২০২২ সালের মধ্যে কৃষিকে ২০ ভাগ স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায় আনতে চায় সাউথ কোরিয়া। সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। চুংবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চলছে মাটির বিভিন্ন উপাদান উন্নয়ন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা।
কোরিয়ার কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো নড়েচড়ে বসেছে ২০২২ সালের লক্ষ্যকে সামনে রেখে।
দেশটি সামগ্রিক কৃষিতে স্মার্ট ফার্মিংয়ের সম্প্রসারণ ঘটাতে চায়। এর অংশ হিসেবে সারাদেশে মূল কৃষি ও মাচ চাষে অন্তত: ২০ ভাগ এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণের লক্ষ্য রয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতে এই হারটি ধরা হয়েছে ২৫ ভাগ।
এই লক্ষ্যের সঙ্গে যুক্ত করে জলবায়ু পরিবর্তনসহ যুগপযোগী কৃষি গবেষণাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে সেদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। চুংবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কৃষি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে চলছে মাটির স্বাস্থ্য নিয়ে বহুমুখি উচ্চতর গবেষণা।
কৃষি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. টং মিন সা বলেন, ‘আমরা দেখছি রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে মাটির মাইক্রোঅর্গানিজমের হারের যে পরিবর্তন হচ্ছে সে বিষয়গুলো। নতুন ধরনের বায়ো ফার্টিলাইজারের মাধ্যমে কীভাবে মাটির হারানো শক্তি ফিরিয়ে আনা যায়, সেটি আমাদের গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।’
সেখানে সুগভীর বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থীরা।
কোরীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের এখন বড় লক্ষ্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষিকে বহুমুখিভাবে লাভজনক করে তোলা।
সাউথ কোরিয়ার খাদ্য ও গ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক পার্ক সু জিন বলেন, ‘আমরা কৃষিতে আইসিটির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। বিশেষ করে আধুনিক ও বিশেষায়িত গ্রিন হাউজে বিশেষ ব্যবস্থায় ফসল উৎপাদনের দিকে জোর দেয়া হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে ১০ হাজার হেক্টরে গ্রিন হাউজ সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনা রয়েছে। যার ৭৫ ভাগই পরিচালিত হবে স্মার্ট প্রযুক্তিতে।’
দ্রুত বাঁশের বংশ বৃদ্ধি নিয়ে ১২ বছরের গবেষণায় সফল হয়েছেন গাইবান্ধার কৃষি গবেষক মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম। এখন পরিত্যক্ত অনাবাদি জমিতে এ কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ১টি বাঁশ থেকে কাটিং করে ৪০-৫০টি বাঁশঝাড় করার স্বপ্ন অবশেষে সফল হলো।
এখন দেশে বাঁশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করাও সম্ভব। তবে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে সরকারের শুভদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি। সচেতন মহল তার এ উদ্ভাবনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান। এ সফলতার পর তিনি গাইবান্ধার মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন করা সম্ভব কি-না, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
তিস্তা নদী বেষ্টিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। উপজেলায় আছে বাঁশের ব্যাপক চাহিদা। এ চাহিদা কাজে লাগাতে গিয়ে সুন্দরগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন বাপ-দাদার শেখানো আদি পদ্ধতিতে শিকড়সহ বাঁশের মোতা বা চারা থেকে বাঁশ চাষ করার চেষ্টা করেন। কয়েক মাসেও সফল হতে পারেননি। কিছুদিন পর বিভিন্ন সূত্রে জানার পর নজরুল ইসলামের পরামর্শে একসাথে ১২ বিঘা জমিতে বাঁশ চাষ শুরু করেন।
জানা যায়, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার উল্ল্যা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম। যখন তার দাদার দাফন-কাফনে বাঁশের প্রয়োজন হয়; তখন পাড়া-পড়শির কাছে যেতে হয়। তখন থেকে বাঁশের দ্রুত বংশ বিস্তার নিয়ে চিন্তা করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ছাত্রজীবনে শুরু করেন বাঁশের বংশ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা। কৃষিতে ডিপ্লোমা করে কর্মজীবনে সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছিলেন।
দীর্ঘ ১২ বছর গবেষণার পর উদ্ভাবন করেছেন কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ। এ পদ্ধতিতে একটি বাঁশ থেকে ৪০-৬০টির বেশি বাঁশঝাড় করা সম্ভব। ইতোমধ্যে সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এ পদ্ধতিতে পরিত্যক্ত জমিতে বাঁশ চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনাবাদী জমিতে বাঁশ চাষ করে ৫-৬ বছর পর থেকেই বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করছে চাষিরা।
শুধু গাইবান্ধায় নয়- নওগা, পঞ্চগড়, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেটসহ অনেক জেলায় বাঁশ চাষের মাধ্যমে সফলতা এনেছেন। ফলে দেশের বিভিন্ন ফ্যাক্টরির মালিকরা এখন বাঁশ চাষে আগ্রহী হয়ে ছুটছেন তার কাছে। স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার, ইন্টারন্যাশনাল রোটারি ক্লাব পুরস্কারসহ জেলা-উপজেলার অসংখ্য পুরস্কার।
সুন্দরগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী খুশরিদ জাহান স্মৃতি বলেন, ‘নজরুল ইসলামের পরামর্শে বাঁশের কাটিং দিয়ে খুব কম খরচে একসাথে ১২ বিঘা জমিতে বাঁশ চাষ করেছি। প্রথমে অনেকটা হতাশা থাকলেও এখন বাঁশঝাড় দেখে মনে শান্তি পাই। এ পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করলে দ্রুত শত শত বাঁশঝাড় করা সম্ভব।
বাঁশের চারা সংগ্রহ করতে লালমনির হাট থেকে আসা মিরাজ হোসাইন বলেন, ‘ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে জানতে পারি বাঁশের বংশ বিস্তারে নজরুল ইসলামের উদ্ভাবনের কথা। আমরা তার কাছ থেকে বাঁশের চারা সংগ্রহ করতে এসেছি।’
সাঘাটার বাঁশহাটা গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন সরকার জানান, যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে পরিত্যক্ত তিন বিঘা জমিতে এ পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে এখন বছরে কয়েক লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি করছেন।
উদ্ভাবক মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম জানান, তিনি গাইবান্ধার মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন নিয়ে এখন গবেষণা করছেন। এছাড়া সৌদি আরবের খেজুর গাছ নিয়েও চিন্তা আছে। তিনি সৌদি থেকে উন্নত বারোমাসি খেজুরের চারা সংগ্রহ করে নতুনভাবে গবেষণা করেছেন বলে জানান।
সাঘাটা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘গাইবান্ধায় এ পদ্ধতিতে ব্যাপক বাঁশ চাষ করে নদীভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা সম্ভব। তার বিভিন্ন গবেষণায় আমরা মুগ্ধ। এ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন গবেষণা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
লেখক ও সাংবাদিক গোবিন্দলাল দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু বাঁশের বংশ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা নয় বরং দেশকে তিনি জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। মুক্তিযুদ্ধেও নজরুল ইসলামের অবদান আছে। তার এ প্রতিভা দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন