কথায় বলে, মাছে-ভাতে বাঙালি! মাছ খেতে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ভালোবাসি। মাছ শুধু একটি পদ নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। গরম ভাতের সাথে মাছের কোনো জুরি নেই। এখানে তিন প্রকারের মাছ বিভিন্ন স্টাইলে রান্না করার রেসিপি দেয়া হলো-
আমোদিনী পাবদা
উপকরণ: পাবদা মাছ ২ পিস, পিঁয়াজ – ১ টা বড়, টমেটো – ১ টা বড়, আদা – ২ ইঞ্চি, মৌরি – ১ চা চামচ, কাঁচা মরিচ – ১ টা, নারকেলের দুধ – ১/২ কাপ, হলুদ – ১/২ চা চামচ, কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ, লবণ– ১/২ চা চামচ, চিনি – ১ চিমটি, সরষের তেল – ২ টেবিল চামচ
প্রণালী: মাছে লবণ হলুদ মাখিয়ে রাখুন। আদা, মৌরি, কাঁচা মরিচ একসঙ্গে বেটে নিন। কড়াইতে তেল দিন। মাছ ভেজে তুলে রাখুন। একই তেলে পিঁয়াজ কুচি দিন ভাল করে ভাজুন। টমেটো কুচি দিন। আবার ভাজুন। বাটা মশলা দিন। ভাল করে কষিয়ে নিন। লবণ হলুদ, কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়ো, চিনি দিয়ে কষুন। অল্প পানি দিন। ফুটে গেলে নারকেলের দুধ দিন। ভাজা মাছ দিন। ফুটে উঠলে মাছ একবার উলটে দিয়ে নামিয়ে নিন। আদা জুলিয়েন, নারকেলের দুধ দিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
প্রনালী: কড়াইতে তেল দিয়ে তাতে পিঁয়াজ কুচি দিন। একটু ভাজা হয়ে এলে সব মসলা গুলো দিয়ে কষিয়ে নিন। এবার লাউপাতা গুলো দিয়ে ঝোলে একটু ভাপিয়ে নিয়ে উঠিয়ে নিন। মাছের টুকরা গুলো দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন। হয়ে এলে গরম ভাতের সঙ্গে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
কচুরমুখী দিয়ে ইলিশ মাছ
উপকরণ: কচুরমুখী -১/২কেজি, ইলিশ মাছ- ৬ পিস, সয়াবিন তেল-১/৩ কাপ, পেঁয়াজ বাটা- ১/৩ কাপ, রসুন বাটা- ১ চা চামচ, জিরে বাটা – ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়ো -১/২ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো -১/২ চা চামচ, কাঁচা মরিচ- ৪ টি, ধনেপাতা কুচি ১/২ কাপ, লবণ- রুচি অনুযায়ী
প্রণালী: .কচুরমুখী গুলোর চামড়া ফেলে টুকরো করে অল্প পানি ও লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। ইলিশ মাছের টুকরোগুলো ভালো করে ধুয়ে লবণ, হলুদ, মরিচ গুঁড়ো মাখিয়ে হালকা করে ভেজে নিন।মূল রান্নায় আসার জন্য কড়াইতে তেল গরম করে এতে প্রথমে পেঁয়াজ বাটা ও রসুন বাটা দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে একে একে জিরেবাটা, হলুদ , মরিচ গুঁড়ো, লবন দিয়ে মশলা গুলো কষিয়ে নিন।কষানো মশলায় এবার সিদ্ধ কচুগুলো দিয়ে কষিয়ে নিন। ভালোভাবে মশলা কচুর গায়ে লেগে গেলে ইলিশ মাছ গুলো দিয়ে আলতো করে নেড়েচেড়ে একটু ঝোল দিয়ে ঢেকে দিন। ঝোল একটু গারো হয়ে আসলে কাঁচা মরিচ ও ধনে পাতা দিয়ে ২ /৩ মিনিট রেখে সবুজ থাকতেই লবণ চেখে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন