এগ্রোবিজ
রাজশাহীতে আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা
লেখক
ঢাকা ট্রিবিউনবাজারে উন্নত জাতের গোপালভোগ, খিরসাপাত ও ল্যাংড়া জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে ক্রেতা সংকটের কারণে এসব আমের দাম কমে গেছে। প্রতিটি জাতের আমের দাম মণপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে কমেছে
ফলের রাজা আম। আর আমের জন্য রাজশাহীর ব্যাপক সুনাম রয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে এবার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো। লক্যমাত্রা পূরণে কৃষি বিভাগ আশাবাদী থাকলেও হঠাৎই এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।
বাজারে উন্নত জাতের গোপালভোগ, খিরসাপাত ও ল্যাংড়া জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে ক্রেতা সংকটের কারণে এসব আমের দাম কমে গেছে। প্রতিটি জাতের আমের দাম মণপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে কমেছে। গত কয়েকদিন ধরে উত্তরের দ্বিতীয় বৃহৎ আমের হাট বানেশ্বরে এমন অবস্থা চলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, হাটে প্রচুর আম আমদানি হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা কম। তাই আম বিক্রি করতে হচ্ছে অল্প দামে। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
হাসান আলী নামের এক আম ব্যবসায়ী জানান, বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বানেশ্বর হাটে ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া খিরসাপাত ১৪০০ থেকে ১৮০০ টাকা মণ ও গোপালভোগ ১৯০০ থেকে ২৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলাবার (৮ জুন) ও বুধবার (৯ জুন) এই আমগুলো বর্তমান দামের চেয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এখন হাটে প্রচুর আম আমদানি হচ্ছে। তবে ক্রেতা তেমন নেই। এমন অবস্থায় নামানো আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে উপকৃত হতো চাষী ও বাগান কেনা ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর অবহেলাজনিত কারণে আমের ৪০ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল জানান, পরীক্ষামূলক সংরক্ষণের জন্য রাজশাহী বিভাগের দুইটি জেলায় কোল্ড স্টোরেজ করা হচ্ছে। যার একটি রাজশাহীর শিবপুরহাট ও অপরটি নটোরের আহম্মদপুরে। সেখানে ৪ মেট্রিকটন করে আম সংরক্ষণ সম্ভব হবে। পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক হলে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
রাজশাহীর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, অঞ্চলে এবার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। যা গত বছরে ছিলো ৭ লাখ ৭৬ হাজার ২৮৬ মেট্রিক টন। আর অর্জিত বাজারমূল্যে ছিলো প্রায় ৪ হাজার ২৬৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। গত বছর এ অঞ্চলে আমের গড় মূল্য ছিলো কেজি প্রতি ৫৫ টাকা।
বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলের আম ব্যবসায়ীরা আম বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমে উঠেছে অনলাইন বাজার। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছে বাগান মালিকরা। এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিনা পুঁজি ও স্বল্পপুঁজির মৌসুমি এ ব্যবসায় নেমেছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী। বাগানিরা ভালো দাম না পেলেও এসব উদ্যোক্তা ও খুচরা আম ব্যবসায়ীরা শোনাচ্ছেন আশার বাণী।
জানা যায়, এ অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনলাইনে আম বেচাকেনা হলেও অনলাইনে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হচ্ছে রাজশাহীর আম। রাজশাহীর ছোট বড় প্রায় সাড়ে ৫০০ ব্যবসায়ী সরাসরি ও অনলাইনে আমের ব্যবসা করছেন। মৌসুমী অনলাইন ব্যবসায়ীরা কখনো সরাসরি আমবাগান আবার ছোট বড় মোকামগুলো থেকে নিজেদের পছন্দের আম কিনে সরবরাহ করছেন। অর্ডারের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে আম।
অনলাইনের মাধ্যমে আমের মৌসুমি ব্যবসা করা রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সিজানুর রহমান সিজান জানান, অনলাইনে মাধ্যমে আমের ব্যবসা ভালো ও লাভজনক। তার বাসা চাঁপাইনবারগঞ্জে। সে করোনাভাইরাসের প্রকোপের প্রথমদিক থেকেই ঢাকায় কাজ করছেন। তিনি ঢাকা থেকেই অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে অর্ডার নিচ্ছেন। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে থাকা তার বন্ধু ও বিজনেস পার্টনার কুরিয়ার যোগে ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেন। গতবার ভালো লাভ হয়েছিলো। এবারও বেচাবিক্রি ভালোই হচ্ছে।
অপরদিকে, নতুন ব্যবসায়ী নাইম ইসলাম লাভজনক এ ব্যবসায় সরাসরিও যুক্ত হলেও আমের দাম না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি কয়েকটি আমের বাগান কিনেছেন। এই আম সংগ্রহ করে রাজশাহীর স্থানীয় বাজারসহ উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে বাইরের বড় ব্যবসায়ীরা তেমন মাল কিনছেন না। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের অজুহাতে দামও বলছে না। তিনি প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে বাগান কিনেছেন। কিন্তু আমের যে দাম তাতে বাগানে যে বিনিয়োগ তিনি করেছিলেন তা তুলে আনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অথচ খুচরা বিক্রেতারা বেশি দরেই আম বিক্রি করছে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী আম ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, রাজশাহীতে এখন অনলাইনের মাধ্যমে আমের বেচাকেনা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেড়েছে। এ কারণে অনেকেই আগে যারা আম শুধু সরাসরি বিক্রি করতেন তারাও অনলাইনের দিকে ঝুঁকেছেন। ঝড় বা আমের ক্ষতি হয় এমন দুর্যোগের সম্মুখিন হতে হয়নি। এতে আমের গুনগত মান ভালো আছে।
এদিকে, রাজশাহী নগরীর শাল বাগান বাজারের মোশরাররফ ফল ভান্ডারের মালিক ও বিক্রেতা মোশাররফ জানান, (০৭ জুন, সোমবার) বাজারে গোপাল ভোগ ২০০০ থেকে ২২০০, খিরসাপাত আম ১৮০০ থেকে ২০০০, ল্যাংড়া ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হয়ছে। বাগান থেকে ক্রয় করলে মণ প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কমে ক্রয় করে নিয়ে আসেন। বাগান থেকে বাজারে নিয়ে আসার খরচ, শ্রমিক খরচ, আমের সাইজ বাছাই রং সহ বিভিন্ন খাতে খরচের কারণে দামের পার্থক্য তৈরি হয়।
বিভিন্ন সূত্রমতে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১০ জুন) রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় গোপালভোগ ২৪০০ থেকে ২৬০০, খিরসাপাত ১৬০০ থেকে ১৮০০, ল্যাংড়া ১৪০০ থেকে ১৬০০, স্থানীয় গুটি জাতের আম ৮০০ থেকে ১০০০, লক্ষনভোগ ৭০০ থেকে ৮০০ এবং রানি পছন্দ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খিরসাপাত, রানি পছন্দ ও গোপালভোগ মানভেদে ১ হাজার থেকে ১৬০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হিমসাগর ৬০ টাকা কেজি দরে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে কিনছেন।
আম ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, উন্নত জাতের আম বলতে গোপালভোগ, খিরসাপাত ও ল্যাংড়া আছে। খেতেও ভালো, তাই দামও বেশি। কেনাবেচার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দূরের ব্যবসায়ী কম আসছে। করোনাভাইরাসের কারণে অন্য জেলা ও বিভাগেরগুলোর কম ব্যবসায়ী আসছেন।
নুরুল ইসলাম নামের একজন আম ব্যবসায়ী জানান, লকডাউনের কারণে তারা বেশি রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে পারছেন না। আর ক্রেতাও কম। তাই বেশি আম কিনলে নষ্ট হয়ে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। আর অনেকেই অনলাইনে আম কিনছেন। তাই আমের দোকানগুলোতে চাপ কম।
ব্যবসায়ী রাজিবুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকা থেকে আম কিনতে এসেছেন। তার ঢাকায় আমের আড়ৎ রয়েছে। যদিও রাজশাহীতে তার ব্যবসায়িক প্রতিনিধি আছে। তিনি আম কিনে পাঠান। তবে সপ্তাহে একবার আসেন তিনি। তিনি আরও জানান, আম বিক্রি খুব একটা ভালো না। এখন বেশির ভাগ মানুষ মোবাইল ফোন বা অনলাইনে অর্ডার করছেন। এর ফলে তাদের ব্যবসা কমেছে। তবে যে ক্রেতারা আম দেখে, খেয়ে কিনবেন তারা দোকানেই আসেন। আর রাজশাহীর আম অনেক সুস্বাদু।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. অলিম উদ্দিন জানান, এ অঞ্চলের মধ্যে রাজশাহীর আম সবসময় গুনগত মানে ভালো হয়ে থাকে। রাজশাহীর মাটি ও আবহাওয়ার কারণেই মানটা ভালো হয়। এ কারণে ক্রেতাদের মুখেও রাজশাহীর আমের সুনাম শোনা যায়। এবার আমে পোকাসহ রোগবালাইয়ের তেমন আক্রমণ নেই। গুনগত মানও ভালো। সুতরাং সার্বিক দিক বিবেচনায় এবার আমের উৎপাদনও বাড়তে পারে। তবে এবার আমের দাম কিছুটা কমই মনে হচ্ছে।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার আমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গুনগত মানও ভালো। রাজশাহীর আম এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। সেই সঙ্গে অনলাইনে কেনাবেচাও বেড়েছে। কিন্তু দাম কৃম থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, “করোনা ও লকডাউনের ফলে আম বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব পড়ছে। রাজশাহী থেকে আম পাঠাতে না পারলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু করেছেন।”
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
কাঁঠালের আইসক্রিম জ্যাম ও চিপস
-
পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক
-
টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ
-
গো-বর্জ্য থেকে শুরু করুন এই চার ব্যবসা, আয় হবে লক্ষাধিক
-
ওষধি উদ্ভিদ কালমেঘ চাষে ব্যাপক আয়
-
নির্দিষ্ট পুঁজিতে মিশ্র চাষে কৃষকদের ব্যাপক আয়ের সুযোগ
-
কেমন হবে আগামীর কৃষি:
-
সুদান ঘাস চাষ করবেন যেভাবে
-
৩ অর্থবছরে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া-কুচিয়া রপ্তানিতে আয় প্রায় ৯৮৯ কোটি টাকা
চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।
মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।
সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।
* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।
বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।
সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।
ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।
ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।
এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।
বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলোডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন