খনন যন্ত্র দিয়ে অন্তত ২০ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে ফসলি জমি থেকে। ছয় চাকাবিশিষ্ট ট্রাক্টরে এসব মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। প্রথমে জমির মাটি এমনভাবে কাটা হয় যাতে আশপাশের জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক পর্যায়ে পাশের জমির সঙ্গে উচ্চতা বজায় রাখতে ভাটায় মাটি দিতে বাধ্য হন কৃষক। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দেহলা, সমেশপুর, সিরন্দী, শাকতলা ও শাহারপাড়া গ্রামের প্রায় আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলি জমি থেকে তোলা হচ্ছে মাটি। এ বিষয়ে সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে ফসলি জমির মাটি লুট এবং ইটভাটা মালিক ও মাটির দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি তুলে ধরেন আহমেদ জাকারিয়া নামে এক ভুক্তভোগী। এ অভিযোগের অনুলিপি রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। এ অভিযোগে স্থানীয় ভোলাকোট ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান বশীর আহমেদ মানিক, ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান ও দুলাল পাটওয়ারীসহ একটি চক্র মাটির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। স্থানীয়রা জানায়, রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা ও ভাদুর ইউনিয়নের সমেশপুর গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকার ওই ফসলি মাঠে প্রচুর ধান, গম ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হতো। কিন্তু কয়েক বছর আগে এ মাঠের পাশে তিনটি ইটভাটা স্থাপন করে একটি প্রভাবশালী চক্র। এরপর এখানে ফসল উৎপাদন কমে গেছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া আর ফসলি জমির মাটি কাটার কারণে চাষাবাদ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ইটভাটায় কাঠ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল পোড়ানোর দূষিত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। পাশাপাশি মাটিবাহী ট্রাক্টর ও হাইড্রোলিক পিকআপ ভ্যানের চাপায় নষ্ট হচ্ছে পাকা সড়ক। স্থানীয় কৃষক আবদুল কাদের বলেন, প্রথমে যেকোনো মূল্যে একটি জমির মাটি কাটার সুযোগ নেয় ইটভাটা মালিক বা মাটির দালালরা। তারা প্রথম জমিটি এমনভাবে খনন ও পরিবহন করে যেন আশপাশের জমিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বাধ্য হতে হয় মাটি বিক্রি করতে। একটি জমির অতিরিক্ত গভীরতার কারণে আশপাশের জমিতে ভাঙন দেখা দেয়। ফলে প্রয়োজনমতো হালচাষ এবং সেচের পানি দেয়া যায় না। এছাড়া ফসলি জমির ওপর দিয়ে ছয় চাকাবিশিষ্ট ট্রাক্টর চলাচলের কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। এভাবে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সবুজ নামে অন্য এক কৃষক বলেন, ইট দিয়ে বড় বড় দালানকোঠা নির্মাণ হয়, এটা শুধু বড়লোকের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু চাষাবাদ করে উৎপাদিত ফসল ধনী-গরিব সব মানুষেরই খাদ্যের চাহিদা মেটায়। এখন বলেন কোনটা বেশি দরকারি? দেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাটিবাহী ট্রাক্টর ও পিকআপ ভ্যানের অবাধ চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একদিকে সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে বৃদ্ধ ও শিশুরা প্রায়ই দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে। রামগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী জাহিদুল হাসান জানান, মাটিবাহী ট্রাক্টর ও হাইড্রোলিক পিকআপ ভ্যানের কারণে রাস্তা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি তারা জানেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা জানান, এরই মধ্যে ইটভাটা মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। তারা ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ না করলে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
চলতি ফসলি মৌসুমে গত মৌসুমের চেয়ে অধিক চাল উৎপাদন করতে যাচ্ছে থাইল্যান্ড। উৎপাদন বাড়লেও রফতানি ততটা আশাব্যঞ্জক হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) গ্লোবাল এগ্রিকালচারাল ইনফর্মেশন নেটওয়ার্ক (জিএআইএন) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জিএআইএনের পূর্বাভাস বলছে, ২০২০-২১ মৌসুমে ১ কোটি ৮৬ লাখ টন চাল উৎপাদন করতে যাচ্ছে থাইল্যান্ড, গত মৌসুমের তুলনায় যা ৫ শতাংশ বেশি। উৎপাদন চাঙ্গা থাকলেও রফতানিতে পতন হতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের তুলনায় চাল রফতানি রেকর্ড ২৫ শতাংশ কমে ২০২০ সালে ৫৭ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। ২০২০-২০২১ মৌসুমে থাইল্যান্ডের ভুট্টা উৎপাদন গত বছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেড়ে ৫৬ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। অধিক জমিতে ভুট্টা চাষ এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ভুট্টা উৎপাদন বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে জিএআইএন। থাইল্যান্ডের গম আমদানি কমেছে এবং চলতি মৌসুমে তা চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ইউএসডিএর পূর্বাভাস, চলতি মৌসুমে গম আমদানি ১৪ শতাংশ কমে ৩০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। আটা আমদানিও ৯ শতাংশ কমে ১২ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে।
গত জানুয়ারিতে টানা আট মাসের মতো বৈশ্বিক খাদ্যমূল্যের দাম বেড়েছে। শস্য, চিনি, ভেজিটেবল অয়েলের দাম বৃদ্ধিতে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যসূচক ২০১৪ সালের জুলাই-পরবর্তী সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘভিত্তিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স। এফএও বলছে, শস্য, তেলবীজ, ডেইরি পণ্য, মাংস ও চিনির দাম বৃদ্ধির ওপর দাঁড়িয়ে খাদ্য মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১১৩ দশমিক ৩ পয়েন্ট। গত ডিসেম্বরে এই সূচক ছিল ১০৮ দশমিক ৬ পয়েন্ট। রোমভিত্তিক এফএও এক বিবৃতিতে আরো জানায়, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী শস্য উৎপাদনের বার্ষিক রেকর্ড হতে যাচ্ছে। তবে চীনের কাছ থেকে বড় আকারের আমদানিতে শেয়ারদরে পতন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভুট্টার বৈশ্বিক দাম বৃদ্ধিতে জানুয়ারিতে এফএওর শস্য মূল্যসূচক মাসওয়ারি বেড়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টা উৎপাদন হ্রাস এবং চীনের আমদানি বৃদ্ধিতে ভুট্টার দাম ১১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। রাশিয়ার রফতানি কমাতে গমের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। নববর্ষের ছুটি সামনে রেখে চীনের আমদানি বৃদ্ধিতে ডেইরি পণ্যের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈশ্বিক পণ্যবাজারে গত বছর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল করোনা মহামারী। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণে গভীর সংকটে পড়েছে পণ্য বাণিজ্য। মন্দার ঝুঁকিতে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এমন সংকটকালীন মানুষের উদ্বেগ বাড়াতে বছরজুড়ে চাঙ্গা ছিল খাবারের দাম। এ ধারাবাহিকতায় পরপর দুই বছর তুলনামূলক কম থাকার পর ২০২০ সালে বাড়তি দামে খাবার কিনেছে বিশ্ববাসী। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্য মূল্যসূচকে এ তথ্য উঠে এসেছে। সূচকে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ৯৭ দশমিক ৯ পয়েন্টে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে এই সূচক মান ছিল ৯৫ পয়েন্টে। আর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ছিল যথাক্রমে ৯৮ পয়েন্ট ও ৯৫ দশমিক ৯ পয়েন্টে। এর মধ্য দিয়ে টানা দুই বছরের মন্দা ভাব কাটিয়ে ২০২০ সালে ঘুরে দাঁড়িয়েছে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক। করোনা মহামারীর জের ধরে বিদায়ী বছরে বিশ্বজুড়ে শস্য, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেড়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে শস্যের বাজার। তবে আমিষ ও দুগ্ধপণ্যের দাম আগের বছরের তুলনায় কমে এসেছে। ২০২০ সালের শুরুটাই হয়েছিল বাড়তি দামে খাবার কেনার মধ্য দিয়ে। জানুয়ারিতে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ১০২ দশমিক ৫ পয়েন্টে। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ৯৯ দশমিক ৪ শতাংশীয় পয়েন্টে নামে। মার্চ ও এপ্রিলে এ সূচক মান ছিল যথাক্রমে ৯৫ দশমিক ১ পয়েন্ট ও ৯২ দশমিক ৪ পয়েন্ট। মে মাসে তা আরো কমে ৯১ পয়েন্টে নেমে আসে। ২০২০ সালে এটাই ছিল খাদ্যপণ্যের সর্বনিম্ন বৈশ্বিক সূচক। জুন থেকে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ওই মাসে এ সূচক মান ছিল ৯৩ দশমিক ১ পয়েন্টে। জুলাই ও আগস্টে তা বেড়ে যথাক্রমে ৯৪ পয়েন্ট ও ৯৫ দশমিক ৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়। সেপ্টেম্বরে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ দশমিক ৯ পয়েন্টে। অক্টোবর ও নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আরো চাঙ্গা হয়ে যথাক্রমে ১০১ দশমিক ২ পয়েন্ট ও ১০৫ দশমিক ২ পয়েন্টে উন্নীত হয়। গত ডিসেম্বরে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ১২৭ দশমিক ৬ পয়েন্টে উঠেছে, যা ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। ২০২০ সালে এ সূচক মান তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়ে ৯৯ দশমিক ১ পয়েন্টে উঠেছে। করোনাকালে সয়াবিন তেল, পাম অয়েলের সরবরাহ কমে দাম বেড়েছে।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে রাশিয়ার শস্য রফতানি ২ কোটি টন থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। গত বৃহস্পতিবার এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেতনিকভ। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি জানান, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ছয় কোটি টন শস্য মজুদ করা যেতে পারে। রাশিয়া প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ টন রেকর্ড শস্য মজুদ করেছিল। শুল্ক অব্যাহতি ও কৃষি ভর্তুকির মাধ্যমে রফতানি চাঙ্গার পরিকল্পনা করছে দেশটি। আগামী ১ এপ্রিল থেকে নতুন নীতিমালা কার্যকর করতে যাচ্ছে তারা। রাশিয়া এখন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ গম রফতানিকারক দেশ। সিনহুয়া
দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে ১৭তম নিলামে বিক্রি হয়েছে ‘হোয়াইট টি’। হবিগঞ্জের বৃন্দাবন চা বাগানে উৎপাদনকৃত এই চা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫ হাজার টাকা...
গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অপরিশোধিত তেল রফতানি বেড়েছে ইরাকের। দেশটির তেল মন্ত্রণালয়ের বরাতে গত সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। খবর রয়টার্স। নভেল করোনা মহামারীর ধাক্কায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিকল্প সীমিত হওয়ায় অপরিশোধিত তেল উত্তোলন ও রফতানি বাড়িয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। এক্ষেত্রে ওপেক প্লাস দেশগুলোর শ্যেন দৃষ্টির সামনে পড়তে হতে পারে ওপেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উত্তোলনকারী দেশটিকে। ইরাকের তেল মন্ত্রণালয় বলছে, গত জানুয়ারিতে দিনপ্রতি অপরিশোধিত তেল রফতানি হয়েছে ২৮ লাখ ৬৮ হাজার ব্যারেল, গত ডিসেম্বরে তা ছিল ২৮ লাখ ৪৬ হাজার ব্যারেল। গত মাসে ইরাকের বসরা টার্মিনাল থেকে দিনপ্রতি রফতানি হয়েছে ২৭ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল, ডিসেম্বরে হয়েছে ২৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল। কিরকুকের সেইহান পাইপলাইন হয়ে গত মাসে দিনপ্রতি ৯৮ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রফতানি হয়েছে। বছরের শুরুতে তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ইরাকের তেল রাজস্বও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে তেল থেকে ৪৭৪ কোটি ডলার আয় করেছে ইরাক। ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ছিল ৫৩ দশমিক ২৯৪ ডলার, গত ডিসেম্বরে যা ছিল ৪৭ দশমিক ৭৬৫ ডলার।
গত মাসে মালয়েশিয়ার পাম অয়েলের দাম কমেছে প্রায় ২ শতাংশ। বিশ্বের শীর্ষ ভেজিটেবল অয়েল আমদানিকারক ভারতের আমদানি কমায় পাম অয়েলের দামে এ প্রভাব পড়েছে। গতকাল প্রকাশিত এক সরকারি উপাত্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স। গত সপ্তাহে টনপ্রতি পাম অয়েলের দাম ৬৫ রিঙ্গিত বা ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৪২৫ রিঙ্গিতে বা ৮৪৭ দশমিক ৩৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এদিকে গত সোমবার পাম অয়েল আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। গত সোমবার কার্গো সার্ভেয়ারস জানায়, জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার পাম অয়েল রফতানি গত ডিসেম্বরের তুলনায় ৩২ থেকে ৩৭ শতাংশ কমেছে। অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি উপাত্তে আশাবাদী হতে পারেন মালয়েশিয়ার পাম অয়েল রফতানিকারকরা। সোমবার ইউরোপীয় কমিশন জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৩ লাখ ৮০ হাজার টন পাম অয়েল আমদানি করেছিল ইইউ, তার আগের অর্থবছরে যেখানে আমদানি হয়েছিল ৩২ লাখ ৯০ হাজার টন।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পর্যাপ্ত চাল আমদানি হওয়ায় পণ্যটির দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে হিলিতে চালের দাম কমেছে কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল আমদানি আরো বাড়লে হিলিতে পণ্যটির দাম বর্তমানের তুলনায় আরো কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। হিলি স্থলবন্দর শুল্কস্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ও চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল সরকার। এতে পড়তা না হওয়ায় একপর্যায়ে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এবার আমনের ভরা মৌসুমে কয়েক মাস ধরেই চালের দাম বেড়ে লাগামহীন হয়ে পড়ে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই মোতাবেক হিলিসহ দেশের বিভিন্ন আমদানিকারককে সাত লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে দুই দফায় কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। ফলে দীর্ঘ দেড় বছর পর গত ৯ জানুয়ারি ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়। হিলি বাজারের চাল বিক্রেতা অনুপ কুমার বসাক ও তপন কুমার বলেন, দেড় বছর বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানির ফলে চালের দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। আগে যে স্বণা ৫ জাতের চাল বিক্রি হয়েছিল ৪৮ টাকা, এখন তা থেকে কমে ৪২-৪৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে, ২৮ জাতের চাল ছিল ৪৮-৫০ টাকা, তা থেকে কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকায়, মিনিকেট চাল যেখানে ৬০ টাকা বিক্রি হয়েছিল এখন তা ৫৪-৫৫ টাকায় নেমেছে। ভারত থেকে চাল আমদানির জন্যই দেশের বাজারে চালের দাম অনেকটা কমেছে। বর্তমানে বন্দর দিয়ে যে হারে চাল আমদানি হচ্ছে এটি যদি বাড়ে তাহলে চালের দাম আরো কমে আসবে। তবে ভারত থেকে চাহিদার তুলনায় কম চাল আসছে। এর প্রধান কারণ হলো ভারতের অভ্যন্তরে তীব্র যানজট। একটি চালের ট্রাক লোডিং থেকে শুরু করে বন্দরে আসতে ২০-২৫ দিন সময় লাগছে। তাছাড়া চাল রফতানির ক্ষেত্রে ভারতীয় রফতানিকারকদের খাদ্য অধিদপ্তর থেকে এনওসি নিতে হচ্ছে, যার কারণেও দেরি হচ্ছে। এছাড়া আমরা ৫০০ টনের এলসি দিতে চাইলেও তারা কম পরিমাণে এলসি নিতে চাইছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ধান সংকটের কারণে মিলাররা পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল তৈরি করতে পারছেন না। অন্য প্রদেশ থেকে ধান নিয়ে এসে চাল করতে হচ্ছে। চালের এলসি খোলার ক্ষেত্রে সরকারি কিছু বিধিনিষেধের প্রভাব আমাদের ওপর রয়েছে যা কষ্টসাধ্য। এ রকম কিছু জটিলতার কারণে চাহিদামতো চাল আমদানি করা যাচ্ছে না। এছাড়া চালের আমদানি শুল্ক এমনভাবে আরোপ করা হয়েছে যাতে দেশীয় চালের দাম ও ভারতীয় চালের দাম একই পর্যায়ে এসে পৌঁছচ্ছে। তবে যানজটসহ চাল আমদানির ক্ষেত্রে এসব জটিলতা কেটে চালের আমদানি বাড়লে চালের দাম আরো কমবে বলে। হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধের পর সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে গত ৯ জানুয়ারি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ ট্রাক চাল আমদানি হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে বন্দর দিয়ে ২৬৬টি ট্রাকে ১০ হাজার ৭০০ টন চাল আমদানি হয়েছে। বন্দর দিয়ে চাল আমদানির ফলে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বেড়েছে তেমনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন আয়ও বেড়েছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে গমের আটা উৎপাদন ১০ শতাংশ কমে ২ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার সিডব্লিউটিএসে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের (ইউএসডিএ) ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল স্ট্যাটিস্টিকস সার্ভিসের উপাত্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ফুড বিজনেস নিউজ। ছয় বছর আগে থেকে ইউএসডিএর আটা উৎপাদনের হিসাব শুরুর পর থেকে এটা সর্বনিম্ন উৎপাদন। পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছরই আটা উৎপাদন কমেছে এবং এ নিয়ে টানা তিন বছর কমল। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটা উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার সিডব্লিউটিএস। যুক্তরাষ্ট্রে ১ সিডব্লিউটিএস সমান ১১২ পাউন্ড। ২০২০ সালে বছরওয়ারি আটা উৎপাদন কমেছে ২১ লাখ ১৯ হাজার সিডব্লিউটিএস। ২০১৯ ও ২০১৮ সালে উৎপাদন কমেছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৪ হাজার ও ১ লাখ ৭৬ হাজার সিডব্লিউটিএস। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের যে খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে তার বিপরীতে এ উপাত্ত আশাব্যঞ্জক নয়। মোট গৃহীত খাদ্যের অন্তত ৫০ শতাংশ যেন দানাদার শস্য হয় এমন নির্দেশনা ছিল। কিন্তু মার্কিনদের প্রাত্যহিক আহারে তার ছাপ দেখা যাচ্ছে না। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে আটা উৎপাদন হয়েছিল ৪৮ লাখ ৫২ হাজার সিডব্লিউটিএস, ২০১৯ সালের একই প্রান্তিকের ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার সিডব্লিউটিএস থেকে যা ১৯ শতাংশ কম।
গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে ভারতের চিনি উৎপাদন ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার টন। ভারতের চিনি শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএমএ) গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর ইকোনমিক টাইমস। বিবৃতিতে আইএসএমএ জানায়, গত বছরের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ভারতের চিনি উৎপাদন বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। আখ মাড়াইয়ের মৌসুমে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারিতে ভারতে মোট ১ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টন চিনি উৎপাদন হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টন চিনি উৎপাদন হতে পারে। সে হিসাবে উৎপাদন প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বাড়বে, যা বছর শেষে বাড়বে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ। একই সময়ে মহারাষ্ট্রের ১৮১টি চিনিকলে সব মিলিয়ে ৫১ লাখ ৬০ হাজার টন চিনি উৎপাদনের তথ্য দিয়েছে আইএসএমএ। আগের মৌসুমের একই সময়ে এ রাজ্যে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টন চিনি উৎপাদন হয়েছিল। সক্রিয় ছিল ১৩৯টি চিনিকল। ভারতের শীর্ষ চিনি উৎপানকারী রাজ্য উত্তর প্রদেশে জানুয়ারি নাগাদ চিনি উৎপাদন হয়েছে ৫৪ লাখ ৪০ হাজার টন। তার আগের বছরের একই সময়ে উৎপাদন হয়েছিল ৫৪ লাখ ৯০ হাজার টন। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি উৎপাদক রাজ্য মহারাষ্ট্রে উৎপাদন লক্ষণীয় পরিমাণ বেড়ে ৬৩ লাখ ৮০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রাজ্যটিতে চিনি উৎপাদন ছিল ৩৪ লাখ ৬০ হাজার টন। ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম চিনি উৎপাদক রাজ্য কর্ণাটকে জানুয়ারি নাগাদ চিনি উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ৩০ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে উৎপাদন হয়েছিল ২৭ লাখ ৯০ হাজার টন। গুজরাটে চিনি উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার টন। তামিলনাড়ু, অন্ধ্র পদেশ ও তেলাঙ্গানায় সম্মিলিতভাবে ৩ লাখ ৫৬ হাজার টন চিনি উৎপাদন হয়েছে। চলতি আখ মাড়াই মৌসুমে জানুয়ারি নাগাদ বিহার, উত্তরখণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও ওড়িশায় সম্মিলিতভাবে চিনি উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ১০ হাজার টন। চিনি উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে ভারত। আবার রফতানিতে দেশটির অবস্থন তৃতীয়। আইএসএমএ বলছে, জানুয়ারি নাগাদ ভারতের প্রায় ৪৯১টি চিনিকল সক্রিয় ছিল। এর আগের বছরে সক্রিয় ছিল ৪৪৭ টি চিনিকল।
সর্বশেষ মন্তব্য