মাটির বাড়ির গ্রাম ধানজুড়ি
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রাম দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ধানজুড়ি। এ গ্রামের বিশেষত্ব হচ্ছে অধিকাংশ ঘরই মাটি দিয়ে তৈরি। রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। দৃষ্টিনন্দন এসব ঘর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই গ্রামে ভিড় করছেন উত্সুক জনতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামে ১১৫টি ঘরে বসবাস করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের ৪২৫ জন সদস্য। প্রতিটি মাটির বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের আল্পনা তৈরি করে দেয়া হয়েছে ভিন্নরূপ। ধানজুড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেতা কেরোবিন হেমব্রম ও রুপলাল তির্কি বলেন, আমাদের গ্রামের প্রায় সব বাড়িই মাটি দিয়ে তৈরি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে আমরা সেই পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এখানে মাটির বাড়ি নির্মাণ করে আসছি। অন্যান্য এলাকায় মাটির বাড়ি তেমন দেখা না গেলেও আমাদের এ গ্রামে প্রথম থেকেই মাটির বাড়ি আছে। পরিবারের নারীরা প্রতিটি মাটির বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের আল্পনা তৈরি করে আরো সুন্দর করে তোলেন। দেওয়াল থেকে শুরু করে জানালা, দরজা সুন্দর আল্পনা আঁকেন তারা। বছরে দুবার আল্পনা আঁকা হয়। গ্রামের পাশেই ঐতিহ্যবাহী ধানজুড়ি মিশন ও কুষ্ঠ হাসপাতালের অবস্থান। তাই এ এলাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য রোগী আসেন প্রতিদিন। অনেকে হাসপাতালের কাজ শেষ করে আমাদের বাড়িগুলো দেখে যান। তাছাড়া বাড়ি থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও এখন মানুষ আসছেন। স্থানীয় বাসিন্দা বাসন্তি রানী বলেন, মাটির বাড়ির বিশেষ সুবিধা হলো আমরা যেভাবে চাই সেভাবেই সাজাতে পারি। বিতিয়া মুর্মু বলেন, আমাদের তো সেই আদিকাল থেকেই মাটির বাড়ি আছে। এ রকম বাড়িতে বসবাসে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি আমরা। ইটের বাড়ির তুলনায় মাটির বাড়িগুলোয় ঠাণ্ডা-গরম অনুভূত হয় কম। এ গ্রামে ভ্রমণে আসা শরিফুল ইসলাম ও ইয়াসমিন সরকার বলেন, বিরামপুর উপজেলার ধানজুড়ি গ্রামটি জেলার অন্য গ্রামগুলোর তুলনায় ভিন্ন। এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ অত্যন্ত পরিপাটি করে গ্রামটিকে সাজিয়েছেন। সড়কের দুই পাশে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তারা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সাধারণত গ্রামগঞ্জে এখন আর মাটির বাড়ি চোখে পড়ে না। কিন্তু এখানকার প্রত্যেকটি বাড়িরই আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, গ্রামের সৌন্দর্য বর্ধনে রাস্তার দুই পাশে ফুলের গাছ রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে ওই গ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে।
সর্বশেষ মন্তব্য