আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

সুগন্ধি চালের পথিকৃৎ দিনাজপুর

ধানের জেলা হিসেবে দিনাজপুরের সুনাম দীর্ঘদিনের। আউশ, আমন ও বোরো—সব মিলিয়ে প্রতি বছর গড়ে ১৪-১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন হয় এ জেলায়। তবে প্রথাগত ধানের আবাদ থেকে উচ্চমূল্যের এবং সুগন্ধি ধানের আবাদে ঝুঁকছেন দিনাজপুরের কৃষকরা। কয়েক বছরে জেলায় সুগন্ধি ধানের আবাদে এসেছে বড় পরিবর্তন। এসব ধান-চালের ভালো দাম পাওয়া যায়। ফলনও হয় বেশি। এসব কারণে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ ছয় বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১৫০ শতাংশ।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও চিরিরবন্দর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি ধান-চাল আবাদ ও উৎপাদন হয়। স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সুগন্ধি ধান আবাদ বাড়ানো নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা দেখা দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রম কৃষককে এ ধরনের ধানের আবাদ বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়তে শুরু করেছে। ওই অর্থবছরে জেলায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ৮৬ হাজার ৯৯৪ টন সুগন্ধি চাল। এর পর থেকে ধারাবাহিক ভাবেই প্রতি বছর সুগন্ধি ধানের আবাদের আওতায় জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বেড়েই চলেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলায় ৯০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়েছে। আর সুগন্ধি চালের উৎপাদন ২ লাখ ১৬ হাজার টন ছাড়িয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায় ১ লাখ ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে আবাদ ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

দিনাজপুর সদর উপজেলার বাঙ্গীবেচা গ্রামের কৃষক ওবাইদুর সুগন্ধি ধান আবাদ করেন। তিনি বলেন, আগে মুষ্টিমেয় অবস্থাপন্ন কৃষক প্রতি বছরই অল্প পরিমাণ জমিতে সুগন্ধি চাল হিসেবে কাটারী, চিনিগুঁড়া ও কালোজিরা ধানের আবাদ করতেন। এখন অন্যান্য সাধারণ ধান আবাদের পাশাপাশি ব্যাপক পরিসরে দিনাজপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলায় আবাদ হচ্ছে সুগন্ধি ধান। সুগন্ধি ধানের আবাদের জন্য এখন সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষকরা প্রতি মৌসুমে আলাদা করে জমি বরাদ্দ রাখছেন।

তবে এ অঞ্চলের কৃষকদের আধুনিক চাষ পদ্ধতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা কম। সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ধান উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী জাত ও বোরো মৌসুমে সুগন্ধি ধানের জাত সম্পর্কে কৃষকের জ্ঞান সীমিত। সুগন্ধি ধানের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ পাওয়া কষ্টকর। স্থানীয় কৃষকরা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে সংরক্ষিত বীজ ব্যবহার করছেন। এতে ফলন তুলনামূলক কম হয়। এছাড়া সুগন্ধি ধানের বিভিন্ন রোগবালাইয়ের (যেমন গোড়া পচা, গলাপচা, শীষকাটা লেদা পোকা ও বাদামি গাছফড়িং) আক্রমণে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কৃষকদের জ্ঞান ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। কৃষকরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেচ প্রদানের ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভালো ফলনের আশায় অতিরিক্ত মাত্রায় ইউরিয়া, অন্যান্য সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন অনেকেই। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত সুগন্ধি ধান বেপারি, পাইকার কিংবা ফড়িয়াদের কাছে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। ধান উৎপাদন আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারেও ঘাটতি রয়েছে। এতসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার পরও স্থানীয় কৃষকদের সুগন্ধি ধান-চাল উৎপাদনে আগ্রহ রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ধানের উন্নত জাত ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় সাধনের জন্য পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) পিএসিই প্রকল্পের আওতায় কাজ করছে। তাদের ‘সুগন্ধি ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন’ শীর্ষক ভ্যালু চেইন প্রকল্প চালু রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার সুগন্ধি ধানচাষীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আদর্শ বীজতলা তৈরি, প্রযুক্তির ব্যবহার প্রদর্শনী, একটি করে চারা সারিতে রোপণ, পার্চিং পদ্ধতি, রোগ ও পোকা দমন, বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ, ভার্মি কম্পোস্ট ও ধইঞ্চা (সবুজ সার) ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের সুগন্ধি ধানের বাজারজাতে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়। পিকেএসএফের আর্থিক সহায়তায় ‘গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র (জিবিকে)’ সুগন্ধি ধান চাষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের কৃষক খাদেমুল ইসলাম লিটন বলেন, তুলনামূলক মোটা ধানের চেয়ে কয়েক মৌসুমে সুগন্ধি চিকন ধানের আবাদ করে লাভ পেয়েছি বেশি। মোটা ধানের চেয়ে চিকন ধান বস্তাপ্রতি তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য মোটা ধানের আবাদ কমিয়ে দিয়েছি। সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকেই প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সুগন্ধি ধানের আবাদ আরো বাড়াচ্ছি। আবার বাজারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা নিচ্ছি। একটি করে সারিতে রোপণের ফলে রোগ ও পোকামাকড় কম হচ্ছে। সার ও কীটনাশক কম লাগছে। ফলন বেশি ও সেচ খরচ কম হয়েছে।

ভ্যালু চেইন প্রকল্পের গৃহীত কর্মকাণ্ডের কারণে উৎপাদন পর্যায়ে সুগন্ধি ধানের আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে কারিগরি জ্ঞানের সম্প্রসারণ হচ্ছে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হচ্ছে। কৃষকরা উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমিয়েছে। ব্রি ধান-৩৪ (বিএডিসি, এসিআই, সেঞ্চুরি, গ্লোবাল) এবং ব্রি ধান-৫০ (বিএডিসি, অটো ক্রপ কেয়ার, কৃষিবিদ) বীজ সহজলভ্য করা হয়েছে। গ্রুপ মিটিং, প্রশিক্ষণ ও মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে কৃষকদের উন্নত চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কৃষকের নিজস্ব সংরক্ষিত বীজ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বিশেষ করে একেকটি সারিতে একটি করে চারা রোপণ, পার্চিং ব্যবহার, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এতে ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে, উৎপাদন খরচ কমে এসেছে।

মাঠপর্যায় থেকে বিভিন্ন কোম্পানি ধান কিনে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এতে কৃষকদের পণ্য পরিবহনের ব্যয় অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সঠিক সময়ে ভালো মানের সার, বীজ, কীটনাশক কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পভুক্ত পাঁচ হাজার কৃষককে আধুুুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষের কৌশল শেখানোর কারণে প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষক সুগন্ধি ধান চাষ শুরু করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। প্রশিক্ষণ ও মাঠ দিবস, মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী জানান, কৃষকরা এখন মোটা চাল থেকে আর আতপ করছে না। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সুবিধা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। তাছাড়া মানুষের আয় বৃদ্ধির কারণে ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে তারা এখন সুগন্ধি চালের ভাত খেতে পছন্দ করছেন। এ কারণে সুগন্ধি চালের আবাদ ফলন ও চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে উত্তরের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত দিনাজপুর জেলা এখন পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে।

অনেকটা একই মতামত দিলেন দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তৌহিদুল ইকবাল। তিনি বলেন, আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, রুচি উন্নত হয়েছে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। এখন মোটা চালের পরিবর্তে চিকন চালের ভাত খেতে পছন্দ করছে মানুষ। এ কারণে মোটা ধান আবাদ করে কৃষক দাম পাচ্ছেন না। তারা সুগন্ধি ও চিকন ধান আবাদে ঝুঁকছেন।

তিনি আরো বলেন, ভরা মৌসুমে এক বস্তা মোটা চাল বিক্রি করে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পাওয়া যায়। বিপরীতে প্রতি বস্তা চিকন সুগন্ধি চালের দাম ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এজন্য কৃষক অধিক লাভের আশায় সুগন্ধি ও চিকন ধানের আবাদ বাড়াচ্ছেন। কৃষি খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ফলে কৃষকরা সহজেই চাষাবাদ করতে পারছেন। ফলন ও লাভ বেশি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com