বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণে অনেক মানুষের হতাহতের ঘটনার পর মসজিদ নির্মাণের অনুমোদনের ইস্যুসহ নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, ইসলামী ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, একেবারে নিষ্কন্টক জমি না হলে এবং পুরোপুরি স্বচ্ছ্বতা ছাড়া কোন মসজিদ নির্মাণ করা যায় না।
মসজিদের ইমামদের একটি সংগঠন জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব এবং লেখক মো: ওসমান গণি বলেছেন, ইসলাম ধর্মে মসজিদ নির্মাণে পুরোপুরি স্বচ্ছ্ব থাকার কথা বলা হয়েছে।
ইসলামের নবীর মসজিদ নির্মাণের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেছেন, “রসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ নির্মাণের জন্য যে জায়গাটি পছন্দ করলেন, খবর নিলেন যে জায়গাটি কার- জানা গেলো দুই ভাইয়ের জায়গা। তারা যখন জানতে পারলো, নবীজী জায়গাটা মসজিদের জন্য পছন্দ করেছেন, তখন তারা জায়গাটা ফ্রিতে (বিনামূল্যে) দিতে চাইলো। নবীজী বললেন যে, না আমি তোমাদের জায়গা ফ্রিতে নেবো না। তখন নবী করীম (সা:) এটার জন্য একটা ফাণ্ড ক্রিয়েট করলেন এবং সেই ফাণ্ড থেকে উপযুক্ত বাজার মূল্য পরিশোধ করে তারপর সেখানে তিনি মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করলেন। মদিনা শরীফ নামে পরিচিত মসজিদে নববী যেটি।”
ইসলামী ব্যাখ্যায় স্বচ্ছ্বতার বিষয়কেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে তিনি বলেন।
বাংলাদেশের আইনে কি ব্যবস্থা বলা আছে?
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, অন্য সব স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে যেমন নকশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, মসজিদের ক্ষেত্রেও সেগুলো অনুসরণ করা প্রয়োজন।
কিন্তু মসজিদের নির্মাণ থেকে শুরু করে নিরাপত্তার প্রশ্নে মনিটরিংয়ের কোন নীতিমালা নেই।
সরকারের ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বলেছেন, মসজিদের জায়গার বৈধতা এবং নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় মনিটর করার জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোন কাঠামো নেই।
অনেকদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি নীতিমালার খসড়া এখন চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেয়ার কথাও তিনি জানিয়েছেন।
একইসাথে তিনি বলেছেন, নীতিমালা করতে যেহেতু সময় প্রয়োজন, ফলে এই মুহূর্তে নীতিমালা না থাকলেও সারাদেশে মসজিদের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ তারা নিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের যে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটে, সেই মসজিদের মেঝের নিচে দিয়ে গ্যাসের লাইন থাকার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে স্থানীয়ভাবে নির্মিত এই মসজিদে বিদ্যুতের দু’টি লাইনের একটি অবৈধ বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওয়াকফ অধ্যাদেশ অনুযায়ী জায়গা নিয়ে সেখানে মসজিদ করা হয়েছে কিনা-এই বিষয়টিও সরকারি তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে বলে বলা হয়েছে।
এই মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর বলেছেন, মসজিদের নকশা এবং নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুমোদন আছে কিনা-তা তার জানা নাই।
“তারাবারি নামাজের জন্য বিদ্যুতের দু’টা লাইন নেয়া হয়েছে। এটা নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুতের কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে বলে এক মাসের জন্য বাড়তি লাইনটা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু একটা লাইন বৈধ।”
তিনি আরও বলেছেন, “মসজিদের নকশা এবং এটা কিভাবে নির্মাণ করেছে, এর অনুমতি নিছে কিনা-এগুলো বলতে পারতাম না। আমরাতো নতুন কমিটিতে এসেছি। পুরোনোরাতো অনেকে বেঁচে নাই।”
এখন মসজিদ নির্মাণে অনুমোদনের বিষয় সহ নিরাপত্তার নানা প্রশ্ন আলোচনায় এসেছে।
মালিকানার দাবি না রেখে জায়গা মসজিদের জন্য দিয়ে দেয়া হলে সেটাকে নির্ধারিত একটি আইন অনুযায়ী ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে অনুমোদন নিতে হয়।
এভাবে অনেক মসজিদ গড়ে উঠেছে।
সারাদেশে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা তিন লাখের বেশি মসজিদ রয়েছে।
ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের অধীনে রয়েছে বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ দেশে মাত্র চারটি মসজিদ ।
ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বলেছেন, যেসব প্রশ্ন এখন উঠছে, সেগুলো মনিটরিংয়ের উদ্যোগ এখন তারা নিচ্ছেন।
“বর্তমান ঘটনার পরে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটা উদ্যোগ নিচ্ছে যে এই মনিটরিংয়ের ব্যাপারে একটা নীতিমালা খসড়া পর্যায়ে ছিল। সেটাকে আরও হালনাগাদ করে দ্রুত চুড়ান্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। জায়গার ব্যাপারে যেমন খাসজমিতে মসজিদ করতে হলে অবশ্যই সরকারের কাছ থেকে সেই জমির বন্দোবস্ত নিতে হবে। আর বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের ব্যাপারে সেসব বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এই নিয়মগুলো অন্যদের সবার মতো মসজিদকেও মানতে হয়।”
তিনি আরও বলেছেন, “আমরা একটা উদ্যোগ নিচ্ছি। এখন সারাদেশে মসজিদগুলোর নিমার্ণের অনুমোদনসহ নিরাপত্তার বিষয়গুলো কী অবস্থায় আছে, সেগুলো স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আমরা হয়তো পদক্ষেপ নেবো।”
নারায়ণগঞ্জের ঘটনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গত রোববার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যারা অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে মসজিদ গড়ে তুলছেন, সেই জায়গা স্থাপনা করার মতো কিনা বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কিনা- এসব বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার।
ইসলামী চিন্তাবিদদেরও অনেকে বলেছেন, অনেক সময় স্বার্থন্বেষী মহল সরকারি জায়গা, এমনকী নদী খাল দখলের ক্ষেত্রে মসজিদের ব্যানার ব্যবহার করে থাকে এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণে যথাযথ কর্তৃপক্ষে অনুমতি থাকে না। কিন্তু আবেগ এবং ধর্মীয় বিষয় হওয়ায় কর্তৃপক্ষও নীরব থাকে বলে তারা মনে করেন।
জাতীয় ইমাম সমাজ নামের একটি সংগঠনের মহাসচিব এবং ঢাকার চকবাজার শহীবাজার মসজিদের ইমাম মিনহাজ উদ্দিন বলেছেন, অনেক সময় ব্যত্যয় ঘটে। তবে এমন মসজিদের সংখ্যা অনেক কম বলে তিনি মনে করেন।
“মসজিদের নির্মাণ এবং মসজিদ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়তো নির্ভেজাল এবং স্বচ্ছ্ব হওয়া দরকার। তবে কিছু ব্যত্যয় ঘটে-যা আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুনতে পাই। কিছু কিছু জায়গায় শুনি যে জমি দখলকে কেন্দ্র করে কোন ধরণের বিভেদ-সেটাকে কেন্দ্র করে সেখানে মসজিদকে ব্যবহার করার জন্য স্বার্থন্বেষী মহলের একটা বিষয় কাজ করে। এই কাজগুলো অবশ্যই নিন্দনীয়।”
“তবে নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে যাতে করে আবার হয়রানিমূলক কোন কার্যক্রম শুরু না হয়ে যায়,এ বিষয়টাও আমাদের চিন্তায় বা আমলে আনা দরকার।”
কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, তাদের উদ্যোগ বা পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন হয়রানির ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে তারা সজাগ থাকবেন।
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে গত শুক্রবার রাতে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত ২৭জনের মৃত্যু হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ মসজিদ বিস্ফোরণ: নিষ্কন্টক জমি ছাড়া কি মসজিদ নির্মাণ করা যায়, ইসলামের ব্যাখ্যা কী?
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম
নারায়ণগঞ্জে বায়তুস সালাত মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার পর নানা অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে।
দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।
সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।
নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:
নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)
যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)
তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)
প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।
স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-
كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه
‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।
প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)
আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত
কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-
كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج
‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেন, তবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)
ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-
لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم
‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!
মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-
من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض
‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো না, তার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।
প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।
মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)
উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।
আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।
ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।
কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।
হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।
সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়- وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ (হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪) তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন- > হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না। > হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না। > হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না। > হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না। > হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়- এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো- ‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)
আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন