ইসলাম
সামাজিক উন্নয়নে ইসলামের অর্থনৈতিক নির্দেশনা কী?
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রত্যেকের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমাজের উন্নয়নে ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিকল্প নেই। বিশেষ ৪টি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইসলাম সামাজিক উন্নয়নের পথকে সুগম করেছে। কোরআন-সুন্নাহর বর্ণনায় এসব খাতকে বাস্তবে রূপ দিতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যার বাস্তবায়নে সবার জন্য ইসলামি অর্থনৈতিক রূপরেখা কার্যকর ও প্রসারিত হবে। ইসলামিক সামাজিক অর্থায়নের সেই পথগুলো কী?
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। বাদ যায়নি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাও। সামাজিক উন্নয়নে ইসলাম অনেক অর্থনৈতিক খাতের দিকনির্দেশনা দেয়। ইসলামিক অর্থায়নের পথগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- জাকাত, দান-সাদকা; ওয়াকফ ও করজে হাসানা। সংক্ষেপে এ খাতগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরা হলো-
>> জাকাত
সম্পদশালীর জন্য জাকাত দেওয়া ফরজ। জাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুখী সমৃদ্ধিশালী প্রগতিশীল কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। জাকাত প্রদানে আল্লাহর নির্দেশ হলো-
وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰة
‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো আর জাকাত আদায় করো।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ৪৩) এ নির্দেশ এসেছে সুরা বাকারার ৮৩,১১০, ২৭৭; সুরা নিসার ৭৭, ১৬২; সুরা আন-নুরের ৫৬; সুরা আহজাবের ৩৩ এবং সুরা মুজ্জামিলের ২০ নং আয়াতসহ আরও অনেক আয়াতে।
আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক নেসাবের অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে আড়াই শতাংশ হারে ৮ শ্রেণির মানুষকে জাকাত দেওয়া। জাকাত সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্যই হলো সমাজের অসহায়, গরিব ইয়াতিম ও নিঃস্ব লোকদের পূনর্বাসিত করা। তাদের জীবন-মানের উন্নয়ন করা। জাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮২ সালে ইসলামি শরিয়া আইনে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠন করেছে জাকাত বোর্ড।
গরিব-অসহায় মানুষের সামাজিক উন্নয়নের জন্য জাকাতের মতো ইসলামি অর্থ ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। দেশের দারিদ্র বিমোচন এবং সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে নিঃস্ব ও দরিদ্র শ্রেণিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুণর্বাসিত করতে জাকাত আদায় ও বণ্টন খুবই কার্যকরী। এ কারণেই চিরন্তন ও শাশ্বত ধর্ম ইসলাম জাকাতের ন্যায় একটি ফলপ্রসূ ও কার্যকর বিধানের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী রূপরেখা প্রদান করেছে। যা মানব রচিত সব অর্থনৈতিক মতবাদের উপর ইসলামি অর্থব্যবস্থার সার্বজনীনতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। জাকাত ব্যবস্থাপনায় যে ৮ শ্রেণির মানুষ উপকৃত হবে; তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এসেছে কোরআনে। তারা হলেন-
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ
নিশ্চয়ই (ফরজ) সাদকা হচ্ছে- ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় (নওমুসলিম) তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৬০)
>> সাদকা
মানুষের উপকারের জন্য সাধারণ দান-সাদকা অন্যতম। অর্থনৈতিক টানা-পোড়নে যখন গরিব-অসহায় মানুষ দিশেহারা; সে সময় সামান্য দান-সাদকাও অভাবি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্ববহন করে। সম্পদশালীদের জন্য দান-সাদকা দুনিয়ার জীবন ও পরকালের জন্য খুবই ফজিলতপূর্ণ। এটি মানুষের সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করে। সে কারণে যথাযথ সম্মান, মর্যাদা তথা ইজ্জত, হুরমত ও তাজিমের সঙ্গে সযত্নে গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের মাঝে দান-সাদকা করতে হয়। দান-সাদকাকে সম্মানজনক ইবাদত-বন্দেগি ও পবিত্র মনে করা দানকারীর অন্যতম কর্তব্য।
জাকাত যারা পাওয়ার যোগ্য দান-সাদকাও তারাই পাওয়ার যোগ্য। তবে জাকাত যেহেতু সম্পদের হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভরশীল। তাই বছরের যে কোনো সময় সামথ্যবান মানুষের জন্য অভাবি মানুষকে সম্মানের সঙ্গে দান-সাদকা করা জরুরি।
দান কি শুধু গরিবকে করতে হবে?
তবে দান শুধু গরিব-অসহায়কেই করতে হবে এমন নয়; বরং দানের ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। সম্পদ ব্যয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ খাত হলো ‘পিতা–মাতা’। আত্মীয়দের মধ্যে ভাই-বোনের অধিকার সবচেয়ে বেশি।
বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয় যাঁরা, তাঁদের মধ্যে শ্বশুর–শাশুড়ি ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তাঁদের হাদিয়া, উপহার ও উপঢৌকন দেওয়া সুন্নাত। যদিও সম্ভ্রান্তরা এসব দান গ্রহণ করতে ইস্ততবোধ করেন; তাই তাঁদের হাদিয়া বা উপহার উপঢৌকন হিসেবে দেওয়াই সমীচীন। এটাই দানের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। আবার অন্যদেরকেও ‘জাকাত বা দান-সাদকার কথা উল্লেখ না করেও দেওয়া যায়; এভাবে দান করলে যারা দান গ্রহণ করেন তারা বিব্রতবোধ করেন না।
দানকারীর মর্যাদা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম।’ (মুসলিম) অর্থাৎ দানকারী ব্যক্তি গ্রহণকারী ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম। এ দানের ফলেই দানকারী দুনিয়া ও পরকালে ফজিলত, সম্মান ও গৌরব লাভ করে।
হজরত কাআব ইবনে উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাদকা পাপ নিভিয়ে দেয় যেভাবে পানি আগুন নেভায়।’ (তিরমিজি)
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি গোপনে সাদকা দেয় তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই ৭ শ্রেণির মধ্যে গণ্য করবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন; যেদিন তাঁর আরশের ছায়া ব্যতিত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এবং এমন ব্যক্তি যে সদকা করল, এরপর তা গোপন করল, এমনকি তার বাম হাত জানল না, তার ডান হাত কি দান করছে।’
দান-সাদকায় করণীয়
দান করে কাউকে খোঁটা দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে কোরআন-সুন্নায় নিষেধাজ্ঞা এসেছে এভাবে-
১. ‘হে মুমিনগণ! তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বাতিল কোরো না। তাদের মতো যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে লোকদেখানোর জন্য এবং তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬৪)
২. এমনটি নিষেধ করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘খোঁটাদানকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (তিরমিজি)
>> ওয়াকফ
ওয়াকফ হলো মূল স্বত্ব নিজের রেখে বস্তুর উপকার দান করা। বেশির ভাগ আলেমের মতে, ওয়াকফ করলে তা বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে এবং ওয়াকফ ফেরত নেওয়া যায় না। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন, ‘তুমি ইচ্ছা করলে জমির মূল স্বত্ব ওয়াকফে আবদ্ধ রেখে উৎপন্ন বস্তু সদকা করতে পার।’ (বুখারি)
ইসলামি আইনে সাধারণত কোনো ভূমি, ভবন বা সম্পদ ধর্মীয় বিষয়ের প্রতি মানসিকতা রেখে দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্দেশ্যে দেওয়াকে ওয়াকফ বলা হয়। ওয়াকফ-এর মাধ্যমেও ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জোরদার হয়।
ওয়াকফকৃত সম্পদ কোনো ট্রাস্ট বা কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। ইসলামী সংস্কৃতির রীতি অনুযায়ী ধর্মীয় কাজে চিরস্থায়ীভাবে নিজের মালিকানাধীন সম্পদ উৎসর্গ করাই হচ্ছে ওয়াকফ। তাই সম্পদ বা অর্থ এমনভাবে দান করা যেখানে মূলটা থেকে যাবে আর সে সম্পদ থেকে প্রাপ্ত অর্থ মানুষের কাজে ব্যয় হতে থাকবে।
এ ওয়াকফ শুধু মুসলিমদের বৈশিষ্ট্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের মধ্যে যাঁদেরই সামর্থ্য ছিল; তাঁরা সবাই ওয়াকফ করেছেন। ওয়াকফের শাব্দিক অর্থ কোনো কিছু আটকে রাখা বা উৎসর্গ করা। আর পারিভাষিক অর্থে বস্তুর মূল স্বত্ব ধরে রেখে (মালিকানায় রেখে) এর উপকারিতা ও সুবিধা প্রদান করা।
ওয়াকফকৃত বস্তু কারো মালিকানায় প্রবেশ করা থেকে বেরিয়ে যাবে, শুধু বস্তুর উপকার যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তাদের জন্য নির্ধারিত হবে। ওয়াকফের উপকারের মালিকানা যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তারা ওয়াকফকারীর জীবদ্দশায়ই পাবে এবং তার মৃত্যুর পরও ভোগ করবে। ওয়ারিশের জন্য ওয়াকফ করা জায়েজ।
ওয়াকফের শর্ত
ওয়াকফকারীর মধ্যে কতিপয় শর্ত থাকতে হবে, নতুবা তার ওয়াকফ করা জায়েজ হবে না। শর্তগুলো হচ্ছে-
১. ওয়াকফকারীকে দান করার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে। জবরদখলকারী এবং যার মালিকানা স্থির হয়নি; এমন লোকের পক্ষ থেকে ওয়াকফ করা জায়েজ হবে না।
২. ওয়াকফকারীকে বিবেকবান (জ্ঞানসম্পন্ন) হতে হবে। পাগল ও বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির ওয়াকফ সঠিক হবে না।
৩. ওয়াকফকারীকে বালেগ তথা প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। শিশুর ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না। যদিও কোনো শিশু ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে পারে।
৪. বুদ্ধিমান হওয়া। নির্বোধ বা বোকার ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না।
ওয়াকফকৃত বস্তুর শর্ত
যে সম্পদ বা জিনিস ওয়াকফ করা হবে; ওয়াকফ বাস্তবায়নে সে সম্পদের মধ্যেও কিছু শর্ত রয়েছে। তাহলো-
১. ওয়াকফকৃত বস্তুর মূল্য বা দাম থাকতে হবে। যেমন- জমি-জমা ইত্যাদি।
২. ওয়াকফকৃত বস্তুর পরিমাণ জানা ও নির্ধারিত থাকতে হবে।
৩. ওয়াকফকৃত বস্তু জমি-জমা ওয়াকফ করার সময় ওয়াকফকারীর মালিকানায় থাকতে হবে।
৪. ওয়াকফকৃত বস্তু সুনির্দিষ্ট হতে হবে। যৌথ মালিকানার সম্পদ এককভাবে ওয়াকফ করা যাবে না। বহু মানুষের মালিকানাধীন কোনো বস্তুর একাংশ ওয়াকফ করলে তা শুদ্ধ হবে না।
৫. ওয়াকফকৃত বস্তু বা সম্পদের সঙ্গে অন্যের অধিকার সম্পৃক্ত থাকা যাবে না।
৬. ওয়াকফকৃত বস্তু দ্বারা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী উপকার গ্রহণের সুবিধা থাকতে হবে।
৭. ওয়াকফকৃত বস্তুতে বৈধ উপকার থাকতে হবে। তা থেকে উপকার পাওয়ার ধরন এমন হতে হবে-
‘ঘর-বাড়িতে বসবাস করে, আরোহণকারী পশু ও যানবাহনে আরোহণ করে, জীবজন্তুর পশম, দুধ, ডিম, লোম সংগ্রহ করে উপকার নেওয়া যায়।’
সামাজিক উন্নয়নে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ওয়াকফ-এর গুরুত্ব অপরিসীম। যা শুধু ইসলামেই সম্ভব।
>> করজে হাসানা
এমন ঋণ যা থেকে দাতা অতিরিক্ত কোনো অর্থ বা সুবিধা নেবে না। বরং ঋণগ্রহিতা সময় মতো মূলধন ফেরত দেবে। এর উদ্দেশ্য হলো- সমাজের একটি প্রয়োজন পূর্ণ করা। ব্যবসা-বাণিজ্যের বাইরেও নানা কারণে মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের করজে হাসানার দরকার হতে পারে।
করজে হাসানায় মেলে নফল সাদকার সাওয়াব। তাই সবসময় করজে হাসানা বা নফল সদকা দেয়া উত্তম। বিশেষ করে যখন প্রয়োজন দেখা দেয়। এ ব্যাপারে কোরআন ও সুন্নাহর দিকনির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ
‘কে আছে, যে আল্লহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)
করজে হাসানার উদ্দেশ্য
মানব জীবনের বিশেষ অর্থনৈতিক কল্যাণমূলক ব্যবস্থার নাম ‘করজে হাসানা’। এর উদ্দেশ্য হলো- সমাজের ঋণগ্রস্ত মানুষের একটি প্রয়োজন পূর্ণ করা। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের নানা সময়ে নানা কারণে সাময়িক ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সবসময় ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকে না। কিন্তু সম্ভাবনা থাকে যে, পরে করজ পরিশোধ করতে পারবে।
এ কারণেই মহান আল্লাহ ইসলামি অর্থনীতিতে করজে হাসানার বিধান রেখেছেন। যেন মানুষ বিনা সুদে সাময়িকভাবে করজে হাসানা নিতে পারে এবং পরে তা দিয়ে দিতে পারে। কেননা ইসলাম সুদকে হারাম ঘোষণা করেছে। ফলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে সুদের ভিত্তিতে অর্থ নেওয়া উচিত নয়।
কোরআনুল কারিমের একাধিক স্থানে করজে হাসানার কথা এসেছে-
১. ‘কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম করজে হাসানা দেবে, এরপর তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার। (সুরা আল-হাদিদ : আয়াত ১১)
২. ‘নিশ্চয়ই দানশীল ব্যক্তি ও দানশীল নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে করজে হাসানা দেয়, তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা আল-হাদিদ : আয়াত ১৮)
৩. ‘যদি তোমরা আল্লাহকে করজে হাসানা দান কর, তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, সহনশীল।’ (সুরা আত-তাগাবুন : আয়াত ১৭)
৪. ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, আল্লাহকে ‘করজে হাসানা’ দিতে প্রস্তুত? এরপর আল্লাহ তাকে কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। হ্রাস-বৃদ্ধি দুটোই আল্লাহর হাতে রয়েছে। আর তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)
হজরত আবু হুরায়রা বাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সাদকা করে; আর আল্লাহ হালাল ব্যতিত অন্যকিছু গ্রহণ করেন না; আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন এরপর তিনি তা লালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন করে, এমনকি একসময় সে সদকা পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’ (বুখারি ও মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সমাজ উন্নয়নে ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাগুলো যথাযথভাবে সমাজে প্রচলন করা। জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলা। সম্পদশালীরা দান-সাদকার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া। ওয়াকফ ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলামি অর্থনীতিকে গতিশীল করা। করজে হাসানার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে এগিয়ে আসা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সমাজ উন্নয়নে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, জাকাত, দান-সাদক, ওয়াকফ ও করজে হাসানার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও উপকারিতা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।
সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।
নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:
নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)
যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)
তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)
প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।
স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-
كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه
‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।
প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)
আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত
কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-
كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج
‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেন, তবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)
ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-
لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم
‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!
মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-
من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض
‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো না, তার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।
প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।
মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-
رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا
উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)
উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।
আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।
ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।
কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।
হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।
সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)
আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন