কুষ্টিয়া: চাষের ক্ষেত্রে লোকসানের ঝুঁকি নেই, বাজারে দেশীয় মাল্টার চাহিদাও ভালো, খেতেও খুব সু-স্বাদু হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয় হচ্ছে বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ। অনেকেই বাড়ির ছাদে, বসতবাড়ির আঙিনায় শখের বশে করছেন এই মাল্টার চাষ।
পরিচর্যা নেই বললেই চলে, তাই খরচও কম। আর কম সময়ে, স্বল্প পুঁজিতে এ মাল্টা চাষ বিস্তার লাভ করছে কুষ্টিয়ার মিরপুরের যুবকদের মধ্যে।
শখের বশে মাত্র ১০ কাঠা জমিতে মাল্টা চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তরুণ কৃষক মারুফ হোসেন। এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন এই মাল্টার চাষ। এখন এলাকার বেকার যুবকদের কাছে মডেল তিনি। তার কাজে অনুপ্রেরণা পেয়ে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। করেছেন নতুন করে মাল্টা বাগানও।
কৃষক মারুফ লাভবান হওয়ায় ১০ কাঠা থেকে আরো তিন বিঘা জমিতে করেছেন মাল্টার বাগান।
সম্প্রতি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের আশাননগর এলাকার কৃষক মারুফের মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় ধরে আছে মাল্টা, এতে বেশ খুশি তিনি।
মারুফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মাল্টা চাষ আমাদের এলাকায় করা সম্ভব এটা আশা করিনি। ভাবতাম এই মাল্টার চাষ কিভাবে করা যায়, কিভাবে একটা বাগান করা যায়। ২০১৭ সালে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে ৫০টি বারি-১ জাতের মাল্টার চারা পাই। সেগুলো নিয়ে এসে ১০ কাঠা জমিতে রোপণ করি। মাল্টা গাছের তেমন একটা পরিচর্যা করিনি। এখানে মাল্টা গাছের সাথী ফসল হিসেবে মরিচ, বেগুন, খেসারি, জব ও কলার চাষ করেছি। মাল্টার জন্য আলাদা কোনো পরিচর্যা বা সার দেওয়া লাগেনি। এর পরে দুই বছর পরে লক্ষ্য করি বেশ কয়েকটি গাছে মাল্টা ধরেছে। বেশ সুন্দর সবুজ মাল্টা, খেতে বাজারের মাল্টার চেয়েও সুসাদু এবং রসালো। এর পরে চিন্তা করি মাল্টা গাছ গুলোর যত্ন নিলে আরো ভালো কিছু হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ৪৬টি গাছে মাল্টা এসেছে। একেকটি গাছে প্রায় এক মণ করে মাল্টা ধরেছে। কিছু গাছে তার চেয়েও বেশি। মাল্টার সাইজও তুলনামূলক বড়। ১০০ থেকে ২৫০ গ্রাম। এ বছর প্রায় ৫০ মণের মতো মাল্টা পাবো। ইতোমধ্যে বাগান থেকে মাল্টা বিক্রি শুরু করেছি। ১২০-১৩০ টাকা কেজি হিসেবে পাইকারিভাবে ক্রেতারা মাল্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে আশাকরছি আড়াই লাখ টাকার মতো মাল্টা বিক্রি করতে পারবো।
মাল্টা গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, মাল্টা গাছের খুব একটা পরিচর্যা করতে হয় না। বাগানটা পরিষ্কার রাখলে ফল বেশি আসে। আর মাঝে মধ্যে পোকা খাওয়া ও পাতা কুকড়ানো রোগ দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে কৃষি অফিসের পরামর্শ গ্রহণ করে ভালো ফল পেয়েছি।
মারুফ হোসেন আরও বলেন, মাল্টা চাষ খুবই লাভজনক। এ বছর আমি আরো তিন বিঘা জমিতে মাল্টার চারা রোপণ করেছি। আশাকরছি এক বছর পরেই ফল আশা শুরু করবে। সেই সঙ্গে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন মাল্টার চারা উৎপাদন করি। এখান থেকে চারা বিভিন্ন এলাকার লোকজন নিয়ে যায়। আগামীতে নিজে আরো বেশি বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার বাগান করবো বলে মনে করছি।
মারুফের সঙ্গে মাল্টার চারা উৎপাদনে সহযোগী সিহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, আমরা দেশি বাদামের চারার সঙ্গে মাল্টা গাছের সায়নের কলম করি। এতে উৎকৃষ্ট মানের চারা উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতিটি কলমের চারা আমরা ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি করি। এবছর এখানে ১ হাজার মাল্টার চারা তৈরি করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু করেছি।
মারুফের সাফল্য দেখে ওই এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখিয়ে শুরু করেছেন এই মাল্টার চাষ।
একই এলাকার জিয়াউর রহমান নামে এক নতুন মাল্টা চাষি বাংলানিউজকে বলেন, আমি গত বছর ২০ বিঘা জমিতে প্রাথমিকভাবে মাল্টার বাগান করেছি। এখনো গাছে ফল আসেনি। মাল্টার সাথী ফসল হিসেবে আমি পেঁয়ারার চারা রোপণ করেছি। আশা করছি আগামী বছর থেকে মাল্টা পাবো।
স্থানীয় যুবক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মাল্টা চাষ এই অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মারুফের বাগান দেখে আমিও মাল্টার বাগান করেছি। মারুফের মাল্টা বাগান থেকে চারা নিয়ে লাগিয়েছি। মাল্টা বাগানে লস হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সম্ভাবনাময় এ মাল্টা চাষ বৃদ্ধির জন্য এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুবকদের ও আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এ চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলায় এ বছর ১১ হেক্টর জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ করা হয়েছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, আমাদের এই কুষ্টিয়া অঞ্চলের মাটিতে মাল্টা চাষ করা সম্ভব। বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করে অনেকেই বেশ সাফল্য পেয়েছেন। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের এ মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
তিনি আরো বলেন, অনান্য ফসলের চাষাবাদের তুলনায় মাল্টা চাষ খুবই লাভজনক। মাল্টা চাষে কৃষকদের খরচ কম এবং লাভ বেশি। এছাড়া মাল্টার জমিতে সাথী ফসল হিসেবে অনান্য স্বল্প মেয়াদী ফসল চাষ করা যায়। তাছাড়া পুষ্টি গুনাগুন এবং স্বাদ ভালো হওয়ায় বাজারে দেশীয় এ মাল্টার চাহিদা বেশ ভালো। আমরা মাল্টা চাষের জন্য কৃষক মারুফকে উৎসাহ দিয়েছিলাম, বিনামূল্যে চারাও দিয়েছিলাম। তার সাফল্য দেখে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করছি আগামীতে মাল্টা চাষ এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করবে। এতে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন অনেকেই।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’
সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।
কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।
সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।
কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন