আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

রুদ্ধশ্বাস ৬ ঘণ্টা

ভট ভট শব্দে রূপসা ফেরিঘাট থেকে যখন ট্রলার চলতে শুরু করেছে, তখন রাত প্রায় দুইটা। পূর্ণিমার আগের দিনই আকাশে বড় থালার মতো চাঁদ। চাঁদের রুপালি আলোয় ভরে আছে চারদিক, চিকচিক করছে ঢেউহীন রূপসা নদী।

সারেংসহ আমাদের ট্রলারে যাত্রীসংখ্যা ১১। সবার গায়েই শীতের মোটা কাপড়। ট্রলার চলতে থাকায় হালকা বাতাসে শরীর শিরশির করতে শুরু করে। আধঘণ্টার মধ্যে ট্রলারের ভেতর ঘুমাতে চলে যান অনেকেই। আমাদের ট্রলারে তোলা হয়েছে তিন দিনের মতো খাদ্যসামগ্রী, পানি ও রান্নার উপকরণ। ভোর ৫টার দিকে শান্তা লঞ্চঘাট থেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন আরও চারজন।

পূর্ণিমার আগের দিনই আকাশে বড় থালার মতো চাঁদ
পূর্ণিমার আগের দিনই আকাশে বড় থালার মতো চাঁদ

ভোরের দিকে ট্রলার যখন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের নলিয়ান স্টেশন ঘাটে পৌঁছায়, তার কিছু আগে থেকেই শোনা যায় ট্রলার আর মানুষের কোলাহল। স্টেশনের ঘাট থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান নিয়েছে ট্রলারগুলো। সেগুলোর কোনোটি সারা বছর বালু টানতে ব্যবহৃত হয়, আবার কোনোটি মাছ ধরার কাজে। যাত্রীবাহী ট্রলারের সংখ্যা খুবই কম। প্রতিটি ট্রলারের ওপরই বাঁশ, কাপড় ও ত্রিপল দিয়ে বিশেষ কায়দায় ছাউনি দেওয়া হয়েছে, যাতে ট্রলারে থাকা মানুষগুলো শীত ও কুয়াশায় সমস্যায় না পড়ে।

প্রায় প্রতিটি ট্রলারেই রয়েছে নারী-পুরুষ। সামনের অংশে বিশেষ কায়দায় মাটি ও ইট দিয়ে বড় কাঠের চুলা তৈরি করা হয়েছে। ট্রলারের দলপতিরা বন বিভাগের অনুমতিপত্র পেতে ঘুরঘুর করছেন অফিসের আশপাশে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ট্রলারের সংখ্যা। সেই সঙ্গে অফিসের আশপাশে জমতে থাকে ভিড়। ওই ভিড় সামলাতে রীতিমতো কসরত করতে হচ্ছে বন বিভাগের লোকজনকে। মাস্ক ব্যবহার করতে বারবার হ্যান্ড মাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সবাই যেন অধীর আগ্রহে বসে আছে কখন যাওয়ার অনুমতি মিলবে সেই আশায়।

প্রায় প্রতিটি ট্রলারেই রয়েছে নারী-পুরুষ
প্রায় প্রতিটি ট্রলারেই রয়েছে নারী-পুরুষ

অফিসের মধ্যে ঢুকে দেখা যায়, ওই সকালেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্টেশন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। কথা বলার ফুরসত নেই তাঁর। একের পর এক কাগজ যাচাই করে স্বাক্ষর করে চলেছেন তিনি। তাঁর ওই কাজে সহযোগিতা করছেন আরও কয়েকজন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে ট্রলারের মাপ অনুযায়ী যাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে ট্রলারপ্রতি যাত্রী অনেক কম। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে রাস উৎসবে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের কাছে আবেদন করেছিলেন তাঁরা।

নলিয়ান স্টেশন থেকে দুবলার চরের দূরত্ব প্রায় ৭৮ কিলোমিটার। ট্রলারে যেতে সময় লাগে প্রায় আট ঘণ্টা। অন্যান্য নৌরুট দিয়েও সেখানে যেতে সময় লাগে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা।

শত শত বছর ধরে সুন্দরবনের শেষ সীমানায় বঙ্গোপসাগরের তীরে দুবলার চরের আলোরকোলে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে রাস উৎসব ও পুণ্যস্নান। তিথি অনুযায়ী দুর্গাপূজা শুরুর ৪০ দিন পর পূর্ণিমার রাতে ওই পূজা ও পরদিন ভোরে পাপমোচনের আশায় সাগরের জলে স্নান করে ফিরতে শুরু করেন পুণ্যার্থীরা। প্রতিবছর রাসপূজা উপলক্ষে আলোরকোলে বড় আকারে আয়োজন করা হয় মেলার। ওই মেলা ও পূজা দেখতে হিন্দুসম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতো সেখানে। কিন্তু এবারই প্রথম শুধু হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকদের রাসপূজা ও পুণ্যস্নান করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

রাস মেলা
রাস মেলা

শ্বাসরুদ্ধ ৬ ঘণ্টা

এবারই প্রথম করোনার জন্য শুধু হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকদের রাসপূজা ও পুণ্যস্নান করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে
এবারই প্রথম করোনার জন্য শুধু হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকদের রাসপূজা ও পুণ্যস্নান করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে

যাত্রাপথের মাঝামাঝি পর্যায়ে গোসল ও অন্যান্য টুকটাক কাজ সেরে নিতে আমরা আশ্রয় নিই বন বিভাগের একটি টহল ফাঁড়িতে। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর আবার যাত্রা শুরু হয় আমাদের। চাঁদের আলো উপভোগ করতে করতে বিশাল মরজাত নদ ধরে চলতে থাকে ট্রলার। মাঝ বরাবর যাওয়ার পর মরজাত নদের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে ট্রলারে। আর এতে কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে ট্রলার। ওই কাঁপুনিতে বুকের কোণেও কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। ভয়ে সৃষ্টিকর্তার নাম জপতে শুরু করেন সঙ্গীদের অনেকেই। এভাবেই চলে ঘণ্টাখানেক। একসময় তীরের দেখা পেতেই হাঁফ ছাড়েন সবাই। ততক্ষণে ঢেউয়ের তীব্রতাও কমে আসে। এরপর রাতের জ্যোৎস্না আর জিপিআরএসের ম্যাপ দেখে চলতে থাকে ট্রলার। সহকর্মীদের অনেকে তখনো ভয়ে তটস্থ।বিজ্ঞাপন

ম্যাপ দেখে দেখে তিন কোনার চর পার হতেই দেখা মেলে দূর থেকে ভেসে আসা আলোর বিন্দুর। সেগুলো দুবলার চরের শুঁটকিপল্লির। ওই আলো দেখেই চলতে থাকে ট্রলার। কিছুদূর যাওয়ার পর বাম পাশে কিছু ট্রলারের মিটমিটে আলো আমাদের বিভ্রান্ত করে দেয়। ওই রাতে আসলে দুবলার চর কোনটি, সেটি নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করেন আমাদের সঙ্গে থাকা অভিজ্ঞরাও। এমনই দোটানার মাঝে নিচে কিছুর সঙ্গে হঠাৎ ধাক্কা খায় ট্রলার। একজন বলে ওঠেন ‘এখানে বালুর চর’। ওই চরে যেন ট্রলার আটকে না যায়, প্রাণপণে এমন চেষ্টা করতে থাকেন চালক। কিন্তু কিছুতেই আর হয় না। একজন লম্বা একটি বাঁশ নামিয়ে পানির গভীরতা মাপার চেষ্টা করেন। দেখা যায়, সেখানে হাঁটুর কিছু ওপরে পানি। এ কারণেই বালুর চরে আটকে গেছে ট্রলার। ট্রলারটি চর থেকে সরাতে আমাদের সঙ্গে থাকা সাফায়েত হোসেন নামের একজন নেমে পড়েন পানিতে।

দুবলার চরের শুঁটকিপল্লি
দুবলার চরের শুঁটকিপল্লি

কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও সরাতে না পেরে নেমে পড়ি আমরা আরও কয়েকজন। সবাই মিলে ঠেলে সরাতে চেষ্টা চলে আরও কিছুক্ষণ। একসময় হাল ছেড়ে দেন সবাই। বালুর চরে গ্রাফি ফেলে উঠে পড়ি ট্রলারে। ততক্ষণে নতুন আতঙ্ক গ্রাস করেছে আমাদের। ঠান্ডা বাতাস বইছে। কিন্তু আতঙ্কে ওই বাতাস কাবু করতে পারছে না আমাদের। ওই স্থানে টেলিটকের মোবাইল সংযোগ পাচ্ছে। কী করা যায় কী করা যায়, এমন ভাবতে ভাবতেই একজন ফোন দেন ৯৯৯ নম্বরে। আমাদের কথা শুনে কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন ওপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি। বিস্তারিত বলার পর কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের কথা শুনে মনে হলো, এটা খুবই স্বাভাবিক। তাঁরা এখন কিছুই করতে পারবেন না। অগত্যা নিজেদের মতো করেই চিন্তা করতে শুরু করি। মাথায় হাজারটা চিন্তা ঘোরাঘুরি করে, কিন্তু সমুদ্রের বুকে তা কী বাস্তবায়ন করা সম্ভব!

এমন করতে করতেই রাত প্রায় ১টা। সামনে সমুদ্র, চাঁদের আলোয় যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। দূরে সমুদ্রের মধ্যে থাকা কয়েকটি জাহাজের আলো শুধু চোখের সামনে মিটমিট করছে। অনুমান করা যায়, গন্তব্যস্থল থেকে তখনো আমরা দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে। একজন জানান, সকালে জোয়ারের পানি বাড়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতাও অনেক বাড়বে। তখন পানির বাড়ি খেয়ে ট্রলারের তলা ভেঙে যেতে পারে। এসব কথা শুনে সহকর্মীদের অনেকেই ট্রলারে থাকা লাইফজ্যাকেট ও বয়া নিজের জিম্মায় নিয়ে রাখেন।

যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি
যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি

ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। কিন্তু সেদিকে কারোরই মনোযোগ নেই। তারপরও রাঁধুনির অনুরোধে সবাই একটু খেয়ে নিই। অনেকে না খেয়েই ঘুমাতে যান। খাওয়ার পর চলল কিছুক্ষণ আলোচনা। ওই আলোচনার সময় একজন বলে বসেন, ‘আমরা চরটির নামকরণ করব সাংবাদিক চর।’

এরপর ট্রলারের ছাদ থেকে উঁকি মেরে একজন জানান দেন, পুরোপুরি পানি সরে গেছে, চর জেগে উঠেছে। তা দেখতে একে একে সবাই চলে আসেন বাইরে। চরের বালুতে চাঁদের আলো চকচক করছে। একজন সাহস করে নেমে পড়েন ট্রলার থেকে। নাহ্‌, একেবারে শক্ত বালু, পা ডেবে যাচ্ছে না। আলো ছড়ানো পূর্ণিমার ওই রাতে আমরা সবাই নেমে পড়ি চরে। গা ছমছম করা অনুভূতি ততক্ষণে উবে গেছে, মন ভরতে শুরু করেছে ভালো লাগায়। দূরে সাগরের মধ্যে একটি ট্রলার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমরা ৯ জন এগিয়ে যাই সেদিকে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, চর থেকে খুব বেশি দূরে নয় সেটি।

ডাকাডাকি করে তোলা হলে ওই ট্রলারের একজন জানান, তাঁরাও চরে আটকে গেছেন। তাঁর ওই কথা শুনে আশস্ত হলাম আমরা। নাহ্‌! আমাদের সঙ্গে আরও কেউ আছে।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চরে হাঁটাহাঁটি করে রাত চারটার দিকে ঘুমাতে যায় সবাই। পৌনে ছয়টার দিকে একজন ডেকে দেন সূর্যোদয় দেখার জন্য। একে একে সবাই উঠে সূর্যোদয় দেখি। চরে আটকে যাওয়ার সুবাদে জীবনে প্রথম সূর্যোদয় দেখা হয়।

ভাটায় চরে আটকে গেছে  ট্রলার
ভাটায় চরে আটকে গেছে ট্রলার

চারদিক কিছুটা ফরসা হতেই দেখা যায়, রাতে যে ট্রলারগুলোর আলো দেখে আমরা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম, ওই ট্রলারগুলো আমাদের মতোই চরে আটকে গেছে। আমাদের ট্রলার থেকে ওই ট্রলারগুলোর দূরত্ব কমপক্ষে দেড় কিলোমিটার। ধীরে ধীরে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। পানিতে পা ভিজে যাওয়ার আগেই উঠে পড়ি ট্রলারে। অপেক্ষা করতে থাকি পানি বাড়ার।

অবশেষে ঘাটে
অবশেষে ঘাটে

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জোয়ারের পানিতে ট্রলার নড়তে শুরু করে। তবে তখনো চালানোর উপযোগী হয়নি। রাতের অভিজ্ঞতা থেকে একে একে পানিতে নেমে পড়ি সাতজন। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে ধাক্কাধাক্কি করার পর চলতে শুরু করে ট্রলার। ওই চলন্ত ট্রলারেই একে একে উঠে পড়ি আমরা। এরপর সাগরের বড় বড় ঢেউয়ের বুক চিরে দুবলার চরের আলোরকোলের দিকে চলতে শুরু করে আমাদের ট্রলারটি।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com