ইসলাম
নারী সাহাবিদের সঙ্গে রাসুল (সা.)–এর অমায়িক ব্যবহার
লেখক
প্রথম আলোইসলাম নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। অথচ অপপ্রচার রয়েছে, ইসলাম নারীদের অসম্মান করে এবং নিচু স্থানে রাখে। ইসলাম সম্পর্কে না জেনেই কিছু মানুষ এই মিথ্যাচারে বিশ্বাস করে। সর্বযুগের আদর্শ ব্যক্তিত্ব মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবকিছুই অনুকরণীয়। পরিবারের নারীদের সঙ্গে যেমন তাঁর মধুর ব্যবহার ছিল, তেমনই চমৎকার ব্যবহার ছিল সমাজের অন্য নারীদের সঙ্গেও।
রাসুল (সা.)–এর জীবনাচার লক্ষ করলে আমরা বুঝতে পারি তিনি নারীদের প্রতি কত অমায়িক আর তাঁদের প্রতি কত উদার ছিলেন।
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও প্রশংসা জ্ঞাপনে তাঁর কোনো কার্পণ্য ছিল না। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, একদল নারী ও শিশুকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আসতে দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। (ইবনে মাজাহ: ১৮৯৯)বিজ্ঞাপন
হজরত আসমা বিনতে আবুবকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুবায়েরের জন্য যে জমি বরাদ্দ করেছিলেন, সেখান থেকে খেজুরের কাঁদি মাথায় করে বহন করে আনতাম। একদিন এ অবস্থায় রাসুলুল্লাহর (সা.) সঙ্গে দেখা হয়। তিনি তাঁর উটের পেছনে আমাকে বসতে বলেন। কিন্তু আমার সংকোচ দেখে তিনি চলে যান। (বুখারি: ৫২২৪) রাসুলুল্লাহ (সা.) কতটা বিচক্ষণ ছিলেন যে হজরত আসমা (রা.)–এর সংকোচ দেখে তাঁকে দ্বিতীয়বার অনুরোধ করেননি অথচ তাঁর কষ্ট দেখে ব্যথিতও হয়েছিলেন।
নারী বা পুরুষ সব অতিথিকে সব সময়ই হাসিমুখে স্বাগত জানাতেন প্রিয় রাসুল (সা.)। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত খাদিজার (রা.)–এর বোন হালা বিনতে খুয়াইলেদ রাসুলুল্লাহর কক্ষে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাঁর কণ্ঠ শুনে প্রিয় স্ত্রী খাদিজার কথা মনে পড়ে যায়। এটা তাঁর খুব ভালো লাগে, তাই তিনি বলেন কে, হালা নাকি? (মুসলিম: ২৪৩৭)বিজ্ঞাপন
রাসুলুল্লাহ (সা.) কেউ অসুস্থ হলে তাঁর খোঁজ নিতেন। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মুস সায়েবকে দেখে বলেন, কেন কাঁপছ তুমি? তিনি জানালেন জ্বর হয়েছে। রাসুল (সা.) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন কামারের হাঁপরে যেমন লোহার মরিচা চলে যায়, তেমনি জ্বরে আদম সন্তানের গুনাহ নষ্ট হয়। (মুসলিম: ২৫৭৫)
রাসুলুল্লাহ নারীদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখেননি। উম্মু সুলাইম ও অন্য নারীদের বিভিন্ন যুদ্ধে নিয়ে যেতেন আহত ব্যক্তিদের শুশ্রূষা করার জন্য। এই নারীরা লড়াই করার যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন। রাসুল (সা.) এই সাহসী নারীদের অবদান সব সময় গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করতেন।
উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ওহুদ যুদ্ধে আমি যেদিকেই তাকিয়েছি, উম্মু আম্মারাহকে আমাকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করতে দেখেছি। (আত তাবকাতুল কুবরা, দার সদর, বৈরুত,৮ম খণ্ড, ৪১৫ পৃ.)
রাসুলের যুগে নারীরা ছিলেন জ্ঞানানুরাগী ও স্বাধীনচেতা। ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়ে নারীরা সরাসরি জিজ্ঞাসা করতেন রাসুলকে। নারীদের ঋতুস্রাব, যৌন কামনা বা একান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেন অকপটে, যে বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে এ যুগের নারীরাও সংকোচ বোধ করেন। এসব বিষয়ে নারী সাহাবিরা সঠিক মাসায়ালা জানার জন্য প্রশ্ন করতেন, আর রাসুল (সা.)-ও অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে তাঁদের কথা শুনতেন এবং সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন।
মহানবী (সা.) নানাভাবে নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি মদিনার আনসারি নারীদের প্রশংসায় বলতেন, আনসার নারীরা কতই না উত্তম! লজ্জা কখনোই তাঁদের ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে বিরত রাখতে পারে না। (মুসলিম, হাদিস: ৭৭২)
মুসলিম নারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের জন্য পৃথক দিন নির্ধারণ করেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। আবু সাঈদ খুদরি থেকে বর্ণিত, নারীরা একবার বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! পুরুষেরা আপনার কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে সব সময়, তাই আমাদের জন্য পৃথক একটি দিন ঠিক করে দিন, যেদিন শুধু নারীরাই শিখতে পারবেন আপনার কাছে। (বুখারি, হাদিস: ১০১)
রাসুলের সঙ্গে নারীরা খুবই সহজ আর অকপট ছিলেন। নিজেদের মনের একান্ত ইচ্ছাও তাঁরা প্রকাশ করতে লজ্জা পেতেন না। সাহল বিন সাদ থেকে বর্ণিত, এক নারী রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি নিজেকে আপনার কাছে উৎসর্গ করতে এসেছি। রাসুল (সা.) তাঁকে আপাদমস্তক দেখে মাথা নিচু করলেন। তখন নারীটি বসে পড়লেন।
রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে নারীরা বিভিন্ন উপহার আনতেন। রাসুল (সা.) সানন্দে গ্রহণ করতেন এসব উপহার। হজরত সাদ বিন সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত, এক নারীরা বুরদা বা নকশা করা চাদর নিজ হাতে বুনে নিয়ে আসেন রাসুলের জন্য। রাসুল (সা.) সাগ্রহে তা গ্রহণ করেন। (বুখারি: ৫৮১০)
নারীদের প্রতি রাসুলের সম্মান ও মর্যাদা প্রদান শুধু মৌখিক ছিল না। চরম শত্রুগোষ্ঠীর নারীদের প্রতিও তিনি অতুলনীয় সম্মান দেখিয়েছেন। খায়বার যুদ্ধে বিজয়ের পর বিশ্বাসঘাতক বনু কুরাইজা ও বনু নাদির গোত্রের যুদ্ধবন্দী নারীদের দাসী হিসেবে মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এর মধ্যে গোত্র সরদারের কন্যা সাফিয়্যা বিনতে হুওয়াই (রা.)-কে গ্রহণ করেন হজরত দেহইয়া (রা.)। কিন্তু তাঁর মর্যাদা লক্ষ করে সাহাবিদের অনুরোধে রাসুল (সা.) সাফিয়্যাহ (রা.)-কে স্বাধীনতা দেন এবং বিয়ে করার মাধ্যমে উম্মুল মুমেনিনের মর্যাদা দেন। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, খায়বার অভিযানের পর বনু নাজিরের সরদারকন্যা সাফিয়া বিনতে হুয়াই (রা.)-কে দেহইয়ার হাতে সমর্পণ করা হয়। এক ব্যক্তি বললেন, সে তো আপনার যোগ্য, তাঁকে কেন দেহইয়াকে দান করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে স্বাধীন করে দেন এবং বিয়ে করেন। (মুসলিম: ১৩৬৫)
আবদুল্লাহ ইবনে বুরায়দা (রা.) তাঁর পিতা বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, হজরত সাবিবিয়্যা আল গামেদিয়া (রা.) একবার এসে জানালেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি ব্যভিচার করেছি, আমাকে পবিত্র করুন। রাসুল (সা.) তাঁকে ফিরিয়ে দেন। কারণ, তিনি তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সন্তান জন্মদানের পর তিনি আবার আসেন। রাসুল (সা.) আবারও তাঁকে ফিরিয়ে দেন সন্তানকে দুধপানের জন্য। দুধপান শেষে সে আবার এসে বলেন, আমার সন্তান এখন খাবার খেতে শিখেছে। তখন রাসুল (সা.) তাঁকে শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। রাসুল (সা.) বলেন, সে তাওবা করেছে, তাঁকে আল্লাহ মাফ করেছেন। এরপর তাঁর জানাজা পড়ান রাসুল (সা.)। (মুসলিম: ১৬৯৫)
কত প্রিয় ছিলেন রাসুল (সা.) মুমিন বা অনুতাপকারী পাপী সবার কাছে।বিজ্ঞাপন
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার কিছু কুরাইশ নারী রাসুল (সা.)–এর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলেন। ঠিক এমন সময় উমর (রা.) সেখানে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করেন। নারীরা সঙ্গে সঙ্গেই পর্দার আড়ালে চলে যান। রাসুলুল্লাহ মুচকি হেসে উমর (রা.)-কে বলেন, নারীদের এমন আচরণে আমি বিস্মিত। তোমার কণ্ঠ শুনেই তারা আড়ালে চলে গেল! উমর বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! অথচ এই নারীদের উচিত ছিল আপনাকেই অধিক ভয় করা। এরপর তিনি নারীদের উদ্দেশে বলেন, আমাকে নয়, তোমাদের উচিত ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে ভয় করা। নারীরা জবাব দেন, তা ঠিক, তবে আপনি অধিক রূঢ়ভাষী এবং কঠোর। রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর শপথ, শয়তান পর্যন্ত তোমাকে কোনো পথ দিয়ে যেতে দেখলে অন্য পথ দিয়ে যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর যেকোনো কথাই যখন মোমিনদের জন্য আদেশ ছিল, তখনো নারীরা রাসুলকে তাঁদের স্বাধীন ইচ্ছার কথা জানানোর সাহস পেতেন তাঁর উদারতার কারণে। বিশেষ করে বিয়ে বা তালাকের ব্যাপারে মুসলিম নারীরা সম্পূর্ণই স্বাধীন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, বারিরাহ (রা.) ছিলেন হজরত আয়েশা (রা.)–এর মুক্ত করে দেওয়া একজন দাসী। মুক্ত হওয়ার পর তিনি তাঁর স্বামী মুগিসকে তালাক দেন। মুগিস তাঁকে খুব ভালোবাসতেন, তাই কাঁদতে কাঁদতে তাঁর পেছনে পেছনে সর্বত্র যেতেন।
কখনো কখনো মুগিসের দাড়ি ভিজে যেত চোখের পানিতে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মুগিসের ভালোবাসা এবং বারিরাহর ঘৃণা দেখে বারিরাহকে বলেন, তুমি যদি তাঁর ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে, তাহলে কতই না ভালো হতো। বারিরাহ (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আপনি কি আমাকে আদেশ করছেন তাঁর ব্যাপারে? রাসুল (সা.) বলেন, আমি শুধু সুপারিশ করছি; আদেশ নয়। বারিরাহ (রা.) বলেন, তাহলে তাঁকে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি: ২৫৭৯)
শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) মক্কাতেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম পর্বে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারী নারীদের সঙ্গে হিজরত করেন। মুহাম্মদ (সা.) যেসব সাহাবির বাড়িতে প্রায়ই যেতেন, তাঁদের মধ্যে শিফাও একজন। রাসুল (সা.) তাঁর বাড়িতে বিশ্রামও নিতেন। তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর স্ত্রী উমরকন্যা হাফসা (রা.)-কে পড়ালেখা শিখিয়েছিলেন। পুত্র সুলায়মানকে নিয়ে তিনি রাসুলের দান করা একটি বাড়িতে বসবাস করতেন।
রাসুল (সা.) ছিলেন সবার জন্যই নিরাপদ আশ্রয়। তাই ইসলামের চরম হিংস্র শত্রুও যখন ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তখন রাসুলের কাছে নির্দ্বিধায় আশ্রয় পেয়েছেন। যেমন হিন্দা বিনতে উতবা (রা.) ছিলেন উতবা বিন আবু রাবিয়ার কন্যা, উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের মাতা এবং কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের স্ত্রী। এই নারী উহুদ যুদ্ধে রাসুলের (সা.)–এর চাচা হজরত হামজা (রা.)-এর কলিজা চিরে বের করে চিবানোর জন্য কুখ্যাত হয়েছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কায় নওমুসলিমদের বায়আত গ্রহণের একপর্যায়ে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা বিনতে উতবাহ (রা.) ছদ্মবেশে রাসুলের মজলিশে উপস্থিত হন। কারণ, তাঁরা লজ্জিত আর অনুতপ্ত ছিলেন তাঁদের অতীত কৃতকর্মের জন্য। রাসুল (সা.) যেন চিনতে না পারেন, তাই মুখ ঢেকেই ছিলেন হিন্দা। বায়আতের যে পর্যায়ে রাসুল (সা.) মেয়েদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক এবং চুরি করবে না। এ কথা শুনে হিন্দা বলে ওঠেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! আপনার পরিবারের চেয়ে অন্য কোনো পরিবারের ব্যাপারে আমি এত বেশি আকাঙ্ক্ষা করতাম না যে তাঁরা লাঞ্ছিত হোক।
কিন্তু এখন পৃথিবীর বুকে আপনার পরিবারের ব্যাপারেই আমি সবচেয়ে বেশি চাই যে আপনারা সম্মানিত হোন। রাসুল (সা.) তাঁকে চিনতে পেরে হেসে উঠে বললেন, তাহলে তুমি হিন্দা? তিনি উত্তর দেন, হ্যাঁ। হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! অতীতে যা করেছি, তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ক্ষমা করে দেন এবং বলেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম! তুমি যা বলছ, তা সঠিক। এরপর হিন্দা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আবু সুফিয়ান একজন কৃপণ লোক। আমি যদি তাঁর থেকে কিছু না জানিয়ে নিই, তাহলে কি তা চুরি হবে? রাসুল বলেন, ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যয় করলে কোনো দোষ নেই। রাসুলুল্লাহ আরও বলেন, তাঁরা যেন ব্যভিচার না করে।
হিন্দা বলেন, কোনো স্বাধীন নারী কি জিনা করতে পারে? রাসুল বলেন, তাঁরা যেন নিজ সন্তানকে হত্যা না করে। হিন্দা বললেন, আমরা শৈশব থেকে তাদের লালন–পালন করেছি আর আপনারা তাদের যৌবনে হত্যা করেছেন। এখন এ বিষয়ে আপনিই ভালো জানেন। এ কথা বলার কারণ, তাঁর পুত্র হানজালা বিন আবু সুফিয়ান বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে নিহত হয়েছিলেন। হিন্দার এ কথা শুনে উমর (রা.) পর্যন্ত হেসে ওঠেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃদু হাসেন। এরপর রাসুল (সা.) বলেন, তারা যেন কাউকে মিথ্যা অপবাদ না দেয়। হিন্দা বললেন, আল্লাহর কসম! অপবাদ অত্যন্ত জঘন্য কাজ।
আপনি আমাদের বাস্তবিকই সুপথ ও উত্তম চরিত্রের নির্দেশনা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) আরও বলেন, তারা কোনো ভালো কাজে রাসুলের অবাধ্য হবে না। হিন্দা বললেন, আল্লাহর কসম! আপনার অবাধ্য হব—এমন মনোভাব নিয়ে আমরা মজলিশে বসিনি। অতঃপর হিন্দা বাড়ি ফিরে নিজ হাতে মূর্তি ভেঙে ফেলেন। (আল বিদায়াহ ৪/৩১৯)
রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে হিন্দা (রা.)–এর এই প্রাণবন্ত কথোপকথনেই বোঝা যায় কত অমায়িক আর প্রিয় ছিলেন রাসুল (সা.) সব মানুষের কাছে।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি
-
দেশের কৃষিতে নতুন সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে
দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।
সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।
নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:
নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)
যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)
তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)
প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।
স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-
كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه
‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।
প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)
আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত
কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-
كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج
‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেন, তবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)
ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-
لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم
‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!
মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-
من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض
‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো না, তার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।
প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।
মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-
رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا
উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)
উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।
আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।
ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।
কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।
হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।
সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)
আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন