চানাচুর বললে মনটা চনমনে না হলে কাউকে বেরসিক বলা কি ভুল হবে? হয়তো ‘না’। তার ওপর দিনটা যদি হয় একটু মেঘলা, সঙ্গে যদি থাকে মুড়ি। তার সঙ্গে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ আর শর্ষের তেল হলে তো সোনায় সোহাগা! কিন্তু যদি বলি, চানাচুরটা মাছের, তাহলে নাক সিটকাবেন? চানাচুরের মধ্যে মাছ? এ তো একেবারে ‘কিসের সঙ্গে কী পান্তাভাতে ঘি’–এর চেয়ে কয়েক কাঠি সরেস! তবে এটা গালগপ্প নয়, মাছ দিয়ে চানাচুর বানিয়ে দেখিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। শুধু চানাচুর নয়, তাঁরা মাছের বাদাম ও তিলের খাজাও বানিয়েছেন।
এই চানাচুর, বাদাম ও তিলের বার বা খাজা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে কাচকি মাছ। কাচকি মাছের নাম শোনেননি, এমন কেউ এই বঙ্গদেশে নেই। দেশি প্রজাতির এই ছোট মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Corica Soborna। দেশের নদীনালা, খালবিলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। আর এই মাছ যে আর দশটা মাছের মতোই পুষ্টিকর, তা–ও আমরা জানি। সমস্যা হলো, পরিবারের নবীন সদস্যদের নিয়ে। মাছে–ভাতে বাঙালি না বলে এই নবীনদের মাছে–মুরগিতে বাঙালি বলার সময় এসেছে হয়তো। কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ পরিবারের নবীন সদস্যদের পাতে দেওয়াই দায়। এর চেয়ে বরং মুরগিই তাদের কাছে অতি আদরণীয়। তাই মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে শিশুদের প্রাণিজ আমিষ জোগাতে এসব খাদ্যপণ্য তৈরি করেছেন গবেষকেরা।বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপন
শিশুদের মাছের প্রতি ঝোঁক অনেকটা কম। প্রাণিজ আমিষ হিসেবে মাছ ঝুঁকিমুক্ত ও অতুলনীয়। চানাচুর বা বারের প্রতি শিশুরা এমনিতেই আকৃষ্ট। তাই এসব পণ্যের সঙ্গে মাছ যুক্ত করায় পুষ্টিগুণ নিঃসন্দেহে বেড়েছে।
মো. নূরুল হায়দার, শিক্ষক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
চানাচুর, বিভিন্ন বার বা খাজা খেতে অবশ্য শিশুদের ‘না’ নেই। পুষ্টিবিদেরা বলেন, এ ধরনের খাবার সাধারণত শর্করা ও চর্বিসমৃদ্ধ হয়, আমিষ তুলনামূলক অনেক কম থাকে। মাত্রাতিরিক্ত শর্করা ও চর্বি খাওয়া যেকোনো বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আর প্রাণিজ আমিষের অন্যান্য উপাদানের মধ্যে যেকোনো মাছ অধিক পুষ্টিকর এবং এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কম।
শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে কাঁচকি মাছের এসব প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য তৈরি করার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক মো. নূরুল হায়দার ও মো. মোবারক হোসেন। সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় এক বছর গবেষণা করে সফল হয়েছেন তাঁরা।
প্রধান গবেষক মো. নূরুল হায়দার বলেন, ‘শিশুদের মাছের প্রতি ঝোঁক অনেকটা কম। মুরগি বা অন্যান্য মাংসের প্রতি তাদের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। প্রাণিজ আমিষ হিসেবে মাছ ঝুঁকিমুক্ত ও অতুলনীয়। চানাচুর বা বারের প্রতি শিশুরা এমনিতেই আকৃষ্ট। তাই এসব পণ্যের সঙ্গে মাছ যুক্ত করায় পুষ্টিগুণ নিঃসন্দেহে বেড়েছে। আর এই ভাবনা থেকে এ ধরনের পণ্য তৈরির কথা মাথায় আসে। এতে একদিকে কিছুটা ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যাবে, অন্যদিকে পূরণ হবে আমিষের ঘাটতি।’
অধ্যাপক মো. নূরুল হায়দার বলেন, ‘কাচকি মাছে প্রচুর আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ এবং খনিজ পদার্থ (মিনারেল) আছে। এ মাছের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এটি প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে কাঁটাসহ চিবিয়ে খাওয়া যায়। সব বয়সী মানুষের জন্য এসব পণ্য হতে পারে পুষ্টিকর মুখরোচক খাবার।’বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশ নিউট্রিশন গবেষণাগারে এসব মাছের তৈরি পণ্যের পুষ্টিগুণ পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে সাধারণ চানাচুর বা বারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি আমিষ পাওয়া গেছে এসব পণ্যে। গুণগত মান বিবেচনায় চানাচুরে শতকরা ৩৯-৪২ ভাগ শর্করা, ২৬-৩০ ভাগ লিপিড, ১৮-২২ ভাগ আমিষ ও ৫ ভাগ খনিজ পাওয়া যায়। আর বাদাম ও তিলের বারে শতকরা ৩২-৩৪ ভাগ শর্করা, ১৩-১৯ ভাগ লিপিড, ১৩-১৫ ভাগ আমিষ ও ১২-১৫ ভাগ মিনারেল উপস্থিত ছিল।
গবেষকেরা জানান, মাছ বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে এসব পণ্য তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করার পর এসব পণ্যে আর মাছের গন্ধ থাকে না। ভিন্ন স্বাদের এসব খাদ্যপণ্যের নির্দিষ্ট আর্দ্রতা বজায় রাখা হয়। ভালোভাবে প্যাকেটজাত করলে এগুলো দু-তিন মাস পর্যন্ত খাবার উপযোগী থাকবে। অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় সাধারণ চানাচুর ও বারের তুলনায় মাছের তৈরি পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হবে। তবে তা ৫-১০ টাকার বেশি নয়।
এই খাবারগুলো কি বাণিজ্যিকীকরণ করা হবে? প্রশ্নের উত্তরে নূরুল হায়দার বলেন, ‘আপাতত বাণিজ্যিকীকরণের চিন্তাভাবনা করা হয়নি। কোনো খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যদি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে চায়, সে ক্ষেত্রে আমাদের গবেষক দল সহযোগিতা করবে।’
কাচকি মাছের চানাচুর, বাদাম ও তিলের খাজা তৈরির তথ্যটি আমরা জানিয়েছিলাম বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের সাবেক প্রধান কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান আখতারুন নাহার আলোকে। তিনি বলেন, ‘পুষ্টিগুণ নিয়ে আমার প্রশ্ন নেই। কিন্তু খেতে কেমন লাগবে? চানাচুরের সঙ্গে হয়তো মাছটা ভালোই যাবে। কারণ, মাছ নিশ্চয়ই কুড়মুড়ে হবে। তবে বাদাম ও তিলের বার তো মিষ্টি; এই মিষ্টির সঙ্গে মাছ কতটা মানানসই, তা না খেলে বলা যাবে না। সব মিলিয়ে উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এটা বলতে পারি, এই খাবারগুলো আমিষের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। আর প্রক্রিয়াজাত হলেও আমিষ সহজে নষ্ট হয় না। কাজেই খাওয়ার আগে অন্তত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। চেখে তো দেখাই যায়।’
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন