ইসলাম
হাটহাজারী মাদ্রাসা: আহমদ শফীর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে যে কারণে
লেখক
বিবিসি বাংলাবাংলাদেশে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামীর আমীর আহমদ শফীর ত্রিশ বছরেরও বেশি সময়ের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জ এসেছে তারই অনুসারী জুনায়েদ বাবুনগরীর পক্ষ থেকে।
মি: শফীর ছেলে আনাস মাদানী অভিযোগ করেছেন, গত দু’দিনে মি: বাবুনগরীর সমর্থক ছাত্ররা এবং কিছু বহিরাগত বিক্ষোভ করে মাদ্রাসাটির দখল নিয়েছিল।
মি: বাবুনগরীর পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।
তবে বিক্ষোভকারীরা মি: শফীকে মাদ্রাসার প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দেয়া সহ ছয় দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট বিলি করেছিল।
বিক্ষোভ থেকে মি: শফী এবং তার সমর্থক শিক্ষকদের কক্ষে ভাঙচুর এবং একজনকে মারধোরের ঘটনাও ঘটে।
বিক্ষোভের মুখে মি: শফীকে হাজির করে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির বৈঠক করা হয় এবং সেই বৈঠকের পর আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতিও দেয়ার কথা জানানো হয়।
শেষপর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দেয়।
একচ্ছত্র কর্তৃত্ব
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ১২৪ বছরের পুরনো এই মাদ্রাসার নাম হচ্ছে, জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম।
মি: শফী এই মাদ্রাসায় প্রিন্সিপাল এবং একইসাথে পরিচালকের দায়িত্ব পান ১৯৮৯ সালে। এর আগে ২০ বছরেরও বেশি সময় তিনি সেখানে শিক্ষকতা করেছেন।
মাদ্রাসাটির একজন সাবেক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বেশ কয়েক বছর আগে তাকে অসম্মান করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেছেন, মি: শফী যখন প্রধানের দায়িত্ব পালন শুরু করেন, তখন মাদ্রাসার বেশিরভাগ শিক্ষকই তার ছাত্র ছিলেন। ফলে তারা মি: শফীর কোন সিদ্ধান্ত বা কর্মকাণ্ড কখনও চ্যালেঞ্জ করতেন না।
এছাড়া ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মি: শফীর ছেলে আনাস মাদানী মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান।
সাবেক ঐ শিক্ষক আরও জানিয়েছেন, একদিকে বেশিরভাগ শিক্ষকের পক্ষ থেকে কোন চ্যালেঞ্জ ছিল না, অন্যদিকে ৯০-এর দশকের শেষদিকে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব বাড়তে থাকায় দেশের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসার প্রধান হিসাবে মি: শফীর একটা গুরুত্ব এবং ভাবমূর্তি তৈরি হয়।
এ সবের সুযোগ নিয়ে পরিস্থিতির কারণে মাদ্রাসাটিতে মি: শফী এবং তার ছেলে মি: মাদানীর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব গড়ে ওঠে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, মাদ্রাসা পরিচালনার যে কমিটি রয়েছে, যাকে শূরা বলা হয়, ২০০০ সাল থেকে ১৬ বছর সেই কমিটির কোন বৈঠক করা হয়নি। একক নেতৃত্বে ছাত্র ভর্তি এবং শিক্ষক নিয়োগ ও অপসারণসহ সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সে কারণে কর্তৃত্ব বা মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল দীর্ঘ সময় ধরে। এখন তারই প্রকাশ ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন।
রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্র?
মি: মাদানী একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বা স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, মাদ্রাসার কোন কাজ একক সিদ্ধান্তে হয়নি এবং কোন ক্ষেত্রে অনিয়ম নেই।
তিনি দাবি করেছেন, মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে স্বচ্ছতার সাথে সব কাজ হয়েছে।
তিনি এখনকার ঘটনার পিছনে রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
“১৯৮৫ সালে একটা অপশক্তি মাদ্রাসা দখল করার জন্য হামলা করেছিল এবং তখন একজন নিহতও হয়েছিল। সেই ঘটনায় তখনকার মুরব্বীরা সামাল দিয়েছিলেন।
”সেই পরাজিত শক্তি এখন আবার অনেকদিন ধরে হাটহাজারীর মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে দখল নেয়ার পরিকল্পনা করছিল। তারাই মাদ্রাসার একজন শিক্ষকের সমর্থনে বহিরাগতদের নিয়ে সহিংসতা চালিয়েছে,” বলছেন মি. মাদানী।
মি: মাদানী রাজনৈতিক প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, “যখন আলেম ওলামাদের সাথে সরকারের একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তখন তা নস্যাৎ করার জন্য দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী এটা করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য আন্দোলনের নামে মাদ্রাসায় ভাঙচুর এবং অনেক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।”
তিনি অভিযোগ করেছেন, বিক্ষোভে তার বহিষ্কারের দাবি করা হলেও এর মূল টার্গেট মাদ্রাসাটির পরিবেশ নষ্ট করা।
তার একজন সমর্থক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কিছু ছাত্রকে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছে এবং মাদ্রাসায় আন্দোলনের পিছনে কোন উগ্রগোষ্ঠী এবং সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদত রয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
দ্বন্দ্ব কোথায়?
মাদ্রাসাটির একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেছেন, আহমদ শফীর বয়স একশ’র বেশি হয়েছে। বয়সের ভারে তিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে কোন কর্মকাণ্ড চালাতে পারছেন না। ফলে তার উত্তরসূরি কে হবেন- এই প্রশ্নে অনেকদিন ধরেই মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে নানা আলোচনা ছিল।
তিনি জানিয়েছেন, মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক জুনায়েদ বাবুনগরীকে ২০১৭ সালে সহকারী পরিচালক করা হয়েছিল। তিনিই উত্তরসূরি হতে পারেন-এমন একটা আলোচনা ছিল। কারণ তাকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিবও করা হয়েছিল।
কিন্তু ঐ সিনিয়র শিক্ষক মনে করেন, আনাস মাদানীর পরামর্শে মি: শফী মাদ্রাসার সাবেক একজন শিক্ষক শেখ আহমদকে আবার ফিরিয়ে আনেন। তখন এটা স্পষ্ট হয় যে মি: বাবুনগরীকে ঠেকানোর জন্য তাকে আনা হয়েছে। এনিয়ে মি: বাবুনগরী এবং তার সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল।
গত এপ্রিল মাসে মি: বাবুনগরীকে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে শেখ আহমদকে সেই পদে বসানো হয়। সে সময়ও মাদ্রাসায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তা তখন প্রকাশ হয়নি।
পরে রমযানের মধ্যেও একই ইস্যুতে উত্তেজনা দেখা দিলে তখন দুই পক্ষ আলোচনার পর মি: মাদানী এবং মি: বাবুনগরী ছাত্রদের সামনে একসাথে ঘোষণা করেছিলেন যে, তাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই।
কিন্তু এখন দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয় ব্যাপকভাবে।
যদিও মি: বাবুনগরীর সমর্থক হিসাবে পরিচিত মাদ্রাসাটির একজন শিক্ষক আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেছেন, ছাত্রদের বিক্ষোভের সাথে মি: বাবুনগরী বা তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ভর্তিসহ নানা ক্ষেত্রে হয়রানির জন্য মি: মাদানীর প্রতি ক্ষোভ থেকে ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
মি: মাদানী এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, উগ্র কোন গোষ্ঠী এবং বাইরের মদতে তার বাবার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা হচ্ছে এবং বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজনীতি আছে কিনা?
মাদ্রাসাটির পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ডের কারণে রাজনীতিও একটা বিষয় হয়েছে দ্বন্দ্বের পিছনে।
তিনি আরও বলেছেন, ২০০৯ সালে হেফাজতে ইসলাম যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রামে আঞ্চলিক পর্যায়ে। ২০১৩ সালে বিভিন্ন দাবি নিয়ে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হলো।
এরপর হেফাজতে ইসলাম এবং আহমদ শফী এবং আনাস মাদানীর সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়।
সেই প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড নিয়েও মি: শফীর সাথে জুনায়েদ বাবুনগরী এবং তার সমর্থকদের দ্বন্দ্ব আরও বাড়তে থাকে।
পরিচালনা কমিটির ঐ সদস্য মনে করেন, মি: বাবুনগরী সরকার বিরোধী অবস্থানের হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
মি: শফীর সমর্থকদের পক্ষ থেকে মি: বাবুনগরীর বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াতের সম্পৃক্ত রাখার অভিযোগ করা হয়। যদিও তিনি তা বিভিন্ন সময় অস্বীকার করেছেন।
তবে মাদ্রাসার একজন সাবেক শিক্ষক মনে করেন, মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সাথে বাইরের রাজনীতি এবং ব্যক্তিস্বার্থের কারণেও সেখানে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে এবং এখন পরিস্থিতি অস্থির হয়েছে।
মাদ্রাসাটির গুরুত্ব
দেশে সবচেয়ে বড় এই কওমি মাদ্রাসায় সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
অন্য কওমি মাদ্রাসাগুলোর বেশিরভাগই হাটহাজারীর এই মাদ্রাসার নির্দেশনা অনুসরণ করে থাকে।
একাডেমিক দিক থেকে এর গুরুত্ব রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, দুই দশক ধরে বিভিন্ন সরকার বা বড় রাজনৈতিক দলগুলোও হাটহাজারীর এই মাদ্রাসাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে এর একটা রাজনৈতিক গুরুত্বও অনেক সময় দৃশ্যমান হয়েছে।
বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালে লংমার্চ এবং ঢাকা অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছিল।
সংগঠনটি তখন কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ সহ ১৩ দফা দাবি তুলেছিল।
সেই হেফাজতে ইসলামের আমীর হচ্ছেন আহমদ শফী এবং মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।
২০১৩ সালের ৫ই মে অবরোধ কর্মসূচি থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, হাটহাজারীর মাদ্রাসাটি যেমন রাজনৈতিক গুরুত্ব পেয়েছে, তেমনি তাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
তবে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্ব- সবমিলিয়ে মাদ্রাসাটির নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব অনেক বছর ধরে রয়েছে।
তবে এই মাদ্রাসায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত হওয়ায় বড় কোন ঘটনা না ঘটলে তা প্রকাশ হয়নি বা সংবাদমাধ্যমে আসেনি।
-
হাটহাজারী মাদ্রাসা: আহমদ শফীর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে যে কারণে
-
কওমি মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর শোকরানা মাহফিলে সভাপতি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী।
-
হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা
-
আহমদ শফী
-
বাংলাদেশের একটি মাদ্রাসার শ্রেনিকক্ষের দৃশ্য।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টি ধানের চাষে কৃষকদের জামানতবিহীন ঋণ দেবে কৃষি ব্যাংক, কী লাভ এই চাল উৎপাদন বাড়লে?
-
নিপাহ্ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
-
বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, মিয়ানমারে কেন কমছে – দা এগ্রো নিউজ
-
ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে? – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ইলিশের ‘জীবন রহস্য’ কীভাবে এর উৎপাদন বাড়াবে
-
বাংলাদেশে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে – দা এগ্রো নিউজ
-
আপেল-স্ট্রবেরির দরকার নেই, বাঙালিরা পেয়ারা বা বরই খেলেও একই উপকার পাবেন
-
যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি আপেলের চাষ শুরু হয়েছে যা ‘এক বছর সতেজ থাকবে’
দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।
সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।
নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:
নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)
যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)
তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)
প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।
স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-
كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه
‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।
প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)
আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত
কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-
كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج
‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেন, তবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)
ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-
لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم
‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!
মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-
من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض
‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো না, তার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।
প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।
মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-
رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا
উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)
উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।
আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।
ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।
কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।
হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।
সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)
আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন