উপকূলে বছর ব্যবধানে তরমুজ চাষ বেড়েছে তিন গুণ
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় বেড়েছে তরমুজ চাষ। কম সময়ে লাভবান হওয়ায় তরমুজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। গত মৌসুমে সোনাগাজী উপজেলায় ১০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৭ হেক্টর। এবার সোনাগাজী উপজেলার চরছান্দিয়া, চরদরবেশ ও আমিরাবাদ ইউনিয়নে বিস্তৃর্ণ মাঠে তরমুজের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায়, এর আগে কখনো ফেনীতে তরমুজ চাষ না হলেও ২০১৭ সালে নোয়াখালী থেকে আসা এক কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নে তরমুজ চাষ শুরু করেন। ওই বছরে তার সফলতা দেখে ২০১৯ সালে ৮-১০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ করে লাভবান হন। গত বছর সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকায় ১০৫ হেক্টর বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ শুরু করেন কয়েকজন কৃষক। কম সময়ে লাভবান হওয়ায় এবার উপজেলার চরছান্দিয়া, চরদরবেশ ও আমিরাবাদ ইউনিয়নে ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে সোনাগাজীতে ১৬০ হেক্টরে ভিক্টর সুগার, ১২২ হেক্টরে ওশেন সুগার ব্ল্যাক বেরি, ৩৫ হেক্টরে অন্যান্য জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, উপকূলে জেগে ওঠা সোনাগাজীর চরগুলো বছরের পর বছর অনাবাদি পড়ে থাকত। বছরের কিছু সময় এসব অনাবাদি জমিকে মহিষের চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও অধিকাংশ সময়ই খালি থাকত। এখন ওইসব অনাবাদি জমিতেই চলছে তরমুজ চাষ। সোনাগাজীতে তরমুজচাষীদের বেশির ভাগ কৃষক নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকা থেকে এসেছেন। স্বল্প সময়ের জন্য চরাঞ্চলে আসা এ কৃষকরা ক্ষেতেই তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ী বসতি তৈরি করেন। ক্ষেত থেকে তরমুজ তোলা শেষ হলে তারা পুনরায় নিজ এলাকায় ফিরে যান। ভালো লাভ দেখে স্থানীয় কৃষকরাও এবার নিজের জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। সোনাগাজীর স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সবচেয়ে বেশি পাঁচ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন জাফর উল্লাহ। তিনি জানান, তরমুজ চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন নেই। সময় কম লাগে। লাভও ভালো। তাই তিনি এবার তার সব জমিতেই তরমুজ চাষ করেছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সোনাগাজীতে তরমুজ চাষে বিপ্লব হতে পারে বলে মনে করেন এ কৃষক। নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা মিয়াধন নামে এক তরমুজচাষী জানান, তিনিসহ চার ভাই ১০ বছর ধরে সুবর্ণচরে অন্যের জমিতে তরমুজ চাষ করতেন। গত মৌসুমে তিনি সোনাগাজীর চরদরবেশ এলাকায় তরমুজ চাষ করে ভালো লাভ করেছেন। তাই এবার অন্য তিন ভাইকে নিয়ে সোনাগাজীতে তরমুজ চাষ করছেন। তিনি জানান, চাষাবাদ শুরু থেকে তরমুজ তোলা পর্যন্ত চার-পাঁচ মাস সোনাগাজীতে থেকে পরে সবাই নিজ এলাকায় চলে যাবেন। সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, সোনাগাজীতে প্রতি বিঘায় তরমুজ চাষে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তিন মাস পর প্রতি বিঘায় তরমুজ বিক্রি হয় অন্তত ৭০-৮০ হাজার টাকায়। তরমুজ চাষে কম সময়ে ভালো ফলন ও লাভবান হওয়া যায়। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে জমিতে প্রতি তিন ফুট দূরত্বে তরমুজ চারা রোপণ করতে হয়। তরমুজ চাষে পরিশ্রম কম। সামান্য পরিচর্যায় তিন মাসের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী জানান, সোনাগাজীতে তরমুজ চাষে খুব সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এ উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় তিন গুণ বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাষীদের তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
সর্বশেষ মন্তব্য