জীবিকার সন্ধানে প্রতি বছর লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসে পাড়ি জমান। যারা বিদেশে যান তাদের বেশিরভাগই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন। একটু আর্থিক সচ্ছলতার জন্য ও দেশে অবস্থানরত বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে তারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেন না।
কেউ দু-চার বছর পর ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন সবার সঙ্গে কাটিয়ে আবার ফিরে যেতে হয় প্রবাসে। কিন্তু কারও কারও ভাগ্যে দেশে আর জীবিত ফিরে আসা সম্ভব হয় না। কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় কিংবা জটিল রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করেন। আত্মীয়-স্বজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় সরকারি খরচে তাদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। বিমানবন্দর থেকে লাশ পরিবহন ও দাফনসহ আর্থিক ক্ষতিপূরণও প্রদান করে সরকার।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৩৮ হাজার ২৪ জনের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আর চলতি বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এক হাজার ৬৯৮ জন প্রবাসীকর্মীর লাশ দেশে ফেরত আসে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীকর্মীর লাশের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি লাশ মাত্র দুটি দেশ-সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া থেকে এসেছে।
জানা গেছে, দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট) প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে যেকোনো প্রবাসীকর্মীর মৃতদেহ দেশে আসলে তাদের লাশ পরিবহন ও দাফন সম্পন্ন করার জন্য ৩৫ হাজার এবং আর্থিক সাহায্য হিসেবে তিন লাখ টাকা করে দেয়া হয়।
বছরওয়ারি (১৯৯৩ থেকে জুলাই ২০২০) পরিসংখ্যানে ফেরত আসা প্রবাসীকর্মীদের মৃত দেহের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৩ জন, ১২৮ জন, ২৪১ জন, ১৯৯ জন, ২৭৪ জন, ২৪৮ জন, ২৮৮ জন, ৪১২ জন, ৩৮৫ জন, ৫৯৭ জন, ৫১৯ জন, ৭১৬ জন, ৬৯১ জন, ৭১৮ জন, ৯৬৬ জন, এক হাজার ১৩৩ জন, এক হাজার ৩৬৪ জন, দুই হাজার ২১২ জন, এক হাজার ৮৬৯ জন, দুই হাজার ২০১ জন, দুই হাজার ৪১৯ জন, দুই হাজার ৭১৮ জন, দুই হাজার ৬৯৫ জন, দুই হাজার ৯৫১ জন, তিন হাজার ২৬৩ জন, তিন হাজার ৬৭৬ জন, তিন হাজার ৬৫৮ জন এবং এক হাজার ৪৩০ জন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট এক হাজার ৬৯৮ জন প্রবাসীকর্মীর লাশ ফেরত আসে। মোট লাশের মধ্যে জানুয়ারিতে ২৯৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৯ জন, মার্চে ১৪০ জন, এপ্রিলে ১৬ জন, মে-তে ১১৬ জন, জুনে ২৮২ জন, জুলাইয়ে ৩১০ জন এবং আগস্টে ২৮০ জন প্রবাসীকর্মীর লাশ দেশে ফেরত আসে।
বিভিন্ন দেশের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৪৫৪ জন, মালয়েশিয়া ৪২৯ জন, কুয়েত ১৬৯ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৬৯ জন, বাহরাইন ৪৭ জন, কাতার ১০০ জন, ওমান ১৭০ জন, সিঙ্গাপুর ১৯ জন, জর্দান ১৫ জন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুইজন, দক্ষিণ আফ্রিকা ১১ জন, ইতালি ১৭ জন, লেবানন ২৯ জন, গ্রিস চারজন, অস্ট্রেলিয়া একজন, মালদ্বীপ ১৫ জন, মরিশাস পাঁচজন, স্পেন চারজন, ইরাক ১৬ জন, তুরস্ক একজন, ব্রাজিল তিনজন, ব্রুনাই একজন, বেলজিয়াম দুইজন, মিশর তিনজন, লিবিয়া চারজন, দক্ষিণ কোরিয়া দুইজন, জাপান একজন ও অন্যান্য দেশ থেকে পাঁচজন প্রবাসীকর্মীর লাশ ফেরত এসেছে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপ-পরিচালক (গবেষণা, পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ) জাহিদ আনোয়ার বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের কেউ মারা গেলে তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। লাশ ফিরে এলে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে লাশটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাশ দাফনের জন্য ৩৫ হাজার ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে তিন লাখ টাকার চেক দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় প্রবাসী শ্রমিকদের লাশ বিগত বছরগুলোর তুলনায় কম এসেছে।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন