অবসর আর আনন্দদায়ক মুহূর্তকে আরও রঙিন করে তুলতে বাড়িতে বানানো নাশতার কোনো জুড়ি নেই। আড্ডাকে প্রাণবন্ত করতে, মুহূর্তে শিশুদের ‘মুড অন’ করতে মুচমুচে, কুরকুরে, মসলাদার কত রকমই না হতে পারে নাশতা। নাশতা মানেই একটু মনের মতো, একটু নিজের মতো; নাশতা মানেই জিবে জল আনা একটা ব্যাপার। সবসময়ই যে ভাজাপোড়াই হবে, তা নয়; মৌসুমী ফল কিংবা শরবতও হতে পারে নাশতার অনুষঙ্গ। ঝটপট সহজেই বানিয়ে নিতে পারেন এমন কিছু নাশতার রেসিপি রইল আপনাদের জন্য।
মোহিঙ্গা
উপকরণ
সেদ্ধ নুডলস ১ কাপ, চিকেন স্টক ১ কাপ, নারকেল দুধ ১ কাপ, তেলে ভাজা রসুন কুচি ১ চা-চামচ, হাড় ছাড়া মুরগির মাংসের ফ্রাই (ছোট ছোট টুকরা) ২ টেবিল চামচ। নারকেল কুচি, বেসন ও লবণ প্রয়োজনমতো (এগুলো একসঙ্গে মেখে ভেজে ৭-৮টি বড়া তৈরি করে নিন)। ভাজা চিংড়ি মাছ ৪-৫টি, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা-চামচ, টালা শুকনা মরিচ গুঁড়া সামান্য, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ টেবিল চামচ, থাই গ্রাস ২টি, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি
নারকেলের দুধ ও চিকেন স্টক জ্বাল দিয়ে সুপ তৈরি করে নিন। নুডলস ও অন্য সব উপকরণ একটি বড় পাত্রে নিন। এর ওপর স্যুপ ঢেলে গরম-গরম পরিবেশন করুন।
রাইস ফ্রিটার্স
উপকরণ
সেদ্ধ ভাত বা রান্না করা পোলাও ২ কাপ, ডিম ১টি, মুরগির কিমা আধা কাপ, কাঁচা মরিচ কুচি ২টি, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, বাদাম কুচি ১ চা-চামচ, গরম মসলা গুঁড়া সামান্য, গোল মরিচ গুঁড়া, আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, পুদিনা পাতা চার-পাঁচটি, তেল ভাজার জন্য।
প্রণালি
তেল ছাড়া সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এ থেকে পছন্দমতো কয়েকটি বল বানিয়ে নিন। এগুলো ডুবো তেলে সোনালি করে ভেজে সস দিয়ে গরম-গরম পরিবেশন করুন।
রস পিঠা
উপকরণ
ময়দা দেড় কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ, লবণ সামান্য, এলাচি গুঁড়া আধা চা-চামচ, তেল ভাজার জন্য। বাদাম কুচি ১ চা-চামচ।
শিরা তৈরি
১ কাপ পানি, ১ কাপ চিনি, ২ টেবিল চামচ লেবুর রস। সব উপকরণ জ্বাল দিয়ে শিরা তৈরি করুন।
প্রণালি
পরিমাণমতো গরম পানিতে ঘি ও সামান্য লবণ দিয়ে তাতে ময়দা দিন এবং নাড়ুন। খুব মসৃণ করে মেখে নিয়ে পাতলা রুটি বানিয়ে নিন। এই রুটি রোল করে জিলাপির মতো পিঠা তৈরি করুন এবং ডুবো তেলে ভেজে নিন। এবার শিরায় কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। ঠান্ডা করে বাদাম কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।
সবজির রোল
উপকরণ
পুরের জন্য
গাজর কুচি ৩ টেবিল চামচ, বাঁধাকপি কুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁপে কুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ২টি, ধনে পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, টমেটো সস ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল প্রয়োজনমতো, ডিম ১টি, বিস্কুটের গুঁড়া ১ কাপ।
রুটির জন্য
ময়দা ২ কাপ, ডিম ১টি, লবণ স্বাদমতো। প্রয়োজনমতো পানি ও বাকি সব উপকরণ দিয়ে গোলা তৈরি করে নিন। ফ্রাই প্যানে সামান্য তেল দিয়ে এক হাতা করে গোলা ছড়িয়ে দিন। এভাবে কয়েকটি রুটি তৈরি করুন।
প্রণালি
পুরের সব উপকরণ থেকে ডিম ও বিস্কুটের গুঁড়া ছাড়া বাকিগুলো মেখে নিন। এবার প্যানে তেলে এগুলো দিয়ে নাড়াচাড়া করে পুর বানিয়ে নিন। পুর কিছুটা ঠান্ডা হলে, রুটির মাঝে পুর দিয়ে রোল করে নিন। এবার ডিমের গোলায় ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়া মেখে ডুবো তেলে বাদামি করে ভেজে সস দিয়ে পরিবেশন করুন।
ছোলা-আলু চাট
উপকরণ
ছোলা সেদ্ধ (লবণ, আদা দিয়ে) ১ কাপ, গোটা আলু সেদ্ধ ১ কাপ, ডালের বড়া ৭-৮টি, তেঁতুলের মাড় ২ টেবিল চামচ, টালা পাঁচফোড়ন গুঁড়া ১ চা-চামচ, গুড় ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা-চামচ, টমেটো কুচি ১ টেবিল চামচ, শসা কুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, পুদিনা পাতা ৮-১০টি, আদা কুচি ১ চা-চামচ, ভাজা জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, ধনে পাতা কুচি ১ চা-চামচ, শুকনো মরিচ টালা গুঁড়া সামান্য, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, টকদই ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল প্রয়োজনমতো, মুড়ি (ইচ্ছা হলে)।
প্রণালি
সেদ্ধ আলু কিউব করে কেটে লবণ দিয়ে তেলে ভেজে নিন। বড় পাত্রে আলু ভাজা আধা ভাঙা করে নিন। ডালের বড়া আধা ভাঙা করুন। গুড় দিয়ে তেঁতুলের মাড় জ্বাল দিয়ে নিন। তারপর সেদ্ধ ছোলা এবং ওপরের সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে পরিবেশন করুন।
লেবু-আনারস জুস
উপকরণ
আনারস কুচি ১ কাপ, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, চিনি আধা কাপ, পুদিনা পাতা চার-পাঁচটি, ঠান্ডা পানি ২ গ্লাস, বরফ কুচি প্রয়োজনমতো।
প্রণালি
বরফ কুচি ও পুদিনা পাতা ছাড়া বাকি সব উপকরণ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। ছেঁকে বরফ কুচি ও পুদিনা পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।
বাতাবি লেবুর সালাদ
উপকরণ
বাতাবি লেবু ১ কাপ, শুকনো মরিচ টালা গুঁড়া সামান্য, বিট লবণ ১ চিমটি, পুদিনা পাতা ৪-৫টি, চিনি ১ চা–চামচ, সরিষার তেল ১ চা-চামচ।
প্রণালি
বাতাবি লেবুর সঙ্গে বাকি সব উপকরণ হালকাভাবে মেখে পরিবেশন করুন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন