চীন মঙ্গলে যেতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরেই মার্স মিশন নিয়ে আছে। এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতও নিয়েছে মঙ্গলে যাওয়ার মিশন। সম্প্রতি এই তিন দেশই ‘লাল গ্রহে’ যাওয়ার টিকিট কেটেছে। কিন্তু হুট করে কেন সবাই মঙ্গলে যেতে চাইছে? শুধুই কি নিখাদ বিজ্ঞানচর্চা, নাকি এর পেছনে অন্য কিছু আছে?
ওপরের দুই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে কে, কীভাবে মঙ্গলযাত্রার সূচনা করেছে, তার বৃত্তান্ত জানা যাক। শুরুটা করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত মাসে প্রথমে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পরিভ্রমণের জন্য ‘আমাল’ নামের একটি যান পাঠায় দেশটি। জাপান থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এটি মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছাতে পারবে।
এর ঠিক চার দিনের মাথায় চীন উৎক্ষেপণ করে ‘তিয়ানওয়েন-১’। মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশে এই প্রথম যান পাঠাল সি চিন পিংয়ের দেশ। হাইনান প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক দ্বীপ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় যানটি। চীনের প্যাকেজে একটি অরবিটার ও মঙ্গলপৃষ্ঠে চলার মতো উপযোগী একটি রোভার (যান) আছে। অর্থাৎ কক্ষপথে ঘুরে ছবি ও তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠদেশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে এই যান। চীনের এটিই প্রথম মঙ্গল অভিযান।
চীনের সঙ্গে ব্যাপক টক্কর চলছে ট্রাম্পের দেশের। বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে জোর কদমে। একে অন্যের বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার চেষ্টাও করছে। চীন চলে যাচ্ছে মঙ্গলে, যুক্তরাষ্ট্র কি আর বসে থাকতে পারে? তাই নতুন মঙ্গলযান ‘পারসিভের্যান্স’ পাঠিয়েছে। এ জন্য দেওয়া হয়েছে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের বাজেট। বলা হচ্ছে, ছয় পায়ের পারসিভের্যান্স মঙ্গলের পাথুরে জমিনে হাঁটতে পারবে স্বচ্ছন্দে। সংগ্রহ করবে নানা ধরনের নমুনা।
বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মূল লক্ষ্যই হলো পৃথিবীর বুকে দেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ৫০ বছর উদ্যাপন। এ জন্যই পাঠানো হয়েছে মঙ্গলযান। আমালের আকার একটি ছোট গাড়ির মতো। এটি মূলত গ্রহের জলবায়ু নিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চীনের তিয়ানওয়েন-১ দেশটির জন্য নতুন উচ্চতায় ওঠার সিঁড়ি। বাণিজ্যযুদ্ধ চলার মধ্যেই এসেছে করোনা মহামারি। এমন পরিস্থিতিতে চীন নিজের মর্যাদা আকাশে তোলার সুযোগ পেয়েছে এই মঙ্গলযান উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। আর এর মধ্য দিয়েই মঙ্গলে যাওয়ার দিক থেকে ‘সিনিয়র’ যুক্তরাষ্ট্র পড়ে গেছে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’তে। তাতে দেশটির সাড়াও দিয়েছে ভালোমতোই। কিন্তু কথা হলো করোনার দাপটে পৃথিবী যখন বিপর্যস্ত, তখন সেটা না সামলে পৃথিবী ছাড়ার দরকার পড়ল কেন?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মহাকাশে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই তড়িঘড়ির পেছনে পৃথিবীতে চলা দ্বন্দ্বই কাজ করছে। আবার বর্তমান বিধ্বস্ত পরিস্থিতি থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলতেও এমন কার্যক্রম ভালো কাজে দেয়। দুই দেশের শীর্ষ নেতাই এমন কাজে পারদর্শী বেশ।
অবশ্য এর আরেকটি দিকও আছে। এবিসি নিউজের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছেন—এটা ভালো দিক। এতে করে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানই উপকৃত হবে। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্পেস পলিসি ইনস্টিটিউটের ইমেরিটাস অধ্যাপক জন লগসডন বলছেন, সব বিজ্ঞানী একে অন্যের প্রতিযোগী হয়ে উঠছেন—এটি ভালো লক্ষণ। মঙ্গলে একাধিক মিশন চালানো হলে মানুষ লাভবানই হবে।
মঙ্গল গ্রহ ও চাঁদের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক দিনের। পৃথিবীর বিকল্প খোঁজার চেষ্টা তো এক দিনের নয়। মঙ্গল ও চাঁদের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাসস্থান নির্মাণকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এ নিয়ে ঢের সায়েন্স ফিকশন গল্পগাথাও রচিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া ও জলবায়ু অনেক আগে পৃথিবীর মতোই ছিল। এ কারণেই অন্য গ্রহে বাসস্থান নির্মাণের ক্ষেত্রে মঙ্গল এগিয়ে আছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টেসলার এলন মাস্কের মতো শতকোটিপতিদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ফলে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোও মঙ্গল জয়ের প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছে।
চীনের চন্দ্র অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী ওউইয়াং জিউয়ান। সম্প্রতি চীনা সংবাদমাধ্যমগুলোতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই মানুষ স্থানান্তরের জন্য দ্বিতীয় গ্রহ খুঁজছেন। এর মূল উদ্দেশ্যই হলো জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত পৃথিবীর মনুষ্য প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিকল্প আবাসস্থল গড়ে তোলা। বর্তমানে সম্ভাবনা হিসেবে হাতে আছে কেবল মঙ্গল গ্রহ।
তবে এলন মাস্কের মতো উদ্যোক্তা ও শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর অন্য গ্রহে মানুষের ‘কলোনি’ তৈরির ক্ষেত্রে সবাই আশাবাদী হচ্ছে না। যারা মঙ্গলে কলোনি স্থাপনের বিষয়ে বেশি আগ্রহী, তারা বলছে, মনুষ্য প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতেই এটি প্রয়োজন। কিন্তু নিন্দুকেরা বলছে, এভাবে অন্য গ্রহে কলোনি তৈরির দিকে না ঝুঁকে বরং পৃথিবীর বর্তমান সমস্যাগুলো মোকাবিলায় অর্থ খরচ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। সমালোচকদের অভিযোগ, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য সমস্যা না রুখে অবিবেচকের মতো অন্য গ্রহে কলোনি তৈরির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ঢালার কোনো মানে নেই।
‘জ্যাকোবিন’ ম্যাগাজিনে চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, মঙ্গল বা অন্য কোনো গ্রহে মানুষের কলোনি নির্মিত হলে তাতে সাধারণ মানুষের কোনো লাভ হবে না। এটি তৈরিই হবে শুধু ধনী মানুষের জন্য। কারণ, এসব প্রকল্পে অর্থ ঢালছে ধনী ও প্রভাবশালীরা। হয়তো শুরুতে কিছু সাধারণ মানুষকে নেওয়া হবে, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তারা পরিণত হবে প্রজায়। সেটি হবে শুধুই রাজাদের স্বর্গ।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, মহাকাশে কলোনি নির্মিত হলে সেখানে ব্যক্তির স্বাধীনতাও খর্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ‘ডার্ক স্কাইজ: স্পেস এক্সপানশনিসম, প্ল্যানেটারি জিওপলিটিকস অ্যান্ড দ্য এন্ডস অব হিউম্যানিটি’ নামক বইয়ের রচয়িতা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ডিউডনি বলছেন, মহাকাশে বসতি স্থাপন ও ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়। নতুন গ্রহে তৈরি কলোনিতে সমষ্টিতে বিলীন হয়ে যাবে ব্যক্তি। সুতরাং ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী হলে মঙ্গলে ঘরবাড়ি বানানোয় সমর্থন না দেওয়াই ভালো হবে।
মঙ্গলে আদৌ মানুষ বসতি স্থাপন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ভবিষ্যৎই জানাবে মানুষ দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধান পাবে কি না। তবে এ নিয়ে এখনই যেসব প্রশ্নের তির উঠতে শুরু করেছে, সেগুলোর যৌক্তিক সমাধান করে একটি সম্মিলিত প্রয়াস সৃষ্টি করাও প্রয়োজন। তবেই হয়তো মানুষের মহাকাশ অভিযাত্রা সত্যিকারের সফলতা পাবে।
ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ভারত-বাংলাদেশের ওপর করোনাভাইরাসের দায় চাপানোর চেষ্টায় মেতে উঠেছে চীন। দেশটির একদল গবেষক দাবি করেছেন, করোনাভাইরাস উহান থেকে নয়, ভারত-বাংলাদেশ থেকেই ছড়িয়েছে। তারা বলেছেন, ২০১৯ সালের গ্রীষ্মেই সম্ভবত করোনার জীবাণু ছড়িয়েছে। আর সেটা ছড়িয়ে থাকতে পারে ভারত অথবা বাংলাদেশ থেকে। এখান থেকে এ জীবাণু উহানে বাহিত হয়েছে। আর উহানেই এটা প্রথম শনাক্ত হয়। যদিও তাদের এমন অযৌক্তিক দাবিকে সন্দেহের চোখেই দেখছেন পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা।
চীনের একাডেমি অব সায়েন্সের একদল গবেষকের গবেষণার ফলাফলে বিস্ফোরক এ দাবি করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের প্রাক-প্রকাশনা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গত ১৭ নভেম্বর চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। ওই প্রবন্ধ উদ্ধৃত করে গত শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান বলেছে, উহানের দোষ এখন বাংলাদেশ বা ভারতের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। চীনা বিজ্ঞানীরা আচমকা এমন অযৌক্তিক দাবি তোলায় পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের মতে, এই গবেষণা ‘বড় ধরনের’ দাবি তুলছে, আর এ কারণে সতর্কতা ও সন্দেহপ্রবণ চোখে এটি ভালো করে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
শুক্রবার ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগেও চীনের একাধিক গবেষণায় কভিড-১৯ মহামারির দায় দেশটির সীমান্তের বাইরে কারও ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একাধিক গবেষণায় ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রকে এই জীবাণুর উৎস দেশ হিসেবে শনাক্তের চেষ্টা করা হয়েছে।
গত বছর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনের কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভাইরাসের তথ্য প্রকাশ করে। শুরুতে এই ভাইরাস চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছড়ায়। একপর্যায়ে তা মহামারি আকারে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে এ বছরের ৮ মার্চ।
এরই মধ্যে চীনের বিজ্ঞানীদের দাবিকে পুরোপুরি অনুমাননির্ভর বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত শুক্রবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, চীন থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়নি, এমন কথা বলা আমাদের জন্য একেবারে অনুমাননির্ভর হবে।
গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ২০১৯ সালের মে থেকে জুন মাসে উত্তর-মধ্য ভারত ও পাকিস্তানে রেকর্ড দ্বিতীয় দীর্ঘতম দাবদাহ তাণ্ডব চালিয়েছিল। ফলে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ পানির সংকট সৃষ্টি হয়। পানির অভাবে বানরের মতো বন্যপ্রাণী একে অপরের সঙ্গে ভয়াবহ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল এবং অবশ্যই এটি মানুষ ও বন্যপ্রাণী সংস্পর্শের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছিল। এই দাবদাহকেই প্রাণী থেকে মানবদেহে করোনা সংক্রমণের কারণ বলে মনে করছেন গবেষকরা।
চীনা গবেষক দলটি করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে ফাইলোজেনেটিক বিশ্নেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মতে, সবচেয়ে কম রূপান্তরিত রূপটাই ভাইরাসের আসল রূপ হতে পারে। এ ধারণার ভিত্তিতেই তারা দাবি করেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ উহানে হয়নি। এর বদলে ভারত ও বাংলাদেশের মতো জায়গাগুলো, যেখানে কম রূপান্তরিত ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে, সেখানেই হতে পারে এর আসল উৎস। এ ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি করোনার সম্ভাব্য উৎস হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, ইতালি, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র ও চেক রিপাবলিকের নাম বলেছেন চীনের ওই গবেষকরা।
গবেষকরা আরও বলেছেন, যেহেতু বাংলাদেশ ও ভারতের নমুনায় এ ভাইরাসে কম মাত্রায় মিউটেশন পাওয়া গেছে, তাই এ দুই প্রতিবেশী দেশ থেকেই এটি ছড়ানোর আশঙ্কা আছে।
তবে চীনাদের এ দাবির সঙ্গে একমত নন অনেক বিশেষজ্ঞ। চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রকে ‘খুবই ত্রুটিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির ভাইরাল জিনোমিপ অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডেভিড রবার্টসন। তিনি বলেন, ন্যূনতম রূপান্তরিত ভাইরাস সিকোয়েন্স শনাক্তকরণে লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গি সহজাতভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট। লেখকরা মহামারির বিস্তৃতি-সংক্রান্ত উপাত্তগুলো এড়িয়ে গেছেন, যাতে চীনে ভাইরাসের উত্থান এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া স্পষ্ট দেখা যায়। এই বিশেষজ্ঞের মতে, চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি সার্স-কভ-২ সম্পর্কে বোঝার বিষয়ে নতুন কিছুই যোগ করেনি।
প্রথমবারের মতো সফলভাবে মানুষবিহীন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করলো দেশটি
চাঁদ থেকে পাথর ও ধ্বংসাবশেষ আনতে প্রথমবারের মতো সফলভাবে মানুষবিহীন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে চীন।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) চীনের দক্ষিণের প্রদেশ হাইনানের ওয়েনচ্যাং থেকে দেশটির স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টায় সবচেয়ে বড় রকেট লং মার্চ ৫ উৎক্ষেপিত হয়।
“চ্যাংই ফাইভ” নামে এ যানটি এক প্রাচীন চীনা চন্দ্রদেবীর নামানুসারে রাখা হয়েছে। এটি এখনও পর্যন্ত দেশটির সবচেয়ে সাহসী চন্দ্রাভিযান। এই মিশনটি সফল হলে চীনের মহাকাশ বিষয়ে গবেষণা ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মঙ্গল থেকে নমুনা আনার বা চাঁদে অভিযানের পথকে আরও সুগম করতে পারে।
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার পর চীনই হবে বিশ্বের তৃতীয় দেশ, যারা চাঁদ থেকে পাথর আনবে। মহাকাশযান সাধারণত চাঁদে পৌঁছাতে তিনদিন সময় নেয়।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা একটি পাথরের তৈরি বৌদ্ধ মন্দিরের প্রায় চার হাজার ৬০০ বর্গমিটার এলাকা খনন করে এ পুরাকীর্তিগুলো আবিষ্কার করেন
চীনা প্রত্নতত্ত্ববিদরা দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর চংকিংয়ের পাথরের তৈরি স্থানীয় বৌদ্ধ মন্দির এলাকা থেকে ৯০০টিরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) চংকিং শহরের ইনস্টিটিউট অব কালচারার হেরিটেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরের জিয়াংজিন এলাকার একটি পাথরের তৈরি বৌদ্ধ মন্দিরের প্রায় চার হাজার ৬০০ বর্গমিটার এলাকা খনন করে এ পুরাকীর্তিগুলো আবিষ্কার করেন।
ইনস্টিটিউট অব কালচারাল হেরিটেজের একজন প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ নিও ইয়িংবিনের মতে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই বছরব্যাপী এ খননের মাধ্যমে তাঙ্গ রাজবংশ (৬১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯০৭ খ্রিস্টাব্দ) এবং কোয়িং রাজবংশের (১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ-১৯১১ খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত সময়কার ৫০টিরও বেশি স্থাপনা, সমাধি এবং খোদাই করা শিলালিপি পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, প্রাচীন চীনের স্থানীয় ইতিহাস এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে নতুন করে আবিষ্কৃত এ পুরার্কীতিগুলোর দারুন বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক এবং শৈল্পিক মূল্য যোগ করবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বিরল কোন প্রাণীর ছবি তুলতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে দক্ষতা এবং সৌভাগ্য।
রুশ ফটোগ্রাফার সার্গেই গর্শকফের যে দুটোই রয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেল তার তোলা ছবিতে।
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় অরণ্যে তার তোলা একটি সাইবেরিয়ান বাঘ (আমুর টাইগার)-এর ছবি এ বছরের সেরা বন্যপ্রাণীর ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এই মাদি মাঘকে দেখা যাচ্ছে ল্যান্ড অফ লেপার্ড ন্যাশনাল পার্কের একটি গাছকে জড়িয়ে ধরে আছে।
গাছের গায়ে ঘষা দিয়ে এবং প্রস্রাব করে এক বাঘ অন্য বাঘকে তার নিজের বিচরণ ক্ষেত্রের কথা জানিয়ে দেয়।
“ছবিটির আলো, রং এবং টেক্সচার ইত্যাদি দেখে মনেই হয় না এটি একটি ছবি। মনে হয় এটি একটি অয়েল পেইন্টিং,” বলছেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতার একজন বিচারক রজ কিডম্যান।
“দেখে মনে হয় বাঘটি অরণ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমনকি বাঘের লেজটি পর্যন্ত মিশে আছে গাছের গুঁড়ির সাথে, বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
এই ছবির আরও চমকপ্রদ দিক হলো যেভাবে ছবিটা তোলা হয়েছে।
এই ক্যামেরা-ট্র্যাপ যন্ত্র জঙ্গলের মধ্যে বাসিয়ে রাখা হয়। কোন বন্য প্রাণী এর আওতার মধ্যে এলেই ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি তুলে রাখে।
সে জন্য সার্গেইকে জানতে হয়েছে কোথায় ক্যামেরা বসাতে হবে, কোন্ অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলতে হবে ইত্যাদি। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হিসেবে সেখানেই প্রয়োজন হয় দক্ষতা ও একাগ্রতা।
পূর্ব রাশিয়ায় অবৈধ শিকারের জেরে বাঘের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এসব বাঘের সংখ্যা এখন কয়েকশোতে ঠেকেছে বলে ধারণা করা হয়।
হরিণ, বুনো শুয়োর — আমুর টাইগারের প্রধান খাদ্য — তাদের সংখ্যাও কমেছে ব্যাপক হারে শিকারের ফলে।
আমুর টাইগার বিরল হয়ে পড়ায় তার ছবি তোলার কাজও বেশ কঠিন। সার্গেই যে সেরা ছবি তুলেছেন, তার জন্য তার ক্যামেরা-ট্র্যাপ যন্ত্রকে বসিয়ে রাখতে হয়েছিল ১০ মাস।
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম প্রতি বছর বন্য প্রাণীদের সেরা ছবি পুরষ্কার দিয়ে থাকে। এটা দেয়া হচ্ছে গত ৫৫ বছর ধরে।
একটি বাচ্চা শেয়াল যেভাবে একটি বুনো হাঁসকে কামড়ে খাচ্ছে — এই ছবিটি তুলেছেন ফিনল্যান্ডের টিনএজ ফটোগ্রাফার লিনা হেকিনেন। ১৫-১৭ বছর বয়সী ফটোগ্রাফারদের ক্যাটেগরিতে এটি সেরা ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়।
শেয়ালটি তার খাবারকে অন্য শেয়ালের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একটি পাথরের খাঁজে ঢুকে পড়েছিল।
এটি একটি প্রবোসিস জাতের পুরুষ বাঁদরের ছবি। এটি অ্যানিমাল পোর্ট্রেট বিভাগে এবার সেরা ছবি হিসেবে বাছাই হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপে একটি অভয়ারণ্যে এই ছবিটি তোলা হয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাঁদরটির নাকের দৈর্ঘ্যও বাড়তে থাকবে। বড় নাকের সাহায্যে তার ডাকও বেশি শোনা যাবে। এবং বাঁদরের দলের মধ্যে তার অবস্থানকেও পরিষ্কার করবে।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতায় শুধু বন্য প্রাণীর ছবি তোলা হয় না।
ইউরোপের জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ইতালির মাউন্ট এট্নার এই ছবিটি আর্থস এনভায়রনমেন্ট ক্যাটেগরিতে সেরা ছবি নির্বাচিত হয়েছে।
এই ছবি তোলার জন্য লুচিয়ানো গুয়াডেনজিওকে প্রচণ্ড তাপ এবং আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত ভাপ সহ্য করতে হয়েছে।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতার সরিসৃপ বিভাগের এটি সেরা ছবি। এই গ্লাস ফ্রগ জাতের ব্যাঙটির মুখে মাকড়শা। হাইম এই ছবিটি তুলেছেন একুয়েডরের ম্যানডুরিয়াকু অরণ্যে। তখন প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। এর মধ্যেই তিনি এক হাতে ছাতা এবং ফ্ল্যাশ লাইট ধরে অন্য হাত দিয়ে ক্যামেরা পরিচালনা করেন।
উত্তর ফ্রান্সের নরমান্ডিতে এই ছবিটি তোলা হয়েছে। এর জন্য ক্যামেরায় বিশেষ ধরনের দ্রুত গতির শাটার ব্যবহার করা হয়েছে যাতে বোলতা দুটির পাখার ছবিকে ফ্রেমবন্দি করা যায়।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতার আন্ডার ওয়াটার বিভাগের সেরা ছবি। এটা একটা ডায়মন্ড-ব্যাকড স্কুইড। ফিলিপিন্সের আনিলাও উপকূলে জলের তলে রাতের বেলা সোংডা এই ছবিটি তোলেন। স্কুইডটি প্রায় ৬-৭ সেন্টিমিটার দীর্ঘ।
এই বন বিড়ালের বাচ্চাগুলিকে দেখা যায় উত্তর-পশ্চিম চীনের চিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে। ছয় বছর ধরে অনুসরণের পর শানুয়ান এই ছবিটি তুলতে সমর্থ হন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন