খরচ হবে ১৫০ টাকা। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে এ যন্ত্র দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনসহ কৃষিযন্ত্র ক্রয়ে সরকার কৃষকদের সহযোগিতা করছে। যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন, খুলনা বিভাগের ছয়টি জেলায় ৩ লাখ ৬০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ শেষ হয়েছে। এ মাসের মধ্যে আরো কিছু জমি চাষের আওতায় আসবে। এবারো ধানের ন্যায্য দাম পাবেন কৃষক। গত বছর ধান ও চালের দাম ভালো পাওয়ায় অনেক প্রান্তিক ও বর্গাচাষী এ বছর ইরি-বোরো চাষ করছেন।
সর্বশেষ মন্তব্য