আমাদের দেশে সাধারণত মিষ্টি কুমড়ার কচি কাণ্ড, ঢগা এবং কুমড়া সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। বিভিন্ন ব্যাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সস তৈরিতে মিষ্টি কুমড়া ব্যবহার করে। তবে ইউরোপ ও আমেরিকায় মিষ্টি কুমড়া থেকে বিভিন্ন ফাস্টফুড তৈরি করা হয়। কুমড়া সহজলভ্য হওয়ায় আমাদের দেশেও বিভিন্ন খাদ্য তৈরি করে খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা যায়।
পাকা মিষ্টি কুমড়ার ফাস্টফুড: মিষ্টি কুমড়া দিয়ে নিম্নোক্ত ফাস্টফুডসমূহ তৈরি করা যায়-
মিষ্টি কুমড়ার আইসক্রিম: পাকা মিষ্টি কুমড়া থেকে আইসক্রিম তৈরি করার পদ্ধতি জেনে নিন-
উপকরণ:
১. ২ কাপ ভারি চাবকানি ক্রিম ২. ১-১/২ কাপ রেডিমেড মিষ্টি কুমড়া ৩. ১ কাপ বাদামি চিনি ৪. ১ চা চামচ পেস্ট আদা ৫. ১ চা চামচ পেস্ট দারুচিনি ৬. ১ চা চামচ ভ্যানিলার নির্যাস ৭. ১/৪ চা চামচ লবণ ৮. ১/৮ চা চামচ স্থল লবঙ্গ
উৎপাদন:
১. একটি বড় বাটি নিন তাতে ভ্যানিলার নির্যাস বাদে সবগুলো উপকরণ একসাথে করে একটি চামচ দ্বারা নাড়তে থাকুন যতক্ষণ চিনি দ্রবীভূত না হয়। এরপর উষ্ণ তাপে ৫-৭ মিনিট গরম করুন।
২. আইসক্রিম তৈরির জন্য ছাঁচ বিভিন্ন ক্রোকারিজের দোকান থেকে কিনে তাতে দুই-তৃতীয়াংশ আইসক্রিমের মিশ্রণ দ্বারা ভর্তি করে তা ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে হিমায়িত করুন।
৩. অবশিষ্ট মিশ্রণ অন্য একটি পাত্রে রেখে তাতে পরিমাণমত ভ্যানিলার নির্যাস মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করুন। তবে বরফে পরিণত করবেন না।
৪. এবার পরিবেশন করার কিছুক্ষণ আগে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করুন। যে পাত্রে পরিবেশন করবেন তার ওপর ছাঁচ থেকে আলাদা করে রাখুন। তারপর অবশিষ্ট ভ্যানিলার মিশ্রণ থেকে সামান্য অংশ তার ওপর দিয়ে পরিবেশন করুন। পরিবেশন করার পাত্রটি কাঁচের গ্লাস আকৃতির হলে ভালো হয়।
মিষ্টি কুমড়ার মাখন: নিম্নে মিষ্টি কুমড়ার মাখন তৈরির উপকরণ ও প্রস্তুত প্রণালি আলোচনা করা হলো-
১. ১-২ কেজি পাকা মিষ্টি কুমড়ার চামড়া ও ভেতরের আঁশ পরিষ্কার করে হালকা সেদ্ধ করার পর ব্লেন্ডার মেশিনে পেস্ট তৈরি করে নিন।
২. মিষ্টি কুমড়ার পেস্টের সাথে ২-৩ কাপ চিনি, ১-৪ কাপ মধু, ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
৩. হালকা শুষ্ক কড়াইয়ে গরম তাপ দিন। এরপর ১-৮ চা চামচ লবঙ্গ দিয়ে হালকা ভেজে নিন। তারপর উপকরণ মিশ্রিত কুমড়ার পেস্ট কড়াইয়ের উপর ছেড়ে দিন। স্বল্প তাপে ১০-১৫ মিনিট রাখুন ও ঘন ঘন নাড়তে থাকুন। রং ও ঘনত্বের পরিবর্তন হলে নামিয়ে ফেলুন। তৈরী হয়ে গেল মিষ্টি কুমড়ার মাখন।
৪. সকালের নাস্তা, বিস্কুট, রুটির সাথে পরিবেশন করুন। বায়ুরোধী কনটেইনারে করে ফ্রিজে রেখে ২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যাবে।
মিষ্টি কুমড়ার হালুয়া: এবার জেনে নিন মিষ্টি কুমড়ার হালুয়া তৈরির উপকরণ ও প্রস্তুত প্রণালি-
১. একটি মাঝারি সাইজের পাকা মিষ্টি কুমড়ার চামড়া ও ভেতরের আঁশ-বিচি ফেলে ছোট ছোট টুকরা করে হালকা সেদ্ধ করার পর ব্লেন্ডার মেশিনে পেস্ট করে নিন।
২. বাদামগুলো ভেজে খোসা ছাড়িয়ে রাখুন।
৩. হালকা শুকনা কড়াই গরম করে ঘি, তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচ দিয়ে হালকা ভেজে নিন। এরপর পেস্ট করা মিষ্টি কুমড়ার অংশ ঢেলে দিন। হালকা তাপ দিতে থাকুন। নারিকেল কুড়া, গুড়া দুধ, চিনি ও বাদাম মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। যখন বাদামি রং ও পানি শুকিয়ে আসবে, তখন নামিয়ে ফেলুন।
৪. এবার রুটি বা নাস্তার সাথে পরিবেশন করুন। বায়ুরোধী কনটেইনারে করে ফ্রিজে এটি ৭ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যাবে। তবে পরিবেশন করার আগে গরম করে নিন।
মিষ্টি কুমড়ার বীজের মসলা আচার: মিষ্টি কুমড়ার বীজ সাধারণ ভেজে ও সেদ্ধ করে বিভিন্ন মিক্সড ভেজিটেবলের সাথে খাওয়া হয়। এছাড়া বীজের মসলা আচার তৈরি করে খাওয়া যায়।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. আধা কেজি পাকা মিষ্টি কুমড়া থেকে বীজগুলো আলাদা করে হালকা বয়েল করুন। তারপর ঠান্ডা করে খোসাগুলো ছাড়িয়ে নিন।
২. ১ কাপ চীনা বাদাম ও ২-৪টি কাঁচামরিচ ব্লেন্ডার মেশিনে পেস্ট তৈরি করে নিন।
৩. সামান্য পরিমাণ মিষ্টি কুমড়া পাতলা করে কেটে তেলে সামান্য ভেজে নিন।
৪. ৪-৫টি গোল মরিচ বেটে নিন।
৫. শুকনা কড়াই গরম করে দারুচিনি, বয়েলকৃত মিষ্টি কুমড়ার বীজ, ২ চামচ চিনি, গোল মরিচ বাটা ও ব্লেন্ডারকৃত চীনা বাদাম মিশিয়ে কম তাপে নাড়তে থাকুন। ১০ মিনিট পর ভাজা মিষ্টি কুমড়া ও ২ টেবিল চামচ মাখন ছেড়ে নাড়তে থাকুন। বাদামি রং ধারণ করলে নামিয়ে ফেলুন। এবার গরম কমলে পরিবেশন করুন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন