আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ ১০ দিন শক্তিধর দেশগুলো যেভাবে ঠান্ডা লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল

১৯৭১ সালে রাশিয়ার নেতা ব্রেজনেভ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন

উনিশশো’ একাত্তর সালের ১৫ই ডিসেম্বর। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তখন এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে।

যুদ্ধ থামানোর জন্য তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে পোল্যান্ডের এক প্রস্তাব নিয়ে তখন আলোচনা বেশ উত্তেজনাপূর্ণ।

নিরাপত্তা পরিষদে ওই আলোচনায় পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো, যিনি এর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দেশটির রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে মি. ভুট্টো পোল্যান্ডের প্রস্তাব সম্বলিত কাগজ ছিড়ে টুকরো-টুকরো করে নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসেন।

পোল্যান্ডের এই প্রস্তাবকে ‘আত্মসমর্পণের দলিল’ হিসেবে বর্ণনা করেন মি. ভুট্টো।

কিন্তু মি. ভুট্টো যখন নিরাপত্তা পরিষদে তার এই তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, ততক্ষণে পূর্ব-পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে।

ঠান্ডা লড়াই

বাংলাদেশের মানুষ যখন পাকিস্তানের কাছ থেকে মুক্তির জন্য জীবনপণ লড়ছে, তখনকার পৃথিবী ছিল একেবারে ভিন্ন। দুটো ভিন্ন মেরুতে নিজেদেরকে আবদ্ধ রেখেছিল বেশিরভাগ দেশ।

আর বৃহৎ শক্তির দেশগুলো পরস্পরের সাথে ঠাণ্ডা লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করেই।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে, অন্যদিকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (যার সবচেয়ে প্রভাবশালী অংশ ছিল আজকের রাশিয়া) এবং ভারত ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পক্ষে।

ডিসেম্বর মাসের তিন তারিখে ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।

জাতিসংঘের বাইরে আমেরিকা, চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের মধ্যে তীব্র কূটনৈতিক বাদানুবাদও শুরু হয়েছিল।

পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গিয়েছিল যে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর তীব্র চাপ তৈরি করেছিলেন।

আমেরিকার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মাধ্যমে ভারতকে থামানো এবং পাকিস্তানকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করা।

ভারতের ওপর এক ধরণের সামরিক হুমকি তৈরি করতে বঙ্গোপসাগরে রণতরীও পাঠিয়েছিল আমেরিকা।

ভারতের উপর আমেরিকার চাপ

ছয়ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে একটি স্বাধীনত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। হেনরি কিসিঞ্জার লিখেছেন, ইন্দিরা গান্ধীর দেয়া সেই স্বীকৃতির ফলে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার সব সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারতকে দেয়া সব ধরণের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। তবে ভারতের উপর এর প্রভাব পড়েনি বলেই চলে।

আমেরিকার এই সিদ্ধান্তে ওয়াশিংটনে কূটনীতিকরা কিছুটা বিস্মিত হন।

চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাইয়ের (বামে) সাথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল, অনেকে ভেবেছিলেন ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় আমেরিকা যে ‘নিরপেক্ষ ভূমিকা’ পালন করেছিল, এবারও হয়তো দেশটি তেমন ভূমিকাই নেবে।

এছাড়া, ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা তাদের সম্পাদকীয়তে ভারতের ব্যাপারে আমেরিকার সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ হিসেব বর্ণনা করেছিল।

ভারত যাতে পূর্ব পাকিস্তানে হামলা বন্ধ করে সেই লক্ষে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ৬ই ডিসেম্বর সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। কারণ, মস্কো চেয়েছিল ভারত যুদ্ধ যাক।

জাতিসংঘে আলোচনা

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তান ইস্যুটি নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাঠিয়ে দেয়।

এর আগে পূর্ব-পাকিস্তানে যুদ্ধ বিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে বারবার নাকচ করে দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।

কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে সাধারণ পরিষদের কোন ক্ষমতা নেই। কোন একটি প্রস্তাবের ওপর সাধারণ পরিষদ শুধুই বিতর্ক এবং ভোটাভুটি করতে পারে। কিন্তু সেটি মেনে চলার কোন বাধ্যবাধকতা কারও নেই।

এমন অবস্থায় পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তেই থাকে। ৭ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আমেরিকাকে জানিয়েছিলেন যে পূর্ব-পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যে-সিনেমায় কেন মুক্তিযুদ্ধ উপেক্ষিত

আটই ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি হয়। কিন্তু ভারত এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে যুদ্ধ বিরতির কোন প্রস্তাব তারা মানবে না।

পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ বিরতি এবং ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল, তাতে সমর্থন দিয়েছিল আমেরিকা।

নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, এই প্রস্তাবের পক্ষে ১০৪টি ভোট পড়েছিল এবং বিপক্ষে ছিল ১১টি ভোট।

এই ভোটাভুটির পরদিন জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য নরেন্দ্র সিংকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, “আমরা যুদ্ধবিরতি করবো না। অবশ্যই না। আমরা বোকা নই।”

পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে কিসিঞ্জারের উদ্বেগ

আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তার ‘হোয়াইট হাউস ইয়ারস’ বইয়ে লিখেছেন, পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আনা কোন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানবেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

মি. নিক্সনের বর্ণনা অনুযায়ী, শুধু পূর্ব পাকিস্তান নয়, বরং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনাও নিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

উনিশশো’ একাত্তর সালে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ, যিনি ১৯৮৯ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রশাসনের নির্দেশে মি. বুশ জাতিসংঘে ভারতকে ‘হামলাকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

ভারতকে থামানোর জন্য আমেরিকার হাতে একমাত্র উপায় ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর চাপ তৈরি করা।

পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল

সেজন্য ৮ই ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে বলেছিলেন, মস্কোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, সেটি বাতিল করা উচিত। তাহলে হয়তো রাশিয়া চাপে পড়বে।

তখন আমেরিকার মনে যে জোরালো উদ্বেগটি তৈরি হয়েছিল সেটি হচ্ছে, ভারত হয়তো পশ্চিম পাকিস্তানও আক্রমণ করতে পারে।

এমন প্রেক্ষাপটে আমেরিকার জুনিয়র এক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বৈঠক করেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে। ওই বৈঠকে আমেরিকার তরফ থেকে ভারতের কাছে এই নিশ্চয়তা চাওয়া হয় যে ভারত আজাদ কাশ্মীর এবং পশ্চিম পাকিস্তান আক্রমণ করবে না।

বৈঠকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের তরফ থেকে আমেরিকাকে এই নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে ভারতে পশ্চিম পাকিস্তান আক্রমণ করবে না। কিন্তু আজাদ কাশ্মীর সম্পর্কে কোন নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। ভারতের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছিলেন, বিষয়টি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে কথা বলতে হবে।

হেনরি কিসিঞ্জারের ভাষ্যমতে, একই সাথে পূর্ব পাকিস্তান এবং কাশ্মীর হারালে পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে টিকবে না।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ কি ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে গেছে?

আজাদ কাশ্মীর সম্পর্কে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে কোন নিশ্চয়তা না পেয়ে বেশ বিচলিত হয়ে উঠেন প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার।

রাশিয়ার উপর আমেরিকার চাপ

নয়ই ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের কৃষিমন্ত্রী ভ্লাদিমির মাৎকেভিচ ওয়াশিংটন সফরে যান। ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাথে বৈঠক করেন তিনি।

ওই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট নিক্সন বেশ খোলামেলাভাবে বলেন যে উপমহাদেশে যুদ্ধের কারণে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

“ভারত যদি পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে আমেরিকা বসে থাকবে না। সেজন্য অতিদ্রুত একটি যুদ্ধবিরতি এবং একই সাথে এর রাজনৈতিক সমাধান জরুরী,” সোভিয়েত মন্ত্রীকে জানান প্রেসিডেন্ট নিক্সন।

প্রেসিডেন্ট নিক্সন যেভাবে ভারত-বিরোধিতা করছিলেন, তা নিয়ে হোয়াইট হাউস এবং পররাষ্ট্র দপ্তর স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর মধ্যে টানাপোড়েনও শুরু হয়।

১৯৭১ সালে সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভ-এর সাথে সুসম্পর্ক ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর

এদিকে, আমেরিকার ক্রমাগত চাপের কারণে এক পর্যায়ে সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ একটি প্রস্তাব দেন আমেরিকার কাছে।

হেনরি কিসিঞ্জারের বর্ণনা মতে, ব্রেজনেভ যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তার অন্যতম বিষয় ছিল, ২৫শে মার্চের আগে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে যে পর্যায় থেকে আলোচনা ভেঙ্গে দিয়েছিল, সেখান থেকেই পুনরায় আলোচনা শুরু করা।

ব্রেজনেভের পরামর্শের ভিত্তিতে ১০ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনা করে আমেরিকা। এর ভিত্তিতে নতুন একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়।

তবে এই প্রস্তাবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি বাদ দেয়া হয়। পাকিস্তান এবং আমেরিকা চেয়েছিল আপাতত যুদ্ধ বন্ধ করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১০ই ডিসেম্বর সকালে এই প্রস্তাব পাঠিয়ে দেন সোভিয়েত দূতের কাছে। কিন্তু এরপর ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

চীনের সাথে আমেরিকার গোপন আলাপ

এরই মধ্যে মার্কিন রণতরীর একটি বহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হবার জন্য নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট নিক্সন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, পশ্চিম পাকিস্তানে যাতে কোন আক্রমণ না হয়, সেজন্য সতর্কবার্তা হিসেবে এই রণতরী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এই বহরটি তখন মালাক্কা প্রণালীর পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল।

নিক্সন প্রশাসনের মধ্যে তখন এই ধারনা হয়েছিল যে পূর্ব পাকিস্তানে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানকে বাঁচাতে হবে।

এই অবস্থায় জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের দূতের সাথে আলাপ করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার গোপন একটি বৈঠকের জন্য ওয়াশিংটন ছেড়ে নিউইয়র্কে যান।

ঢাকায় ২৫০ কেজি’র বোমাটি কীভাবে এলো, বিস্ফোরিত হয়নি কেন

কিন্তু এরই মধ্যে তিনি খবর পান যে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার জেনারেল এ কে নিয়াজী আত্মসমর্পণ করতে চান। এই খবরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জারের মন খারাপ হলেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ছিল বেশ খুশি।

হেনরি কিসিঞ্জারের নাখোশ হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম সীমান্তে একটি সামগ্রিক যুদ্ধবিরতির জন্য ইয়াহিয়া খানের সাথে আলাপ করে এরই মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাইয়ের সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার

তাদের ধারণা ছিল, শুধু পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ বিরতি হলে ভারতীয় সেনাবাহিনী হয়তো পশ্চিম পাকিস্তানে আক্রমণ করতে পারে।

১০ই ডিসেম্বর সন্ধ্যে ছয়টা নাগাদ নিউইয়র্কে সিআইএ’র একটি অফিসে বৈঠক করেন হেনরি কিসিঞ্জার এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের দূত হুয়াং হুয়া।

ওই বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত এবং আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত পোষণ করেন যে পশ্চিম পাকিস্তান যদি আক্রান্ত হয় এবং পাকিস্তান যদি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যায়, তাহলে দুই দেশ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করবে।

পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম সীমান্তে একটি সমন্বিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর আবারও চাপ প্রয়োগ করে আমেরিকা।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে গঠিত হয়েছিল রাজাকার বাহিনী

সোভিয়েত দূতকে ফোন করে হেনরি কিসিঞ্জার এই বলে সতর্ক করে দেন যে তাদের প্রস্তাবের ব্যাপারে যদি দ্রুত কোন জবাব না আসে, তাহলে আমেরিকা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

বঙ্গোপসাগরে রণতরী পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল সেটির মধ্যে অন্যতম।

নিক্সন ও কিসিঞ্জারের জোর চেষ্টা

ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখে নিউইয়র্কে পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে এক বৈঠক করেন হেনরি কিসিঞ্জার। ওই বৈঠকে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে মি. কিসিঞ্জার বলেন যে আমেরিকা পাকিস্তানকে রক্ষা করতে চায়।

এজন্য চীনের সাথে একত্রিত হয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার জন্য মি. ভুট্টোকে পরামর্শ দেন মি. কিসিঞ্জার।

এরপর জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে আমেরিকা এবং এজন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন মি. কিসিঞ্জার।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ভালো সম্পর্ক ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে

প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জারের চিন্তা চলছিল মূলত পশ্চিম পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরকে নিয়ে।

এই অবস্থায় ১২ই ডিসেম্বর সকালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার এবং হোয়াইট হাউজ চীফ অব স্টাফ – এ তিনজন মিলে ওভাল অফিসে এক বৈঠকে বসেন।

তাদের বৈঠক চলার সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের দূত ফোন করে বলেন, যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে এর আগে আমেরিকা যে প্রস্তাব দিয়েছিল, সে ব্যাপারে রাশিয়ার উত্তর আসছে।

আরও ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পর প্রেসিডেন্ট নিক্সন হটলাইনে একটি বার্তা পাঠান সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে।

ওই বার্তায় বলা হয়, ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সোভিয়েতের কাছ থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় ভারত-পাকিস্তান ইস্যুকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিয়ে যাবে আমেরিকা। সেখানে একবার সিদ্ধান্ত হলে সেটি পরিবর্তন করা যাবে না।

এর মধ্যে রণতরীকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা করার জন্য নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট নিক্সন। হেনরি কিসিঞ্জার আবার সোভিয়েত দূতকে হটলাইন মেসেজ পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে বলেন, “সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।”

১২ই ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে হটলাইনে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তর আসে আমেরিকার কাছে। ওই বার্তায় বলা হয়, ভারত পশ্চিম পাকিস্তান আক্রমণ করবে কিনা, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়টি নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন কয়েকবার ভারতের কাছে জানতে চেয়েছিল, কিন্তু কোন পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যায়নি।

এরই মধ্যে মাল্লাক্কা প্রণালী পেরিয়ে মার্কিন রণতরী বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে।

‘ফরেন রিলেশন্স অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস, সাউথ এশিয়া ক্রাইসিস’ শিরোনামে যেসব দলিল অবমুক্ত করার হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ১৪ই ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের দূত একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি নিয়ে আসেন হোয়াইট হাউজের চীফ অব স্টাফের কাছে।

যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল

সেই চিঠিতে বলা হয়, ভারতের কাছ থেকে এই মর্মে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে যে পশ্চিম পাকিস্তানে আক্রমণ করার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই।

তবে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারত হামলা করবে কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার কোন ধারণা পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের মাধ্যমে পুনরায় চেষ্টা

এদিকে, ১৪ই ডিসেম্বর ফ্রান্স এবং ইতালি নিরাপত্তা পরিষদে একটি যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব তোলে। কিন্তু ওই প্রস্তাবে শুধু পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছিল।

একই সাথে পোল্যান্ডের একটি খসড়া প্রস্তাবও আসে। ১৫ই ডিসেম্বর পোল্যান্ডের এই খসড়া প্রস্তাবটি আলোচনায় আসে নিরাপত্তা পরিষদে।

এই প্রস্তাবের পেছনে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন ছিল এবং ভারত ‘অনিচ্ছাসত্ত্বেও’ সেটি মেনে নিয়েছিল।

নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, যদি পাকিস্তানী সেনা প্রত্যাহার হয় এবং আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে আলোচনা হতে পারে।

এই প্রস্তাবের অন্যতম বিষয় ছিল – যুদ্ধবিরতি এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানী সেনা প্রত্যাহার করা।

নিরাপত্তা পরিষদে মি. ভুট্টো বলেন, “আমরা যুদ্ধ করবো। আমার দেশ আমাকে ডাকছে। এখানে আর সময় নষ্ট করা যাবে না। আপনাদের নিরাপত্তা পরিষদ এখানে পড়ে থাক। আমি চললাম।”

১৯৭১ সালের শেষ দিকে পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘে আলোচনায় অংশ নেন জুলফিকার আলী ভুট্টো

পোল্যান্ডের এই প্রস্তাব মেনে নিলে হয়তো সেটা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের পক্ষে যেত।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন কর্নেল রিয়াজ জাফরী। ১৯৭১ সালের ঘটনাপ্রবাহ তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। ২০১৬ সালে এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, পোল্যান্ডের প্রস্তাব মেনে নেবার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের ‘বিচ্ছিন্নতাকে’ মেনে নেয়া।

কিন্তু ওই প্রস্তাব মেনে নিলে ভারতের হাতে আত্মসমর্পন করতে হতো না বলে উল্লেখ করেন রিয়াজ জাফরী।

ত্মসমর্পনের প্রস্তুতি

জাতিসংঘে আলোচনা চললেও ১৪ই ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর জেনারেল এ কে নিয়াজী ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল স্পিভাকের বাসায় যান ‘যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া’ নিয়ে আলোচনা করতে।

পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত পাকিস্তানী বাহিনীর কমান্ডার একে নিয়াজী জানান যে তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত, যদি তার সৈন্যদের নিরাপত্তা দেয়া হয়।

‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ।

মার্কিন দূতের মাধ্যমে জেনারেল নিয়াজীর লেখা যুদ্ধবিরতির চিঠি ১৫ই ডিসেম্বর পৌঁছে যায় ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশ’র কাছে।

জেনারেল মানেকশ উত্তর দেন, “আমার অগ্রসরমান সৈন্যদের কাছে যদি পাকিস্তানী সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে, তাহলে যুদ্ধবিরতি গ্রহণযোগ্য হবে এবং আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদের নিরাপত্তা দেয়া হবে।”

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ৭১-এর স্বাধীনতার ঘোষণা

হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, ১০ই ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসার পরে আরও পাঁচদিন পূর্ব পাকিস্তান ধরে রেখেছিল পাকিস্তানী সৈন্যরা। এই সময়ের মধ্যে আমেরিকা ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর চাপ তৈরি করতে সক্ষম হয়, যাতে পশ্চিম পাকিস্তান আক্রান্ত না হয়।

পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম সীমান্তে শর্তহীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

রিচার্ড নিক্সন দাবি করেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের মাধ্যমে চাপ তৈরির ফলে পশ্চিম সীমান্তে ভারত যুদ্ধবিরতি করতে বাধ্য হয়েছিল। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে রণতরী পাঠানোর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর চাপ তৈরি হয়েছিল বলে দাবি করেন মি. নিক্সন।

আর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাই পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে বলেছিলেন, আমরা পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছি।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com