এগ্রোবিজ
৩৩ লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের পরিকল্পনা
লেখক
বণিক বার্তাখাদ্যশস্যের ঘাটতি মোকাবেলায় চলতি অর্থবছরেই চাল আমদানিতে ফিরেছে সরকার। আগামীতে এর পরিমাণ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এজন্য নেয়া হয়েছে শুল্ক হ্রাসসহ নানা উদ্যোগ। আগামী অর্থবছরে খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ টনেরও বেশি। আমদানি ও অভ্যন্তরীণ উভয় উৎস কাজে লাগিয়ে আগামী অর্থবছরে ৩৩ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে চায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে আমদানি বাড়ানোতেই জোর দেয়া হচ্ছে বেশি। এছাড়া ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এজন্য আগামী অর্থবছরে বাড়তি বরাদ্দ চায় খাদ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে অর্থ বিভাগে এরই মধ্যে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে।
দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ কমছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ নেমে এসেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশে। অন্যদিকে উৎপাদনও কমছে। চালের দাম বাড়ছে টানা কয়েক মাস ধরে। সব মিলিয়ে দেশে এখন খাদ্যশস্যের ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ রয়েছে ৬ লাখ ২ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ও গমের মজুদ রয়েছে যথাক্রমে ৫ লাখ ২১ হাজার ও ৮১ হাজার টন। অথচ গত বছরেও মার্চের মাঝামাঝিতে দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১৭ লাখ ৫১ হাজার টন। এ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে খাদ্যশস্য সংগ্রহের মোট লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৩৩ লাখ ১০ হাজার টন। অন্যদিকে খাদ্য অধিদপ্তর ও এফপিএমইউর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত পাঁচ অর্থবছরে গড়ে ২৬ লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করেছে সরকার।
আগামী অর্থবছরে খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্য বাড়ানো হলেও আমদানির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে তা চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে। বিশেষ করে চালের আমদানিতে মনযোগ দেয়া হচ্ছে বেশি। চলতি অর্থবছরে সরকারের চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ১০ লাখ টন। সর্বশেষ ১৫ মার্চ পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টন। দ্রুত আমদানি বাড়াতে এরই মধ্যে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এজন্য শুল্কহারও কমানো হয়েছে বড় মাত্রায়।
অন্যদিকে সরকারিভাবে চাল আমদানির গতি বাড়াতে টেন্ডারের সময়সীমা কমানো হয়েছে প্রায় এক মাস। এছাড়া সরকারি আমদানিতে বৈচিত্র্য আনতে উেসরও বহুমুখীকরণ হচ্ছে। গত কয়েক মাসে চাল আমদানির সিংহভাগ এসেছে ভারত থেকে। তবে একক বাজারের ওপর নির্ভরশীলতার ঝুঁকি এড়াতে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকেও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আদতে খাদ্যশস্যের মজুদ নিয়ে কোনো ধরনেরই ঝুঁকি নিতে চাইছে না সরকার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও সম্প্রতি বলেছেন, একক দেশের ওপর নির্ভর থাকলে তারা কোনোভাবে সরবরাহে ব্যর্থ হলে ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। তাই ঝুঁকি এড়াতে তিনটি দেশ থেকে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রধান সমস্যা দুটি। প্রথমত, সরকারের চাল সংগ্রহের জন্য মিলারদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা। অনেক ক্ষেত্রে মিলাররা চাল না দিলে সরকারের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। গত বোরো ও চলতি আমন মৌসুমেও সরকারের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ কারণেই এখন খাদ্যশস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আনছে সরকার। সংগ্রহের চেয়ে আমদানি বাড়ানোতেই জোর দেয়া হচ্ছে বেশি। চাল সংগ্রহে এখন আর এককভাবে মিলারদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চায় না সরকার। এজন্য জিটুজির ভিত্তিতে চাল আমদানির ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় বড় সমস্যা হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন মজুদাগারের অভাবের কথা। দেশে বর্তমানে সব মিলিয়ে খাদ্যশস্যের মজুদ সক্ষমতা প্রায় ২০ লাখ টন। এ কারণে চাইলেও এর অতিরিক্ত খাদ্যশস্য মজুদ করা সম্ভব হয় না। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চলতি ও আগামী অর্থবছরে নতুন কয়েকটি সাইলো ও মজুদাগার উদ্বোধন হচ্ছে। এতে দেশের খাদ্যশস্য মজুদ সক্ষমতা অনেকটাই বাড়বে। এ কারণে সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোও সম্ভব হচ্ছে।
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বণিক বার্তাকে বলেন, মজুদ বাড়ানোর জন্য সব ধরনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আমদানি উভয় বাজার থেকে সংগ্রহের প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে। চাল ও গম আমদানিতে বাজার বহুমুখী করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করলে বাজারে মূল্য আরো বেড়ে যাবে। তাই আমরা স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ না করে আমদানি করছি। চাল-গম আমদানি করে আমরা আমাদের মজুদ বাড়াব। পাশাপাশি আগামী বোরো মৌসুমে যে ধান উৎপাদন হবে, সেখানে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে ধান সংগ্রহ করা হবে। সেজন্য আমরা আমাদের মজুদের ধারণক্ষমতা পর্যায়ক্রমে বাড়াচ্ছি। প্রতি বছরই গম আমদানি করলেও উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলে চাল সেভাবে আমদানি করা লাগে না। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদন কম হলে চালও আমদানি করতে হয়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফসল ঘরে এলে আমাদের কোনো সংকট থাকবে না। তবে কার্যকর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও অধিক সতর্কতার জন্য আমরা চাল আমদানি করছি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ লাখ ৫১ হাজার টন। পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৯ লাখ ৭১ হাজার টনে উন্নীত করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছরের সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে, সেটা ঠিক আছে। তবে শুধু লক্ষ্যমাত্রা ধরলে হবে না, তা অর্জন করার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চলতি বছরেও অনেক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু সরকার বোরো-আমন কোনোটিতেই লক্ষ্য অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ নির্ভর করে উৎপাদনের ওপর। এখন উৎপাদন কেমন হবে, সেটাও দেখার বিষয়। বর্তমানে চালের বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, সেটা আগামী এপ্রিলের আগে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। কারণ এপ্রিলে বোরো চাল উঠলে তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমাদের যখন আমন উৎপাদন কম হলো, আমরা ঠিক সময়ে আমদানি শুরু করতে পারিনি। চাল আমদানির অনুমোদন মিলেছে গত আগস্টে। যদিও তা শুরু হয়েছে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। এ অবস্থাটা চালকল মালিকরা বুঝতে পেরে সিন্ডিকেট করে চালের বাজারটা অস্থির করে তুলেছেন।
পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আগামীতে সঠিক সময়ে সঠিক উদ্যোগ নেয়ার পাশাপশি বাজারে চাল সরবরাহ বাড়াতে আমদানিতে শুল্ক আরো কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
খাদ্য মন্ত্রণালয় এখন শস্য আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ওএমএসসহ খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। এজন্য মজুদ বাড়ানোর পাশাপাশি আগামী অর্থবছর এসব কর্মসূচির আওতায় ১৪ লাখ ৩০ হাজার টন চাল বিতরণ করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খাদ্যের মজুদ বাড়াতে আগামী অর্থবছরে দেশের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দেড় লাখ টন ধারণক্ষমতার ১৬২টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সারা দেশে আধুনিক মানের ৫ লাখ ৩৫ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্টিং সাইলো নির্মাণ করা হচ্ছে। চালু করা হচ্ছে জনগণের মধ্যে খাদ্য বিতরণের ডিজিটাল পদ্ধতি। এজন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ চেয়েছে মন্ত্রণালয়টি। এছাড়া আগামী অর্থবছর নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি সিএসডি নির্মাণ ও খাদ্যশস্যের পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে প্রিমিক্স কার্নেল মেশিন ও ল্যাবরেটরি স্থাপনেরও চিন্তা করা হচ্ছে। এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আগামী অর্থবছরে ২০ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
কাঁঠালের আইসক্রিম জ্যাম ও চিপস
-
পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক
-
টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ
-
গো-বর্জ্য থেকে শুরু করুন এই চার ব্যবসা, আয় হবে লক্ষাধিক
-
ওষধি উদ্ভিদ কালমেঘ চাষে ব্যাপক আয়
-
নির্দিষ্ট পুঁজিতে মিশ্র চাষে কৃষকদের ব্যাপক আয়ের সুযোগ
-
কেমন হবে আগামীর কৃষি:
-
সুদান ঘাস চাষ করবেন যেভাবে
-
৩ অর্থবছরে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া-কুচিয়া রপ্তানিতে আয় প্রায় ৯৮৯ কোটি টাকা
চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।
মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।
সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।
* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।
বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।
সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।
ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।
ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।
এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।
বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলোডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন