আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

চিনিকল ঘিরে সংকট, দরকার আধুনিকায়ন

১৪ বছর ধরে টানা লোকসান

  • প্রতি কেজিতে উৎপাদন ব্যয় ১৫০ টাকা।
  • সরকার নির্ধারিত বিক্রয়মূল্য ৬০ টাকা।
  • বেসরকারি চিনির কেজি ৫৫ টাকা।
  • প্রায় ২০ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত।

পঞ্চগড়ের মানুষ আখকে বলে কুশার। সেই কুশার কাটার মৌসুম শুরু হতে আর মাস দু-এক বাকি। তবে কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে মাটি নরম হয়ে কুশারগাছ হেলে পড়েছে। ভরদুপুরে সেই হেলে পড়া গাছগুলো বেঁধে সোজা করে দিচ্ছিলেন শহিদুল ইসলাম (৪০)।

শহিদুলের বাড়ি বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা গ্রামে। বাড়িসংলগ্ন এক একর জমি ভাড়া (লিজ) নিয়ে আখ চাষ করেছেন। জেলার অন্য চাষিদের মতো তিনিও কুশার বিক্রি করবেন পঞ্চগড় চিনিকলে। পঞ্চগড় চিনিকল বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে থাকা ১৫টি চিনিকলের একটি।

খেতে কাজ করার সময় শহিদুলের সঙ্গে কথা হয় গত ২৮ সেপ্টেম্বর। খেতের আখ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। লোকমুখে শুনেছেন, লোকসানের কারণে পঞ্চগড় চিনিকলটি শিগগির বন্ধ হতে যেতে পারে। মিল বন্ধ হলে আখের কী হবে!

আখচাষি শহিদুলের মতো মিলে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরাও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। এই চিনিকল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন কয়েক হাজার মানুষ। উদ্বিগ্ন তাঁরাও।

জেলার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় চিনিকল। চিনিকল ছাড়াও এটির আওতাধীন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, জেনারেল ক্লাব, ট্রেনিং কমপ্লেক্স ও অতিথি ভবন রয়েছে। মিল ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি বাজার। এসব নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

১ অক্টোবর শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন পঞ্চগড়ে এলে চিনিকলটি সচল রাখার দাবিতে তাঁকে স্মারকলিপি দেয় পঞ্চগড় চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন। এ প্রসঙ্গে পঞ্চগড় জেলা সার্কিট হাউসে শিল্পমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের অঙ্গীকার হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। কাজেই কোনো চিনিকল বন্ধ করা হবে না। তবে চিনিকলগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

চিনিকলগুলো বেসরকারীকরণ হবে কি না, এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে তিনি বলেছেন, চার-পাঁচটি চিনিকল জাতীয় চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। ফলে এত বড় সম্পদ ফেলে রাখা যাবে না। বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।

কেন দুশ্চিন্তা

পঞ্চগড় চিনিকলের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় চিনিকলসহ দেশের সব সরকারি চিনিকলকে জরুরি চিঠি দেয় খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। চিঠিতে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, লাভ-লোকসান ও শ্রমিক-কর্মচারীদের দেনা-পাওনার হিসাব চাওয়া হয়েছে।

পঞ্চগড় চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা বলছেন, বিএসএফআইসির চিঠির একটি অংশে চিনিকলের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের অবসরে পাঠালে কী পরিমাণ অর্থ লাগতে পারে তারও হিসাব চাওয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার। তিনি বলেন, করপোরেশনের চাহিদামতো সব তথ্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু করপোরেশন কেন এসব তথ্য চাইল তা তাঁর জানা নেই—বললেন রুহুল আমিন।

ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইউসুফ আলী জানান, পঞ্চগড় চিনিকলে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের অনুমোদিত পদ আছে ৯৯৪টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ২৮৯ জন। শূন্য পদগুলোর বিপরীতে ৫০১ জন শ্রমিক-কর্মচারী দৈনিক হাজিরা ও মৌসুমভিত্তিক চাকরি করছেন। একসময় চিনিকলটিতে দেড় হাজারের বেশি জনবল ছিল।

জেলা শহরের কাছেই ধাক্কামারা এলাকায় চিনিকলটির বাঁ পাশে দাপ্তরিক কার্যালয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা একটার দিকে সেখানে গিয়ে দেখি, সুনসান নীরবতা। দাপ্তরিক কাজকর্ম চললেও কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি খুব কম। একজন কর্মকর্তা জানালেন, দাপ্তরিক কাজকর্ম শুরু হয় সকাল সাতটায়, চলে বেলা দুইটা পর্যন্ত।

কারখানার উত্তর গেটে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী মফিজুল ইসলাম জানালেন, আট মাস আগে দৈনিক ৪৯০ টাকা হাজিরা ভিত্তিতে মিলে কাজ নিয়েছেন। ছয় মাসের বেতন পেয়েছেন। দুই মাসের বেতন বকেয়া।

চিনিকলে এসেছেন সদর উপজেলার গলেহা কান্তমণি গ্রামের আজিরুল ইসলাম। তাঁর বাবা মোজাম্মেল হক যন্ত্রচালক ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান। আজিরুল এসেছেন বাবার পেনশনের টাকার জন্য কথা বলতে। কিছু টাকা পেয়েছেন। আরও পাওনা আছে। এর মধ্যে চিনিকলটি বন্ধের কথা শুনে তিনিও চিন্তিত।

সংকটের শুরু যেখানে

১৯৬৫ সালে পঞ্চগড়ের ধাক্কামারা এলাকায় ১৯৮ দশমিক ৪৬ একর জমিতে পঞ্চগড় চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়। পরীক্ষামূলকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৯ সালে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে চিনিকলটি জাতীয়করণ করা হয়।

কলটির বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ১০ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চিনিকলটিতে গড়ে ৮ হাজার ৫৩৬ টন চিনি উৎপাদিত হতো। এতে লাভেই ছিল প্রতিষ্ঠানটি। সবশেষ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা মুনাফা আসে এখান থেকে।

কিন্তু চিনির লাভ আর বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০০৬ সাল থেকে ধারাবাহিক লোকসান পর্ব চলতে থাকে। এভাবে ১৪ বছর ধরে টানা লোকসান করে যাচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি।

চিনিকলের হিসাব শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরেও লোকসান হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লোকসান ছিল ৬৩ কোটি টাকা। সব মিলে এ প্রতিষ্ঠানের লোকসান ৪৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

তবে চিনিকলের ব্যবস্থাপক (অর্থ) মুহাম্মদ নাজমুল হুদা বলছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫ কোটি টাকা কম লোকসান হয়েছে। গত মৌসুমে সরকার চিনিকলকে আখ ক্রয় বাবদ ৫ কোটি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৭০ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। ফলে আখচাষিরা আখ বিক্রির টাকা ঠিকমতো পেয়েছেন। শ্রমিক-কর্মচারীরাও কম-বেশি বেতন পাচ্ছেন।

লোকসানের কারণ

চিনিকলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একসময় পঞ্চগড় জেলায় প্রচুর আখ চাষ হতো। ফলে চিনিকলটি লাভজনক ছিল। কিন্তু দেড় দশকে আখ চাষ অনেক কমেছে। চিনি উৎপাদনও কমেছে।

এ ছাড়া কলের যন্ত্রপাতি পুরোনো। ফলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন কমেছে। উল্টো বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। চিনিকলটির ঋণের পরিমাণ ১৯২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ঋণের সুদ দিতে গিয়েও বাড়ছে লোকসান। প্রতিষ্ঠানটিকে এ বছরও ২৮ কোটি টাকা ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে।

ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদার মতে, সরকার চিনিকলের ঋণ মওকুফ করলে লোকসান অনেকাংশে কমে আসবে এবং এটির পুনরুজ্জীবন সম্ভব।

আখের অভাবে গত বছর চিনি উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫০ টাকা। কিন্তু বিক্রয় মূল্য সরকার নির্ধারিত ৬০ টাকা। ফলে প্রতিবছর লোকসান বাড়ছে। এ ছাড়া আগের উৎপাদিতসহ মোট ৩ হাজার ২৬১ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত আছে, যার দাম প্রায় ২০ কোটি টাকা।

চিনিকলের ব্যবস্থাপক (কারখানা) শাহজাহান করিম বলছেন, উৎপাদিত চিনি বিক্রি করাও মুশকিল। কারণ, বাজারে প্রাইভেট কোম্পানির চিনি ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে ডিলাররা ৬০ টাকা কেজিতে এই চিনি নিতে চান না।

চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-বোনাস মিলিয়ে বছরে ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু আখের সরবরাহ স্বল্প। কল চলে দুই মাস। বাকি সময় অধিকাংশ শ্রমিকের কাজ থাকে না। এতে জনশক্তির ব্যবহার যথাযথ হয় না।

আখ চাষ কমছে কেন

পঞ্চগড়ের যেসব এলাকা আখ চাষের জন্য সব থেকে পরিচিত, তার মধ্যে অন্যতম সুরিভিটা। বছর দশেক আগে এখানকার কৃষকেরা ১ একর থেকে ১৫-২০ একর জমিতে আখ চাষ করতেন। কিন্তু এখন?

পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের এই এলাকায় আখচাষিকে খুঁজে পেতে হন্যে হতে হলো। সুরিভিটা গ্রামের মুদিদোকানের টংয়ে বসা একসময়ের আখচাষি আইবুল হককে (৫০) জিজ্ঞেস করি, ‘আখ চাষ বাদ দিলেন কেন?’ প্রশ্ন কেড়ে নিয়ে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘চাষ করে কী হবে?’

আইবুল হক সর্বশেষ আট-নয় বছর আগে ১৩ একর জমিতে আখ চাষ করেছিলেন। কিন্তু আখ বিক্রির সময় তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। মিলে আখ দিয়ে কয়েক মাস টাকার জন্য ঘুরেছেন। দেনায় পড়ে আখ সরবরাহের ভাউচার কপি মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে বিক্রি করেছেন। এসব ভোগান্তি থেকে বাঁচতে তিনি আখ চাষ ছেড়ে দিয়েছেন।

আইবুলের পাশে বসা ছিলেন ওসমান আলী (৩০)। তিনি গত বছর দুই বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন। তিনি বলছেন, চিনিকল আগের থেকে কিছুটা ভালো চলছে। গতবার তাঁকে সার, বীজ ও নগদ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আখ বিক্রির টাকাও ১৫ দিনের মধ্যে পেয়েছেন। তবু তাঁর আগ্রহ নেই আখ চাষে। কেন?

ওসমানের হিসাবে, দুই বিঘা জমিতে আখের উৎপাদন হয়েছে ৪০০ মণ। দাম পেয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। বিপরীতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। সারা বছর খাটুনির পর মাত্র ১০ হাজার টাকা পেয়ে খুশি নন তিনি।

পঞ্চগড় শহর থেকে দেবনগর, ভিতরগড়, দশমাইল, অমরখানা, জগদল, ভজনপুর এলাকা ঘুরে দেখি, কৃষকেরা চা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাঁরা বলছেন, আখের চেয়ে চায়ে লাভ বেশি।

চিনিকলের ব্যবস্থাপক (কৃষি) মোস্তফা কামাল বলছেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আখচাষিদের বিশেষ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। এতে দুই বছর ধরে তুলনামূলক আখের চাষ বাড়ছে।

পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মজহারুল হক প্রধান কেন্দ্রীয় আখ চাষি ফেডারেশনের সভাপতি। তিনি বলছেন, আখ চাষ কমেছে, এটা সত্য। তবে আখের স্বল্পকালীন উন্নত জাত উদ্ভাবন করতে পারলে এটি আবারও জনপ্রিয় হবে।

ভবিষ্যৎ কোন পথে

স্থানীয় লোকজন বলছেন, বেসরকারীকরণ নয়, দরকার আধুনিকায়ন। চিনিকলটিকে বিকল্প আয়ের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বহুমুখী প্রকল্প নিতে হবে।

চিনিকলটি ঘিরে কয়েকটি প্রস্তাব বিএসএফআইসির কাছে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার বলেন, শুধু চিনি উৎপাদন করে এ প্রতিষ্ঠান টেকানো সম্ভব নয়।

পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেনও বেসরকারীকরণের বদলে এর আধুনিকায়ন চান। তাঁর মতে, জেলার একমাত্র ভারী শিল্পকারখানাটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় ভীষণভাবে প্রভাব পড়বে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com