করোনা ঢেউ আবার ঊর্ধ্বমুখী। ভ্যাকসিন এখনো হাতের নাগালের বাইরে। সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে রয়েছে উদাসীনতা। কঠোরভাবে মানতে হবে বিধিনিষেধ, এই মুহূর্ত থেকেই। তা না হলে দ্বিতীয় ঢেউয়ে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
করোনায় রোগীদের নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা ও এর প্রতিকার নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ের সুরক্ষা’। অনুষ্ঠানটির চতুর্থ পর্বে ডা. বিলকিস ফাতেমার সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের মেডিসিন, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. নূর মোহাম্মদ।
অনুষ্ঠানটি ১৪ ডিসেম্বর প্রথম আলোর ও এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানের শুরুতে কনসালট্যান্ট ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, করোনা মূলত মানুষের নাক ও মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। করোনাভাইরাস রক্তনালিগুলোর পথে ক্ষত তৈরি করে, যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। রোগী মৃত্যুর মুখে পতিত হতে পারেন।
বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতি ও লক্ষণ নিয়ে তিনি জানান, ‘গত কয়েক মাসের তুলনায় এখন রোগীদের লক্ষণগুলো তীব্র হয়েছে এবং দিন যত যাচ্ছে, এগুলো তীব্রতর হচ্ছে। যেমন আগে রোগীদের উপসর্গগুলো ছিল হালকা। কিছুটা জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া। পাশাপাশি আশঙ্কাজনক রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এ জন্য আমাদের উদাসীনতা বেশি দায়ী। কোনো কারণে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা পরছি না। রাষ্ট্রকেও এ বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে মানুষকে বুঝতে হবে। তা না হলে আমরা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে যেতে পারি।’
করোনাকালীন সতর্কতা নিয়ে কনসালট্যান্ট ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, করোনা রোগী থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তাই বাড়িতে করোনা রোগী থাকলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব হলো রোগীর সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। এর প্রতিরোধে সচেতন হওয়াই এখন পর্যন্ত কার্যকর উপায়। এ জন্য ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে; অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে; ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে; হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে; অসুস্থ পশুপাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে; মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে।
এ ছাড়া যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া ও জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, একজন করোনায় আক্রান্ত হলে বাসার সবাই আক্রান্ত হবেনই। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে করোনা জটিল আকার ধারণ করে, আবার কারও অল্পতেই ভালো হয়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। উপসর্গ কমে এলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে।
কনসালট্যান্ট ডা. নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, করোনা থেকে সবারই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, কখন কার ক্ষেত্রে এটি জটিল আকার ধারণ করবে, বলা মুশকিল। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস; যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি রয়েছে; বৃদ্ধ, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী; যাদের অতিরিক্ত ওজন; তাদেরই কোভিডে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। আক্রান্তের শুরু থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অনেকের আবার এ বিষয়েও উদাসীনতা দেখা যায়। ভাবে, করোনায় জ্বর বা ঠান্ডা লেগেছে, ভালো হয়ে যাবে।বিজ্ঞাপন
যাঁদের তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায় না, তাঁরা বাসা থেকেই চিকিৎসা নেবেন তবে ডাক্তারের পরামর্শে। আর যাঁদের অক্সিজেনের প্রয়োজন, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। কারণ, এর সঙ্গে আরও কোনো জটিলতা বাড়তে পারে। রক্ত জমাট বাঁধা দূর করতে আগে ওয়ারফিনিন নামক একটি ওষুধ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু করোনা রোগীর ক্ষেত্রে এখন এটি ব্যবহার না করতেই বলা হচ্ছে। কারণ, এটি ব্যবহারে রোগীকে অনেক বেশি মনিটর করতে হয়। এর বদলে আজকাল রিভারক্সাবান ওষুধটি বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে ওষুধ সেবন করতে হবে ডাক্তারের পরামর্শে।
করোনায় যাঁদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, সেই রোগীদের নিয়ে কনসালট্যান্ট ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং ভর্তির পর তাঁদের বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়। যেমন শ্বাসকষ্ট পালমোনারি এম্বলিজমের দিকে যাচ্ছে কি না, পায়ে রক্ত জমাট বাঁধছে কি না। কিছু ব্লাড টেস্ট করা হয় শুধু রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা নির্ণয়ের জন্য। রক্ত জমাট যদি হার্টে হয়, তবে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে, ব্রেনে হলে স্ট্রোক হতে পারে, যদি কিডনিতে হয় তবে কিডনি ইনফেকশন হতে পারে। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে দুই রকমের অ্যান্টি-ক্লগনেন্ট ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। একটি মুখে খাওয়ার আর অন্যটি শিরা বা চামড়ার নিচে দিতে হয়। তবে কোনো ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। রক্ত জমাট বাঁধা রোধে করোনা রোগীকে কিছুটা হাঁটাচলা করতে হবে। যেহেতু তাঁরা ঘরের বাইরে যেতে পারবেন না, তাই ঘরের ভেতর হাঁটতে হবে।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন