স্ট্রোক বর্তমান বিশ্বের একটি প্রাণঘাতী রোগ। স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে—মস্তিষ্কের রক্ত জমাট বেঁধে অথবা রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তক্ষরণ। উভয় ক্ষেত্রেই চিকিৎসার বিশেষ ভূমিকা আছে।
স্ট্রোকের রোগীদের খাদ্যসংক্রান্ত মূল চ্যালেঞ্জ হলো খাবার চিবোতে অথবা গিলতে সমস্যা হওয়া। এ ক্ষেত্রে মারাত্মক আকারে কমে আসে খাবার ও পানীয় গ্রহণের পরিমাণ। এ কারণে কমতে থাকে ওজন, দেখা দেয় পানিশূন্যতা। ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ স্ট্রোকের রোগী অপুষ্টিতে ভোগেন। অথচ পুষ্টিসংক্রান্ত কিছু সচেতনতা শুরু থেকে বৃদ্ধি করে এই অপুষ্টির হাত থেকে রোগীকে রক্ষা করা সম্ভব।
এ জন্য প্রথমেই ওজন, উচ্চতা, বয়স ও ক্লিনিক্যাল প্যারামিটারের মাধ্যমে রোগীর পুষ্টিগত অবস্থান নির্ণয় করতে হবে।বিজ্ঞাপন
স্ট্রোকের ভয়াবহতা ও ধরন অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে যে রোগীর পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন। হতে পারে স্বাভাবিক খাবার/সেমিসাইড খাবার/লিকুইড খাবার/একজি (নলের মাধ্যমে) অথবা আইভি/টিপিপি। তবে স্ট্রোকের পরে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর পানির চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।
রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হলে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ভিটামিন কে–যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে (সবুজ শাক, মসুর ডাল, ফুলকপি, ঢ্যাঁড়স, বাঁধাকপি ইত্যাদি)। মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যাবে। তবে প্রথমেই রোগীর কিডনির কার্যকারিতা নিরূপণ করে নিতে হবে। দৈনিক দু–তিনটি ডিমের সাদা অংশ, চার থেকে পাঁচ টুকরো মাছ বা মাংস খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।
মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন (বি কমপ্লেক্স) জাতীয় খাবারের ভূমিকা অপরিসীম। যেমন: ডিম, দুধ, মাংস, রঙিন শাকসবজি ইত্যাদি।বিজ্ঞাপন
অনেকের ক্ষেত্রেই ইলেকট্রোলাইটের অসামঞ্জস্য দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে রক্তের পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের উপযোগী খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হবে। যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্যই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রেখে চর্বি ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি খাবারের মোট তেলের (রান্নার) পরিমাণও কমিয়ে আনতে হবে। গিলা, কলিজা, মাথা, মাছের মাথা, মাছের ডিম এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এর পাশাপাশি সবার ভালো কোলেস্টেরল অর্থাৎ এইচডি–২ বৃদ্ধির জন্য সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছ খেতে হবে অন্তত সপ্তাহে দুদিন। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ। রক্তে অতিরিক্ত সুগার স্ট্রোকের রোগীর সার্বিক শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটাতে পারে। আঁশযুক্ত খাবার রক্তের কোলেস্টেরল ও সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক।
অনেক ক্ষেত্রে রোগীর খাবার গ্রহণের পরিমাণ অনেক কমে যায়। এসব রোগীর জন্য কনসেনট্রেটেড ক্যালরিযুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। যেমন: খেজুর, বাদাম, কলা, অলিভ অয়েল, চিড়া, আলু, কিশমিশ, মধু ইত্যাদি।বিজ্ঞাপন
বিডিএনএফ একটি উল্লেখযোগ্য প্রোটিন, যা ক্ষতিগ্রস্ত নিউরোনকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ জন্য প্রয়োজন প্রতিদিন শর্করাজাতীয় খাদ্য পরিহার করা, পরিমিত ব্যায়াম, পরিমিত ঘুম এবং ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণের জন্য সূর্যের আলো। অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার, যা আমরা পেতে পারি রঙিন শাকসবজি, ফলমূল থেকে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্ক কোষকে সুস্থ করতে।
এ ছাড়া সার্বিকভাবে স্ট্রোকের রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য হচ্ছে বাদাম, সামুদ্রিক মাছ, হলুদ, ডিম, আঙুর ও আঙুরজাতীয় ফল, গ্রিন টি, মাছ, মাংস ইত্যাদি।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন