গ্রীষ্মকালে যেসব ফল আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে তরমুজ একটি উল্লেখযোগ্য ফল। এ ফলটি একটি মৌসুমী ফল। ফলটির বাহিরে সবুজ, ভেতরে লাল আর বীজগুলি কালো চ্যাপ্টা। তরমুজ বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই প্রচুর পরিমাণে জন্মে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে খুব বেশী পাওয়া যায়। তরমুজের মন কাড়া রং আর রসাল মিষ্টি স্বাদের জন্য সবার কাছে এ ফলটি অত্যান্ত প্রিয়। গরমের সময় তরমুজ আহারে দেহমনে প্রশান্তি আনে। শুধু তাই নয় পুষ্টি গুনে ভরা তরমুজ দেহের পুষ্টি চাহিদা দ্রæত পূরণ করে নেয়। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে। তাই সকলে মৌসুমী এ ফলটি খাওয়া উচিত।
রাসায়নিক উপাদান ঃ তরমুজের ফুলে থাকে মুক্ত অ্যামাইনো এসিড, আরজিনিন, গøাইসিন, থ্রিওনিন, লাইসিন, অ্যালানিন, অ্যাসপারজিন, গøুটামিক এসিড ও লিউসিন। ফলে থাকে ফলিক, ফেরালিক ক্যাফিক ও ক্লোরোজেনিক এসিড, কিউকারবিটাসিন, সাইটুলিন, কিউফারটিন ইত্যাদি। পুষ্টি উপাদান ঃ পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম তরতাজা তরমুজে খাদ্য উপাদান হলো ঃ জলীয় অংশ ৯৫.৮ গ্রাম, আমিষ ০.৫ গ্রাম, আঁশ ০.২ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শ্বেসার ৬.৫ গ্রাম, ভিটামিন এ ৫৬৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ১৬ মিলিগ্রাম, শর্করা ৩.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.১৫ গ্রাম, লৌহ ৭.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৩ মিলিগ্রাম, বি২ ০.০৪ মিলিগ্রাম।
উপকারিতা ঃ তরমুজ পুষ্টি গুণে ভরা একটি ফল। ভিটামিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস তরমজু। তরমুজের প্রায় ৯৬ শতাংশই পানি। তাই প্রচন্ড গরমে শরীরে পানির চাহিদা পূরণে এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে তরমুজ। যারা গরমে কাজ করে বা বেশী ঘাম হয় তাদের নিয়মিত তরমুজ খাওয়া দরকার। এতে শরীর তাড়াতাড়ি দুর্বল হয় না। তরমুজে যে পটাশিয়াম থাকে তা মানব দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। হৃদপিন্ডের সুস্থতা রক্ষা করে। পুষ্টিবিদদের মতে তরমুজ মানব দেহের হৃদরোগ, হাঁপানী, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) রোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। আমাদের মস্তিষ্কের ¯œায়ুকোষগুলোকে সঠিক এবং সুস্থ রাখে। তাজা তরমুজে লাইকোপিন, বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইন, জিয়াজেস্থিন, ক্রিপ্টোজেস্থিন উপাদান থাকে।
এসব ফ্লেভনয়েডস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে দেহের ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। ফলে পাকস্থলি, ফুসফুস, স্তন, প্রোস্টেট, জরায়ু ইত্যাদির ক্যান্সারের প্রবণতা কমে যায়। তরমুজে লাইকোপেন উপাদানটি সূর্যের আলোর বেগুনি রশ্মির হাত থেকে আমাদের চামড়াকে রক্ষা করে। তরমুজ দেহে চর্বি জমা হওয়ার ব্যবস্থা কমিয়ে দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তরমুজে বিটা ক্যারোটিন ও ম্যাগানিজ থাকে। যা চামড়ার রোগ প্রতিরোধ ও মসৃণ করে। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুষ্ঠু রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে, দাঁতের সমস্যা, চামড়ার সৌন্দর্য, মুখের ঘাঁ, সর্দি, গরম ও ঠান্ডা জ্বর প্রতিরোধে বেশ উপকার করে। তরমুজ অত্যান্ত রসালো ফল বলে মানব দেহের বৃক্ক বা কিডনীর জন্য খুবই উপকারী। তরমুজে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, রক্তের ইনসুলিনকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদদের মতে ডায়াবেটিস রোগীরা তরমুজ খেতে পারবেন। তবে নিজ নিজ চিকিৎসকের পরামর্শ মতে। তরমুজের আঁশ ও পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তরমুজের পটাশিয়াম মানব দেহের হাঁড়ের গঠন শক্ত ও মজবুত করে। তাছাড়া দেহের ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে। হাঁড়ের জোড়াগুলোকে মজবুত করে। তরমুজে থাকে বিটা ক্যারোটিন। যে কারণে তরমুজের শাঁস লাল হয়। এ উপাদানটি চোখের নানা সমস্যা দূর করে। চোখকে সুস্থ সবল রাখে। চোখের দৃষ্টি শক্তি প্রখর রাখে। তরমুজে প্রাকৃতিক ভাবে অতি অল্প পরিমাণে চর্বি থাকে। তাই পেট ভরে তরমুজ খেলেও ওজন বাড়ে না। তরমুজ খেলে অ্যাক্সিডেটিভ স্টেসজনিত অসুস্থতা কমে যায়। তরমুজে সিট্রোলিন নামক বিশেষ অ্যামাইনো এসিডের উপাদান রয়েছে। যা মানব দেহের পুরুষের শুক্রাণু ও মহিলাদের ডিম্বানুকে পরিপুষ্ট করে। যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই যাদের যৌন ক্ষমতা কম তারা নিয়মিত তরমুজ খান বেশ উপকার পাবেন।
এটি প্রাকৃতিক ঔষধ হিসাবে কাজ করে। তার এই উপাদান কিডনীর জন্য অত্যান্ত উপকারী এবং কিডনীতে পাথর জমতে দেয় না ফলে কিডনী সুস্থ এবং সবল থাকে। তরমুজে সিলিকা উপাদান থাকে যা নোখের সমস্যা ও ভঙ্গুরতা কমায় এবং সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করে। তরমুজে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহ নিরোধী হিসেবে ভালো কাজ করে তাই শরীরে প্রদাহ জনিত ব্যাথা কমতে সাহায্য করে যেমন বাতের ব্যাথা।
যারা ঘন ঘন সর্দি বা ঠান্ডায় আক্রান্ত হন তারা তরমুজ খান উপকার পাবেন। যাদের টাইফয়েড জ্বর তারা তরমুজ বা তরমুজের রস বা তরমুজের শরবত খান জ্বরের তীব্রতা কমে আসবে। যাদের প্র¯্রাবে জ্বালা পোড়া করে বা প্রস্রাব কম হয় তারা নিয়মিত তরমুজ খান উপকার পাবেন। যাদের মুখে মেসতা বা ছোপ ছোপ কালছে দাগ আছে তাদের লিবারে সমস্যায় এমন দেখা দেয়। তারা নিয়মিত তরমুজ খান সমস্যা কমে আসবে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা নিয়মিত তরমুজ খান রক্তের চাপ কমে আসবে। কারণ তরমুজের পটাশিয়াম উচ্চ রক্ত চাপ কমিয়ে দেয়। যাদের হৃদপিন্ডে সমস্যা বা হৃদরোগ আছে বা যাদের বুক দড়ফড় করে তারা নিয়মিত তরমুজ খান উপকার পাবেন। তরমুজের সাইট্রলিন হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। চামড়ার সৌন্দর্য এবং তারুণ্য ধরে রাখতে তরমুজ বেশ উপকারী।
সতর্কতা ঃ রাস্তার মোড়ে মোড়ে বা বাজারে খোলা অবস্থায় রাখা কাটা তরমুজ খাবেন না। তরমুজ কেটে ফ্রিজে ভরে রাখবেন না। এতে খাদ্য উপাদান কমে যায়। যেকোন ফল কেটে খোলা অবস্থায় রাখবেন না। এতে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তরমুজে শাঁস অধিক লাল করার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম রং ভিতরে প্রবেশ করিয়ে থাকে এমন তরমুজ কিনবেন না খাবেন না। তরমুজ কাটার পর শাঁস হাতে লাগলে কিছু রং হাতে লাগে এ তরমুজটি খাবেন না। তরমুজ কেনার সময় দেখে নিবেন যেন তরমুজ তাজা এবং পাকা হয়। পাকা তরমুজের ওজন তার আকারের চেয়ে বেশী হয় এবং ঠনঠন শব্দ করে। তরমুজের যে অংশে মাঠির স্পর্শে থাকে সে অংশ সাদা বা সবুজ হলে বুঝবেন তরমুজটি পাকা নয়। কিন্তু হলদে হলে পাকা ও পরিপক্ক। দেশীয় ফল খান সুস্থ থাকুন।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’
সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।
কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।
সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।
কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন