বাজারে এখন কমবেশি আমদানির চাল মিলছে প্রায় সব দোকানেই। তার পরও দাম কমছে না, উল্টো আরো বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দু-এক টাকা বেড়েছে সব ধরনের চালের...
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি আগের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও দাম কমছে না, বরং প্রতিদিন বেড়ে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে চালের বাজার। কয়েক দিনের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও আমদানি নিরুৎসাহিত করতে চালের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ করেছিল সরকার। এতে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তাতে চালের মূল্য বেড়ে লাগামহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন আমদানিকারককে সাত লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। আমদানি শুল্কও ৬২ দশমিক ৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ফলে দেড় বছর পর গত ৯ জানুয়ারি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়, দামও কমতে শুরু করে। যদিও সম্প্রতি নানা অজুহাতে চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে স্বর্ণা চাল পাইকারিতে ৪০ থেকে বেড়ে ৪২ টাকা, আটাশ চাল ৪৪ থেকে বেড়ে ৪৭ ও শম্পা ৫৪ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে; খুচরায় যা আরো ১-২ টাকা বাড়তি দাম বেক্রি হচ্ছে। হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আশা করছিলাম ভারত থেকে চাল আমদানি হওয়ার পর দাম কমে আসবে। আমরা গরিব মানুষ কম দামে চাল কিনতে পারব। কিন্তু বন্দর দিয়ে আমদানি হলেও চালের দাম কমবে কি, আরো বাড়ছে। আমরা খুব কষ্টেই আছি। হিলি বাজারের চাল বিক্রেতা তপন কুমার ও সুব্রত কুণ্ডু বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হওয়ার পর চালের বাজার কমতির দিকে ছিল। কিন্তু বন্দর দিয়ে চাহিদামতো চাল আমদানি না হওয়ায় সম্প্রতি আবারো দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক কমিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানির সুযোগ দিতে হবে। হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, সরকারি অনুমোদনের পর আমদানিকারকরা ব্যাপক পরিমাণে চালের এলসি খুলেছেন, যার বিপরীতে বেশকিছু চালবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ভারতের অভ্যন্তরে তীব্র যানজটের কারণে সঠিক সময়ে চালগুলো দেশে প্রবেশ করতে পারছে না। আবার আমরা চাহিদামতো চাল আমদানি করতে পারছি না। যদিও আমরা রফতানিকারকদের ওপর চাপ প্রয়োগসহ বিভিন্ন উপায়ে চাল আমদানির চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, ভারতের অভ্যন্তরে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল রয়েছে। এক লাখ টনের অধিক চালের এলসি দেয়া রয়েছে। আশা করছি, যানজটসহ অন্য সমস্যা কেটে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি হবে, তখন দাম কমবে। বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কারণ হচ্ছে, আমরা শুধু আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। মিলার ও আড়তদারদের কাছে যে চাল মজুদ রয়েছে তারা সেগুলো বাজারে ছাড়ছেন না। তারা যদি জমাকৃত চালগুলো ছেড়ে দেন তাহলে অবশ্যই দাম কমে আসবে। আর আমরা যেহেতু শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি, তাই সুযোগ বুঝে ভারতীয় রফতানিকারকরাও চালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে আগে ৩০-৩৫ ট্রাক চাল আমদানি হলেও সরকারের নির্দেশনা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে এখন তা বেড়ে ৪৫-৫০ ট্রাক হচ্ছে। বন্দর দিয়ে গত ৯ জানুয়ারি শুরু করে এ পর্যন্ত ৩৫৪টি ট্রাকে ১৪ হাজার ৫০০ টনের মতো চাল এসেছে। বন্দরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চাল খালাসের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্দর থেকে চাল খালাস করে যেন দ্রুত দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে পারে সে লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে।
সর্বশেষ মন্তব্য