ঝিনাইদহ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় স্বল্প পরিসরে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয়েছে। এ সবজির চাহিদাও আছে স্থানীয় বাজারে। নতুন এ সবজির চাষ লাভজনক হবে বলে...
মৌসুমি ফল উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্যাতি রয়েছে দীর্ঘকাল ধরেই। গত কয়েক দশকে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস ও অন্যান্য ফলনের পাশাপাশি কুল চাষ করছেন তিন পাহাড়ি জেলার চাষীরা। ন্যায্যমূল্য পাওয়া, অনুকূল আবহাওয়া ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ এবং রোগবালাই কম হওয়ায় পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে কুল চাষ দিন দিন বাড়ছে। অনেকে মৌসুমি চাষাবাদের পরিবর্তে স্থায়ীভাবে নিজের জমিতে কুল চাষ করছেন। পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুল চাষ হচ্ছে বান্দরবানে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বাউ কুল, আপেল কুল, নারকেল কুল, বল সুন্দরী এবং কাশ্মীরী কুল আবাদ হচ্ছে। তবে খেতে টক হওয়ায় দেশী জাতের কুলের চাহিদা কম। এক্ষেত্রে মিষ্টি জাতের কুলের চাহিদা রয়েছে সর্বত্র। আকার ও মান অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে এক কেজি কুল ৫০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আমি পাঁচ বছর আগে তিন একর জমিতে আপেল কুল, বল সুন্দরী ও স্থানীয় দেশী জাতের কুল চাষ করি। গত কয়েক বছরে ফলের ভালো দাম পেয়েছি। তাই নতুন করে চাষের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এ বছর আমি ১ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। বাগানে অবশিষ্ট যে কুল আছে, তা থেকে আরো লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর গ্রামে নিজ জমিতে কুল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন হেমো কুমার চাকমা। তিনি বলেন, এ বছর আমি ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে দেড় লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারব। গত বছরও আমি ১ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। একই ইউনিয়নের বৃদ্ধা গুরিমিলা চাকমা জানান, আমি ১০ বিঘা জমিতে দুটি বাগান করেছি। এরই মধ্যে ৫০-১০০ টাকা দরে খুচরা কুল বিক্রয় করেছি। আমি আশাবাদী এ বছর ৩০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করতে পারব। রাঙ্গামাটি জেলা শহরের বনরূপা বাজারের ফল ব্যবসায়ী সোনামনি চাকমা জানান, ক্রেতাদের কুলের প্রতি ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা মূলত চাষীদের বাগান থেকে কুল সংগ্রহ করি এবং শহরে এনে বিক্রি করি। অনেকেই অনলাইন ব্যবসায়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুল পাঠাচ্ছেন। অনলাইনের মাধ্যমে পাহাড়ের মৌসুমি ফল বিক্রি করে থাকেন অনন্ত চাকমা। অনন্ত জানান, আমি অনলাইনের মাধ্যমে মৌসুমি ফল বিক্রি করি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের চাহিদা অনুপাতে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিই। এখন মূলত পাহাড়ে উৎপাদিত আনারসের পাশাপাশি কুলের চাহিদা রয়েছে। কুলের মধ্যে মিষ্টি জাতের বল সুন্দরী কুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, যা আমরা খুচরা দামে ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের মৌসুমি ফলের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এ তিন পার্বত্য জেলায় ২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমিতে কুল আবাদ হয়েছে, এর মধ্যে উৎপাদিত ফলের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৮৮৬ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে ৩৪ হাজার ৮৭৬ টন উৎপাদন হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৮১ হেক্টর জমিতে ৩৫ হাজার ৩৯৯ টন উৎপাদন হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৪১৯ হেক্টর জমিতে ২২ হাজার ৮২০ টন উৎপাদন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি উৎপাদন ও আবাদ হয় বান্দরবানে। সবচেয়ে কম উৎপাদন ও আবাদ হচ্ছে খাগড়াছড়িতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাঙ্গামাটিতে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৬০০ টন। পাহাড়ের কৃষকরা কুলের ভালো দাম পাওয়ায় চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। দিন দিন চাষীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা মূলত কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক পবন কুমার চাকমা বণিক বার্তাকে জানান, পাহাড়ে আগে থেকেই কুল আবাদ হচ্ছে। তিন জেলার মধ্যে বেশি আবাদ হয় বান্দরবানে। উৎপাদিত এসব কুল দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই যাচ্ছে। এখন তো ডিজিটাল যুগ। অনেকে অনলাইনের মাধ্যমে মৌসুমি ফলের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে কুলও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
সর্বশেষ মন্তব্য