এগ্রোবিজ
চাষিদের ভুলেই চা পাতার দাম কমার অভিযোগ কারখানা মালিকদের
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমসার কীটনাশকসহ মুজুরি বেড়েছে কয়েকগুন। বেড়ে গেছে চা পাতার উৎপাদন খরচও। কিন্তু চা কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেটে উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না পঞ্চগড়ের চা চাষিরা। মূল্য নির্ধারণ কমিটির সীদ্ধান্ত না মেনে কারখানা মালিকরা মনগড়া মূল্যে চায়ের কাঁচাপাতা কিনছেন। সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে লোকসান সত্ত্বেও ক্ষুদ্র চা চাষিরা কারখানায় চা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ নিয়ে হতাশ চা চাষি ও বাগান মালিকরা। এতে দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল পঞ্চগড়ে ক্ষুদ্র চা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে চা কারখানা মালিকদের দাবি, নিয়ম মেনে কাঁচাপাতা উত্তোলন না করার জন্য এখানে চায়ের মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য চট্টগ্রামের অকশন মার্কেটে পঞ্চগড়ের তৈরিকৃত (মেড টি) চায়ের মূল্য কমে যাচ্ছে। অকশন মার্কেটে গত বছরের তুলনায় এবার চায়ের দাম অর্ধেকে নেমেছে। তাই চা চাষি আর বাগান মালিকরাও কাঁচাপাতার দাম কম পাচ্ছেন।
অন্যদিকে চা পাতার ন্যায্য মূল্যের দাবিতে এবং কারখানা মালিকদের সিন্ডকেটের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলন শুরু করেছেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বৃহষ্পতিবার সকালে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের মুক্তমঞ্চে সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়।
চট্টগ্রাম এবং সিলেটের পরে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল পঞ্চগড়ে উত্তরাঞ্চল ক্ষুদ্র চা চাষ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ছয় হাজার ৭৯২ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারণ হয়েছে। প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে চা চাষের পরিধি। বর্তমানে স্টেট পর্যায়ে ৯টি, ক্ষুদ্রায়তন ১৫টি এবং সাড়ে ৪শ এরও বেশি ক্ষুদ্র চা চাষি পঞ্চগড় চা বোর্ডের তালিকাভুক্ত রয়েছে। তবে নিবন্ধনের বাইরে এখানে আরও কয়েক হাজার ছোট-বড় চা বাগান গড়ে উঠেছে। লাভের আশায় অনেক চাষি অন্য ফসল বাদ দিয়ে নিজের ১৫ থেকে ২০ শতক পর্যন্ত জমিতেও চা বাগান করেছেন।
স্থানীয় চা চাষিদের হিসেবে বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৫ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র কৃষক চা চাষ শুরু করেছেন। জেলার ১৫টি চা কারখানায় এসব ক্ষুদ্র চা চাষি তাদের নিজেদের জমিতে উৎপাদিত চায়ের কাঁচাপাতা বিক্রি করছেন। চলতি মৌসূমের শুরু থেকে কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে কাঁচাপাতার উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে হত্যাশ ক্ষুদ্র চা চাষি আর বাগান মালিকরা।
সরেজমিন বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষ করে কয়েক বছরে তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা চায়ের সবুজ পাতায় ভরে গেছে। এদের বেশির ভাগই ক্ষুদ্র পর্যায়ের চা চাষি। গত বছর এ সময়ে এসব চা চাষি কাঁচাপাতা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। শুধু সিন্ডিকেটের কারণে একই সময়ে বর্তমানে চাপাতা তারা ১১ থেকে ১২ টাকায় টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর মধ্যে আবার নানা অজুহাতে ওজনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পাতা কর্তন করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দিচ্ছেন কারখানা মালিকরা। কর্তন হিসেব করলে চা চাষিরা প্রতি কেজি চায়ের মূল্য পান ৯ থেকে ১০ টাকা। এ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছে চা চাষিদের মধ্যে।
তবে সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করে কারখানা মালিকরা জানায়, ভালো মানের চায়ের পূর্বশর্ত হলো দুটি পাতা একটি কুড়ি হিসেবে বাগান থেকে চা তুলতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে জেলা চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি কর্তৃক ৪ পাতা পর্যন্ত অনুমোদন করে। কিন্তু চা চাষিরা আট থেকে ১০ পাতা পর্যন্ত চা তুলে কারখানায় নিয়ে আসেন। তাই বাধ্য হয়ে নির্ধারিত ওজনের তুলনায় কিছু কর্তন করতে হয়। এছাড়া মান নিয়ন্ত্রণ না করায় চট্টগ্রামের অকশন মার্কেটে পঞ্চগড়ের চা তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর অকশন মার্কেটে পঞ্চগড়ের তৈরিকৃত চা কেজি প্রতি ২৪৩ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এবার দরপতন হয়ে সেই চা ১৩৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাড়ে চার থেকে পাঁচ কেজি কাঁচাপাতা থেকে এক কেজি তৈরিকৃত (মেড টি) চা হয়। কারখানায় এ চায়ের উৎপাদন খরচ ৫৩ টাকার মতো। সেই হিসাবে আমরাও লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছি। এখানে সিন্ডিকেটের কিছু নেই। চা চাষিরা মান ঠিক রেখে চা পাতা তুললে তৈরিকৃত চায়ের মান বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে অকশন মার্কেটে মূল্য বৃদ্ধি হলে আমরাও চায়ের কাঁচাপাতার মূল্য বাড়াতে পারবো।
এ নিয়ে কোনো কারখানা মালিক সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দিতে নারাজ। তবে তেঁতুলিয়ার গ্রিন কেয়ার এগ্রো লিমিটেট নামে একটি চা কারখানার ম্যানেজার মঞ্জুরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের অকশন মার্কেটে সিলেটের তৈরিকৃত চায়ের তুলনায় আমাদের চায়ের দাম কম। কারণ তারা যে নিয়ম মেনে বাগান থেকে চা উত্তোলন করে, আমরা সেই নিয়মের ধারের কাছেও নেই। আমাদের এখানকার ক্ষুদ্র চা চাষিরা হাতের বদলে কাঁচি দিয়ে আট থেকে ১০ পাতা পর্যন্ত ডালসহ কেটে কারখানায় নিয়ে আসেন। অথচ নির্ধারণ করা আছে চার থেকে সাড়ে চার পাতা পর্যন্ত। এজন্য আমরাও চায়ের মান ঠিক রাখতে পারছি না। সেই কারণে আমাদের চায়ের চাহিদা কমে গেছে। অকশন মার্কেটে আমাদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রি কমে গেছে। আমরা কারখানায় তৈরি করে বাজারে চা বিক্রি করতে পারছি না। এটার একমাত্র কারণ মান নিয়ন্ত্রণ না করা। চা চাষিরা ভালো মানের পাতা সরবরাহ করলে আমরা মূল্য নির্ধারণ কমিটির দর অনুযায়ী কাঁচাপাতা কিনব। সেক্ষেত্রে আমরাও ভালো মানের চা উৎপাদন করতে পারবো এবং অকশন মার্কেটে আমাদের চায়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু ক্ষুদ্র চা চাষিরা কারখানা মালিকদের এ অজুহাত মানতে নারাজ। তাদের দাবি, কারখানা মালিকরা নিয়ম না মেনে উত্তোলনকৃত চায়ের কাঁচাপাতা কেনা বন্ধ করে দিলে চা চাষিরা নিয়ম মেনে বাগান থেকে চা পাতা উত্তোলনে বাধ্য হবে। আমরাও কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য পাব এবং কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকবে না। কিন্তু কারখানা মালিকরা তাদের স্বার্থে এমন নিয়ম চালু করছেন না। তারা নানা অজুহাতে ক্ষুদ্র চা চাষিদের কাছে কম দামে চা কিনছেন। এতে তারা ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। সবকিছু বিবেচনা করেই জেলা প্রশাসনের মূল্য নির্ধারণ কমিটি কর্তৃক প্রতি কেজি চায়ের কাঁচাপাতা ১৬.৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সিন্ডিকেট করে কারখানা মালিকরা ১২ টাকার বেশি চা কিনছেন না। আর সিন্ডিকেটের সদস্যরা যাতে সমভাবে লাভবান হন, এজন্য তারা কৌশল করে মাঝে মধ্যে কারখানা ২/১ দিন বন্ধ রাখেন। এতে কম দামে সব কারখানাই চা পাতা কিনতে পারবে। এ প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেটের সদস্য প্রত্যেক কারখানা মালিক সমভাবে লাভবান হচ্ছেন।
গত বছর পঞ্চগড়ে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ৭০৪ কেজি কাঁচা চা পাতা থেকে ৭৮ লাখ ২২ হাজার ৮৮ কেজি তৈরিকৃত চা পাতা উৎপাদন করা হয়। প্রতি বছর চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসূমে এক কোটি কেজি তৈরিকৃত চা উৎপাদন হতে পরে বলে বলে জানায় স্থানীয় চা বোর্ড।
ক্ষুদ্র চা চাষিরা জানান, গত কয়েক বছরের হিসেবে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন বাগান থেকে চলতি মৌসূমে যদি চার কোটি কেজি কাঁচা চা পাতা উৎপাদন হয়। আর কমিটির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কারখানা মালিকরা যদি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেজি প্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা করে কম কিনতে পারেন। তাহলে সিন্ডিকেটের পকেটে শুধু এ হিসাব থেকেই ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা ঢুকবে। রয়েছে নানা অজুহাতে কর্তনকৃত চায়ের হিসাব। এছাড়া সবকিছু ঠিকঠাক হিসাব করলে মূল্য নির্ধারণ কমিটি চায়ের কাঁচাপাতার মূল্য আরও বৃদ্ধি করতে পারেন। কিন্তু কাঁচাপাতার মূল্য না বাড়িয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চা কারখানা মালিকরা ক্ষুদ্র চা চাষিদের বঞ্চিত করে কোটি কোটি টাকার মুনাফা করছেন। সিন্ডিকেটের এ মুনাফার অংশ দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করারও অভিযোগ রয়েছে।
এজন্য কারখানা মালিকরা তাদের ইচ্ছেমতো দর ঠিক করে চা পাতা কিনছেন। আর অন্য কোনো উপায় না থাকায় ক্ষুদ্র চা চাষিরা তাদের ঠিক করা দরেই চা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সঙ্গত কারণে কাঁচাপাতার মূল্য নিয়ে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরের পদক্ষেপ নেই। তবে এসব কারণে পঞ্চগড়ে সম্ভাবনাময় চা শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষিদের মধ্যেও দানা বাধছে ক্ষোভ। চা পাতার মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে আবারও তারা আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করছেন।
উপজেলার সদরের ডুডুমারি এলাকার ক্ষুদ্র চা চাষি বসিরুল আলম প্রধান বলেন, চায়ের মান নিয়ন্ত্রণের পুরোটাই নির্ভর করে চা কারখানা মালিকদর ওপর। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিম্নমানের চা পাতা কেনা বন্ধ করলে চা চাষিরা বাধ্য হয়ে বাগান থেকে নিয়ম অনুযায়ী চা উত্তোলন করবেন এবং মান ঠিক রেখেই কারখানায় দেবেন। কিন্তু কারখানা মালিকরা নিজেদের স্বার্থেই এমন নিয়ম চালু করছেন না। এছাড়া অকশন মার্কেটে পঞ্চগড়ের চায়ের দরপতনেও কারখানা মালিকদের কারসাজি রয়েছে। তারা চায়ের উৎপাদন মৌসূমের বাইরে (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) কম দামে নিম্নমানের কাঁচাপাতা সংগ্রহ করে নিম্নমানের চা তৈরি করেন। উৎপাদন মৌসূমে উৎপাদিত চায়ের সঙ্গে সেই নিম্নমানের চা মিলিয়ে অকশন মার্কেটে বিক্রি করেন। মূলত মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নয় মাস চা উৎপাদনের মৌসূম ধরা হয়। এর বাইরে বাগান থেকে চায়ের কাঁচাপাতা তোলা হলে সেটা চা উৎপাদনের উপযোগী থাকে না। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি তিন মাস (রেস্ট টাইম) চা কারখানাগুলো বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু আমাদের চা কারখানা সারা বছর চালু থাকে। মৌসূমের বাইরে নিম্নমানের কাঁচাপাতা কিনে তারা বিশেষ উদ্দেশ্যে নিম্নমানের চা তৈরি করেন। নিজেদের স্বার্থেই তারা চায়ের মান উন্নয়নে উৎসাহী নয়। আর এ নিম্নমানের অজুহাত দেখিয়ে আমাদের চা পাতার উপযুক্ত মূল্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হয়। শুরুতে বাগান করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে এখানে সাধারণ কৃষকরাও ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু করেন। আমরা ভেবেছিলাম, কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ক্ষুদ্র চা চাষিরা চা পাতার উপযুক্ত এবং প্রতিযোগিতামূলক দাম পাবেন। কিন্তু এখন ঘটছে উল্টোটা। বর্তমানে অকশন মার্কেটের দাম হিসাব করলেও এখানে চা পাতার দাম বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়ে ১১ থেকে ১২ টাকায় পাতা বিক্রি করছি। কারখানা মালিকরা পাতা না কিনলে আমাদের বাগান থেকে চা তুলে ফেলে দিতে হবে। তা নাহলে বাগান নষ্ট হয়ে যাবে। পাঁচ হাজারের মতো ক্ষুদ্র কৃষক পথে নামবে। মূলত এখানে চা শিল্পকে ধ্বংসের একটা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এ নিয়ে এখনি চা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছেন না।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামীম আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ কমিটির মাধ্যমে পঞ্চগড়ে চায়ের কাঁচাপাতার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৬ টাকা ৮০ পয়সা। একই সঙ্গে বাগান থেকে সাড়ে চার পাতা পর্যন্ত উত্তোলনের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু চাষিরা আগে থেকেই আট থেকে ১০ পাতা পর্যন্ত চা দিয়ে অভ্যস্ত। এজন্য অকশন মার্কেটের তৈরিকৃত চায়ের দরপতন ঘটেছে। যেসব চাষি মান ঠিক রেখে কারখানায় চা পাতা দিচ্ছেন, তারা মূল্য নির্ধারণ কমিটি কর্তৃক ১৬.৮০ কেজি দরেই বিক্রি করছেন। এর বাইরে কারও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, চায়ের মূল্য মূলত অকশন মার্কেটের মূল্যের উপর নির্ভর করে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাগান মালিক, ক্ষুদ্র চা চাষি এবং কারখানা মালিকদের নিয়ে সমন্বয় সভা করা হয়। সেখানে মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি বাগান থেকে সাড়ে চার পাতা পর্যন্ত উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু চা চাষিরা এখনও আট থেকে ১০ পাতা পর্যন্ত চা কারখানায় নিয়ে আসেন। কারখানা মালিকরাই অভিযোগ করেন, তাদের চা পাতা না কিনলে তারাই আন্দোলন শুরু করে। মূল চায়ের মান নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে চাষিরা ভালো দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে একটি মনিটরিং কমিটিও গঠন করা হয়েছে। মনিটরিং কমিটির রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, যারা মান ঠিক রেখে বাগান থেকে চা পাতা তুলছেন, তারা কেজি প্রতি নির্ধারিত ১৬.৮ টাকা পাচ্ছেন। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মানছেন না, এমন অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।।
-
চাষিদের ভুলেই চা পাতার দাম কমার অভিযোগ কারখানা মালিকদের
-
চাষিদের ভুলেই চা পাতার দাম কমার অভিযোগ কারখানা মালিকদের
-
চাষিদের ভুলেই চা পাতার দাম কমার অভিযোগ কারখানা মালিকদের
-
চাষিদের ভুলেই চা পাতার দাম কমার অভিযোগ কারখানা মালিকদের
-
চাষিদের ভুলেই চা পাতার দাম কমার অভিযোগ কারখানা মালিকদের
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
পুইশাক চাষ পদ্ধতি
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।
মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।
সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।
* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।
বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।
সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।
ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।
ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।
এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।
বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলোডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন