পরিবেশ
এলএনজির দাম বাড়ায় জ্বালানি তেলে ঝুঁকতে পারে বাংলাদেশ
লেখক
বণিক বার্তাএকসময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি গড়ে উঠেছিল জ্বালানি তেলভিত্তিক বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে সাশ্রয়ী প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসায় গুরুত্ব বাড়ে কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) বিদ্যুতের। কিন্তু বিশ্ববাজারে অব্যাহত দরবৃদ্ধির কারণে সরকারকে এখন এলএনজি নিয়েও চাপে পড়তে হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ফার্নেস ও ডিজেলের দাম পড়তির দিকে। তুলনামূলক সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে সামনের দিনগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলনির্ভরতা বাড়ার জোর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। অন্যদিকে জ্বালানি হিসেবে এলএনজির দাম এখনো তুলনামূলকভাবে বেশি। পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে কয়লার জনপ্রিয়তাও দিন দিন কমছে। ফলে আবারো আলোচনায় উঠে আসছে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এরই ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অদূরভবিষ্যতে বাংলাদেশকেও জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকতে হতে পারে। জ্বালানিবিষয়ক তথ্যসেবা ও আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষক সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসের এক সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণেও একই কথা উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে ব্যবহার হচ্ছে আড়াই হাজার মেগাওয়াট। অন্যদিকে দেশে এখন গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ছয় হাজার মেগাওয়াটের মতো। সর্বশেষ গত মাসেও দেশে দৈনিক এলএনজি আমদানি হয়েছে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১৭ মিলিয়ন ঘনফুট এসেছে দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তির ভিত্তিতে। বাকি তিন মিলিয়ন ঘনফুট কেনা হয়েছে স্পট মার্কেট থেকে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য স্পট মার্কেট থেকে সরবরাহকৃত এ তিন মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিকেই ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্পট মার্কেটে এলএনজি দাম বেড়ে যায়। সে সময় প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৩ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ ডলারে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে না পারায় সে সময় দেশে গ্যাস সংকটও দেখা দিয়েছিল।
দেশে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা বাড়ায় ২০০৯ সালে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়। এগুলোর বড় অংশই ছিল ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক। ডিজেলচালিত এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার পরও বিদ্যুতের চাহিদা বিবেচনায় এসব কেন্দ্রের অনেকগুলো নবায়ন করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকারি ও বেসরকারি বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসায় রেন্টাল ও কুইক রেন্টালভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আর নবায়ন করেনি পিডিবি। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট। মোট এ সক্ষমতায় জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অংশ ৩২ শতাংশ।
ব্যয় ও প্রাপ্যতা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই একক জ্বালানিপণ্যে নির্ভরশীলতার পথ থেকে সরে এসেছে। নির্ভর করা হচ্ছে একাধিক জ্বালানিপণ্যের ওপর। জ্বালানিপণ্যগুলোর ওপর নির্ভরশীলতার এ বণ্টনকে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে ফুয়েল মিক্স হিসেবে।
কার্যকর একটি ফুয়েল মিক্সভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। কিন্তু এলএনজির দাম বাড়ায় সে পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়েছে। এলএনজির দাম বাড়তে শুরু করার পর ধারণ করা হয়েছিল, এটি সাময়িক। কিন্তু নানা পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরের মার্চের আগে পণ্যটির দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময় পর্যন্ত জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুবিধা নিতে পারে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের ওঠানামা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে অস্বাভাবিক হলে সেটি ভিন্ন কথা, যেটি এলএনজির ক্ষেত্রে হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সাশ্রয়ী বিবেচনায় এলএনজির পরিবর্তে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে সাময়িক সুবিধা নেয়া যেতে পারে। সব হিসাব-নিকাশ করে দেখতে হবে আদৌ এটি সাশ্রয়ী কিনা। তবে এটি কোনো স্থায়ী পরিকল্পনা নয়, জ্বালানির দাম বাড়লে বিকল্প উপায়ে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাশ্রয়ী করা যায় তারও ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে এখন পড়তির দিকে। গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ পণ্যটির দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৪৫ ডলার। চলতি বছরের জুলাইয়ে তা উঠেছিল ৭৪ ডলারে। গত আট মাসে ব্যারেলপ্রতি ৫-১০ ডলার কমলেও তা ৭০ ডলারের নিচে নামেনি। তবে চলতি মাসে আবার তা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম নেমে এসেছে ৬২ ডলারে। ধারণা করা হচ্ছে, এ নিম্নমুখিতা অব্যাহত থাকবে।
তবে সরকার বলছে, আগামীতে আমদানীকৃত জ্বালানি দিয়েই গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা হবে। বিদ্যুতের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, আসন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জ্বালানি জোগান নিশ্চিত করতে সরকার এলএনজি চুক্তি করছে। দেশী গ্যাসের সংকট থাকায় আমদানীকৃত জ্বালানি দিয়েই এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করা হবে।
এলএনজির বর্তমান মূল্য বিবেচনায় জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রয়োজন ছাড়া চালু করা হবে না। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দিচ্ছে। আগামীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হবে।
বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের ফুয়েল মিক্সে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ার কথা। এ অনুযায়ী মোট উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক করার লক্ষ্য ধরা হয়। যদিও এখনো তা ২-৩ শতাংশের ওপরে নেয়া যায়নি। বর্তমানে কয়লার পরিবর্তে সৌরশক্তি নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ অনুযায়ী সৌরশক্তিভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ৩০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে একটি রোডম্যাপ করা হচ্ছে। বর্তমানে এটি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
বিপিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭৬ হাজার ৬৭০ গিগাওয়াট ঘণ্টা। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৬৭২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়েছে প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ৬৯ পয়সা। অন্যদিকে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩ টাকা ২৫ পয়সা, হাইড্রো থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সা ও কয়লা থেকে ৮ টাকা ৭৪ পয়সা।
বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ায় এবং বহুমুখী জ্বালানির ব্যবহার বাড়ায় ২০১৭-১৮ সালের দিকে সরকারি ও বেসরকারি অন্তত অর্ধশতাধিক ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় অংশই ছিল গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতিকর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সরকার কয়লাভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নবায়নযোগ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সঙ্গে আমদানীকৃত এলএনজি দিয়ে বিদ্যুতের জ্বালানি নিশ্চিত করতে বেশকিছু দেশের সঙ্গে চুক্তি করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম ঊর্ধ্বমুখী ও স্থিতিশীল থাকায় চলতি বছরের শীত মৌসুমে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।
২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।
৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।
৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।
৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।
৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।
১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।
১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।
১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন