পরিবেশ
সড়কপথে সুন্দরবন ভ্রমণ
লেখক
যুগান্তরবড় ভাই আযহার মাহমুদ ঢাকাতে একদিন বলেছিল, ‘তোমাদের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জে বাস থেকে নামলেই সুন্দরবন খুব কাছে থেকে দেখা যায়। বাগেরহাটের মোংলা হয়ে সুন্দরবন তো সবাই যায়।’ সত্যিই এর আগে আমি নিজেও দু’বার মোংলা দিয়েই সুন্দরবন গিয়েছি। সাতক্ষীরা দিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ নিঃসন্দেহে নতুন এক মাত্রা যোগ করবে। সাতক্ষীরা দিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণের সিদ্ধান্ত হলো। সবাই মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এসে একত্রিত হব।
শ্যামনগরের নওয়াবেকিতে আছেন আমার পরিচিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু নাইম ভাই। আযহার মাহমুদ ভাই রাতেই ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন, নাইম ভাইয়ের বাসায় রেস্ট নিয়ে দুপুরে মুন্সিগঞ্জ যাবেন। আমি সাতক্ষীরা শহর থেকে সকাল ১০টায় রওনা দিলাম। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছোট ভাই আজাহার ইসলামও শ্যামনগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
দুপুরের পরেই আযহার ভাই, নাইম ভাই ও আমি মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে একত্রিত হলাম। আমরা একেবারে সুন্দরবনের ভিতরে বরসা রিসোর্টে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। রুমে ব্যাগ রেখে ফ্রেস হয়ে আশপাশে কি আছে তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়ে গেলাম। পাশেই দেখা মিলল আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারের, টিকিট নিয়ে কাঠের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললে যতদূর চোখ যায়, শুধুই সবুজের সীমানা। শরীরে এসে ছুঁয়ে যায় বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা জলভেজা শীতল হাওয়া। এখানেই পরিচয় হল ফটোগ্রাফার মামুনের সঙ্গে। সে তার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ব্লগ বানাতে এসেছে। ওর সঙ্গে কথা হলো কাল ও আমাদের সফরসঙ্গী হবে। নৌকাতে করে সুন্দরবনে বেড়ানো অন্যরকম এক আনন্দের, কাল আমরা নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছি।
রাত ৮টার দিকে আজাহার ইসলাম মুন্সিগঞ্জ এসে পৌঁছাল। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে যে যার মতো ঘুমাতে চলে গেলাম। পরদিন সকালে মুস্তাফিজুর রহমান ও মামুন বরসা রিসোর্টে চলে এলো। আমরা ৬ জনের একটি দল তৈরি সুন্দরবনে বেড়ানোর জন্য।
সকাল ১০টায় বরসা রিসোর্টের পাশে চুনা নদীর কোলঘেঁষা কলবাড়ি মোড়ে নাশতা সেরে নিলাম। বলে রাখা ভালো, এই কলবাড়ি চুনা নদীর পাড়েই ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি বিকালে দুটি বাঘকে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্থানীয় টাইগার টিমের সদস্যরা ও বন বিভাগ যৌথভাবে সন্ধ্যায় মাইকিং করে স্থানীয়দের সতর্ক করেছিল। তারপরও পরদিন তিন জেলে কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে প্রবেশ করলে বাঘের কবলে পড়ে ২ জন নিহত ১ জন আহত হন।
কিছু শুকনা খাবার নিয়ে আমরা ভ্যানগাড়িতে চড়ে বুড়িগোয়ালিনির নীলডুমুর খেয়াঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যেতে যেতে রাস্তার দু’ধারে চোখে পড়ল অসংখ্য চিংড়ি আর কাঁকড়া ঘের। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাঁকড়া ঘেরটি নীলডুমুর যেতে রাস্তার বামপাশেই পড়বে। স্থানীয় ওসির মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি (পাস) নিয়ে ২ জন গার্ড সঙ্গে করে চলে গেলাম ইঞ্জিনচালিত নৌকার ঘাটে। খোলপেটুয়া নদীতে নোঙর করা আমাদের জন্য নির্ধারিত নৌকাতেই উঠলাম। খোলপেটুয়া নদীর বুক চিরে এগিয়ে যেতে থাকল আমাদের নৌকা।
নদীর দু’পাশে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য, সবুজে আচ্ছন্ন গাছপালায় উড়ে বেড়াচ্ছে নানা জাতের পাখি। ভাগ্য ভালো হলে চোখে পড়তে পারে নদীতে হঠাৎ ভেসে ওঠা কুমির ও শুশুক। নৌকা চলছে। আবহাওয়া অনেক সুন্দর, ঝলমলে আকাশ। সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে ঘন জঙ্গলে ঘেরা নদীর পাড়ে তাকিয়ে আছি হরিণের পাল ও বাঘ দেখার নেশায়।
ইতোমধ্যে আমাদের নৌকা কলাগাছি নদীতে চলে এলো। নদীটি আগের নদী থেকে বড়, দু’পাশেই সুন্দরবন। দুই ধারের সারি সারি গোলপাতা, কেওড়া, গেওয়া, গরান, বাইন, কাঁকড়া, সুন্দরী বন সত্যিই মুগ্ধ করে। আধা ঘণ্টাখানেক চলার পর নৌকা কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে প্রথম যাত্রা বিরতি করল। নৌকা তীরে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই লাফিয়ে তীরে নামলাম। নামতেই সবাইকে অভ্যর্থনা জানাল দুষ্টু বানরের দল। ভিতরে ঢুকলেই আশপাশে ভিড়ে বানরের দল। বন বিভাগের তৈরি করা কাঠের রাস্তার ওপর দিয়ে হেঁটে সবাই বনের অনেক ভেতরে চলে এলাম এবং এখানেই হরিণের দেখা পেলাম। বন্য হরিণকে চিপস, বানরকে মুড়ি খাওয়ালাম। ওদের খাওয়ানোর জন্য সঙ্গে বাদাম, চিপস, মুড়ি নিতে অবশ্যই ভুলবেন না।
গার্ড আমাদের কাদার ওপর বাঘের পায়ের ছাপ দেখিয়ে বলল, ‘বেশি সাহস দেখিয়ে বনের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না, তাতে বিপদ হতে পারে। কাদায় নামার আগে খেয়াল রাখবেন পায়ের দিকে। গাছের খাড়া শ্বাসমূল পায়ে ফুটতে পারে।’ গার্ডের মাধ্যমে সুন্দরবনের সুন্দরী, গরান, গেওয়া, কেওড়া, কাঁকড়া, খলিসাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, ফার্ন চিনতে পারলাম। দেখা পেলাম রংবেরঙের ছোট কাঁকড়া।
কলাগাছিয়াতে কিছু সময় কাটিয়ে আবার সবাই নৌকাতে উঠলাম। অপরূপ সৌন্দর্যের লিলাভূমি কলাগাছিয়া। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনি স্টেশনের অধীনে এই ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের অবস্থান।
পরবর্তী গন্তব্য দোবেকি। বিশাল নদীর পানিকে দুই পাশে ঠেলে এগিয়ে চলতে লাগল আমাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা। মালঞ্চ নদীতে নৌকা প্রবেশ করলে ধুম বাতাসে ঘুমে চোখ বুজে আসতে লাগল। আযহার মাহমুদ ভাইয়ের ডাকাডাকিতে তন্দ্রাভাব চলে গেলে বুঝলাম দেড় ঘণ্টা চলার পর আমরা দোবেকি ফরেস্ট রেঞ্জে পৌঁছেছি।
ভেতরে ঢুকতেই প্রথমেই চোখে পড়ল চারিদিকে নারিকেল গাছ ও বিভিন্ন বৃক্ষ বেষ্টিত একটি বড় মিঠা পানির পুকুর। পুকুর পাড়ে হরিণের দেখাও মিলল। গার্ড জানাল, ‘নদীর পানি নোনা হওয়ায় গভীর রাতে বাঘ এ পুকুরের মিঠা পানি খেতে আসে। এটাও জানাল রাতের বেলা ধৈর্য ধরে ওয়াচ টাওয়ারে অবস্থান করলে ভাগ্য সহায় হলে বাঘের দেখা পেয়েও যেতে পারেন।’ গার্ডকে বাঘ দেখেছেন কিনা প্রশ্ন করতে জানাল, ‘আসার সময় দোয়া পড়তে পড়তে আসি আল্লাহ এ যাত্রায় যেন বাঘের সামনে ফেলিও না।’
কিছুক্ষণ ঘোরার পরে মালঞ্চ রেস্ট হাউজের ফরেস্ট অফিসারের আতিথেয়তায় হালকা চা-নাশতা করে ফেরার জন্য বেড়িয়ে পড়লাম। প্রায় দুই ঘণ্টা মালঞ্চ, কলাগাছিয়া, খোলপেটুয়া নদীর ওপর লঞ্চ ভ্রমণ শেষে আমরা যাত্রা শুরুর স্থানে নীলডুমুর খেয়াঘাটে এসে পৌঁছালাম।
এই নীলডুমুর ঘাটে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতে পারেন স্পেশালভাবে। বিশেষ করে এখানে এমন কিছু মাছ পাওয়া যায় যেগুলো দেশের অন্য কোথাও দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। মাছগুলোও অনেক সুস্বাদু। খাবার হোটেলে রান্না করা যে মাছ পাবেন সেগুলা অথবা একটু সময় নিয়ে কিছু অতিরিক্ত টাকা যোগ করে নিজের ইচ্ছেমতো মাছ ফ্রাই, ভুনা করেও খেতে পারবেন। চিংড়ি, আবাদি, সিলেট মাছ, ভেটকি, ভাঙান, পাসসে, টেংরা, কাইন, বাঁশপাতা, খয়রা, তপস্বে, দাঁতনে, ছোট মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির নদীর মাছ খাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। তবে ভুল করে হরিণের মাংস খাওয়ার কথা মুখে না আনা ভালো। কারণ এটা নিষিদ্ধ।
আমরা দেওয়ান শাহাদত মামার খাবার হোটেলে গিয়ে দেখি মাছের সব আইটেম শেষ। আগে থেকে খোঁজ নিয়ে এসেছিলাম দেওয়ান মামার রান্না এখানে সেরা। মামা বলল, আধা ঘণ্টার ভিতরে রান্না করে খাওয়ার পরিবেশন করতে পারবে। আমরা সিলেট মাছ ভুনা অর্ডার করলাম। হোটেল মালিক দেওয়ান শাহাদতের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচয় হওয়ার পর জানলাম তিনি এ অঞ্চল নিয়ে কিছু কবিতা লিখেছেন। তার স্বরচিত চমৎকার সব কবিতা আমাদের পড়ে শোনালেন এবং এ কবিতার লেখার পেছনের কাহিনীগুলো বললেন। কখন যে আধা ঘণ্টা চলে গেল বুঝলামই না।
স্মৃতির পাতায় সুন্দরবন ভ্রমণের অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা নিয়ে রাতে ফিরলাম রিসোর্টে। আর মনের ভেতর অনুভব হতে লাগল, ‘আসলেই আমাদের মাতৃভূমি অনেক সুন্দর’। রিসোর্টের কালুর (কুকুর) কথাও বলতে হবে, সখ্য হয়েছিল প্রথম দিনেই। কালু বলে ডাকলে যেখানেই থাক না কেন ছুটে আসত।
রাতে ঘুমিয়ে হাতে সময় থাকলে পরদিন আশপাশের গ্রামে বসবাসরত মৌয়াল, বাওয়াল ও মুন্ডা আদিবাসীদের জীবনযাত্রাটা দেখে নিতে পারেন। এ ছাড়া চাইলে শ্যামনগরের ঐতিহাসিক প্রতœতাত্ত্বিক সব নিদর্শন (জমিদার বাড়ি, শাহী মসজিদ, যশোরেশ্বরী মন্দির, হাম্মামখানা, যীশুর গির্জা)গুলোও একবার দেখে আসতে পারেন।
কিভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি সাতক্ষীরা শহর বা শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জের বাস আছে। ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা আসতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে, তবে ফেরিতে জ্যাম থাকলে সময় বেশি লাগবে। গাবতলী, সায়েদাবাদ থেকে সোহাগ পরিবহণ, সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস, ঈগল পরিবহণ, একে ট্রাভেলস, মামুন পরিবহণসহ আরও কয়েকটি বাস সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এ ছাড়া আকাশপথে আসতে চাইলে যশোর বিমানবন্দরে নেমে বাসযোগে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে। সেখান থেকে বুড়িগোয়ালিনির নীলডুমুর ফরেস্ট অফিস থেকে পাস গ্রহণ করে ইঞ্জিনচালিত নৌকা অথবা লঞ্চ যোগে সুন্দরবনে ভ্রমণের সুযোগ থাকছে।
কোথায় থাকবেন : সাতক্ষীরা শহরে অনেক ভালোমানের রিসোর্ট আছে। তবে মুন্সিগঞ্জে থাকার জায়গা দুটিÑ সুশীলনের টাইগার পয়েন্ট ও বরসা রিসোর্ট। সড়কপথে সুন্দরবন দেখতে হলে মুন্সিগঞ্জে আসতে হবে। মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড নেমে ডান দিকের রাস্তা দিয়ে ৩-৪ মিনিট হাঁটলে মালঞ্চ নদীর তীর ঘেঁষে চোখে পড়বে সুশীলনের টাইগার পয়েন্ট এবং বাসস্ট্যান্ড থেকে বামপাশের রাস্তা দিয়ে কিছু দূর হেঁটে চুনা নদীর ব্রিজ পার হলে নদীর তীর ঘেঁষে বরসা রিসোর্টের দেখা মিলবে। টাইগার পয়েন্টে রুমপ্রতি ভাড়া ১১৫০ টাকা থেকে শুরু। তবে বেড নিলে প্রতি বেডের ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকা, এক রুমে ৪টি বেড। বরসাতে রুমপ্রতি ভাড়া ১২০০ থেকে শুরু, এখানে বেড ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে এ রিসোর্টটি একদম সুন্দরবনের ভিতরে।
সাতক্ষীরা দিয়ে সড়কপথে সুন্দরবনে ভ্রমণে আসতে পারেন আপনিও। এ সড়কপথে সুন্দরবন দেখার সুবিধার জন্যই হয়তো সাতক্ষীরার ব্র্যান্ড নেম ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ সড়ক পথে সুন্দরবন’।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
নিপাহ্ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
-
ফুল চাষে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
-
জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা
-
শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল
-
টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ
-
ছাদে বেদানা চাষের সহজতম পদ্ধতি
-
সহজ উপায়ে টবে লঙ্কা চাষ
-
কেমন হবে আগামীর কৃষি:
ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।
২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।
৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।
৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।
৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।
৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।
১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।
১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।
১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন