মেহেরুন নেসার বাড়ি রাজশাহী, থাকেন ঢাকায়। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে রান্নার অনুষ্ঠান করেন, লিখেছেন রান্নার একটি বইও।রাজশাহী অঞ্চলের জনপ্রিয় কয়েকটি খাবারের রেসিপি দিয়েছেন তিনি।
কাটোয়া ডাঁটার চচ্চড়ি
উপকরণ: কাটোয়া ডাঁটা (দেখতে সাধারণ ডাঁটার মতো, তবে এর স্বাদ মিষ্টি) ৪০০ গ্রাম, ঝিঙা ৩০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, আদাবাটা ২ চা–চামচ, রসুনবাটা ১ চা–চামচ, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া ১ চা–চামচ করে, ধনেগুঁড়া ১ চা–চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ২ টেবিল চামচ ও কাঁচামরিচ ৬টি।
প্রণালি: ডাঁটা ও ঝিঙা ২ ইঞ্চি করে কেটে ছিলে নিন। চুলায় একটি পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ ও সব মসলা দিয়ে কষিয়ে নিন। কষানো হয়ে এলে ডাঁটা ও ঝিঙ্গা দিয়ে আবার কষিয়ে নিয়ে স্বাদমতো লবণ ও ১ কাপ পানি দিয়ে দিন। পানি শুকিয়ে এলে চুলার আঁচ কমিয়ে কাঁচা মরিচ ছেড়ে দিন। একটু একটু মাখা মাখা হয়ে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
কালাই রুটি ও ভর্তা
রুটির উপকরণ: কালাইয়ের আটা ১ কাপ, লবণ সামান্য ও পানি পরিমাণমতো।
প্রণালি: কালাইয়ের আটা, লবণ ও পানি দিয়ে মেখে ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর আটা ভালো করে বেলে রুটি তৈরি করে নিন। এবার গরম তাওয়াতে ১ চা–চামচ তেল দিয়ে রুটির দুই পিঠ ছেঁকে নিন।
ভর্তার উপকরণ: পোড়া বেগুন আধা কাপ, পানি ঝরানো টক দই ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ, ধনেপাতাকুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, টালা জিরার গুঁড়া ১ চা–চামচের চার ভাগের এক ভাগ, কাঁচা মরিচকুচি ৪টি, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১ চা–চামচ।
প্রণালি: উপকরণ সব একসঙ্গে মাখিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে দই বেগুন ভর্তা।
রাজশাহীর পরিচিত রান্না
মাছের ঝোলে কালাই বড়ি
উপকরণ: রুই মাছ ৬ টুকরা, আলু ২টি, বেগুন আধা কাপ, কালাই ডালের বড়ি ৬টি, পেঁয়াজবাটা সিকি কাপ, হলুদ, মরিচ, জিরা ও ধনেগুঁড়া ১ চা–চামচ করে, আদাবাটা আধা টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ চা–চামচ, কাঁচা মরিচ ৭টি, লবণ স্বাদমতো, তেল সিকি কাপ ও ধনেপাতাকুচি সামান্য।
প্রণালি: মাছ লবণ দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। বড়ি শুকনা কড়াইয়ে সামান্য ভেজে ফুটন্ত পানিতে ধুয়ে নিন। আরেকটি কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ, আদা, রসুনবাটা ও হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনেগুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। এবার মাছ, আলু ও সামান্য পানি দিয়ে আবারও কষাতে থাকুন। কষানো হয়ে এলে ২ কাপ পানি ও বেগুন দিয়ে অপেক্ষা করুন। ঝোল ফুটে উঠলে বড়ি দিয়ে নেড়ে অল্প আঁচে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা দিয়ে একটু নেড়ে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে বড়ি দিয়ে মাছের ঝোল।
আম শোল
উপকরণ: শোল মাছের টুকরা ৬টি, কাঁচা আমের টুকরা ২টি, হলুদগুঁড়া আধা চা–চামচ, মরিচ, ধনে ও জিরার গুঁড়া ১ চা–চামচ করে, আদাবাটা আধা টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ, লবণ স্বাদমতো, মেথিগুঁড়া আধা চা–চামচ, চিনি ১ চা–চামচ, সরিষার তেল ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ।
প্রণালি: মাছ ধুঁয়ে পানি ঝরিয়ে লবণ ও হলুদ মেখে ভেজে নিন। এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ ভেজে হলুদ, মরিচ, ধনে, জিরাগুঁড়া ও সামন্য পানি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। এরপর আম দিয়ে আবার কষিয়ে নিয়ে এক কাপ পানি দিন। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছ, লবণ, চিনি ও মেথিগুঁড়া দিয়ে নেড়ে ৫ মিনিট দমে রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে আম শোল।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন