শস্য রফতানিতে শুল্ক বাড়াবে না আর্জেন্টিনা
শস্য রফতানিতে শুল্ক না বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে আর্জেন্টিনা সরকার। এর আগে খাদ্যদ্রব্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে কৃষিপণ্য রফতানিতে শুল্ক বাড়ানো কিংবা শস্য রফতানি কোটা প্রয়োগের কথা উঠেছিল। তবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে সে সম্ভাবনা নাকচ করা হয়েছে। খবর রয়টার্স। শস্য রফতানিতে শুল্ক না বাড়ানোর ঘোষণার আগে কনফেডারেসিওনস রুরালস আর্জেন্টিনার (সিআরএ) প্রেসিডেন্ট জর্জ চেমস দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি জানান, আজ আমাদের স্থানীয় শস্য উৎপাদনকারীদের একটি বিষয় জানানো অত্যন্ত জরুরি। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার শস্য রফতানিতে শুল্ক বাড়াচ্ছে না কিংবা কোনো কোটা প্রয়োগ করবে না। আর্জেন্টিনার কৃষকরা এর আগে সতর্ক করেছিলেন, দেশটির সরকার খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি কমাতে শস্য রফতানিতে শুল্ক বাড়ালে কিংবা কোনো কোটা প্রয়োগ করলে প্রতিবাদ জানানো হবে। আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন রফতানির ক্ষেত্রে এখন ৩৩ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত রয়েছে। এছাড়া সয়াবিন তেল এবং সয়ামিল রফতানিতে ৩১ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত রয়েছে। আর্জেন্টিনা বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন তেল ও সয়ামিল রফতানিকারক দেশ। এছাড়া বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ভুট্টা রফতানিকারক দেশের পাশাপাশি অন্যতম গম রফতানিকারক দেশ আর্জেন্টিনা। দেশটি থেকে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে গম ও ভুট্টা রফতানিতে ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। সাম্প্রতিক সময় বিশ্বের অন্যতম শস্য রফতানিকারক দেশ রাশিয়া স্থানীয় বাজারে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখতে রফতানি শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি কোটা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর্জেন্টিনার অর্থনীতি অন্যান্য দেশের মতোই নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভঙ্গুর অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে আর্জেন্টিনা সরকার শস্য রফতানির ওপর বাড়তি শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, কৃষকদের দাবির মুখে সিদ্ধান্তটি নাকচ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আর্জেন্টিনার প্রধান রফতানিপণ্য। গত বছর জুলাইয়ে করোনার ধাক্কা সামলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এ তিন শস্যের রফতানি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা সামনে এসেছিল। তবে আপাতত শস্যের রফতানি শুল্ক বাড়ানোর পথে হাঁটছে না আর্জেন্টিনা সরকার। আর্জেন্টিনার কৃষি খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ মুহূর্তে তাদের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি জোর দিতে হবে। এজন্য শস্যের রফতানি শুল্ক বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং জরুরি ভিত্তিতে শস্যের আবাদ এলাকা ও আবাদ বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে। শস্য উৎপাদনে বাড়াতে হবে বিনিয়োগ। তাহলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা করোনার আঘাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন। গতি ফিরবে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা সামগ্রিক অর্থনীতির। কভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা সামলে অর্থনীতির গতি ফেরাতে গত বছর কৃষি খাত থেকে রাজস্বের পরিমাণ ১২ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আর্জেন্টিনা সরকার। এর অংশ হিসেবে শস্যের রফতানি শুল্ক বাড়ানোর আলোচনা সামনে এসেছিল। তবে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছিলেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে আর্জেন্টিনার শস্য রফতানি কমে যেতে পারে। বাড়তে পারে গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন শস্যের দাম। এবার দেশটির সরকার জানিয়ে দিল, রফতানি শুল্ক বাড়িয়ে নয়, বরং উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বাড়তি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করা হবে।
সর্বশেষ মন্তব্য