আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

৭১ পয়সার কপালপোড়া কৃষকেরা

ফুলতলা গ্রামের কামরুজ্জামান একজন লেবুচাষি। এ বছর ৪০ কাঠা জমিতে কলম্বো জাতের লেবু আবাদ করে গাছে ফল আসার আগপর্যন্ত পরিচর্যা বাবদ তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা এবং তিনি এখন পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছেন ৬ লাখ টাকার লেবু। লেবু চাষ করে লাভবান হওয়া তো দূরের কথা, আদৌ পুঁজি উঠবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত কৃষক কামরুজ্জামান। কেননা, বর্তমানে বাজারে কামরুজ্জামানের মতো শত শত কৃষক প্রতি হালি লেবু ‘৭১ পয়সা’ বিক্রি করে ঘরে ফিরছেন। তাই কামরুজ্জামান হেসে হেসে বলেন, ‘আমরা হইলাম ৭১ পয়সার কপালপোড়া কৃষক।’

এক হালি লেবুর দাম ৭১ পয়সা শুনে অনেকে হয়তো বলতে পারেন, লোকটা পাগল হয়ে গেছে। কেননা, গতকালও রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ১০–১২ টাকা হালি লেবু কিনে বাসায় ফিরেছেন কেউ কেউ। আর সেখানে ৭১ পয়সা হালি লেবুর দাম বললে পাগল ছাড়া আর কী বলবে লোকে। আসলে ফুলবাড়িয়ার লেবুচাষিদের কপালটা এ বছর ৭১ পয়সার। অন্যদিকে মহাজনের ঋণের বোঝা, এনজিওর লোন ও সার–কীটনাশকের দোকানে বাকি এখন পর্যন্ত পরিশোধ করতে না পারায় চরম বিপাকে লেবুচাষিরা।বিজ্ঞাপন

মূল বিষয়টি ফুলতলা গ্রামের লেবুচাষি কামরুজ্জামানের কাছে জানা গেল। কামরুজ্জামানের ভাষ্য, একজন কৃষক তাঁর আবাদ করা এক বস্তা লেবু হাটে এনে দাম পান সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা। ১ বস্তায় লেবু থাকে কমপক্ষে ১ হাজার ৪০০টি। ১ হাজার ৪০০ লেবু (৩৫০ হালি) ৮০০ টাকা বিক্রি করা গেলে প্রতি হালি লেবুর দাম আসে ২ টাকা ২৯ পয়সা।

এক বস্তা লেবু কৃষকের হাটে আনতে খরচের ফিরিস্তিও বড়। ১ হাজার ৪০০ লেবু বাগান থেকে তুলে বস্তায় ভরতে শ্রমিকের মজুরি দিতে হয় প্রায় ৩৫০ টাকা। মাটির রাস্তা পেরিয়ে বাজারে সেই লেবুর বস্তা নিতে ভ্যানের ভাড়া দিতে হয় ১৫০ টাকা। একটি পাটের বস্তার দাম কমপক্ষে ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে লেবু বাজার বা হাটে আনতে কৃষকের কম করে হলেও খরচ হচ্ছে ৫৫০ টাকা। ১ হাজার ৪০০ লেবু বিক্রির ৮০০ টাকা থেকে কৃষকের ৫৫০ টাকা খরচ বাদ দিলে, পকেটে যাচ্ছে মাত্র ২৫০ টাকা। আর সেই ২৫০ টাকায় ১ হাজার ৪০০ লেবুর দাম হিসাব করলে প্রতিটি লেবুর দাম আসে মাত্র ৭১ পয়সা।বিজ্ঞাপন

এতে দেখা যায়, দিন শেষে কামরুজ্জামানের মতো লেবুচাষিরা তাঁদের আবাদ করা জমির লেবু হালি ৭১ পয়সায় বিক্রির টাকা পকেটে পুরে মলিন মুখে বাড়ি ফেরেন। কারও ভাগ্যে আবার তা–ও জোটে না, কখনো–সখনো আম–ছালা দুই–ই যায়।

*লেবুর দাম কমে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা
*বিদেশেও রপ্তানি হয় এনায়েতপুরের লেবু
*রাস্তাঘাট সংস্কারসহ বাজার তদারকির তাগিদ চাষিদের

এতক্ষণ বলছিলাম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পাইকারি লেবুর হাট এনায়েতপুরের কথা। শুধু এনায়েতপুর বললে ভুল হবে, ফুলবাড়িয়ার উপজেলার প্রায় সব গ্রামে কমবেশি লেবুর আবাদ হয়। বলা হয়ে থাকে, দেশের ভিটামিন সির অভাব বা ঘাটতি পূরণে লেবুর জুড়ি মেলাভার। আর সেই লেবুর একটি বড় অংশের চাহিদার জোগান আসে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার প্রান্তিক লেবুচাষিদের আবাদ করা জমির লেবু থেকে। এবার ভালো ফলনেও দরপতন, তাই হতাশ ফুলবাড়িয়ার লেবুচাষিরা। অন্যদিকে লেবুর দাম নেমে আসার পর তা থেকে খরচ বাদ দিলে আর কিছুই থাকে না কৃষকের। হাটের ইজারাদার মোশাররফ হোসেন জানান, এ লেবুর হাটে হাটবারে প্রায় কোটি টাকার লেবু বিক্রি হয়। তবে এবার লেবুর দাম আকস্মিক কমে যাওয়ায় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করছেন ইজারাদার।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ফুলবাড়িয়ায় একমাত্র লেবুর হাট এনায়েতপুর হাট। এ হাটে আশপাশের ৫ থেকে ৭টি ইউনিয়নের লেবুচাষিরা লেবু বিক্রি করতে আসেন।

গোপীনাথপুর, ফুলতলা, তালতলা, কৃষ্ণপুর এলাকার রাস্তাঘাট প্রচণ্ড খারাপ। এ এলাকার কৃষকদের লেবু হাটে বিক্রি করলে শেষে আর কিছুই থাকে না। তাই অন্ততপক্ষে সরকার যদি লেবু চাষের কথা চিন্তা করে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে, লেবু যাতে কাজে লাগানো যায়, পচে না যায়, তাহলে কৃষকেরা তাঁদের ন্যায্যমূল্য পাবেন, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।

এ বছর ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চাষিরা লেবুর ব্যাপক আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার উপজেলায় লেবুর ফলনও হয়েছে ভালো। লেবুর হাট এনায়েতপুরে বিভিন্ন জেলা থেকে এবং রাজধানী বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারেরা আসেন। লেবুর দাম কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাষিরা। অথচ অন্য বিভাগীয় জেলা কিংবা উপজেলা শহরে ১০ থেকে ১৫ টাকা হালি লেবু বিক্রি হলেও প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিরা তাঁর ফসলের ন্যায্যমূল্য তো দূরের কথা, নামমাত্র দামও জুটছে না তাঁদের কপালে। বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কৃষি বিপণনকেন্দ্রের তদারকির করার কথা থাকলেও তারা তা করছে না বলে জানান কৃষকেরা। ফলে বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কতিপয় সিন্ডিকেট চক্রের ফাঁদে পড়ে দিন দিন অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন কৃষকেরা।

বিক্রির পর পাইকারের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন কৃষক
বিক্রির পর পাইকারের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন কৃষক

উপজেলার একমাত্র লেবুর হাট এনায়েতপুরে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর পরিমাণে লেবুর আমদানি। পানির দরে বিক্রি হচ্ছে লেবু। আমদানির তুলনায় পাইকারদের চাহিদা কম থাকায় লেবুর ভালো দাম পাচ্ছেন না প্রান্তিক চাষিরা।

এনায়েতপুর লেবুর হাটে কথা হলেসাগরদীঘি ইউনিয়নের লেবুচাষি জয়নাল আবেদিন, কালাদহ ইউনিয়নের চান মিয়া, এনায়েতপুর ইউনিয়নের সমসের আলীসহ অনেক চাষিই জানান, এক বস্তায় (প্রায় ১ হাজার ৪০০) লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রতি বস্তা কৃষকদের খরচ হচ্ছে ৫৫০ টাকা। এক পাখি (৫৬ শতাংশ) জমির লেবু বিক্রি করে খরচ বাদে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা রোজগার হলেও এ বছর লেবুর দাম কম। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ৫০০ পাখির অধিক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লেবুর চাষ হয়। প্রথম দিকে চাহিদা থাকায় ভালো দাম পেলেও বর্তমানে লেবুর দাম একেবারেই কম।

তাঁরা বলেন, ‘মাঠে এক পাখি জমি লিজ গ্রহণ করতে জমিমালিকদের এককালীন দুই বছরের টাকা দিতে হয়। আমাদের এলাকায় পাখিপ্রতি জমির লিজ বাবদ মালিকেরা ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। পরবর্তী সময়ে জমি পরিপাটি করতে হয়, শেষে চারা রোপণ করতেও অনেক খরচের সম্মুখীন হতে হয়। এরপর লেবুর সঠিক দাম না পেলে উৎপাদন খরচ উঠবে না। ফলে আমাদের অনেক বড় লোকসানে পড়তে হবে।’ কৃষিঋণের পাশাপাশি কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলেন প্রান্তিক চাষিরা।
এ ছাড়া এনায়েতপুর ইউনিয়নের আবদুল মোতালেব, হেলাল উদ্দিন ও আবদুস সালামের অভিযোগ, ‘কদিন আগেও লেবুর বাজার ভালো ছিল। হঠাৎ বাজার কমে গেছে। আজ যে লেবু বেচেছি, তাতে ভ্যান ভাড়ার টাকা উঠবে না। সরকারের কাছে আমরা ঋণসহায়তা চাই, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কৃষিতে ভর্তুকি চাই।’বিজ্ঞাপন

এনায়েতপুর হাটের লেবু ব্যবসায়ী মোতালেব, আলাল উদ্দিন, শাফিক ইসলাম ও মোশারফ হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর এ অঞ্চল থেকে লেবু পার্শ্ববর্তী জেলা সিলেট, টাঙ্গাইল, বরিশাল, খুলনাসহ রাজধানী ঢাকায় রপ্তানি হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে আগের বছরের মতো বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না। লেবুর চাহিদা কম থাকায় আমরা বেশি লেবু ক্রয় করছি না। বাজারে চাহিদার তুলনায় লেবুর আমদানি বেশি থাকায় কম দামে কিনতে পারছি। আমাদের পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই।’

দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাবে এবং থেমে থেমে বিধিনিষেধের জাঁতাকলে এবার লেবুর বাজারে চরম দরপতনের প্রভাব পড়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের। যে কৃষক পাথরের মতো কঠিন মাটির বুক চিড়ে নিজের ভাগ্যকে রোপণ করে এসেছিলেন দিনবদলের আশায়, আজ সেই ঘামঝরা কৃষকের ফলন হাটে মাত্র ৭১ পয়সায় বিক্রির টাকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে।

ফুলবাড়িয়া উপজেলার অধিকাংশ মৌসুমি সবজি ও ফলচাষিরা বেসরকারি সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণের টাকায় সবজি উৎপাদন করেন। ফলে এখন তাঁরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এভাবে বাজারদর চলতে থাকলে সামনের মৌসুমে লেবুর চাষাবাদ কৃষক আদৌ করবেন কি না, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের মানুষ ভিটামিন সির অভাব পূরণের জন্য যে লেবু খাবার হিসেবে খায়, তার প্রায় ৪০ শতাংশই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নে চাষ হয়। তবে রাঙ্গামাটিয়া, কালাদহ, নাওগাঁও, পুঁটিজানা, ভবানীপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়েছে লেবুর আবাদ।

বিগত সময়ে কলম্বো জাতের লেবু চাষে ভালো লাভ হওয়ায় এ লেবুর চাষ হয় বেশি। পাশাপাশি সিডলেস ও কাগজিলেবুর আবাদও হয়। উপজেলার সব লেবুচাষির একই অবস্থা লক্ষ করা গেছে। করোনার প্রভাবে বিধিনিষেধ থাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার না আসা, সবজি কিংবা লেবু উৎপাদন করা ইউনিয়নগুলোতে মাটির কাঁচা রাস্তা থাকায় যথাযথ পরিবহনব্যবস্থার অভাব, পর্যাপ্ত সার–কীটনাশকের ঘাটতি, কৃষিবিষয়ক পরামর্শের অভাবের কারণে কৃষিতে চরমভাবে প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হয় এ উপজেলার কৃষকদের।

এ ছাড়া রাস্তাঘাটে এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে। কৃষক তাঁর প্রয়োজনীয় ইউরিয়া সার ও কীটনাশক সময়মতো পান না, এ নিয়ে কৃষি বিভাগে অভিযোগ করেও সুফল পান না বলে অভিযোগ কৃষকদের। করোনার সময় কৃষককে আম, লিচু, কলা, লেবুসহ মৌসুমি সবজি বিক্রি করতে বিপাকে পড়তে হয়। তাই সরকারের কাছে প্রান্তিক লেবুচাষিদের চাওয়া, কৃষক যেন তাঁর আবাদ করা ফসলের দামটা পান, তার পণ্যগুলো যেন সিন্ডিকেটের কবলে না পড়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, সে ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন করা হয়।বিজ্ঞাপন

উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের পাহাড় অনন্তপুর, এনায়েতপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর, ফুলতলা, বাক্তা ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, শ্রীপুর, কালাদহ ইউনিয়ন এবং পুঁটিজানা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, লেবুর বাজার কমে চরম বিপাকে কৃষকেরা। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে বিধিনিষেধ থাকায় কৃষক তাঁর আবাদ করা লেবু নিতে পারেননি, পাশাপাশি বাজারে পাইকার না থাকায় ন্যায্যমূল্যওও পাচ্ছেন না চাষিরা।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে লেবুর চাষ থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশে পুষ্টিঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সমস্যা দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নামের তালিকা করে তাঁদের প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে লেবু চাষে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

লেবুচাষিদের এমন ভয়াবহ সংকটকালে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগসহ স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি সবজিচাষিদের সবজি বিক্রি এবং তাঁদের ঘাটতি নিরসনে কোনো প্রকার তদারকি করছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের। যদিও প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাঠপর্যায়ে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লক সুপারভাইজার বা কৃষি উপসহকারীদের ফসলের মাঠে কৃষকের ফসলের খোঁজ নিতে আসার কথা থাকলেও সময়মতো তাঁদের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ কৃষকদের। অন্যদিকে বিভিন্ন মানহীন কীটনাশক কোম্পানি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুলিয়ে-ভালিয়ে মানহীন কীটনাশক হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকাপয়সা।

ফুলবাড়িয়া উপজেলায় এ বছর প্রায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয় বিভিন্ন মৌসুমি ফলের। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে। সম্প্রতিকালে প্রায় দ্বিগুণ দাম কৃষককে দিয়ে কৃষি অফিসের মাধ্যমে এনায়েতপুর ইউনিয়ন থেকে ১০ টন লেবু ইউরোপে রপ্তানি করা হয়েছে, এমন তথ্য নিশ্চিত করেন এনায়েতপুর ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী আবু রায়হান।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পাইকারি লেবুর হাট এনায়েতপুর হাটে প্রতিদিন লাখ টাকার লেবু বেচাকেনা হয়
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পাইকারি লেবুর হাট এনায়েতপুর হাটে প্রতিদিন লাখ টাকার লেবু বেচাকেনা হয়

এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, ‘লেবুর চাহিদাটা মূলত নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর, যদি গরম থাকে, লেবুর চাহিদা বাজারে বেশি থাকে। আর যদি ঠান্ডা কিংবা বর্ষা–বৃষ্টি থাকে, চাহিদা কমে যায়। তখন লেবুর দাম তুলনামূলক কম থাকে। তবে এবার যে লেবুর দাম ফুলবাড়িয়ার কৃষকেরা পাচ্ছেন, তা অকল্পনীয়। কৃষকদের প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমার মতে, এর পেছনে বাজার সিন্ডিকেট দায়ী থাকতে পারে। কারণ, আমি নিজেও বাজার থেকে ১৫ টাকা হালি লেবু কিনে খেয়েছি। তাহলে কৃষককে এত লোকসান দিয়ে কেন বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই শুধু কৃষি বিভাগের সমাধান করতে পারবে না। আমার মতে, এর জন্য প্রয়োজন সরকারের লেবুর জন্য আলাদা নির্ধারিত মূল্যতালিকা করা এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি বিপণনকেন্দ্র রয়েছে বাজারজাত নিয়ন্ত্রণের জন্য। সেগুলোও আবার জেলা পর্যায়ে সব সময় প্রান্তিক পর্যায়ে মনিটরিং করতে না পারায় সিন্ডিকেট চক্রগুলো সক্রিয় থাকে সব সময়। পাশাপাশি কৃষিপণ্য সময়মতো বাজারে আনার জন্য ভালো রাস্তাঘাটের প্রয়োজন রয়েছে।’

জেসমিন নাহার আরও বলেন, ‘আমরা ইউরোপে এনায়েতপুর ইউনিয়নের ১০ টন লেবু বিক্রি করেছি। করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। আশা করছি কিছুদিন পর আবার চালু হবে, তখন লেবুর বাজার আরও চাঙা হবে। আপাতত লেবুতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নামের তালিকা কিংবা ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি।’

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com