ইসলাম
মুমিন ব্যক্তি কি অসুস্থতা ও মহামারিতে আক্রান্ত হতে পারেন?
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমঅনেককেই বলতে শোনা যায়, মহামারি মুসলমান কিংবা মুমিন বান্দার হতে পারে না। এদের অসুস্থতা বা রোগ-ব্যধি হতে পারে না। বাস্তবেই কি এ কথা ঠিক যে, অসুস্থতা, রোগ-ব্যধি কিংবা মহামারি মুসলমান-মুমিন বান্দার মাঝে আসতে পারে না? এই অসুস্থতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
‘না’, এটি ভুল ধারণা। মুমিন মুসলমান অসুস্থতা কিংবা মহামারিতে আক্রান্ত হতে পারে না- ইসলামের সঙ্গে এ কথার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা কুরআনুল কারিমে বর্ণনা, হাদিসের নির্দেশনা এবং ইসলামের ইতিহাসের সোনালী ঘটনাগুলো এর প্রমাণ।
রোগ-শোক, মহামারি ও ব্যধিতে আক্রান্ত হয়েছেন অনেক নবি-রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম এবং ইসলামিক স্কলারগণ। মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে শহিদ হয়েছেন বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ। যিনি দুনিয়াতেই পেয়েছিলেন জান্নাতের নিশ্চয়তা।
রোগ-ব্যধি ও মহামারি সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা
কুরআনুল কারিমের অনেক স্থানে অসুস্থতার বর্ণনা আছে। যা যুগে যুগে নবি-রাসুলদের হয়েছিল। আর তারা তা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রায় প্রার্থনা করেছেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা অসুস্থতার বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন-
عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَى
তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে।’ (সুরা মুযযাম্মেল : আয়াত ২০)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় নবি ও তার প্রিয় বান্দাদের রাত জেগে কুরআন তেলাওয়াত ও রাতের ইবাদত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। আর ধারাবাহিক রাতজেগে ইবাদত করলে কেউ কেউ অসুস্থ হতে পারে সে কথাও আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেছেন। পুরো আয়াতটি ছিল এই-
‘আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হন রাতের প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দণ্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিন ও রাত পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পারবে না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ন হয়েছেন। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু তেলাওয়াত কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা মুযযাম্মেল : আয়াত ২০)
যে কোনো মানুষসহ মুমিন বান্দা যে অসুস্থ হতে পারেন এ আয়াতই তার প্রমাণ। কারণ আল্লাহ বলেছেন অসুস্থ হয়ে গেলে অল্প পরিমাণ হলেও তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর।
আবার রোজার বিধান দেওয়ার পর আল্লাহ তাআলা অসুস্থদের জন্য রমজানের ফরজ রোজাকেও শিথিল করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে লোক এ (রমজান) মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
মুমিন বান্দাসহ যে কোনো মানুষ অসুস্থ হতে পারেন- এ আয়াতও এর একটি প্রমাণ-
لَيْسَ عَلَى الْأَعْمَى حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْمَرِيضِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى أَنفُسِكُمْ أَن تَأْكُلُوا مِن بُيُوتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ آبَائِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أُمَّهَاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ إِخْوَانِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخَوَاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَعْمَامِكُمْ أَوْ بُيُوتِ عَمَّاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخْوَالِكُمْ أَوْ بُيُوتِ خَالَاتِكُمْ أَوْ مَا مَلَكْتُم مَّفَاتِحَهُ أَوْ صَدِيقِكُمْ لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَأْكُلُوا جَمِيعًا أَوْ أَشْتَاتًا فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُون
‘অন্ধের জন্য দোষ নেই, খঞ্জের জন্য দোষ নেই, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোষ নেই, এবং তোমাদের নিজেদের জন্যও দোষ নেই যে, তোমরা আহার করবে তোমাদের ঘরে অথবা তোমাদের পিতাদের ঘরে অথবা তোমাদের মাতাদের ঘরে অথবা তোমাদের ভাইদের ঘরে অথবা তোমাদের বোনদের ঘরে অথবা তোমাদের পিতৃব্যদের ঘরে অথবা তোমাদের ফুফুদের ঘরে অথবা তোমাদের মামাদের ঘরে অথবা তোমাদের খালাদের ঘরে অথবা সেই ঘরে- যার চাবি আছে তোমাদের হাতে অথবা তোমাদের বন্ধুদের ঘরে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথকভবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোনো দোষ নেই। অতঃপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও।’ (সুরা নুর : আয়াত ৬১)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ কথা বুঝিয়েছেন যারা চোখে দেখে না, যারা প্রতিবন্ধী কিংবা অসুস্থ তাদের সধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এখানেও আল্লাহ তাআলা অসুস্থতার কথা বলেছেন। যে মানুষ অসুস্থ হতে পারে।
নবি-রাসুলদের রোগ-ব্যধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
সাধারণ মানুষ যত পরহেজগার কিংবা আল্লাহ ভিরু হোক না কেন, কখনো কোনো নবির সঙ্গে তাদের তুলনা হবে না। মুসলমান মুমিন বান্দা অসুস্থ হবে না এমন কথা বলা ঠিক নয়; কেননা নবি-রাসুলগণও অসুস্থ হয়েছেন। কুরআনের তাদের বর্ণনা ওঠে এসেছে এভাবে-
১. হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে অসুস্থতা থেকে বাঁচতে এভাবে আশ্রয় চেয়েছেন-
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ৮০)
২. আল্লাহর নবি হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করেছেন-
وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
এবং স্মরণ করুন আইয়ুবের কথা; যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেন- আমি (অসুস্থতা) দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৩)
নবি-রাসুলদের বর্ণনা থেকেও এটি সুস্পষ্ট যে, যেখানে নবি-রাসুলগণ অসুস্থ হয়েছেন; সেখানে মুমিন মুসলমান অসুস্থ হতে পারেন না। অসুস্থতা মুমিন মুসলেমানকে আক্রান্ত করতে পারে না এটি সম্পূর্ণই ভুল ধারণা।
মহামারি প্রতিরোধে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত-
এতো গেল অসুস্থতার কথা। আবার অনেকে বলেন, মুমিন মসলমানদের মহামারিও হতে পারে না। হাদিসের বর্ণনা ও দিকনির্দেশনার আলোকে এ ধারণাও ভুল। কেননা মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে সাহাবি হজরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অনেক সাহাবি এবং যুগে যুগে অনেক ইসলামিক স্কলাররা ইন্তেকাল করেছেন।
ইসলামি খেলাফতের প্রথম যুগে মহামারি প্রতিরোধে হজরত ওমরের সিদ্ধান্তই ছিল যুগোপযোগী। ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৮ হিজরির ঘটনা। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন ইসলামি খেলাফতের আমির। সে সময় সিরিয়া-প্যালেস্টাইনে দেখা দেয় মহামারী প্লেগ। খলিফা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে জানতে পারেন সিরিয়ায় মহামারি প্লেগ দেখা দিয়েছে। তাতে তিনি হাদিনের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁর সিরিয়া সফর স্থগিত করেছিলেন। মহামারি প্রতিরোধ ও আত্মরক্ষায় তা ছিল হজরত ওমরের সময়ের সেরা কার্যকরী সিদ্ধান্ত।
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সফরের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান। মদিনা থেকে ‘সারগ’ নামক অঞ্চলে পৌছলে সেনাপতি আবু উবায়দাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু জানান যে, সিরিয়ায় প্লেগ তথা মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ইসলামে ইতিহাসে এ ঘটনা তাউনা আম্মাউস (طاعون عمواس) নামে পরিচিত। সে সময় তিনি সফর স্থগিত করেছিলেন।
যারা বলেন মুমিন মুসলমানকে মহামারি আক্রান্ত করবে না এটি তাদের জন্য অনেক বড় শিক্ষানীয় বিষয়। সে সময়টিতে সিরিয়ায় মহামারি প্লেগ-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় হজরত ওমর প্রবীণ সাহাবাদের কাছে এ মর্মে পরামর্শ চান যে, তিনি সিরিয়া সফর করবেন নাকি মদিনায় ফিরে যাবেন? সাহাবাদের মধ্য থেকে দুইটি মতামত জানানো হয়-
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাষ্ট্রীয় সফরে মহামারি প্লেগ আক্রান্ত অঞ্চলে যাবেন নাকি মদিনায় ফিরে যাবেন এ নিয়ে ৩টি পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়-
– প্রথমটি ছিল : প্রবীণ সাহাবাদের পরামর্শ
কিছু সাহাবা মতামত দিলেন যে, আপনি যে উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন, সে উদ্দেশে সফর অব্যাহত রাখেন। অর্থাৎ সিরিয়ায় যাওয়ার পক্ষে মত দেন। আবার কিছু সাহাবা বললেন, ‘খলিফার সিরিয়া যাওয়া উচিত হবে না।
– দ্বিতীয় ছিল : আনসার ও মুহাজিরদের পরামর্শ সভা
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রবীণ সাহাবাদের কাছ থেকে দুইটি মতামত পাওয়ায় পুনরায় পরামর্শের জন্য আনসার ও মুহাজির সাহাবাদের ডাকলেন। তারাও মতপার্থক্য করলেন।
– সবশেষে ছিল : প্রবীন কুরাইশদের পরামর্শ সভা
খলিফা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সবশেষে প্রবীণ কুরাইশদের ডাকলেন। তারা কোনো মতানৈক্য না করে সবাই এ মর্মে মতামত ব্যক্ত করলেন যে-
‘সিরিয়ার সফর স্থগিত করে আপনার মদিনায় প্রত্যাবর্তন করা উচিত। আপনি আপনার সঙ্গীদের মহামারি প্লেগের দিকে ঠেলে দেবেন না।’
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রবীণ কুরাইশদের এ মতামতটি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সিরিয়ার সফর স্থগিত করে মদিনায় ফিরে গেলেন।
খলিফার মদিনায় ফেরত যাওয়া দেখে অনেক সাহাবায়ে কেরাম তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- هل تفر من قدر الله – (أفرار من قَدَر الله) فقال عمر: نعم، نَفِر من قَدَر الله إلى قدر الله
‘হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদির থেকে পলায়ন করে ফিরে যাচ্ছেন? তখন তিনি বললেন, আমি তাকদির থেকে তাকদিরের দিকেই রওয়ানা হলাম।’
সেনাপতি হজরত আবু উবাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুও খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এ প্রশ্ন করেছিলেন। আর তা শুনে হজরত ওমর মনে কষ্ট পেলেন। প্রিয় মানুষের কাছে যেভাবে আপনজন কষ্ট পায়। কেননা হজরত আবু উবায়দাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন খলিফার অনেক পছন্দ ও ভালোবাসা পাত্র। তাছাড়া সেনাপতি আবু উবায়দাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবাদের অন্যতম একজন।
তখন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আবু উবায়দাহ! এ কথাটি তুমি না বলে যদি অন্য কেউ বলতো! তিনি সেনাপতির কথার উত্তরে বললেন- ‘হ্যাঁ’, আমরা আল্লাহর এক তাকদির থেকে আরেক তাকদিরের দিকে ফিরে যাচ্ছি।’ হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেনাপতি আবু উবায়দাহকে এ কথা বুঝাতে একটি উদাহরণ তুলে ধরেন এবং বললেন-
‘তুমি বলতো, তোমার কিছু উটকে তুমি এমন কোনো উপত্যকায় নিয়ে গেলে যেখানে দুইটি মাঠ আছে। মাঠ দুইটির মধ্যে একটি মাঠ সবুজ শ্যামলে ভরপুর। আর অন্য মাঠটি একেবারে শুষ্ক ও ধূসর। এখানে উট চরানো নিয়ে বিষয়টি কি এমন নয় যে, ‘তুমি সবুজ-শ্যামল মাঠে উট চরাও। আর তা আল্লাহর নির্ধারিত তাকদির অনুযায়ীই চরিয়েছ। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তা-ও আল্লাহর তাকদির অনুযায়ী চরিয়েছ।
এ উপমায় হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেনাপতিকে এ কথাই বলতে চাচ্ছেন যে, হাতে সুযোগ থাকতে ভালো গ্রহণ করার মানে এই নয় যে, আল্লাহর তাকদির থেকে পালিয়ে যাওয়া।’
সে সময় হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি হাদিস বর্ণনা করেন। সে হাদিসের বর্ণনায় হজরত আবু উবায়দাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর জিজ্ঞাসার পরিপূর্ণ সমাধান ওঠে এসেছে। তাহলো-
হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস শোনালেন। আর তাহলো-
‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারি প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়েও যেও না।’ (বুখারি)
এ হাদিস থেকেও প্রমাণিত যে, মহামারি শুধু সাধারণ মানুষ কিংবা অমুসলিমদের হবে আর মুমিন-মুসলমানের হবে না। বিষয়টি এমন নয়; বরং যে কারো মহামারি, রোগ-ব্যধি হতে পারে। ইসলামে এ নিয়ে ভুল ধারণা পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনাসহ সব সংক্রামক মহামারি ও রোগ-ব্যাধি থেকে হেফাজত করুন। ইসলামের দিকনির্দেশনার প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দেখানোর তাওফিক দান করুন। মহামারিরোধে হাদিসের ওপর আমল ও সতর্ক থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
ফুল চাষে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
-
চন্দ্রমল্লিকা চাষের নিয়ম-কানুন
-
আলু থেকে জন্ম নেবে গোলাপ গাছ
-
সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা
-
জারবেরা চাষে কোটিপতি আনোয়ার
-
এই ফুলগাছগুলো লাগাতে পারেন
-
ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করছেন যে যুবক
-
বেকারত্ব দূর করতে ফুল চাষ
-
টবে ফুলের চাষ কেন করবেন
-
উপকারী ফুল নয়নতারা
দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।
সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।
নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:
নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)
যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)
তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)
প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।
স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-
كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه
‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।
প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)
আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত
কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-
كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج
‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেন, তবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)
ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-
لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم
‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!
মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-
من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض
‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো না, তার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।
প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।
মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-
رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا
উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)
উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।
আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।
ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।
কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।
হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।
সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)
আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন