এগ্রোবিজ
চামড়াখাত নিয়ে এবারও শঙ্কা
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কম![](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/07/চামড়াখাত-নিয়ে-এবারও-শঙ্কা.png)
গত বছর একেকটি গরুর চামড়া মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনেছেন মৌসুমি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। বেশিরভাগ এলাকায় ছাগলের চামড়া বিক্রিই হয়নি। এরপর আবার সেই চামড়া আড়তে নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বড় বিপদে পড়েছিলেন। প্রতিটি গরুর চামড়া ১০০ টাকা, এমনকি ছাগলের চামড়া ১০ টাকায়ও বিক্রি করতে হয়েছিল অনেককে।
ওই সময় চামড়া নিতে আড়তদারদের অনেক অনুরোধ করেন লোকসানে থাকা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাগে-দুঃখে কেউ কেউ সড়কের ওপর চামড়া ফেলে বাড়ি ফিরে যান। এসব ঘটনা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন চামড়া আড়তেই ঘটেছে।
আসন্ন কোরবানি ঈদ নিয়ে চামড়া শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঈদেও এমন পরিস্থিতির শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। বরং এবার সেই আশঙ্কা আরও বেশি রয়ে গেছে বলেও মত দিয়েছেন অনেকে।
![jagonews24](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/leather-20200806115157.jpg)
যদিও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে রফতানির বাজার কিছুটা ভালো। ইউরোপ মার্কেট খুলেছে। বিক্রি ধীরে ধীরে বাড়ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি।
এর কারণ হিসেবে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে করোনার কারণে চাহিদা না থাকায় ট্যানারিগুলোতে এখনও ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার চামড়া জমে রয়েছে। যদিও রফতানি বাজার কিছুটা বেড়েছে। তারপরও পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে আরও সময় লাগবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রচুর চামড়া আমাদের গুদামে রয়ে গেছে। ২০১৯ সাল থেকে করোনার কারণে চায়নায় একই সময়ে একশ কন্টেইনারের বেশি অর্ডার বাতিল হয়েছিল। সে চামড়া বিভিন্ন উপায়ে বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছে পরে। কিন্তু এর পরপরই ইউরোপের বাজারেও করোনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন অনেক চামড়া কম দামে বিক্রি হয়েছে। লোকসান দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা।’
তিনি বলেন, ‘যদিও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে রফতানির বাজার কিছুটা ভালো। ইউরোপ মার্কেট খুলেছে। বিক্রি ধীরে ধীরে বাড়ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি।’
আসন্ন ঈদে কি পরিস্থিতি দাঁড়াতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘আগামী বছর ভালো যাবে। এবারের ঈদ কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই আসছে। চামড়া সংগ্রহ হবে, কিন্তু বিক্রি না করতে পারলে এত চামড়া কী করব? রফতানি এতটা বাড়েনি এখনও, যত চামড়া এখন ঈদে কেনা দরকার। নিজেদের অবিক্রীত চামড়াই বিক্রি হচ্ছে না।’
এদিকে যারা আড়তে কাঁচা চামড়া কেনেন, তাদের সংগঠনের অভিযোগ ট্যানারি মালিকদের বিরুদ্ধে। ওই সংগঠনের ভাষ্য, বাড়তি চামড়া মজুতের অজুহাতে তারা বাজারে বিপর্যয় তৈরি করছেন।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ট্যানারি বলছে তাদের চামড়া মজুত রয়েছে। কিন্তু সত্যি কথা হলো তাদের যথেষ্ট বিক্রি রয়েছে, অর্ডার হচ্ছে। ট্যানারি মালিকরা ২০ হাজার মজুত থাকলে বলে ৮০ হাজার আছে। কারণ কেউ তো দেখতে যায় না। এরা এসব বলে চামড়া কেনার টাকা আটকে রাখেন। বাজার ওঠে না।’
আসন্ন ঈদের পরে চামড়ার বাজার কেমন হবে এ প্রশ্নের জবাবে এ ব্যবসায়ীরাও শঙ্কার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা গত চার বছরের চামড়ার দাম বাবদ ১১০ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছেন আড়তদারদের কাছে। এ টাকা পরিশোধ করলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক দামে চামড়া কিনতে পারবেন। বাজার ঠিক হবে।’
‘ট্যানারি মালিকরা গত চার বছরের চামড়ার দাম বাবদ ১১০ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছেন আড়তদারদের কাছে। এ টাকা পরিশোধ করলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক দামে চামড়া কিনতে পারবেন। বাজার ঠিক হবে।’
এদিকে গত বছর চামড়ার দাম খুব কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫-৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ২৮ থেকে ৩২ টাকা। যেখানে তার আগের বছর (২০১৯) এই দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা। অর্থাৎ গত বছর দাম কমানো হয়েছিল তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৯ শতাংশ। এ বছরও দাম বাড়ছে না বলে আভাস দিয়েছে একাধিক সূত্র।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদুল আজহায় সম্ভাব্য কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা এক কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৭২ লাখ ৫৬ হাজার।
গত বছর দাম নির্ধারণের পর তা নিয়ে অসন্তোষ ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু বাস্তবে ঈদের পরে সেই দামও পায়নি মানুষ। চামড়া নিয়ে শুরু হয়েছিল বিপত্তি। অনেকে বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিয়েছে। চামড়ার এমন সংকট শুধু গত বছর নয়, ২০১৭ সালের পর থেকেই।
![lather](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/naogaon-lather-01-20200801232029.jpg)
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি সপ্তাহেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা চামড়ার দাম এবং সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এ বছর দাম নির্ধারণ হবে। ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে নির্ধারণ করতে চাচ্ছে। ট্যানারি মালিকরা নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া কেনার ঘোষণা দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় বলছে, চামড়ার দাম ঠিক রাখতে ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়া হয়েছে প্রায় ৩০ বছর পর। যদিও সেটা সীমিত পরিসরে শর্তসাপেক্ষে। গত ১০ জুলাই এক কোটি বর্গফুট চামড়া রফতানির অনুমতি পেয়েছে পাঁচটি ট্যানারি। প্রয়োজনে আরও কাঁচা চামড়া ও ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানি করা হবে।
এছাড়া ঈদের দিন থেকে দেশব্যাপী কঠোরভাবে বিষয়গুলো মনিটরিং করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত মনিটরিং টিম। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এ বছর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জেলা পর্যায়ে চামড়ার দাম মনিটরিং করবে।
চামড়া রফতানি বেড়েছে
এদিকে চার বছর পর সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে চামড়াজাত পণ্যের রফতানি। বাংলাদেশে করোনার প্রভাব থাকলেও এর প্রধান বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করেছে। এ কারণে রফতানি আদেশও বেড়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থবছর (২০২০-২১) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে আয় হয়েছিল ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। ফলে বছরের ব্যবধানে রফতানি বেড়েছে ৩১ শতাংশ।
তথ্য বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে ১১৩ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে ১১৬ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ আয় আরও বেড়ে হয় ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে চামড়াশিল্প থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয়।
![jagonews24](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019April/gaibanda-2-20190821205336.jpg)
এরপর থেকেই ধস নামে এ খাতের রফতানিতে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে নেমে আসে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা আরও কমে ১০২ কোটি ডলারে নামে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা আরও কমে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে নেমে আসে।
বড় সংকট ট্যানারি স্থানান্তরে
কয়েক বছর ধরে চামড়ার দামে এ বিপর্যয়ের আরেকটি বড় কারণ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সে সমস্যা চামড়া শিল্পনগরী সাভারে স্থানান্তরে প্রকল্পের ধীরগতি। আবার শিল্পনগরীর কাজ অসম্পূর্ণ রেখে হাজারীবাগের ট্যানারি উচ্ছেদ।
সাভারে বিসিকের চামড়া শিল্পনগরীর যে প্রকল্প তিন বছরের মধ্যে শেষের কথা ছিল, তা ১৯ বছর পার হলেও শেষ হয়নি।
কিন্তু ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত হাজারীবাগের চামড়া কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেন। ফলে সব কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে বেশকিছু চামড়া কারখানার বৈশ্বিক প্লাটফর্ম লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ ছিল। এ সনদের সুবাদে তারা জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকায় চামড়া রফতানি করতে পারত। হাজারীবাগে কারখানা বন্ধ হওয়ায় সেই সনদ ও বায়ার (বিদেশি ক্রেতা) হারায় চামড়া শিল্প।
অন্যদিকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত না থাকায় এখনও এলডব্লিউজির সনদ লাভ ও নতুন বাজার সৃষ্টি হয়নি। ফলে সনদ না থাকায় চীন ছাড়া জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকায় এলডব্লিউজির ভিত্তিতে চামড়া রফতানি বন্ধ রয়েছে ২০১৭ সাল থেকে। মূলত তখন থেকেই চামড়া শিল্পে ধস নামে।
এ বিষয়ে সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত চামড়া রফতানিতে অগ্রগতি ছিল। এ শিল্পের কোনো মালিক উল্লেখযোগ্য ঋণ খেলাপি ছিলেন না। আসলে চামড়া শিল্পনগরীর স্থানান্তর যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হয়নি। এ কারণে অসম্পূর্ণ রেখে একদিনে হাজারীবাগ থেকে ২২২টি ট্যানারি বন্ধ করা হয়। ফলে যাদের সঙ্গে নিয়মিত ব্যবসা ছিল, সেসব বায়ার চলে যায়। এখনও সে বাজার ফেরেনি।’
তিনি বলেন, ইতালি, স্পেন, কোরিয়া বা জাপান সীমিত আকারে নিলেও এলডব্লিউজির সার্টিফিকেট না থাকায় বড় বড় বায়ার আসেনি। এটাই মূল কারণ।
বড় পরিসরে চামড়া রফতানি প্রয়োজন
কয়েক দিন আগে স্বল্প পরিসরে চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়া হয়েছে। চামড়া খাতের দীর্ঘ জটিলতা কাটাতে বড় পরিসরে রফতানি প্রয়োজন বলে মনে করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
গত বছরের চামড়া পরিস্থিতির পরে এ সংস্থাটি ঈদুল আজহায় পশুর কাঁচা চামড়া নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করে রফতানির সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করে।
সংস্থাটি বলছে, ঈদে চামড়া নষ্ট হচ্ছে যার বড় কারণ ছিল চামড়া কিনতে অনীহা। এছাড়া দেশের চামড়া প্রক্রিয়াকারী ট্যানারি মালিকেরা চামড়া কেনার জন্য বাজারে পর্যাপ্ত টাকা ছাড়েননি। এ জন্য তারা ব্যাংক থেকে ঋণ না পাওয়াকে দায়ী করেছিলেন।
এমন পরিস্থিতিতে ট্যারিফ কমিশন তাদের সুপারিশে বলেছে, চামড়ার ন্যূনতম দাম ঠিক করে রফতানির সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এতে দেশের মানুষ ও খামারিরা উপকৃত হবে। চামড়ার চাহিদা তৈরি হবে।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
কাঁঠালের আইসক্রিম জ্যাম ও চিপস
-
পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক
-
ফুল চাষে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
-
চন্দ্রমল্লিকা চাষের নিয়ম-কানুন
-
আলু থেকে জন্ম নেবে গোলাপ গাছ
-
সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা
-
জারবেরা চাষে কোটিপতি আনোয়ার
-
এই ফুলগাছগুলো লাগাতে পারেন
-
ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করছেন যে যুবক
![সারের সংকট](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/juddho.webp)
![সারের সংকট](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/juddho.webp)
চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
![বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/mirajul.webp)
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
![নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/nasir.webp)
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।
মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
![পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/pani.webp)
ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।
সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।
* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।
বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।
সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।
ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।
ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।
এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।
বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলো![ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/krishi1.webp)
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
![লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/07/লাভজনক-সবজি-চাষ-পদ্ধতি-80x80.png)
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
![ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/11/ছাদ-বাগানের-জন্য-কয়েকটি-টিপস-80x80.png)
ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস
![অর্গানিক খাদ্য: বাংলাদেশে বাড়ছে চাহিদা কিন্তু মান নিশ্চিত হচ্ছে কী?](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2019/11/107116309_img_20190526_115457-80x80.jpg)
অর্গানিক খাদ্য: বাংলাদেশে বাড়ছে চাহিদা কিন্তু মান নিশ্চিত হচ্ছে কী?
![পুইশাক চাষ পদ্ধতি](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/04/পুইশাক-চাষ-পদ্ধতি-80x80.png)
পুইশাক চাষ পদ্ধতি
![শাইখ সিরাজ](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2023/09/375604639_850898569736806_7588387452820221709_n-80x80.jpg)
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
![সারের সংকট](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/juddho-80x80.webp)
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
![বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/mirajul-80x80.webp)
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
![নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/nasir-80x80.webp)
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
![পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/pani-80x80.webp)
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
![ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2022/06/krishi1-80x80.webp)
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
![স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2019/11/software_engineer_shafiul_alam-80x80.jpg)
স্মার্ট ডিভাইসে মাছ চাষে বিপ্লব
![চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2020/04/চীনে-পানিবিহীন-হাঁসের-খামার-80x80.png)
চীনে পানিবিহীন হাঁসের খামার
![কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/11/কলাপাড়ায়-৩০-মণ-জাটকা-জব্দ-80x80.png)
কলাপাড়ায় ৩০ মণ জাটকা জব্দ
![ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/11/ফরিদপুরে-ধানের-ভালো-দামে-কৃষকের-মুখে-হাসি-80x80.png)
ফরিদপুরে ধানের ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি
![ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/11/ধানে-পোকার-আক্রমণে-দিশেহারা-চাষিরা-80x80.png)
ধানে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষিরা
![ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/11/ঠাকুরগাঁওয়ে-চাষ-হচ্ছে-‘ব্ল্যাক-রাইস-80x80.png)
ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে ‘ব্ল্যাক রাইস’
![মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/11/মানুষের-নিষ্ঠুরতা-থেকে-কুকুরকে-উদ্ধার-করলো-গরু-80x80.png)
মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে কুকুরকে উদ্ধার করলো গরু
![হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/11/হাই-প্রেসার-কমানোর-সহজ-৫-উপায়-80x80.png)
হাই প্রেসার কমানোর সহজ ৫ উপায়
![অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/11/অসময়ের-বন্যায়-সব-শেষ-তিস্তাপাড়ের-কৃষকের-80x80.png)
অসময়ের বন্যায় সব শেষ তিস্তাপাড়ের কৃষকের
![পাবনায় পাঁচ মাসে ৫ কোটি টাকার শামুক বিক্রি](https://agronewstoday.com/wp-content/uploads/2021/11/sfgjk-80x80.png)
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন